আবার পুজো এসে গেল। পুজোর প্রাক্কালে রাজ্যের চিকিৎসক সংগঠনগুলির জয়েন্ট প্লাটফর্ম-এর পক্ষ থেকে সহ নাগরিকদের প্রতি এই আবেদন।
গত বছর আপনারা আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে পুজোয় ভিড় করে ঠাকুর দেখার বিষয়ে যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছিলেন, সঙ্গে অবশ্য ছিল আদালতের নিষেধাজ্ঞাও। তাই উৎসবের পরে আমাদের রাজ্যে করোনা সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়নি। যেসব রাজ্যে উৎসব পালনে সংযম দেখানো হয়নি সেগুলোতে কিন্তু করোনা সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়েছিল।
এ বছরেও আমরা দেখলাম কেরলে ওনাম উৎসব পালনের পর কি সাংঘাতিক ভাবে সংক্রমণ বেড়েছিল। আমাদের রাজ্যেও ভোট ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলির বিবেচনাহীনতায় অসংযমী হয়ে বিধি নিষেধ না মানায় আমাদের রাজ্যবাসীকেও কি ঘোরতর দুর্দিনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তা ভুলবার নয়। চিকিৎসক সংগঠনগুলির আবেদন-নিবেদনকে সে সময় রাজ্য সরকার, নির্বাচন কমিশন বা রাজনৈতিক দলগুলো কেউই পাত্তা দেননি। হাসপাতলে শয্যার অভাব, অক্সিজেনের জন্য হাহাকার আর পরিহারযোগ্য মৃত্যুর সেই ভয়াল ভ্রূকুটিকে আমরা ভুলতে পারব না। ভুলতে পারবো না সহকর্মী চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী আর সহ নাগরিকদের চিরবিচ্ছেদকেও।
গতবারের মতো এইবারও পুজো প্যান্ডেলে সমাবেশ নিয়ে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। পুজো কমিটিগুলোর এই রায় না মেনে উপায় নেই। কিন্তু আমাদের আশঙ্কা প্যান্ডেলের বাইরে রাস্তার ভিড়। আশঙ্কা রাজ্য সরকারের পুজোর দশ দিন নাইট কারফিউ শিথিল করার ঘোষণা নিয়ে, আমরা জানি না এই শিথিলতা সাধারণ মানুষকে কতটা অসংযমী করবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বারবার উৎসব পালনের বিষয়ে সতর্কতার বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় ঢেউ অথবা সংক্রমণ বৃদ্ধি যাই হোক না কেন তা নিয়ে আশঙ্কায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিয়ে রাজ্যের চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরাও।
এই সময় পুজোর বাজারে ভিড়, বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে মাস্ক খুলে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাকাটা চলছে। যান চলাচলে অন্যরকম নিষেধাজ্ঞা থাকায় মানুষকে আরো ভিড় যানবাহনে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এরপর যদি পুজোয় বিপুল জনসমাগম হয়, অপরিকল্পিত হয়, বিধিনিষেধ না মেনে হয়, তাহলে হয়তো আমাদের আবার মার্চ এপ্রিল মে-র মত দুঃসহ দিনগুলোর মধ্যে দিয়ে আবার যেতে হবে।
এরই সঙ্গে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে কোন এক অলিখিত নির্দেশে কোভিড পরীক্ষার ক্ষেত্রেও অনাচার চলছে। কোভিড সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র রাজ্য সরকারের প্রকাশিত তথ্যে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
সব মিলিয়ে আমরা স্বস্তিতে নেই, বরং বেশ ভয়ে ভয়ে আছি, যথেষ্ট উদ্বেগ আশঙ্কায় আছি।
এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে আরো একটি বিষয়। এখনো বিপুল সংখ্যক রাজ্যবাসী কোভিডের টিকা পাননি। এখন অব্দি স্বীকৃত তথ্য অনুযায়ী টিকা নিলে রোগ হবে না এমনটা বলা যায় না, তবে টিকা নেওয়া থাকলে কোভিড কম গুরুতর, কম প্রাণঘাতী হওয়ার কথা। এখন অব্দি আমাদের রাজ্যে সংক্রমণের হার 1.7 থেকে 1.9 %-এর মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে।
আমাদের কি করা উচিত?
জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গল এর পক্ষ থেকে আমাদের আবেদন–
- পুজোয় ঠাকুর দেখাটা এবারও যদি বাড়িতে বসে টিভির পর্দায় পুজো পরিক্রমা দেখে আর নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে গল্পে আড্ডায় খেলায় খাওয়া-দাওয়ায় সেরে ফেলতে পারেন তাহলে সবচেয়ে ভালো।
- আর কোভিডের টিকা নিতে ভুলবেন না।
- যদি পাড়ার পুজোয় যেতে হয় তাহলে পালা করে যান। দেখুন যাতে একসঙ্গে অনেক জন মিলে ভিড় না হয়। অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন, পরস্পরের মধ্যে অন্তত তিন ফুটের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
- অন্য পাড়ার পুজো যদি দেখতে ইচ্ছে করে তবে বড় দল বেঁধে না গিয়ে ছোট দলে মাস্ক পড়ে স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়ে খোলা বাতাসে পায়ে হেঁটে যান। ভিড় হলে যাবেন না। পরের বছরের জন্য তোলা থাকুক ওইটা।