বারো ক্লাসে যারা সেবার লক্ষ্যে ডাক্তারী পড়তে আসবি বলছিস তোদের আমি বলবো স্বপ্নটা থাকুক। আমরা বুড়োরা খুব খারাপ। আমরা জেনে গেছি কিসে কি হয় না। কি হবে না জানতে চাইলে আমাদের সাথে কথা বল সব বুঝিয়ে দেবো। কারণ আমরা হতে পারিনি। তাই আমরা সেটাই বোঝাবো।
আমরা ডাক্তারী পাশ করে কর্পোরেটের জালে জড়িয়ে গেছি, সরকারী ভিক্ষাজীবী হয়েছি, চেম্বারে দুটো রোগীর আশায় হাপিত্যেস করতে জানি।
আমরা তো কেউ বিনায়ক সেন, নরেন্দ্র দাভালকর বা শঙ্কর গুহ নিয়োগী কি নিদেনপক্ষে পুণ্যব্রত গুণ হতে পারিনি। আমাদের এই হতে না পারাটা আমাদের পীড়া দেয়।
আমরা তা বলে কাজ করি না? আলবাত করি। দিনরাত এক করে খেটে কাজ করি। না খেয়ে কাজ করি। বাড়ির থেকে দূরে, সপ্তাহে একদিন সন্তানের মুখ দেখে কাজ করি। তবু আমাদের এই খাটনিটা সেবা নয়। পরিষেবা। অর্থের বিনিময়ে আমাদের এই আত্মত্যাগ কিনে নেওয়া হয়। রক্ত ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করলেও আমরা রক্তচোষা।
কাজেই তোরা যখন বলছিস মানুষের সেবা করবি বলে ডাক্তার হতে চাস আমরা একটা ফ্রাস্ট্রেশনের হাসি হাসছি। মানুষের সেবা। আয় না, আসলেই বুঝবি কত ধানে কত চাল।
একদম এই কথায় কান দিবি না। দিলে আমার মতো কান নিয়ে পালায় মানুষের মতো অবস্থা হবে। ফার্স্ট ইয়ার থেকে শুনে আসছি ডাক্তারী পড়ে কিছু হয় না। সেই শুনে গানবাজনা করতে লাগলাম বেশী করে 😛
কে বলতে পারে তোদের ভেতর থেকেই আরেকজন বিনায়ক সেন উঠে আসবে না। আরজিকর-এ তোরাই আবার শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলবি।
আমাদের যাদের হাতে পায়ে সরকারী বা বেসরকারী বেড়ি পড়েছে তারা তোদের নিয়ে হাসবো। শুনবি না।
যতদিন না সরকার বীমার ধোঁয়াশাময় স্বপ্ন কুহকের বদলে সবার জন্য স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করছে,ততদিন এই সবই ব্যর্থ।
বিনায়ক সেন, শঙ্কর গুহ নিয়োগী এঁরা অন্য ভাবে ভেবেছিলেন।
এঁদের পথে চলেছেন অননুকরণীয় পুণ্যদা।
আমি রব হতাশের দলে।
খুপরিতে কম পয়সায় দেখা বা বিনা পয়সায় দেখা সম্পূর্ণই আত্মসুখ।অহঙ্কারের নামান্তর।