Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

শেষকৃত্য

Varanasi, India - January 6, 2014: Four men are caring a corpse wrapped in silk and cowered with flowers in the narrow Varanasi Street, toward the burning place on the bank of river Ganges. They sing while the smell of burning incense is all around. In background are hanging goods from surrounding stores.
Dr. Shyamal Kumar Mondal

Dr. Shyamal Kumar Mondal

Pediatrician
My Other Posts
  • March 18, 2025
  • 7:00 am
  • No Comments

গোকুল কুন্ডুর স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে। সদ্যই হয়েছে। আজ সে তার সাধের দোকান খুলতে পারেনি। হাটখোলায় তার গালা মালের দোকান।

দোকানের বাইরে বারন্দায় থলে বোতল ঝুড়ি বস্তা হাতে নিয়ে খরিদ্দাররা বসে নিজেদের মধ্যে গুজ গুজ ফুস ফুস করছিল। সেই সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিল কানা কেষ্ট, হাতে একখানা ভাঙা একতারা,সে কৃষ্ণনাম করে।

সে বললে,- আজ গোকুল দোকান খুলবেনি গো। তার ইস্তিরি বিয়োগ হইছে।

কয়েকজন মুখে চুক চুক হুস হাস শব্দ করে । আপশোষের বহিঃপ্রকাশ না দোকান না খোলার জন্য হয়রানি সেটা পরিস্কার হলো না। কালু শেখ যার নিজেরই কয়খানা ভাঙাচোরা বিয়ে তার ঠিক নেই সে তামাশা করে বলল, – ক’ লম্বর গো ? ঝিঙেখালির না কৈজুড়ির ?

পান্তু বুড়ি এসেছিল একটা মুড়ির প্যাকেট নিতে। সে ছেড়ে কথা বলার পাত্রী নয়। কুন্ডুর দোকানের মুড়ি খেতে ভালো আর গোকুল তাকে পিসি ডাকে। দু’ পয়সা কমও নেয়। – চালুনি আবার সূঁচের ছ্যাঁদা খোঁজে। থুঃ, থুঃ, ঘেন্না পিত্তি নেই।

আরো দুু’ চারজন যারা ইতি উতি বসে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে একজন পা বাড়িয়ে অন্য দোকানে যাওয়ার চেষ্টা করল। সে খরিদ্দারটির হাতে সময় কম।

নকুল জানা তাকে বলল, – দাঁড়িয়ে যাও। বিশ বছর গোকুলের দোকানের মাল খাচ্ছি। কোনদিন দোকান খোলেনি, এমন হয়নি। তার পিতৃ বিয়োগের দিন দাহ কাজ সত্ত্বর শেষ করে সে দোকান খুলেছিল। তার রকম সকম আলাদীয়। কথায় কাজ হল। যে লোকটা যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছিল সে ও স্থানু হয়ে গেল।

নকুল জানার কথা শেষও হয়নি এমন সময় একটা রঙচটা ছোট্ট পাতলা লাল রঙের আদ্যিকালের মোটর সাইকেলের পেছনে এক বস্তা মাল নিয়ে গোকুলের অবয়ব দেখা গেল মোড়ের মাথায়। খুর খুর আওয়াজ করে আস্তে আস্তে তার মোটর যান এদিকে আসছে।

– বল্লুম না, সে ঠিক আসবেক। নকুল জানা আবারও সবাইকে আস্বস্ত করলো।

মুখটা আজ গম্ভীর গোকুলের। এমনিতেই তার হাঁড়ি পানা মুখ। কৃষ্ণবর্ণ শরীরটাও দশাসই। কদমছাঁট কাঁচা পাকা খুদে খুদে চুল। মাথার আকৃতিও বেশ বড়।

– ও গোকুল, শুনচি তোর নাকি, ইস্তিরি বিয়োগ হয়েছে?

