সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল থেকে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু হয়ে জননায়ক কর্পূরী ঠাকুর। আর এস এস – বিজেপি জাতীয় ও আঞ্চলিক নেতাদের আত্মস্থ করতে চাইছে। বরদলি, খেদা প্রমুখ কৃষক আন্দোলন থেকে উঠে আসা গুজরাতের জাতীয় কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধীর অন্যতম সহযোগী এবং স্বাধীন ভারতের উপ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। গান্ধী হত্যার পর তাঁর নির্দেশে সাভারকার, গোলওয়ালকার সহ আর এস এস ও হিন্দু মহাসভার নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। আর এস এস নিষিদ্ধ হয়। মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতায় এসে নেহরুর বিরূদ্ধে প্যাটেল কে খাড়া করার চেষ্টা করেন। গুজরাতের নর্মদা জেলার কেভাদিয়ায় ২৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করে প্যাটেলের ‘ স্ট্যাচু অফ ইউনিটি ‘ নির্মাণ করে একদিকে গুজরাতি অস্মিতা অন্যদিকে পর্যটন ব্যবসার ব্যবস্থা করেন।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। এই জনপ্রিয়তম দেশনায়ক আমরণ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশের বিরূদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব এবং হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টিয়ান সমস্ত সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য। নয়া দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের পাশে তাঁর মূর্তি বসিয়ে আর এস এস – বিজেপি মোদির নেতৃত্বে তাঁর কৃতিত্বের ভাগীদার হয়ে দেশজোড়া নেতাজী প্রেমিকদের সমর্থন অর্জন করার চেষ্টা করে। সম্প্রতি মোহন ভাগবত বলেন তারাই নেতাজীর উত্তরসূরি। অথচ এই আর এস এস স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয় নি, ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতা করেছে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরিয়ে দিয়েছে।
জননায়ক কর্পূরী ঠাকুর (১৯২৪ – ‘৮৮) বিহারের সমস্তিপুর জেলায় এক দরিদ্র পশ্চাদপর নহাপিত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন এবং আজীবন স্বচ্ছ সহজ সরল জীবন যাপন করে দরিদ্র মানুষের মধ্যে থেকে তাদের জন্যে কাজ করেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি সি পি আই এর ছাত্র সংগঠন এ আই এস এফ এ যোগ দেন। জাতীয়তাবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধী ও সত্য নারায়ণ সিংহ তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়ায় তাঁকে ২৬ মাস ব্রিটিশ জেলে কাটাতে হয়।
স্বাধীন ভারতের এই সমাজবাদী গ্রামের স্কুল শিক্ষক সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিধান সভায় নির্বাচিত হন। তিনি কর্মচারী ও শ্রমিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারাবরণ করেন। ৬০ এর দশকে তিনি বিহারের শিক্ষা মন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন ও পেছিয়ে পড়া এলাকায় প্রচুর স্কুল কলেজ নির্মাণ করেন।
১৯৭০ – ৭১ এ তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময় তাঁর প্রধান অবদান: কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি চালু করা, শিক্ষাক্ষেত্রে ও অন্যত্র ইংরেজির বদলে মাতৃ ভাষা হিন্দির উপর জোর দেওয়া এবং বিহারে মদ্য পান নিষিদ্ধ করা। ১৯৭৫ – ৭৭ এ তিনি লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ এর সর্বাত্মক বিপ্লব এবং স্বৈরতন্ত্র ও জরুরি অবস্থার বিরূদ্ধে গণ আন্দোলনে বিহারের অন্যতম নেতা ও সংগঠক ছিলেন। ১৯৭৭ – ‘৭৯ তিনি দ্বিতীয়বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এই সময় তাঁর প্রধান অবদান পশ্চাদপর জাতিদের জন্যে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সংরক্ষণ।
নিশ্চয় তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজবাদী নেতা ও জনমুখী প্রশাসক। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আর এস এস – বিজেপির বিপরীত মেরুতে তাঁর আদর্শ ও অবস্থান। তাঁকে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত। কিন্তু আর এস এস – বিজেপির লক্ষ্য তাঁর কৃতিত্বে ভাগীদার বনে গিয়ে পশ্চাদপর জাতিদের ভোট টানা এবং বিহারের অবশিষ্ট সমাজবাদী ভোটে ফাটল ধরানো। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এবং সমাজবাদী নেতা নীতিশ কুমার কেন্দ্র সরকারের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে জননায়ক কর্পূরী ঠাকুরকে মরণোত্তর ভারত রত্ন পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। খবরে প্রকাশ তিনি জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইণ্ডিয়া জোট ছেড়ে পুনরায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এন ডি এ জোটের অভিমুখে যাত্রাও শুরু করে দিয়েছেন।
২৬.০১.২০২৪