১০ই সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল সুইসাইড প্রিভেনশান ডে। ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ই সেপ্টেম্বর সচেতনতা মূলক প্রোগ্রাম হিসেবে আন্তর্জাতিক সুইসাইড প্রিভেনশান সংস্থা (IASP) এবং International Federation for Mental Health WHO-এর সাথে হাত মিলিয়ে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে থাকে! সুইসাইডের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে গা শিউরে ওঠে! বছরে গোটা দুনিয়াতে প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ মারা যান সুইসাইডে। পৃথিবীতে প্রতি ৪০ সেকন্ডে একজন সুইসাইডে প্রাণ হারান।
ভারতে শেষ দুই দশকে সুইসাইডের পরিসংখ্যান প্রতি ১ লাখ পপুলেশানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৯ থেকে ১০.৩-এর কাছাকাছি! ২০১৯ ভারতে প্রায় ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ১২৩ জন সুইসাইডে মারা যান! NCRB (National Crime Record Bureau)-র ডাটা অনুযায়ী রোজ প্রায় ১২১ জন সুইসাইডে প্রাণ হারান! প্রতি ঘণ্টায় ১৬ জন এবং প্রায় প্রতি ২২৫ সেকেন্ডে ১ জন সুইসাইডে মারা যাচ্ছেন! ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রতি ১ ঘণ্টায় কোনও একজন সুইসাইডের শিকার! National Mental Health Survey (NMHS 2015-16) তথ্য অনুযায়ী ভারতে সুইসাইডাল আইডিয়েশানের প্রিভ্যালেন্স ০.৯%। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে প্রায় ১ জন এই সুইসাইডাল চিন্তায় আক্রান্ত! দেখা গেছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে সুইসাইড এর হার যতটা বেশি উত্তরের রাজ্যগুলোতে সেটা তুলনায় অনেকটা কম।
এটেম্পটেড সুইসাইডের পরিমাণ আরও অনেক বেশি।প্রায় ২০ গুণ। অর্থাৎ বছরে প্রায় ২৭,৮২,৪৬০ জন সুইসাইড আটেম্পট করেন। অর্থাৎ এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট ভয়াবহ ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে চ্যালেঞ্জিং। এই বছর থিম হল ‘Creating Hope through Action’ (কাজের মাধ্যমে আশার জাগরণ) অর্থাৎ যাঁরা কোনও কারণে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন, আলাদা থাকছেন, ডিপ্রেশান বা অন্য মানসিক রোগে হতাশার তলানিতে আজ তাঁদের কাছে এই বার্তা নিয়ে যাওয়ার যে- যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে সুইসাইডের বিকল্পও অন্য কিছু আছে! তাঁদের কথা শুনে, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের প্রতি সহানভুতিশীল হয়ে এম্প্যথেটিক হয়ে সাহায্য করাই আজকের দিনে আমাদের প্রত্যেকের অ্যাকশন এবং আশা খুঁজে পাওয়ার পাথেয়!
২০১৭ এর আগে ৩০৯ আইপিসি (IPC) অনুযায়ী যে কোনও ব্যক্তি সুইসাইড আটেম্পট করলে এক বছরের জেল অথবা জরিমানা কিম্বা দুটো শাস্তিই পেতে হত। এর জন্যে সুইসাইড সংক্রান্ত ব্যাপারে সাহায্য পাওয়া ও সাহায্য করা দুটোই বেশ সমস্যাজনক ছিল। মানে কেউ একজন যিনি সুইসাইড করার কথা ভাবছেন, অথবা কেউ মারাত্মক ডিপ্রেশানে ভুগছেন সে সেই সময় এই আইনি শাস্তির কথা ভেবে সাহায্য চাইবেন না বা দ্বিধা বোধ করতেন। কিম্বা কেউ একজন সুইসাইড আটেম্পট করে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে তার সঠিক শারীরিক ও মানসিক রিহ্যাবিলিটেশান দরকার! তাঁর পরিচর্যার ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনি জটিলতা তৈরি হয়ে যায়! একজন মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর কাজেও যা ব্যাঘাত ঘটায় এবং সমস্যাজনক হয়ে ওঠে!