– হ্যাঁ গো পিসি। সে আজ সগ্গে গেল। বুধি’রে তো তুমি চেনো পিসি, লক্ষীমন্ত বউ।

– সে আর চিনিনে। নক্ষীপুজোয় তোর বাড়িতে কত পেরসাদ খিচুড়ি খেইচি। বড় ভালো মেয়ে।

কথা বলতে বলতে গোকুল দোকানের ঝাঁপ তুললো। মোটর সাইকেলের পেছন থেকে বস্তাখানা দোকানের ভেতরে গুছিয়ে রেখে দোকানদারি শুরু করলো। একা হাতে গুছিয়ে মালপত্র দিল, গুনে গেঁথে পয়সা নিল। আর মাঝে মাঝে উদাসও হল।

অনেকক্ষণ সে একা হাতে দোকান সামলে যখন একটু হাঁফ ছাড়ার ফুরসৎ পেল তখন তার মনে একটা কথা ভেসে উঠলো। শ্বশুর বাড়িতে খবর গেছে। ছয় ক্রোশ পথ। সেখান থেকে নিশ্চয়ই এতক্ষণে লোকজন এসে এ বাড়ি পৌঁছে গেছে। গোকুলের শালা সান্টু পঞ্চায়েতের মেম্বার। তার হাঁক ডাক আছে। দিদির মৃত্যুতে তারা নিশ্চয় আসবে। তারা লোক সুবিধের নয়।

বিস্তর জল ঘোলা হয়েছিল যখন গোকুল বিন্দুকে এক সন্তান সহ বাড়িতে এনে তুলেছিল। থানা পুলিশ হওয়া কিছু আশ্চর্য ছিল নে। কোন রকমে সে যাত্রা শালাকে ঘুষ হিসেবে একটা দামি বাইক কিনে দিয়ে বেঁচেছিল। বিন্দুকে সে দু’চক্ষে দেখতে পারে না।

বুধিও সহ্য করতে পারত না বিন্দুকে। তবে শেষের দিকে তেমন অপছন্দও করত না বুধি। কাজে কর্মে বুধিকে বিস্তর সাহায্য করত সে। কোলের সন্তানকে আঁকড়ে কাজের লোকের মতো চব্বিশ ঘণ্টা সেবা করত তার মালকিনের।

প্রথম প্রথম খটাখটি তো হরদম হত। বিন্দু মুখ বুজে সহ্য করত। বিন্দু দখিন দেশের মেয়ে হয়েও ঝগড়ায় দড় নয়। তবে দিন তো সমান যায় না। বুধি যেবার বুকে পেটে খুব ব্যথা নিয়ে শয্যাশায়ী হল আর ডাক্তার অনুমান করলে পিত্তথলির প্রদাহ হয়েছে তখন বিন্দু সেবাযত্নের পরিমানটা বাড়িয়ে দিল। সে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে বুধির ঘরে হত্যে দিয়ে পড়ে রইল।

তাদের মানে ঐ দুই শত্রুর তখন বোঝা পড়াটা হয়ে একটা মিট মাট-এর পর্যায়ে এসে গোকুলকে ছাড় দিল তখন সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

গোকুলের সব ভালো তবে ঐ এক দোষ। দোষ গুন মিলেই তো মানুষ। আশে পাশে কোন মেলা পার্ব্বণ হলে সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা। মাথার ভেতরে অস্থিরতার ডুগডুগি বাজে। একা একাই তার বাহন বাজাজ এম এইট্টি নিয়ে সাঁজ বেলায় ঘুরে আসে। কত যে তার আনন্দ। মেলার আনাচে কানাচে ঘুরে ঘুরে সে কি খুঁজে বেড়ায় পাগলের মত? লোকে বলে গোকুল খ্যাপা। আলো আঁধারে হৈ হট্টগোল লোকের মধ্যে কেরোসিনের আলোয় কিম্বা ফকফকা জেনারেটর সাদা আলোয় গোকুল দিশেহারা হয়ে যায়। তার পকেটে মুঠো ভর্তি টাকা তবু সে কেনার মতো সামগ্রী খুঁজে পায় না। অবশেষে রঙ্গীন বাতাসা আর পাঁপড় কিনে হাতে নিয়ে শিশুর মতো আনন্দিত মুখে ঘরে ফেরে।

গোকুলের এক বুড়ি মাসি বলে, – গোকুল আমাদের মা-পাগল ছেলে ,সে তার হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে ফেরে।

