বাঙালির এত কাঙাল দিনেও একটা জিনিস দেখে বেশ ভালো লাগছে, তার মার্জিত শব্দচয়ন এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের সম্ভ্রম রক্ষার প্রচেষ্টা কিন্তু অক্ষুণ্ণ আছে। তাই তারা গ্রামের প্রান্তিক মানুষটিকে ভাতাজীবী বললে প্রতিবাদ করছে, হাজার টাকায় মানুষ বিক্রি হয়ে গেছে শুনলে অস্বীকার করছে। অনেকে তো আবার ভাতাকে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ বলছে। আসলে নচিকেতা তো বলেই গেছেন, “জিতে গেলে হিপ হিপ হুররে শুনবে তুমি, হেরে গেলেই শেম শেম”… তাই আজ চারিদিকে ভাতার জয়জয়কার।।
আজ থেকে আরো ৫০০টা ভোট হেরে গেলেও বলে যাবো, ভাতার রাজনীতি অন্ধকারের পথেই আমাদের ঠেলছে। এবং বড়রা তো বলেই গেছেন, জেতাটাই আসল নয়, লড়াইটাই আসল। তাই ভোটে জেতাটাই সব নয়, আদর্শটাই আসল।
গ্রামে যে মহিলা ১০০০ টাকা পাচ্ছে, তার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কোনো রূপরেখা নেই। তার এই ভাতার উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে ওঠার কোনো পথদিশা নেই। সেই ভাতার কী দাম? সেই ভাতার কি ভবিষ্যৎ?
আর এই ভাতা কে দেবে? বড় শিল্প বলতে রয়েছে চপশিল্প। রেভেন্যু আসবে কোত্থেকে? মধ্যবিত্তের পকেট থেকে? আর তুমি সেই মধ্যবিত্তের চাকরি খাবে, তাকে লক্ষ লক্ষ টাকার চাকরি বিক্রি করবে! সেই মানুষটাই আবার চাকরি নিয়ে লোক ঠকাবে সেই টাকা তুলে আনতে।
এই বাংলা একটা অদ্ভুত ভিসিয়াস সাইকেলে ঢুকে পড়েছে, সে যত হাত-পা ছুঁড়ছে, আরো গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য জুড়ে দুর্নীতি, আজ একটা সুলভ শৌচালয়ে ঢুকলেও মনে হয় কাটমানি নিয়ে যেতে হবে- লোকের সব কেমন গা সওয়া হয়ে গেছে, নাকি এছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই!
তবু নিজেদের যেন না ঠকাই! ভাতাও যা, দমদমে বুড়ি ভিখারিটার বাটিতে যা- দু’টো এক, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দু’টোর আর্থিক মূল্যও প্রায় এক, বরং দমদমেরটা হয়তো বেশি। পার্থক্য একটাই, দমদমের বুড়ির ভিক্ষায় কোনো দু’নম্বরি নেই, ভাতায় আছে। সবচেয়ে বড় কথা দমদমের বুড়ির আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই, গ্রামের মেয়েটার বাচ্চা আছে, তাকেও কি আমরা ভাতাজীবী বানিয়েই রাখবো? সাউথ সিটির লিবেরালদের সেই প্রশ্নটা ভাবারও দরকার আছে।