২০১৭ সালের ৭ই এপ্রিল এই নতুন চর্চিত নতুন মেন্টাল হেলথ কেয়ার আইন (Mental Health Care Act,2017) পাশ হয়। এর সেকশান ১১৫-তে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয় যে– ৩০৯ আইপিসি-র কোনও কিছুর সাথেই তাঁরা সহমত পোষণ করেন না, কেউ সুইসাইডে মারা গেলে বা সুইসাইড অ্যাটেমপ্ট করলে প্রথমে এটাই ধরে নিতে হবে যে সেই ব্যক্তিটি সুইসাইড করার আগের মুহূর্তে নিশ্চয়ই কোনও ডিসট্রেসে ভুগছিলেন! একটা সাংঘাতিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে তাঁর সময় কেটেছে! এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ! কী সুন্দরভাবেই না বলা হয়েছে! এও বলা হয়েছে যিনি সুইসাইড আটেম্পট করেছেন তাঁর যথাযথ যত্ন নেওয়া, চিকিৎসা করা স্টেটের দায়িত্ব!
বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সুইসাইড করার প্রবণতা খুব বেশি! ডিপ্রেশানে প্রায় ১৫-২০% ব্যক্তি সুইসাইডে মারা যান! সিজোফ্রেনিয়াতে প্রায় ৫-১০% লোক সুইসাইডের শিকার হন, অ্যালকোহল ডিপেন্ডেন্সের মধ্যে ১৫% সুইসাইডে প্রাণ হারান! যাঁরা সুইসাইড আটেম্পট করেন তাঁদের মধ্যে ২০-২৫% আগে সুইসাইডাল অ্যাটেম্পট থাকে!
সুইসাইড নিয়ে অনেক কিছু মিথ আমাদের মধ্যে আছে! মিথ আছে ডাক্তারদের মধ্যেও!
মিথ ১
যাঁরা সুইসাইড করার কথা বলেন তাঁরা আসলে সুইসাইড করেন না!
ফ্যাক্ট
বেশিরভাগ মানুষ সুইসাইড করার আগে বাড়ির লোকদের বা কাছের লোকেদের কিছু না কিছু বলেন। তাই সবসময় এই কথাগুলো গুরুত্ব সহকারে শোনা উচিত!
মিথ ২
বেশিরভাগ সুইসাইড আটেম্পট করা লোকজন আসলে মরতেই চান!
ফ্যাক্ট
সুইসাইড করার আগে প্রত্যেকের একটা অসম্ভব মানসিক যন্ত্রণা হয়, তিনি কারও কাছেই সাহায্য চাইতে পারেন না, বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়ার মধ্যে সূক্ষ্ম রেখা এসে দাঁড়ায়! এই কষ্ট থেকে বাঁচার জন্যে তাঁরা শেষ অবলম্বন বেঁছে নেন, আর কিছু না পেয়ে! তাই মরার ইচ্ছে থেকেই এরকম করেন তা ভুল, বরঞ্চ বেঁচে থাকার কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অন্য কোনও উপায় আমরা তাঁকে বলে দিতে পারি কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ!
মিথ ৩
ডিপ্রেশানে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তিকে সুইসাইড নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁর সুইসাইড করার সম্ভবনা বাড়বে!
ফ্যাক্ট
বিভিন্ন স্টাডি প্রমাণ করেছে কাউকে সুইসাইডাল চিন্তার কথা জিজ্ঞেস করলে তাঁর সুইসাইড করার প্রবণতা বেড়ে যায় না! উলটে তাঁকে সাহায্য করা হয়!
মিথ ৪
একবার আটেম্পট করে নিয়েছেন মানে আর করবেন না!
