১.
হাম এক প্রকার ভাইরাসঘটিত রোগ। অনেকে ভুলবশত চামড়ায় র্যাশ বা গুটি বেরোলেই সেটাকে হাম বলে ধরে নেন। আসলে, বাচ্চাদের বেশিরভাগ র্যাশ-ই ভাইরাসঘটিত কিন্তু তাদের সবকটা হামের র্যাশ নয়।
২.
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে হামের ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ মানুষের শরীরে যায়। মূলত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। হাম সবচেয়ে সংক্রামক রোগগুলির একটি। টিকাকরণ করা হয়নি এরকম শিশু হামের ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হ’লে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে বিশ্বে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার শিশু হাম সংক্রান্ত জটিলতায় প্রাণ হারায়।
৩.
ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ১০-১২ দিনের মধ্যে রোগলক্ষণ দেখা দেয়। প্রথমে হাল্কা জ্বর, সর্দি, কাশি, নাক-চোখ দিয়ে জল পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, গালের ভেতরে সাদা ছোপ, গলা ব্যথা ইত্যাদি দেখা যায়। হামের র্যাশ সাধারণত জ্বরের চার নম্বর দিনে দেখা যায়। প্রথমে কানের পেছনে এবং মুখে লাল ঘামাচির মতো র্যাশ বেরোয়। তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।
৪.
রোগ জটিল হ’লে কানের ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, পাতলা পায়খানা এমনকি চোখের স্বচ্ছ অংশে ছোপ পড়ে অন্ধত্বও হতে পারে। হামের একটি বিরল কিন্তু ভয়ংকর জটিলতা হ’ল মস্তিষ্ক প্রদাহের রোগ। যা সাধারণত হাম হওয়ার ৬-৮ বছর বাদে প্রকাশ পায়। প্রথমে চরিত্রগত পরিবর্তন ও স্কুলে পড়াশোনা খারাপ হ’তে শুরু করে। পরের দিকে তীব্র খিঁচুনি আরম্ভ হয়। ভয়ের ব্যাপার হ’ল, এখনও অব্দি এই মস্তিষ্ক প্রদাহ সারানোর কোনও চিকিৎসা নেই এবং অধিকাংশ রোগী মারা যায়।
৫.
অভিজ্ঞ চিকিৎসক চোখে দেখেই রোগটি সনাক্ত করতে পারেন। জটিলতা না দেখা দিলে সাধারণত কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা লাগে না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে রক্তের অ্যান্টিবডি কিংবা নাকের জল থেকে পলিমারেজ চেইন রিয়্যাকশন পদ্ধতিতে ভাইরাস সনাক্ত করা যায়।
৬.
হাম ভাইরাস মারার কোনও ওষুধ হয়না। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, পর্যাপ্ত জল ও সামান্য সহযোগী চিকিৎসায় অধিকাংশ শিশুই সুস্থ হয়ে যায়। দুই ডোজ ভিটামিন-এ দেওয়া হয়। অন্যান্য কোনও জটিলতা দেখা দিলে সেইমতো চিকিৎসা লাগে।
৭.
নয় মাসের কম বয়সী শিশু, দুর্বল অনাক্রম্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি কিংবা অপুষ্ট বাচ্চাদের জটিলতা সম্পন্ন হাম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এদের জন্য আলাদাভাবে সতর্ক হওয়া দরকার।
৮.
রোগ প্রতিরোধের মূল অস্ত্র টিকাকরণ। সরকারি এবং ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পিডিয়াট্রিক্স (আই.এ.পি) দু-ধরনের শিডিউলেই হামের টিকা দেওয়া হয়। সরকারি ভাবে রুবেলার সাথে এবং আই.এ.পি মতে রুবেলা ও মাম্পসের সাথে দুটি বা তিনটি হামের টিকা দেওয়া হয়।
৯.
আশেপাশে কারো হাম হ’লে টিকাকরণ হয়নি কিংবা আগে হাম হয়নি এরকম শিশুকে রোগীর কাছ থেকে যথাসম্ভব সরিয়ে রাখতে হবে। হাঁচি-কাশি সংক্রান্ত সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পরিষ্কার করে হাত ধুয়ে ফেলা গুরুত্বপূর্ণ।
১০.
আবারও বলি, হাম এক ধরনের ভাইরাসঘটিত রোগ। এটি কোনও ‘অপদেবতার অভিশাপ’ বা ‘মায়ের দয়া’ নয়। স্নান বন্ধ করা, মাছ-মাংস ইত্যাদি প্রোটিন খাবার না দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এতে বরং রোগের ক্ষতিকর প্রভাব বেড়ে যেতে পারে।
Akdom choto choto bacha jara soba jonmogrohon koray tader kano hum hoy??
সদ্যোজাত শিশুর গায়ের র্যাশ হাম নয়। আসলে আমাদের দেশে সব ধরনের র্যাশকেই ভুল করে ‘হাম’ বলে ধরে নেওয়া হয়।
You have told measles is violent before 9 month age , then why vaccine is given after 9 month s of age?
খুব ভালো প্রশ্ন। আসলে সুস্থ, স্বাভাবিক বাচ্চার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া অনাক্রম্যতার সুরক্ষাকবচের জন্য সাধারণত ন’মাসের নিচে হাম হয় না। তাই ওই সময়ই টিকা দেওয়া হয়। কিছু বিরল ক্ষেত্রে ন’মাসের নিচে হাম হতে পারে কিন্তু টিকাকরণ কর্মসূচীর গাইডলাইন বানানোর সময় যেহেতু বিরলতম ক্ষেত্রগুলো বাদ দিয়েই ভাবা হয়, তাই..