আমাদের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা উদ্বিগ্ন। ততোধিক উদ্বিগ্ন মিডিয়া। এজন্য তাঁর চিকিৎসার খুঁটিনাটি বিবরণ আমাদের কাছে শব্দ-দৃশ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি কি এতই নিরীহ?
দুটি নজরে আসার মতো বিষয় আমরা ভেবে দেখতে পারি – (১) রোগীর ব্যক্তিগত থাকার inviolable অধিকার, এবং, এরই অনুসারী, (২) dying with dignity.
আগে দ্বিতীয়টি বলি। ভারত পার্টিশনের সময়ে অন্যতম বীভৎস এবং অনালোচিত দিক হল যারা দাঙ্গা বা দুর্ভিক্ষের বলি হয়েছে তারা মৃত্যুর পরেও শেয়াল কুকুরের মতো মর্যাদাহীন ব্যবহার পেয়েছে। সমাজ উদাসীন থেকেছে। অথচ মেডিসিনের জগতে অন্যতম আলোচিত প্রসঙ্গ হল মর্যাদার সঙ্গে মৃত্যু হবে কিনা।
এবার বুদ্ধবাবুকে নিয়ে এ মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল – যে মানুষটি নিভৃতে থাকতে চান তাঁকে কেন পাবলিক করা হবে? এ ধৃষ্টতা মিডিয়াকে কে দিয়েছে। আমি মনে করি, দিয়েছি আমরা, সমাজের “সুধীজনেরাই”।
২০০৪ সালের দিকে তাকালে আমরা দেখবো, সাদ্দাম হুসেইন ধরা পড়ার পরে সাদ্দামের দাঁত, মুখ, জিভ দেখার ভিডিও আমেরিকান মিডিয়া টিভিতে দেখিছিল। আমরা তৃপ্তি নিয়ে দেখেছিলাম। এই দুষ্কর্ম সামাজিক মান্যতা পেয়েছিল সেদিন থেকে। নিউ ইয়র্ক টাইমস বা ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে এর বিরুদ্ধ মতও প্রকাশিত হয়েছে। আমরা গা করিনি। সবচেয়ে বীভৎস ছিল সাদ্দামের সেল থেকে বের করে ফাঁসীতে ঝোলানো, পুরোটাই টিভিতে দীর্ঘ সময় ধরে দেখানো। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ ফিল্ম দেখার মতো উত্তেজনা নিয়ে দেখেছিল।
২০২৩-এ বুদ্ধবাবুকে দিয়ে এ নৃশংসতার যতি টানা হোক। মেডিক্যাল কমিউনিটি কাজটি শুরু করতে পারে। শুরু হোক পথ চলা। শুরু হোক বিরুদ্ধ কথা বলা।
এসব লেখা কেউ পড়ে না।রগরগে খবর বিনা গীত নাই।আমি অন্তর্জালে যে খবরের কাগজ দেখি, তাতেই যৌনবিকৃতি আর নৃশংস ঘটনার ছড়াছড়ি।
মুক্ত বাণিজ্য আমাদের লোভ আর রিংরসা বাড়িয়ে চলেছে। আমরা বিজ্ঞাপনের জৌলুসে মানবিক মুখ ঢেকে, ক্ষুদ্রতম বৃত্তের মধ্যে বাঁধা পড়েছি।
সভ্যতা, ভদ্রতা শিক্ষা স্বাস্থ্য সব এ্যাখন ক্রয়যোগ্য।এ্যামনকি হয়তো প্রশ্নপত্রও।
তাৎক্ষণিক, তাৎক্ষণিকতর,তাৎক্ষণিকতম উত্তেজনা খোঁজার অন্য নাম জীবন।
টি আর পি বাড়ানোর জন্য মিডিয়া যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছা সেখানে নেই।