ফ্যাক্ট
একদমই নয়। একবার সুইসাইডাল অ্যাটেম্পট করেছেন মানে রিস্ক ফ্যাক্টর বেড়ে গেল! আগামী ১০ বছরে ১০% আবার সুইসাইডে আক্রান্ত হতে পারেন!
মিথ ৫
শহরের লোকেরা বেশি সুইসাইড করেন।
ফ্যাক্ট
গ্রামে সুইসাইডের হার বেশি। তার কারণ পর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্যের পরিকাঠামোর অভাব, ক্ষতিকারক জিনিসের সহজলভ্যতা, আর আর্থিক দুর্বলতায় একজন ব্যক্তি সুইসাইডে আক্রান্ত হন।
তাহলে এই সুইসাইড প্রিভেনশানে আমাদের ভূমিকা কী?
সুইসাইড শুধুমাত্র মেডিকাল ইস্যু নয়, এর সাথে জড়িত আছে পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি কমিউনিটি। তাই সুইসাইড প্রিভেনশান বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন ভাবে হতে হবে। কোনও একপাক্ষিক পরিকল্পনা এখানে কার্যকরী নয়!
ব্যক্তিগত স্তরে, কমিউনিটিতে জাতীয় পরিসরে আমরা কী করতে পারি! আপনি কী করতে পারেন?
ব্যক্তিগত স্তরেঃ
খুব সক্রিয়তার সঙ্গে জিজ্ঞাসা করা, কোনও সুইসাইডাল ভাবনা আসছে কিনা! কোনও প্ল্যান আসছে কিনা! যদি আসে সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যের কথা বলা উপযুক্ত জায়গায় চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যাওয়া।
প্রত্যেকে WHO নির্ধারিত গেট কিপার ট্রেইনিং প্রোগ্রাম (Gate Keeper Training Program), সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড ট্রেইনিং (Psychological First Aid) প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করলে ও দক্ষ হয়ে উঠলে এই জায়গায় কীভাবে কথা বলতে হয় ও কী সিধান্ত নিতে হয়, বা কী করণীয় তা সম্বন্ধে সঠিক ধারণা তৈরি হয়!
প্রয়োজনে কোনও হেল্পলাইন নাম্বারে যুক্ত হওয়া বা নিজের অবসর সময়ে সেখানে সময় দেওয়া!
যা কখনই করব নাঃ
- যদি কোনও ব্যক্তি কোনও মানসিক রোগের কারণে নিয়মিত ওষুধ খান, তাঁকে ওষুধ খেতে বারণ করব না!
- কেউ সুইসাইড করার কথা বললে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করব না! কেউ কখন সুইসাইড করার কথা বললে, বলব না- “তুই শুধু বলিস! করবি তো না! অত দম তোর নেই!” কিম্বা ‘অ্যাটেনশান পাওয়ার জন্যে এসব করছিস তুই’ এইসব বলব না।
- যিনি সুইসাইড আটেম্পট করেছেন তাঁকে আলাদা করে স্টিগমাটাইস করব না! সেক্সুয়াল মাইনরিনিটি, জেন্ডার মাইনরিটি কিম্বা আর্থিক ভাবে দুর্বল বর্গের অথবা অন্য হাই রিস্ক পপুলেশানের লোকজনকে সবসময় বেশি কেয়ার নিয়ে কথা বলা উচিত!
- কখনই নিজের ছেলেমেয়েদের অন্যদের সাথে তুলনা করব না! বিশেষ করে পড়াশুনায় পারফর্মেন্সের ক্ষেত্রে! তুলনা করার মানে হল আপনি একজন মানুষকে ইন্সাল্ট করছেন তাকে অযোগ্য প্রমাণের চেষ্টা করছেন! বরঞ্চ তাকে জীবনে বিভিন্ন চ্যলেঞ্জের জন্যে প্রস্তুত করুন! জীবনের প্রথম দিকে তাকে সাপোর্ট করুন! পরীক্ষার আগে তাকে পাশ করলে এই গিফট দেব যেমন বলি! তেমনই ফেল করলে কী হবে, রেসাল্ট খারাপ হলে কী হবে, তার বন্ধু ফেল করলে কীভাবে কথা বলবে ওর সাথে! এই সব বিষয়েও শিক্ষা দেওয়া বাঞ্ছনীয়! ঠিক তেমনি নিজের বয়স্ক বাবা মায়ের সাথে রোজ যোগাযোগ রাখা খুব জরুরি!কারণ ছেলে মেয়ে এবং বয়স্ক দুজনের মধ্যেই সুইসাইডের প্রবণতা বেশি!
