14/12/2022
আমরা মেডিকেল কলেজ কলকাতার সকল ছাত্রছাত্রীরা, বিগত সাতদিন ধরে গণতান্ত্রিক ছাত্রছাত্রী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অনশন-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এই দাবি খুবই সাধারণ এবং ন্যায্য দাবি, কারণ আমরা মনে করি সমস্ত কলেজে ছাত্রছাত্রী সংসদ গঠন করা উচিৎ। ছাত্রছাত্রী সংসদের প্রয়োজনীয়তা ঠিক কোথায় সেটা নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের পরিপ্রেক্ষিতেই কিছু কথা বলতে চাই। বিগত ছয় বছর ধরে ছাত্রছাত্রী সংসদ নির্বাচন না হওয়ার ফলে, lecture theatre গুলির ভগ্নপ্রায় দশা, ক্লাস কোঅর্ডিনেশান, রুটিনের কোনো নির্দিষ্ট রূপরেখা এবং প্রফেসারদের সাথে কোনো কোঅর্ডিনেশান নেই। কলেজে স্বাস্থ্যকর পানীয় জলের, শৌচাগারের চরম দূরবস্থা, লাইব্রেরীর বেহাল দশা। কলেজে মেয়েদের হোস্টেলে বেডের crisis থেকে শুরু করে, শৌচাগার ও নিরাপত্তার চরম অভাব এবং বাকি অন্যান্য সমস্যা নিয়েও অথোরিটির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
এসমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলবার জন্য ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ্ থেকে কোনো Students’ Union নেই। এছাড়াও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রোগীস্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি তুলে এসেছে, নিত্য প্রয়োজনীয় এবং জীবনদায়ী ওষুধ নেই কেন? রোগীদের সাহায্যের জন্য সঠিক পথনির্দেশিকা কেন নেই? রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দালালচক্র চালাচ্ছে কারা? Group D কর্মীনিয়োগে দূর্নীতি কেন হচ্ছে? কলেজে এসমস্ত প্রশ্নই অনেক জোরদার দাবি হয়ে উঠতে পারত এবং রোগী পরিষেবার বেহাল দশার পাশাপাশি অচিকিৎসক কর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের দাবিদাওয়া পূরণের ক্ষেত্রে union একটি হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারত।
বিগত ছয় মাস ধরে আন্দোলনের পর কলেজ অথরিটি আমাদের দাবি মেনে নেয় এবং 22 শে ডিসেম্বর ছাত্র-ছাত্রী সংসদ নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু, গত ৫-ই ডিসেম্বর তৃণমূল সরকারের হস্তক্ষেপে অগণতান্ত্রিক ভাবে এই নির্বাচন বাতিল করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে কলেজের শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের আক্রমণ করে, গলা টিপে ধরে প্রাণে মারার ও ক্যারিয়ার শেষ করার হুমকি দেয়।
আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অনশন আন্দোলন শুরু হওয়ার পর, স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আমাদের সাথে দুদফার বৈঠক করেন এবং তারা জানান যে তারা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের সাথে কথা বলতে এসেছেন, কিন্তু বাইশে ডিসেম্বর নির্বাচন করানো কেন সম্ভব নয় তার কোন যুক্তিযুক্ত উত্তর তারা আমাদের দিতে পারেননি। একটি মেডিকেল কলেজের ইউনিয়ন নির্বাচনের মত সাধারণ গণতান্ত্রিক দাবিকে কেন তৃণমূল সরকারের অগণতান্ত্রিকভাবে দমাতে চাইছে সেই উত্তর আমাদের কাছে নেই, কেন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সহমতিতে ২২ তারিখের যে ইলেকশনের ডেট দেয়া হয়েছিল তাতে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন, তা আমরা জানি না। এমনকি আমাদের কাছে খবর আছে আমাদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অন্য কলেজের এক ছাত্রকে স্থানীয় তৃণমূল গুন্ডারা হেনস্থা করে এবং হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। মুখ্যমন্ত্রী যদি আমাদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মী হন তাহলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর এই ধরনের আক্রমণ কেন? তার জবাব চাই আমরা।
আমাদের অভিভাবকরাও আমাদের আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, এবং দ্রুত নিষ্পত্তির দাবিতে তাঁরা ১৫-ই ডিসেম্বর একটি প্রতিকী অনশনের ডাক দিয়েছেন।
আমাদের এই আন্দোলন শুধুমাত্র মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের গণতন্ত্রের আন্দোলন নয়। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কলেজ ক্যাম্পাসে এবং সামগ্রিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ের অংশীদার। এর সাথে সামনের শনিবার ১৭-ই ডিসেম্বর আমরা মেডিকেল কলেজে একটি ছাত্র-ছাত্রী ও নাগরিক কনভেনশনের ডাক দিচ্ছি এবং পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ও গণতান্ত্রিক নাগরিকবৃন্দ ও ছাত্রছাত্রীর কাছে আমাদের আবেদন রইল তারা যাতে এই কনভেনশনে আসেন এবং আমাদের পাশে থেকে আমাদের এই আন্দোলনকে একটি সার্বিক গণ আন্দোলনরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।
মেডিকেল কলেজে গণতন্ত্রের জয় হোক। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি কলেজ ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে উঠুক।
#Long_live_Independent_Students_Movement
#Long_live_MCK