বাংলায় লিখি বটে, কিন্তু ভাষাজ্ঞান খুব প্রখর নয়। বাংলা ব্যাকরণ খুব মন দিয়েই পড়েছিলাম, দ্বিতীয় পত্রে ব্যাকরণ বাবদ নম্বরটা পুরো মার্কস পাওয়ার তাগিদ থাকতো। তাছাড়া বাংলার শিক্ষক প্রসাদবাবু আমার খুব প্রিয় টিচার ছিলেন। তাঁর পড়ানোর অননুকরণীয় ভঙ্গির কারণেও তিনি ভীষণ পপুলার ছিলেন। তাই স্কুলে পড়তে পড়তে একসময় ভেবেছিলাম, বাংলা শিক্ষক হবো, কোএড স্কুলে বোষ্টম পদাবলী পড়াবো। কিংবা গোবিন্দদাস আওড়াবো :
কন্টক গাড়ি কমলসম পদতল
মঞ্জীর চিরহী ঝাঁপি।
গাগরি বারি ঢরি করি পিছল
চলতহি অঙ্গুলি চাপি।।
তবে ব্যাকরণের প্রত্যয় চ্যাপ্টারটা বিশেষ ম্যানেজ করতে পারিনি উঁচু ক্লাসে উঠেও।
আর, সেভেন এইটে যে সংস্কৃত ভাষার কোর্স ছিল, সেটা আমার পড়া হয়নি। পরিবর্তে জুটেছিল ফার্সী। সেই কারণে ভারতীয় ভাষাসমূহের ঠাকুর্দার সাথে আমার পরিচয় ঘটেনি।
বাংলা বানানের ব্যাপারে একটা স্বতস্ফূর্ত রিফ্লেক্স কাজ করে। অভিধানগত গভীরতার কিস্যু ফাণ্ডা নেই আমার।
চোখে দেখে যদি মনে হয় বানানটা বেঠিক, তখন সাবধান হয়ে যাই। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন সাহিত্য, পত্রিকা, সংবাদপত্র, এমনকি ঠোঙা খুলেও পড়ার সুফল এটা।
সেই সাহসে এখানে পোস্টাই।
কিন্তু ইদানিং বিশুদ্ধবাদীদের কিছু কথাবার্তা চোখে পড়ছে। একটু ভীত হয়ে পড়ছি। তাহলে কি সলিড ফাউণ্ডেশন না থাকলে লেখালিখি করা ঠিক হবেনা?
একেই তো চর্চার অভাবে, ইংলিশ মিডিয়ামের দাপটে পরের জেন ওয়াই, ভাষাটাকে আমল দেয় না, তার ওপর যদি চাপে পড়ে, তাহলে লোকজন কেটে বা ফুটে যাবে।
আগে আমিও বানান ভুল নিয়ে খানিক অসহিষ্ণু হতাম। কিন্তু এখন সহিষ্ণুতা বাড়িয়েছি। তার প্রধান কারণ, আফটার অল, বাংলা অক্ষরে লিখছে তো। সেটাই যথেষ্ট মনে হচ্ছে। ক্রমাগত লিখতে লিখতে জেনে যাবে, ভাষার শুদ্ধতাটাও আয়ত্ব করে ফেলবে সময় দিলে। কাজেই নিরাশ না করাই ভালো।
ভাষার ডেথ সার্টিফিকেট যতটা দেরিতে লেখা যায়!
আরো একটা ভেতর চালাকি একটু বেশি হারেই করে থাকি। সেটা হল, পরিচিত ইংরেজি শব্দের ব্যবহার। আমি যেহেতু বাংলা টেক্সট সাবজেক্ট লিখছি না, আর লিখছি তো সামাজিক মাধ্যমে, সুতরাং সহজবোধ্য ইংরেজি শব্দ ব্যবহারে আমার অরুচি তো নেইই, উল্টে সাবলীল বোধ করি।
দেখি, লোকজন কী বলে!
খিল্লিও করতে পারেন।
নো পবলেম। উল্টে ভালো লাগবে।