- জীবনে কখন একা হয়ে যাবেন না! যোগাযোগ রাখুন লোকজনের সাথে, জীবনে খুব অল্প হলেও কয়েকটি সম্পর্ক যত্ন ও সময় নিয়ে গড়ে তুলুন! যে সম্পর্কগুলো আপনার মেন্টর হয়ে উঠবে!
কমিউনিটি লেভেলঃ
কৃষক আত্মহত্যা ভারতে এখন জ্বলন্ত ইস্যু! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর্থিক চাপে পড়ে সন্ধ্যে কিম্বা রাতের দিকে কীটনাশক ওষুধ খেয়ে মারা যাচ্ছিলেন তাঁরা! একে বন্ধ করার জন্যে কিছু প্রোগ্রাম নেওয়া হয়! ‘পেস্টিসাইড ব্যাঙ্ক’ বলে একটি প্রোগ্রাম চালু হয় যেখানে গ্রামের সমস্ত কৃষকের পেস্টিসাইড এক জায়গায় এনে রাখা হয়! যেখান থেকে রোজ সকালে প্রয়োজন মতো সবাই নিয়ে যেতে পারবেন! এতের দেখা যায় সুইসাইড রেট কমছে!
মাইক্রো-ফিনান্সিং (সাময়িক অর্থ সাহায্য) খুব জরুরি হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে!
বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে তাঁদের দূরে রাখা! যেকোনো ডাটা ঘাটলেই বোঝা যাবে যে যাঁরা সুইসাইড করছেন তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই নেশা জাতীয় দ্রব্য রোজ ব্যবহার করতেন!
কমিউনিটি লেভেলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচার চালানো! সাহায্য চাওয়া মানেই যে দুর্বল হয়ে পড়া নয়, ‘পাগল হয়ে যাওয়া নয়’ তা লোকজনকে বোঝানো! সঠিক ভাবে ন্যূনতম কাজের মজুরি ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নীতি প্রণয়ন করানো!
প্রতিটি স্কুল কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে আলাদা করে সুইসাইড প্রিভেনশান প্রোগ্রাম চালু করা! লাইফ স্কিল ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করানো! স্কুল মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়! এখানে প্রতিটি শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদেরও উপযুক্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা আশু প্রয়োজন!
১৪০ কোটির দেশে সবাইকে ব্যক্তিগত স্তরে সাহায্য করা খুব কঠিন একটি কাজ! তাই পিয়ার টু পিয়ার (Peer to Peer) সংযোগ স্থাপন করে এই সাপোর্ট করা যেতে পারে! ট্রান্স-জেন্ডার কমিউনিটির একজন অন্য একজন ট্রান্স-জেন্ডারকে সাপোর্ট করছেন, একজন যিনি পারিবারিক হিংসার শিকার তিনি এই সমস্যায় ভুগছেন যিনি তাঁর পাশে দাঁড়ালেন, একজন জেলের আসামি তিনিই তার অন্য বন্ধুকে সাহায্য করলেন, একজন সুইসাইড আটেম্পট করেছেন তিনি অন্য আর একজনকে নিজের গল্প শোনালেন এইভাবে চলতে থাকবে প্রতিটি গ্রুপের পারস্পরিক সহমর্মিতা।
কমিউনিটিতে সমস্ত সোশ্যাল গ্র্যাজুয়েট, অঙ্গনওয়ারী কর্মীরা, আশা কর্মীরা এই গেট কিপার ট্রেইনিং প্রোগ্রাম, সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড ট্রেইনিং এ অংশীদার হতে হবে। সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকেই এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা উচিত!
