অনেকেরই ধারণা আমি ডাক্তার। হ্যাঁ,ডাক্তার ছিলাম, কিন্তু এখন নই। আপনারা অনেকেই সেটা জানেনও।
এই মাত্র এক বাধ্যতামূলক ডাক্তারি সেরে ফিরলাম। আমার কাছের এক আত্মীয়র হঠাৎ পেটব্যথা বমি। তাঁরা অন্য পরিচিত ডাক্তারের থেকে টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে ওষুধ শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যথা আর বমি বাড়ছিল। অগত্যা…
এই প্রসঙ্গে পুরোনো একটা কনফিউশন বিবৃত করি। সোদপুরে মফস্বলি প্র্যাকটিস করি তখন। অন্য ডাক্তারবাবুকে দেখানো রোগীরা যখন আসতেন আমার কাছে কিছুতেই নিজের স্ট্যাটাস বুঝতে পারতাম না।
একদল বলতেন, – স্যার, লোকাল ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম। উনি পারলেন না, তাই আপনার কাছে।
অন্যদল বলতেন, – কলকাতায় (বা ভেলোর-চণ্ডীগড়ে) বড় ডাক্তার দেখিয়েছি। উনি বলেছেন, ঝামেলা হলে লোকাল কাউকে দেখিয়ে নিতে।
বুঝতে পারতাম না, আমি লোকাল না গ্লোবাল।
তো আজকে বহুদিন বাদে আমার লোকাল ডাক্তারের ভূমিকা। টেলিমেডিসিন বলেছেন লোকাল কাউকে দেখিয়ে নিতে। শীতের রাত দশটায়। তা হোক। যাওয়া মাত্রই টেলিমেডিসিন ফোনে আমাকে বলতে লাগলেন কী কী ভাবতে হবে আর করতে হবে। তা বলুন। বুঝেছি, এ আমার নতুন জীবনের অঙ্গ।
তার মধ্যেই মাথা ঠাণ্ডা রেখে জ্ঞান বুদ্ধিমত অ্যাডভাইস লিখে বেরোতে যাব, এমন সময় পাশের বাড়ির যে যুবকটি ওষুধ কিনে আনবেন, তিনি এলেন। বেরোবার মুখে বেশ কড়া গলায় বললেন, ফোনে ডাক্তারবাবু যা যা বলল সেই মত ওষুধ দিয়েছেন তো?
অনুগত আমি মাথা নাড়লাম। তার পরের প্রশ্নটার জন্য মোটেই তৈরি ছিলাম না।
– কী বুঝলেন, পজিটিভ না নেগেটিভ?
– মানে?
– বুঝলেন না, আরে আপনাদের ওই করোনা!
– না সে রকম কিছু তো,
আমতা আমতা করতেই, সেই প্রাজ্ঞ যুবক ফিসফিস করে বললেন, – না না, করোনাতে পেটব্যথা পাগলামো গা চুলকানি সব কিছুই হতে পারে। তা আপনি তো পেট টিপে দেখলেন। রোগটা তো নাসাল (উচ্চারণ অপরিবর্তিত)। অনেকক্ষণ তো নিঃশ্বাস নিলেন ও ঘরে। কী মনে হল? পজিটিভ না নেগেটিভ?
অর্থাৎ আমাকে নিঃশ্বাস নিয়ে আর পেট টিপে বলে দিতে হবে পেটব্যথার রোগীর করোনা পজিটিভ না নেগেটিভ।
এত সব বিভ্রান্তির মধ্যে, না, আমাকে কেউ আর ডাক্তারি করতে অনুরোধ করবেন না প্লিজ। যথেষ্ট হয়েছে।
(আমার সম্পাদকের ব্যস্ততার কারণে অনুমতি ব্যতিরেকেই নিবেদিত)