এমনি এক রথের মেলায় মাটির হাঁড়ি কড়াই বিক্রি করতে এসেছিল বিরামনগরের হেমন্ত পাল আর সাথে ছিল তার অকাল বিধবা বোন বিন্দু। হেমন্তের সাথে গোকুলের আবার কি করে যেন সখ্যতা হয়। দুজনে বোনটির দুঃখ মোচনের জন্য অনেক চিন্তা ভাবনা করে এই সাব্যস্ত করে যে আপততঃ বিন্দু গোকুলের সাথে থাকুক। বাচ্চাটা দুটো ভাত তো পাবে পেটে দেওয়ার মত। হেমন্তের তো ভিখারির দশা। দয়ার শরীর গোকুল দুটি মানুষের ভরণপোষণের দ্বায়িত্ব নিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনে।

বাড়িতে উদয়াস্ত অশান্তি, অশ্রাব্য গালাগাল বুধির। বিন্দু গরুচোরের মত মুখ করে ঘরের বারান্দায় লুকিয়ে চোখের জল ফেলে। তবে বাচ্চাটা যখন দুটো খেতে পায় তখন আনন্দে তার চোখ ভিজে যায়। এই করতে করতে সবই গা সওয়া হয়ে যায় সময়ের যাঁতাকলে। বাচ্চাটা বুধির আঁচল টেনে কোলে উঠতে চায়। নিঃসন্তান বুধি তাকে ছুড়ে ফেলতে পারে না । একটা সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়। বিন্দু ধীরে ধীরে সংসার সামলানোর অধিকার পায় ।

এই অবসরে গোকুল সময় পায় তার ব্যবসার বৃদ্ধি ঘটাতে। জলঙ্গীর ছোটবিষ্ণুপুর ঘাটের ডাক জিতে পাঁচবছরের ইজারা নেয়। আর সেখানে ঘাটকির কাজে বসিয়ে দেয় তার বন্ধু-সম বসন্তকে। কৃতজ্ঞ বসন্ত রাতদিন এক করে গোকুলের অনুগত কর্মচারীর মত ব্যবসা দেখে।
সাথে বিড়ির পাতার আড়ৎ খোলে তার হাটখোলার দোকানের লাগোয়া। হাজার কাজের চাপে গোকুলের নাভিশ্বাস। তবুও সে নিরুত্তাপ। মধ্যে মধ্যে সে উদাস হয়ে যায়। ক্যাশবাক্সে হাত ঢুকিয়ে দোকানের আড়ার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে।

তবে বিন্দুর কেসটায় সেবার হুজ্জুতি হয়েছিল বুধির ভাইকে নিয়ে। একদিন দুপুরে দোকান থেকে বাড়ি ফিরে এসে গোকুল দেখে বিধুর ভাই সান্টু দু’ জন সাকরেদ নিয়ে এসে দিদির সাথে খুব শলা পরামর্শ করছে। সান্টু সেবারে পঞ্চায়েতের গ্রামসভার সদস্য হয়েছে। তার বদবুদ্ধি যে অন্য মাত্রার সেটা গোকুল বোঝে। আর বোঝে বলেই শালার দুষ্ট বুদ্ধি যাতে আর বৃদ্ধি না পায় তার একটা ব্যবস্থা করল। বিয়ের সময় এই সান্টুই কত ছোট ছিল। দ্বিরাগমনে দিদির সাথে এখানে এসে আর বাড়ি ফিরতে চায় না।

– শালাবাবু যে, কেমন আছো? তুমি তো শুনি খুব ব্যস্ত মানুষ? তা কিসে এলে?

ঔদ্ধত্য দেখিয়ে সান্টু বলল, – দরকারে আমরা পায়ে হেঁটেও আসতে পারি। এটা জনগনের প্রতি আমাদের কর্তব্য।

– সে তো বটেই ,তবে কিনা সময়ের দাম আছে। আমার মহাজন একটা লটারি জিতেছে, বুঝলে।

– তাতে আমার কি যায় আসে?

