গিন্নির হাতে উল বোনার সরঞ্জাম দেখে খানিকটা বিষম খেয়েই বললাম, “কিগো! ক্ষেপে গেলে নাকি! এসব আবার কী শুরু করলে?”
গিন্নি বেশ আত্মবিশ্বাসের সুরেই বলল, “ছোটবেলায় ওয়ার্ক এডুকেশনে অনেক বানিয়েছি। এখন বহুদিনের অনভ্যাস। দেখাই যাক না…”
“আরে তুমি যে কাজে হাত দাও তাতেই সোনা ফলে।” বৌকে খুশি করার জন্য এটুকু বার খাওয়াতেই হ’ল।
বার খাওয়া তো দূরের কথা, উল্টে বৌ ধমক দিয়ে বলল, “জ্বালিও না তো! তুমি তোমার কাজ করো।”
আমি আর কী করি? অন্য ঘরে গিয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে একটু নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। ছোটবেলায় দেখতাম শীত পড়ার কিছুদিন আগে থেকেই বাড়িতে মা-দিদিদের সোয়েটার বোনার একটা তোড়জোড় শুরু হয়ে যেত। দু’খানা কাঁটা আর রঙ-বেরঙের উল দিয়ে পরম যত্নে একটু একটু করে তৈরি হ’ত সামনের অংশ, পেছনের অংশ, দুটো হাত, সবশেষে কলার। মাঝে মাঝে ডেকে বলত, “আয় তো একটু মাপ দিয়ে দেখি।”
মাপ দেওয়ার পর কখনো কাঁটাতে ঘর বাড়ানো হ’ত, কখনো কমানো। আমি অবাক হয়ে দেখতাম উলের ঘরগুলো একটা কাঁটা থেকে আরেকটা কাঁটায় কী অদ্ভুতভাবে চলে যেত আর তার সাথে একটু একটু করে সোয়েটারের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকত।
শীতের পড়ন্ত বিকেলে ছাদে রোদ পোহাতে উঠে উলবোনাটা ছিল বাড়ির মেয়েদের নিত্যদিনের অভ্যেস। একদিন সেই সামনের অংশ, পেছনের অংশ আর হাত দুটো জোড়া লেগে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেত। তারপর নতুন সোয়েটার পরে যথারীতি বন্ধুমহলে ঘ্যাম নেওয়া… “দ্যাখ, আমার সোয়েটারটা তোদের সবার থেকে দেখতে সুন্দর!”
নাহ! এখন আমি ‘মন্টে কার্লো’ আর কী সব কোম্পানির সোয়েটার যেন আছে, সেগুলিই পরি। দেখতে আরও সুন্দর, আরও হালকা আর পরেও অনেক আরাম। দশ-পনেরোটার ভেতর একখানা পছন্দ করে কেনা যায়। আজ সকালে এরকমই একটা সোয়েটার পরে কাজে বেরিয়েছি। বহুজাতিক কোম্পানির হাতে একটা ঘরোয়া শিল্পের কীভাবে মৃত্যু ঘটলো সেটা ছোট থেকে বড়ো হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই চাক্ষুষ করলাম। জানি না, এই প্রজন্মের ক’জন এই শিল্পটি রপ্ত করতে পেরেছেন। আর আগামী প্রজন্ম হয়তো এই সরঞ্জামগুলি দেখে হাসাহাসিই করবে।
ছবি দিলাম….