আজকাল lady doctor কথাটা আলাদা করে ব্যবহার হয়না, আমি করতেও চাইনা, ডাক্তার কথাটা একটা gender neutral শব্দ, কিন্তু আজকে লিখছি কিছু মহিলা ডাক্তারের কথাই বিশেষভাবে! কাল একজন call করেছিলেন, বুঝতে পেরেছিলাম জীবনের সবকিছু balance করতে গিয়ে ভেঙে পড়েছেন তিনি, ওঁনার কান্না শুনে উপলব্ধি করলাম, আমরা সবাই কি একই অবস্থার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছি না?
জয়েন্ট-এ খুব ভালো rank করার পরেই অনেকেই বলেছিলো, “গাইনো” করিস, “মেয়েদের জন্য ওটাই ভালো”… আর সেই দিন থেকেই discrimination টা শুরু হয়ে গেলো…. রাত জেগে পড়াশোনা, ওয়ার্ডের ক্লান্তি, নিজের অনেক প্ৰিয় পোষাক, প্রিয় রং, অনেক বিয়েবাড়ি miss করার পরে ডাক্তার হলাম… Result খুব ভালো হলে অনেকে বলবে “মেয়েরা তেল দিয়ে অনার্স পায়”, আর consistently ভালো result করলে অবশ্য এই “তেল থিওরি” খাটে না, তাই সত্যি বলছি আমায় কেউ ওই “তেল দিয়ে অনার্স পায়” জাতীয় কথা বলেনি, এ আমার পরম সৌভাগ্য, কিন্তু আমার অনেক সহপাঠীদের এ কথা শুনতে হয়েছে, কিন্তু ওরা তেল দেয়নি, অনেক অনেক পড়েছিল!
তারপর ডাক্তার হলাম সবাই, স্টেথো গলায় নিতেই আমার ছেলে বন্ধুরা হয়ে গেলো, “ডাক্তারবাবু ” আর আমরা হলাম, “দিদি /নার্স /মাসি”… না, আমি আমার নার্সিং এর সহকর্মীদের বা ওয়ার্ডের মাসিদের কাজকে ছোট করছি না, “দিদি” ডাকের মধ্যেও কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা এখানেই যে একজন ছেলেকে যত সহজেই “ডাক্তারবাবু” হিসেবে accept করে নেওয়া হয়, একজন মেয়েকে ঠিক ওতোটা পড়াশোনা,অতগুলো পরীক্ষা, অতটা লড়াই এর পরেও ডাক্তার বলে মানতে অনেকেরই অসুবিধে হয়, আজও!
অনেকেই বলবেন মেয়েরা ঠিকমতন “ডিউটি” করতে চায় না, মেয়ে হওয়ার privilege নেয়, এটাও অনেকটা ওই আগের থেকে ধরে নেওয়া একটা বিষয় আর কি…. Biased opinion! আমাদের কলেজে আমরা সমান ডিউটি করেছি including night! এবার যদি মনে করেন sanitary napkin এর বিজ্ঞাপন এর মতন menstruation এর সময় ও মেয়েরা উড়বে, সেটা সম্ভব নয়…. তারপরেও menstruation নিয়েই আমাদের ৩৬ ঘন্টা ডিউটি করতে হয়েছে, আর সরকারি হাসপাতাল এর toilet এর অবস্থা নিশ্চই জানেন? আর তারপর PPE-র ভিতর ঢুকতে হয়েছে while bleeding?? তবুও menstruation বিষয়টা physiological, সে নিয়ে বিশেষ প্যানপ্যানে গল্প লেখার ইচ্ছে নেই আমার, যদিও “dysmenorrhea” বিষয়টাকে যখন পুরুষ ডাক্তার বা administrator রা “অজুহাত” বলে উপহাস করেন, তখন দুঃখ হয় বইকি! আমার তো এমন একজন দিদির ঘটনা জানা আছে যার tubal pregnancy র “abortion” এর ছুটিকেও “অজুহাত” বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে… অথচ ছেলে ডাক্তারদের কেউ কোথাও “ফাঁকি ম” দেয় না এমন দৃষ্টান্ত যে নেই তা নয়, তবুও এমন একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে, “মেয়েরা ফাঁকি দেবে”! এ কথা বানিয়ে বলছি না, আমার এক হাউস্টাফ দাদা মেডিসিন ইন্টার্নশীপের শেষদিন অকপটে স্বীকার করেছিল যে,”ইউনিটে দুজন মেয়ে আসছে শুনে চিন্তায় ছিলাম, কিন্তু তোরা খুব ভালো ডিউটি করেছিস”…!