ন্যাশানাল লেভেলঃ
কী কী পলিসি সুইসাইড প্রিভেনশানের জন্যে নেওয়া দরকার!
- বার বার বলছি এটা কোনও একটি ডিপার্টমেন্টের বিষয় নয়! স্বাস্থ্য, আইন, অর্থনীতি, সামাজিক কল্যানকর বিভাগ, পুলিশ, মহিলা ও শিশু কল্যাণকর বিভাগ, এরকম আরও অন্যান্য বিভাগ মিলিয়ে একটি সংযোগ স্থাপন করে একে প্রতিরোধ করতে হবে! কোনও একজন বিভাগের পক্ষে সুইসাইডকে আটকানো সম্ভব নয়! এটা আমাদের সবার মিলিত দায়িত্ব!
- National Mental Health Program (NMHP) সমস্ত জায়গায় সমস্ত রকমভাবে চালু হওয়া দরকার! প্রতিটি জেলায় একে বাধ্যতামূলক করা দরকার! Mental Health Care Act,2017 সামগ্রিক ভাবে সস্মত জায়গায় লাগু করা উচিত! বিভিন্ন টেকনলজিকাল মডেল, হেল্প লাইন সব জায়গায় পৌঁছে দেওয়া!, অনালাইন কাউন্সেলিং টেলি সাইকিয়াট্রি পরিষেবা সমস্ত জায়গায় চালু করা দরকার!
- মিডিয়ার ক্ষেত্রে খুব সংবেদনশীলভাবে এবং দায়িত্ব সহকারে রিপোর্ট করা উচিত! WHO-র গাইডলাইন মেনে রিপোর্টং করা দরকার। একটা বাজে দায়িত্বহীন মশালাদার গল্পের মতো রিপোর্টং সমাজে যেমন সংক্রামিত সুইসাইড বাড়িয়ে দিতে পারে (যাকে বলে Werther Effect) ঠিক তেমনি একটি মানবিক ও দায়িত্বপূর্ণ সচেতনমূলক রিপোর্টং অনেক সুইসাইড কমিয়ে আনতে পারে (যাকে বলে Papageno Effect)।
সবসময় মনে রাখতে হবে নিজেকে যখন কেউ বোঝা হিসেবে ভাবতে শুরু করে, কোনও কিছুর সঙ্গে যখন একাত্ম বোধ করে না, ক্রাইসিসের সময় যখন খুঁজে পায় না কাউকে তখনই একটা মানসিক যন্ত্রণার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সুইসাইডাল চিন্তা আসতে শুরু করে! সুইসাইড যতটা বেশি মেডিকাল ইস্যু ঠিক ততটাই সামজিক ইস্যু।একজন ডাক্তার, নার্স, মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী যেমন সাহায্য নেবেন ঠিক তেমনি একজন বন্ধু, একজন প্রতিবেশী একজন সহকর্মীও পাশে দাঁড়াবেন! আজকের দিনে প্রত্যেকের এটা কর্তব্য! মৃত্যু থেকে মানুষকে বাঁচানোর দায়িত্ব সবার। আর সবারই এই মৃত্যু থেকে মানুষকে বাঁচানোর ক্ষমতা আছে। প্রত্যেকে যদি আমরা আমাদের জীবনে একজনকেও সুইসাইডের কবল থেকে রক্ষা করতে পারি, তাহলেও অনেকটা করা হয়ে উঠবে। এই সময়ের দাবি মেনে তাই খুব দেরি না হয়ে যাওয়ার আগে আমরা যেন কাজ শুরু করতে পারি!
প্রতিটি ৪০ সেকেন্ড আমাদের প্রশ্ন করছে- যেসব ক্রাইসিস এর মুহূর্তে মানুষ আমাদের পাশে চেয়েছে, আমরা ছিলাম তো??