– তা ঠিক। তবে সাহাবাবুর বয়স হয়েছে লটারিতে পাওয়া বাইকটা আর চালাতে চান না। আমাকে বললে গোকুল, তোমার গাড়িখানা তো অনেক পুরোনো হয়ে গেছে তুমিই এটা কিনে নাও। সুযোগ সুবিধে মত বুঝে শুনে টাকাটা দিও।

আমি বললাম, – কি যে বলেন। আমার পুরোনোই সই। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

সান্টুর এটুকু বুদ্ধি আছে। তায় গ্রামের রাজনীতি করে। সে হাঁক দিয়ে বলে, – বুধি রে,ভাবছি একেবারে বিকেলেই ফিরবো। জামাইবাবু যখন দোকানে যাবে আমিও যাব তার সাথে যাব। তুই আমার জন্যে ভাত বসা।

এর পর সান্টু স্যাঙাৎদের বিদেয় করে দুপুরে গোকুলের সাথে একসঙ্গে খেতে বসে জামাইবাবুকে খুব তেল দিতে থাকে। এমনকি বিন্দুর বাচ্চাটাকে একবার কোলে তুলেও নেয়। তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা আর বলে না। বিন্দুর এবাড়িতে থাকা যে বেনিয়মের সেটাও খুব খারাপ মনে হল না তার কাছে।

বুধি নেই আর বুধির কোন পিছুটানও নেই। তবুও শেষের সময়টা সে বিন্দুর হ্যাংলা ছেলেটাকে কেমন চোখে হারাত। বাচ্চাটার খিদে পেলে বুধি চিৎকার করত। বিন্দুর ওপরে রাগ করতো। কেন তাকে সময় মত খেতে দেয়া হয় না, সে সব অভিযোগ করত । বোকা বুদ্ধু বিন্দু অনেক ভেবে চিন্তেও এই সম্পর্কের রসায়ন খুঁজে পেত না।

ভয়ে ভয়ে গোকুল তার বাড়ির কাছাকাছি এসে একটু সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করল। ছোট রাস্তার মুখে দেখা হল বাড়ির কাজের লোক রাধু মাসির সাথে।

– তুমি এয়েছো গো দাদা। ছোড়দা এট্টু গঙ্গাজল নিয়ে আসতে বল্লো। আমার বাড়িতে আছে।

এই ছোড়দা হল সান্টু। অনুমান করা গেল দিদির অকাল মৃত্যুর পর গোকুলের পৈতৃক বাড়ির দখল নিয়েছে সে। বিন্দুকে একবস্ত্রে হয়তো বিদায় দিয়েছে। প্রমাদ গনলো গোকুল। সরাসরি বাকযুদ্ধ বা প্যাঁজ পয়জারে সে সান্টুর সাথে পারবে না। তবে এটাই ভরসা আর পাঁচজন গেঁয়ো রাজনীতিকদের মত সান্টুও মোটাবুদ্ধির লোক। গুটি গুটি পায়ে পাঁচিল দেয়া বাড়ির চৌহদ্দিতে ঢুকতে গোকুলের কানে এল মৃদু কান্নার আওয়াজ। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে যে সে বিন্দু। জীবনের নিষ্ঠুরতম সমালোচককে হারিয়েও সে স্বজন হারানোর শোকতাপ সামাল দিতে পারছে না।

বুধির মৃত শরীরটা শায়িত আছে বারান্দায়। আর তার পায়ের কাছে বসে বিন্দু হাহুতাশ করে চলেছে। গোকুলের চোখে জল এল। বড় মায়া হল বুধির জন্য। কত শখ ছিল একটা সন্তানের। অপারগ গোকুল বলত, যা হচ্ছে তা তো ভগবানের হাত তুই মেনে নে বুধি। মানতে হত তাকে। তবে নানা তাবিজ কবজ মাদুলিতে হাত,গলা ভরিয়ে ফেলেছিল। উপোস ব্রত করতে করতে শরীরটাকে ঝাঁঝরা করে ফেলেছিল। গোকুলের কথা শুনতে চাইত না।