যাই হোক এতো গেলো ছোটবেলার কথা… তারপর PG করে একজন মোটামুটি specialist হতে হতেই অবিবাহিত মহিলা ডাক্তারদের বিড়ম্বনা হলো “বিয়ে কবে করছিস?”, আর বিবাহিত দের ক্ষেত্রে,”বাচ্চা কবে নিচ্ছিস?”… এই সারাজীবনের “ভালো করে পড়” তখন মুহূর্তে হয়ে যায়, “আর কত পড়বি?”… মেয়েটি ক্যারিয়ারের যেই স্টেজ-এ থাকুক, যতটা struggle এর মধ্যে থাকুক তার সমস্ত struggle মিথ্যে, এতদিনের পড়াশোনা মিথ্যে, তখন তাকে সমাজের expectation পূরণ করতে “বাচ্চা নিতে হবে”…. কারণ বয়স ততদিনে তিরিশ ছুঁই ছুঁই…. Bond চলছে… Spouse posting চাইতে গেলে বলবে, “বরের কাছেই থাকতে হলে ডাক্তারি পড়তে এলে কেন?”, এদিকে খুব বিচক্ষণের মতন এরাই বলবে, “সময়ে বাচ্চা নাও “…
বাচ্চা হবার পরে situation আরো মারাত্মক… বাড়িতে বলবে “বাচ্চাকে সময় দিচ্ছ না, কেমন মা তুমি?”, হাসপাতালে বলবে,”সারাদিন মন বাড়িতেই পরে থাকে, কেমন ডাক্তার তুমি? “…. অনেকক্ষেত্রেই এই প্রশ্নটা আসে নিকট আত্মীয়দের কাছে থেকেই, কারণ সারাজীবনে এই মেয়েগুলোকে ঠিক মতন “শাসন” করা যায়নি, স্কুলে ভালো পড়াশোনা করেছে, তারপর ভালো result, কম বয়েসে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হয়ে গেছে, একমাত্র এই সন্তান ধারণের সময়টাতেই আচ্ছা করে বুঝিয়ে দেওয়া যায়, “তুমি তো ভালো মা নও”, অথচ পরিবারে সময় দিতে না পারা বাবাকে কেউ বলে না, “তুমি তো ভালো বাবা নও “….!
।মা বাবা দুজনেই emergency service এর সাথে যুক্ত, কিন্তু বাচ্চার অসুখে, autism -এ, জেদে, পেট খারাপে দায়ী কিন্তু মা! যে ডাক্তার, যে সারাজীবন নিজের ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিতেই শিখেছে, তার বাড়ির লোকও এতদিন সেটাতেই encourage করেছে, কিন্তু হঠাৎ বাচ্চা হবার পরেই তারাই বলতে শুরু করবে,”এবার থামো “… না, তখন আর থামা যায় না, ততদিনে আমাদের দুটি সন্তান, একটা শিশু আর আরেকটা প্র্যাক্টিস….! এতো বছরের সাধনার ফসল আমাদের প্র্যাক্টিস আর আমাদের ক্যারিয়ারও আমাদের সন্তানসম!
এই দীর্ঘ টানাপোড়েনে একটাই কথা বলবো সকলকে, “you all are doing your best “, society অনেকভাবে guilt feel করানোর চেষ্টা করবে, ignore it… আর এই লেখায় যেসব অতি-অসভ্য male -colleague দের কথা লিখলাম তাঁদের সংখ্যা কম, এমন অনেক ডাক্তার বন্ধু আছে, যারা মেয়ে বলে discriminate করেই নি, উল্টে menstruation এর ব্যথা বুঝতে পেরে বলেছে, “আমি দেখে নিচ্ছি, এই বেলাটা rest নিয়ে নে “,… এমন বন্ধুদের ভালোবাসা ❤️