তিন বছর গা ঢাকা দেওয়ার পরে মেডিকেল কলেজ ‘দখল’-এর খেলায় আবার নখ দাঁত বের করে নেমেছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটের রেজাল্টের পরদিন থেকেই শুরু হয়েছে অতি উৎসাহে থ্রেট-এর রাজনীতি। শুনতে অবাক লাগলেও যেটা হচ্ছে, চটি চাটা ডাক্তার প্রফেসররা ফার্স্ট ইয়ার-সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে বলছেন যে তৃণমূল করতে হবে, নাহলে পরীক্ষায় নাম্বার পাওয়া যাবে না, WBMC থেকে রেজিস্ট্রেশন ক্যানসেল করা হবে। (অলরেডি এই বিষয়ক থ্রেট-এর কিছু রেকর্ডিং জোগাড় করা হয়েছে)
মেডিকেল কলেজে মেয়েদের হোস্টেল নিয়ে আন্দোলন চলছে বেশ কিছু দিন। দাবী উঠছে স্বচ্ছ ভাবে হোস্টেল এলোটমেন্টের জন্য, এক একটা রুমে ছয় জন/সাত জন কে জোর করে না রেখে কলেজের ক্যান্টিন বিল্ডিং-এর হোস্টেলের তিনটে ফ্লোরে যাতে মেয়েদের স্বচ্ছভাবে সিট ভাগ করা হয় তার জন্যে।
আর অন্যদিকে, তৃণমূলের ধামাধারী ম্যাডাম (!) প্রকাশ্যে বলছেন এইরকম গাদাগাদি করে একটা রুমে সাত জন করে থাকাটাই দস্তুর। তার প্রতিবাদ করলে সেই মেয়েদের ধরে ধরে চিহ্নিত করে ফেল করানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আর বলা হচ্ছে যে তৃণমূলজয়েন করো। আলাদা সুবিধা দিয়ে ভালো রুম দেওয়া হবে। আন্দোলন করা যাবে না। চরম মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
এঁরা সকলেই ভুলে যাচ্ছেন যে অতি-আত্মবিশ্বাস সবাইকেই ডোবায়। সমস্ত ছাত্র ছাত্রীরা এতে ভয় তো আর পাচ্ছে নাই, বরং আরও রাগছে, বিরক্ত হচ্ছে, পাল্টা প্রতিরোধের জন্যে তৈরী হচ্ছে। জনগণ ক্ষেপলে কে কখন কি করে বসে সেটা বুঝতে পারা কিন্তু এই শাসক দলগুলোর কল্পনার অনেক বাইরে।
উপর থেকে নাকি ‘নির্দেশ’ এসেছে দু’মাসের মধ্যে সমস্ত বিরোধী স্বর (মনে রাখতে হবে কলকাতা মেডিকেল কলেজ এর স্টুডেন্ট ইউনিয়নে এখন তৃণমূল নেই, ছাত্র ছাত্রীরা নির্বাচন করে যে ইউনিয়নকে এনেছে তাকে ভেঙে না ফেললে বহু ফান্ডের টাকা নয়ছয় করতে পারছে না তৃণমূল।) মেডিকেল কাউন্সিলের ইলেকশনের সময়ও আমরা দেখেছিলাম কিভাবে এরা অগণতান্ত্রিক ভাবে ভোট লুঠ করে জিতেছিল। ছাত্রছাত্রীদের লড়ে নেওয়া গণতান্ত্রিক ইউনিয়নকে ভেঙে দিয়ে আবার শাসকদলের দাদাগিরি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আবারও উঠে পড়ে লেগেছে তারা। কিন্তু একটা জিনিস সকলেই ভুলে যাচ্ছে যে মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা কিন্তু নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার টিকিয়ে রাখার লড়াই চিরকাল দাঁতে দাঁত চেপে করে এসেছে। বিগত দেড় বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার না করে এবং শাসকের তাঁবেদারি না করেও যে স্বচ্ছতার সাথে ছাত্রছাত্রীদের অধিকারপূরণ করা সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছে মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ইউনিয়ন। ফলে সবাইকে নিজেদের ক্ষমতার অন্ধ আনুগত্যের বশে আনার যে প্রজেক্ট নিচ্ছে শাসক দল (নতুন কিছু না, এরকম জিনিস আগেও দেখেছি আমরা) তার ফলাফল কি হতে পারে সেটা ইতিহাস (বা বর্তমান) থেকে শিক্ষা নিক ডাক্তার নামের কলঙ্ক এই শাসক দলের ধামাধারীরা।