ভিতরে ভিতরে যে বড় অসুখ বাধিয়ে বসেছিল সেটা বুঝতে পারেনি গোকুল। শ্বাস কষ্টে ভুগতো আর বিন্দুকে শাপশাপান্ত করত। তবে হ্যাঁ শেষের দিকে সন্তানের শোকে আর উদ্বেল হত না বড়। বিন্দুর ছেলেটাকে কোলে নিয়ে হাঁফাত। আর অদ্ভুত ভাবে দু’বছরের ঐটুকু অপুষ্টিতে ভোগা বিড়াল ছানার মত বাচ্চাটা, ম্যাঁ ম্যাঁ করে বুধির গলা জড়িয়ে তার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে দিত।

বুধির সিঁথিতে থ্যাবড়া করে সিঁদুর দিয়েছে কেউ। একটা লালরঙের বেনারসি শাড়ি পরিয়েছে,পায়ে আলতা। সান্টুর সাগরেদরা তাকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। – দাদা আর দেরি করা যাবে না। গুছিয়ে নাও। আমরা রেডি। এখুনি গাড়ি চলে আসবে। নবাবপুরের শ্মশান অনেকটা দূর।

– শালা বাবুকে দেখছি না?

– সান্টুদা তো বাইরে গেল। ম্যাটাডোর আসছে কি না খোঁজ নিতে গেল।

– ও।

– আর বলবেন না পুচকে বাচ্চাটা তো দিদির কোলছাড়া হতে চায় না। মড়ার হাত ধরে ওখানেই বসা।

গোকুল খানিকটা বুঝলো আবার কিছুটা বুঝলো না।

– সান্টুদা জোর করে কোলে নিয়ে বোধ হয় চোখের আড়াল করাতে ওদিকে নিয়ে গেল।

গোকুলের করার বিশেষ কিছু ছিল না। পাড়া প্রতিবেশী দশ বারোজন লোক যারা সুখে দুঃখে পাশে থাকে বা সবার শ্মশান যাত্রায় সামিল হয় তারা এল। এলো চেনা পুরোহিত আর শেষ বিদায়ের সামগ্রী। সমস্বরে হরি বোল দিল। একটা রঙীন ছোট খাটের ব্যবস্থা করেছে সান্টু। শবযাত্রার সব ব্যবস্থা শেষ। ম্যাটাডোর এখানে ঢুকবে না। বড় রাস্তায় রাখতে হবে।

হন্তদন্ত হয়ে সান্টু ঢুকল।- জামাইবাবু, এসে গেছেন ? বেশ এবার তাহলে বেরোনো যাক। ও,বিন্দুদিদি হরিকে নাও গো।

কিন্তু দু’আনার হরিমাধব যে তার কোল থেকে নামবে তেমন ইঙ্গিত পাওয়া গেল না। সে সান্টুর কোলে দিব্যি আছে। টানতে গেলে আরো জোরে সান্টুকে চেপে ধরছে।

– থাক থাক ওকে ঘাঁটিও না।সকাল থেকে বিশেষ খায়নি। দাও বিন্দুদিদি একটা বাটিতে দুধ দাওতো।

বিন্দু হরিকে জোর করে না। একটা কাঁসার গেলাসে করে করে দুধ নিয়ে এনে সান্টুর হাতে ধরিয়ে দেয়।

শেষ যাত্রায় সময়ও কোল থেকে নামাতে পারা গেল না তাকে।

– চলো, ওকে নিয়েই যাই ।

চেনা পুরোহিত বলল, – গোকুল, বাবা, মুখাগ্নি করবে কে গো ?

এ ভাবনা তার মাথায় আসেনি। কারণ সংসারের সব ভাবনাই তো সামলাতো বিধু। এখন সামলাচ্ছে সান্টু।

– কাকা একথা তো আমি ভাবি নি। তাইতো কে করতে পারে?

