সারা পৃথিবী জুড়ে এখন একটাই চর্চা, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন ৫ই জুনে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র “PD 1 blockade in mismatch repair deficient locally advanced colorectal cancer”, যেখানে বলা হচ্ছে যে একটা ম্যাজিক ড্রাগ বাজারে এসে গেছে যা দিয়ে যাবতীয় ক্যান্সার নাকি সেরে যাবে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা সার্জারী ছাড়াই। সত্যি কি তাই? দেখা যাক।
যে ট্রায়ালটি প্রকাশিত হয়েছে সেটি কি বলছে? ট্রায়ালটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর আমেরিকা গভর্নমেন্টের কাছে NCT04165772 এবং এটি একটি ফেস ২ হিউম্যান ট্রায়াল, এর নাম “Study of Induction PD-1 Blockade in Subjects With Locally Advanced Mismatch Repair Deficient Solid Tumors”
সবার আগেই জানা যাক এই PD1 জিনিস টি কি। PD1 হলো একটা সেল সাইকেল চেক পয়েন্ট প্রোটিন, যা কিনা যে কোনো কোষের প্রোগ্রাম করে রাখা মৃত্যু ঘটায়। এর অন্য নাম সিডি ২৭৯। এটা থাকে ইমিউন কিলার T-cell এবং কোনো কোনো B cell-এর গায়ে এবং আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সিগনাল ট্রানসডাকসন পদ্ধতিকে রেগুলেট করে এবং কোষের apoptotic প্রসেসকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে আরেকটা বিশেষ রিসেপ্টরের সাহায্যে PDL, যেটা tumor বা ক্যান্সার কোষের গায়ে থাকে। PD1 কিন্তু ক্যানসার কোষ এর ভেতরেও থাকে।
এই লেখকও ২০০৪-০৭ সালে ব্রেস্ট ক্যান্সারের একরকম ক্যান্সার (ডাকটাল ক্যান্সার)-এর ওপরে কাজ করেছিলেন PD1 এবং PDL নিয়ে IHC পদ্ধতিতে এবং উনি দেখিয়েছিলেন যে ব্রেস্ট ক্যান্সারে এই প্রোটিন দুটোই কমে যায় । অর্থাৎ ক্যান্সার কোষগুলোর apoptosis তেমন ভালো ভাবে হয় না। সুতরাং PD1 ইনহিবিটর্স প্রোটিন অবশ্যই কোষের apoptosis বা প্রোগ্রাম মৃত্যু সহজেই বাড়িয়ে দিতে পারবে। আর এমনি একটা ওষুধও এখন বাজারে পাওয়া যায় যার নাম ডস্টারলিম্যাব। এটা শুধু মাত্র যে মলদ্বারের ক্যান্সারে প্রথম ব্যবহৃত হলো সেটাও ঠিক নয়। অন্য সলিড ক্যান্সার যেমন লাং ক্যান্সার, ব্লাডার ক্যান্সার, রক্তের ক্যান্সার লিউকেমিয়া, প্লাসমা কোষের ক্যান্সার মাইলোমা, ব্রেস্ট ক্যান্সার বা লিম্ফনোডের ক্যান্সার এবং অনেক সলিড ক্যান্সারেও ব্যবহার করা হয়েছিল এর আগে। সব ক্ষেত্রে কিন্ত সহায়ক ওষুধ হিসাবেই ব্যবহৃত হয়েছিলো কেমো বা রেডিওথেরাপির সাথে। এতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছিলো।
যাই হোক ৬ই জুনের নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্রের পরে সারা পৃথিবীতে এখন হঠাৎ করেই হৈ চৈ পড়ে গেছে, সোশাল মিডিয়ায় চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে যেন ক্যান্সার সারাবার ম্যাজিক বুলেট আমাদের মানুষের হাতে চলে এসেছে। সত্যিই কি তাই? নাকি মাল্টিনেশানাল ড্রাগ কোম্পানি গুলো যেমন মেমোরিয়াল সলোয়ান কেটারীন ক্যান্সার সেন্টার এবং তেসারও ইনক কোম্পানি, সাইমন অ্যান্ড ইভ কলিন, গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লিন কোম্পানি, যারা এই স্টাডিটাকে অনেক পয়সা খরচ করে পুরোপুরি স্পন্সরড করেছে তাদের ডস্টারলিম্যাব ওষুধ বিক্রি করবার জন্য সারা পৃথিবী জুড়ে তার প্রবল চেষ্টা করা হচ্ছে?
স্টাডিটা যাঁরা পড়েছেন পুরোটা, যদিও পুরোটা পড়তে গেলে গাঁটের পয়সা অনেকটাই খরচ করতে হবে যাঁরা পড়বেন, তাতে বলা হয়েছে যে মাত্র ১২ জন রোগী যারা রেক্টাম বা মলদ্বারের ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং স্টেজ ২ বা ৩ এবং যাদের মিসম্যাচ রিপেয়ার জিন ডেফিসিয়েন্ট তাদেরকেই এই ইমুনোথেরাপি করবার ডস্টারলিম্যাব ড্রাগ দিয়ে চিকিৎসা করে দেখা গেছে সবারই (১০০%) নাকি কমপ্লিট রেস্পন্স এসেছে, মানে ক্যান্সার কোষগুলো আর তাদের শরীরে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু কতদিন অব্দি খুঁজে পাওয়া যায়নি সেটা আপনারা কেউ লক্ষ্য করেছেন কি? প্রথম জনের ক্ষেত্রে ২৫ মাস, শেষ জনের ক্ষেত্রে মাত্র ৬ মাস। বাদ বাকিরা রয়েছেন এর মাঝখানে। এবং ডস্টারলিম্যাব ওষুধ খেয়ে তিন মাস পর্যন্ত কোন সাইড এফেক্ট পাওয়া যায় নি ওষুধটার জন্য।
এবার আসুন দেখি স্টাডিটাকে একটু কাঁটাছেড়া করে।
১) মাত্র বারোজনের ডাটা দিয়ে করা এই স্টাডিটা যার P ভ্যালু হয় না বা করতে পারা যায় না স্ট্যাটিসটিকাল পদ্ধতিতে, আর ৯৫% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যালটাও দেখুন ৭৫% থেকে ১০০% অর্থাৎ পুরোপুরি ১০০% ই যে সঠিক একই ফল দেবে যদি স্টাডিটা আবারও