বাবা, আমার হাতটা ধরো, সাবধানে চলো, পড়ে যাবে। বাবাও এমনি বলতো।
আমার ওপর রাগ করে কতক্ষণ না খেয়ে থাকবে, আমিও এখন মাকে বলি। আগে শুনতাম। আগে বাইরের গেলে বাবা টাকা দিতো। তারপর মাকে জড়িয়ে ধরলে আরও দু পাঁচ টাকা পাওয়া যেত। বাবা জানতেও পারতো না। বাজার খরচ থেকে জমানো, বা বাবা যখন জামা প্যান্ট কাচতে দিতো, পকেট থেকে পাওয়া। টাকাগুলো থাকতো বালিশের তলায়, তোষকের তলায় পায়ের দিকে, রান্না ঘরে গরম মশলার শিশির তলায়। এখন মা মাঝে মাঝে হাত খরচ চায়, আগে দেখে নেয় বাবা কত দুরে আছে। আচ্ছা মা, এই টাকাগুলো নিয়ে তুমি কী করো? কী আর করবো, তুই দিচ্ছিস আমি হাত পেতে নিচ্ছি, এতেই আনন্দ।
ডাক্তারিতে পেশেন্টের হিস্ট্রি নিতে হয়। তার মধ্যে থাকে ফ্যামিলি হিস্ট্রি। বাবা মায়ের কোনো অসুখ ছিল কী না, ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন কতো ছেলে মেয়েকে দেখি বলতে বলতে আনমনা হয়ে যায়। হয়তো মনে পড়ে গেল পুরোনো দিনের কিছু কথা।
জিজ্ঞেস করলাম, এতো দিন বাচ্চা নেবার কথা কেন ভাবিস নি? এখন বয়স বেড়ে গেলো? আসলো মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসায় চলছিল, নিজেদের কথা ভাবার সময় পাইনি। তাছাড়া খরচটাও একটা ব্যাপার স্যার।
আমাদের শুধু বৃদ্ধাশ্রমই চোখে পরে, ঘরে ঘরে এতো ভালবাসা কেন চোখে পড়ে না। প্রবাসী ছেলে মেয়েগুলোর দোষ দেখি, দেশে বাবা মাদের কেমন রেখে দিয়েছে। আসল গল্পগুলো চোখে পরে না, তাদের উৎকণ্ঠা, দুরে থেকেও সব দায়িত্ব পালন।
আমার বাবা মা যেন থাকে দুধে ভাতে। 