মাথা চুলকে কোন কিনারা করতে পারলো না গোকুল। শব যাত্রা আটকে রইলো। বেলা পড়ে যায়। আর দেরি করলে আঁধার হয়ে যাবে। নবাবপুরের শ্মশানঘাটে আলো নেই। ফিরতে রাত হবে।

– চলুন ঠাকুর মশাই। দেখেন আমাদের হরিমাধব আছে না। আমি ওর হাত ছুঁইয়ে থাকবো। আমরা দুজনে মিলে মুখে-আগুন করে নেব। দিদি তো দিন রাত ‘ হরি হরি’ করতো।

আজ পূর্ণিমার রাত। গোকুল বুঝি ভুলে গেছে কলসুরের চন্ডিতলায় আজ কাত্যায়নী পুজোর মেলা বসবে। সে মেলাতে লোকজন কম হলেও কত দোকান বসে কত বাজি পোড়ে। সে সান্টুর মুখের দিকে তাকাল।

– কিছু বলবেন জামাইবাবু ?

– আজ পুর্ণিমা, কলসুরের চন্ডিতলায়…।

– আর বলতে হবে না। ফেরার পথে আপনি আর হরিমাধব ঘুরে আসবেন। পারবেন তো ওকে নিয়ে আপনার গাড়ি চালাতে ?

– আগে তো কখনও সঙ্গে নেইনি। এবার থেকে অভ্যাস করবো।

হরিধ্বনি দিতে দিতে বুধির শেষযাত্রা এগোল। বিন্দু চোখের জলে মুখ বুক ভাসিয়ে দিলো। সান্টুর পিঠে বাঁদরের মত আঁকড়ে ধরে হরিমাধব হাসছে। তার বাইক স্টার্ট নিলে আরো জোরে চেপে ধরলো সান্টুকে।

PrevPreviousস্ক্রাব টাইফাস – একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণের নাম
Nextরোজনামচায় রাত জাগাNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

আমার চাওয়া পাওয়া, আশা আকাঙ্খার কথা

November 2, 2025 No Comments

দেশের একজন নাগরিক এবং একজন বৈধ ভোটার হিসেবে আমার দাবি এবং ন্যায্য পাওনা যে (১) আমার নাম ভোটার তালিকায় থাকুক যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারি,

আমাদের প্রতিবাদের ভাষাও সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন

November 2, 2025 No Comments

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলে বেড়াচ্ছিলেন যে এসআইআর করতে দেবেন না, ঠিক তখনই, মানে আজ থেকে মাস দুই আগে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা জরুরি ডিউটির চিঠি পাচ্ছিলেন,

এবার পালা ভেনেজুয়েলা

November 2, 2025 No Comments

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমের শোষণ ও লুণ্ঠনকারী সাম্রাজ্যবাদী জোটের পরিকল্পনায় ও পরিচালনায়  – যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া প্রমুখ দেশ গৃহযুদ্ধে চূর্ণ; যখন দীর্ঘ যুদ্ধ, অবিরাম

।। ফিল্ড ডায়েরি ।। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী উত্তরবঙ্গ, অক্টোবর, ২০২৫

November 1, 2025 No Comments

প্রাইমারি ডিজাস্টার রেসপন্স হিসেবে বন্যা ও ভূমিধ্বসে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সপ্তাহব্যাপী অভয়া স্বাস্থ্য শিবিরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আমরা এক এক করে সকলের সাথে ভাগ করে

স্বপ্নকথা

November 1, 2025 No Comments

আমাদের সময়ে মেডিকেল কলেজগুলোয় ডাকসাইটে মহিলা বস(মানে শিক্ষক) ছিলেন হাতে গোনা। তাও শুধুই পেডিয়াট্রিক্স আর গাইনিতে। পেডিয়াট্রিক্সে ছিলেন প্রফেসর শান্তি ইন্দ্র। আমি কোনওদিনও তাঁর ক্লাস

সাম্প্রতিক পোস্ট

আমার চাওয়া পাওয়া, আশা আকাঙ্খার কথা

Dr. Samudra Sengupta November 2, 2025

আমাদের প্রতিবাদের ভাষাও সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন

Satabdi Das November 2, 2025

এবার পালা ভেনেজুয়েলা

Bappaditya Roy November 2, 2025

।। ফিল্ড ডায়েরি ।। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী উত্তরবঙ্গ, অক্টোবর, ২০২৫

West Bengal Junior Doctors Front November 1, 2025

স্বপ্নকথা

Dr. Arunachal Datta Choudhury November 1, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

586633
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]