জীবনের সব বৃত্ত কি সম্পূর্ণ হয়? হয় না। বিশেষতঃ, নিতান্ত মধ্যমেধার এক নামগোত্রহীন অমনোযোগী বালক, দেবী সরস্বতী নিজে থেকে যাকে প্রায় কিছুই দেননি – নাছোড়বান্দা হয়ে তাঁর পায়ে লেগে থেকে, চেয়েচিন্তে, কেড়েকুড়ে যাকে বিদ্যের ঝুলি ভরাতে হয়েছে, তার কোনও সুখবৃত্তের সম্পাদ্যই সহজে মেলে না।
তবু, কখনও এই তিপ্পান্নর গোধূলিতেও সময় আসে, মনে হয়, কিছু ত করা গেল।
আজ থেকে ঠিক পাঁচবছর আগে, সেও ত বুড়ো বয়সেরই কীর্তি, সাগরপারে উজিয়ে গিয়ে লন্ডনের Royal College of Obstetricians and Gynaecologists থেকে MRCOG হাসিল করে এসেছিলাম। সেই যে, যেসব ডিগ্রী বাগিয়ে উত্তমকুমার বিলেতের প্লেন হাত নাড়তে নাড়তে থেকে নামতেন, আর এখন কর্পোরেটের মহারথীরা নিয়ে ঘরে ফেরেন দেশের সেবার জন্য- বিশ্বেস করুন, এ এক্কেবারে সেই চিজ।
অবগতজনেরা জানবেন, এ গ্রহের কোনও মহাদেশে এ শিরোপার কোনও অনাদর নেই। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যার বহু বিষয়ে এখনও সারা দুনিয়ায় ওই Royal College-এর কথাই শেষ কথা। তবে এ জিনিস হাতে পেয়েও আমি কেন সরকারী হাসপাতালের এককোণে অনুপ্রাণিত সরকারের পে কমিশন আর ডিএ-র দিকে তাকিয়ে হাপিত্যেশ করে পড়ে থাকলাম, সে গল্প অন্য।
যাকগে। আজ বিশ্বায়নের দিনে সেই পরীক্ষা এবারে লন্ডনের সীমা ছাড়িয়ে প্রথমবারের মত কলকাতায়। সাথে সেকেন্ডের কাঁটার সাথে তাল রেখে এপাশে দুবাই, ওধারে সিঙ্গাপুর। আক্ষরিক অর্থেই এক সর্বতোমান্য আন্তর্জাতিক উপাধিকে বিশ্বায়িত করার চেষ্টা। তাতে শেষ লাভ কিন্তু আপনাদেরই, কারণ এখানে জল বা তেল, কোনও কারবারই চলবে না – তা সে যতই ‘ইংরাজের দিন গিয়াছে’ হোক না কেন।
এইবারে টেবলের দিক গেছে পাল্টে, এবারে আমিই অন্যতম পরীক্ষক। এম্নি এম্নি নয়, সেও রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষক হওয়ার যোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতা প্রমাণ করে তবেই। MRCOG Part 3 বড় ভয়ানক পরীক্ষা – যতজন পরীক্ষা দেনেওয়ালা, লেনেওয়ালা তার থেকে বেশী। তিনঘন্টার রুদ্ধশ্বাস লড়াই প্রমাণ এবং বিচারের। মজার ব্যাপার হল, পরীক্ষার্থীরা কিন্তু সকলেই এদেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী, অনেকেই হয়ত ইতিমধ্যেই আপনাদের কারও চিকিৎসক।
দুদিন ধরে চলল সে কর্মকাণ্ড। ভালো লাগছে। আজ সত্যিই খুব ভালো লাগছে। এই অবধিও পৌঁছাতে পারলাম তাহলে!!
ধন্যবাদ হে, সাগরপারের College আমার, ঘরের কেউ ত আর পুঁছল না।
“সীমানা পেরোতে চাই, জীবনের গান গাই,
আশা রাখি পেয়ে যাব বাকী দু আনা।”
(কবীর সুমন)