আত্রেয় ও জীবক কোমারভচ্চের সময় থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত হতে শুরু করে ভারতবর্ষে। খ্রীঃপূঃ ৬০০ অব্দে আত্রেয় ছিলেন তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। যে চীন নিয়ে আজ এত কথা হচ্ছে সেই চীন থেকে অনেক ছাত্র ওনার কাছে পড়তে আসতো।
জীবক কোমারভচ্চ ছিলেন একজন শল্য চিকিৎসক। জীবকের জন্মস্থান ছিল রাজগৃহ। দুনিয়ার প্রথম intestinal obstruction এর অস্ত্রোপচারটি তিনি এই দেশেই করেছিলেন। রোগীটিও ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্যক্তি। হ্যাঁ, তিনি ছিলেন পৃথিবীর সম্রাট। যিনি দেখিয়েছিলেন সৈন্য সামন্ত ছাড়াও বিশ্বজয় করা যায়,হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে দুনিয়া দখল করা সম্ভব। মরণাপন্ন সেই ফেমাস রোগীটির নাম ছিল তথাগত বুদ্ধ। সবাই আজ বুদ্ধদেবকে মনে রেখেছে, কিন্তু বিস্মৃতির অতল খাদে হারিয়ে গেছে জীবক কোমারভচ্চের নাম।
এবার আর একজন ডাক্তারবাবুর কথা বলবো, তিনি হলেন সুশ্রুত। সুশ্রুত শল্য চিকিৎসার জন্য ১২১ টি ইনস্ট্রুমেন্ট আবিষ্কার করেন। সে সময় অপরাধীদের শাস্তির বিধান ছিল অদ্ভুত। মনুসংহিতায় ব্যাভিচারের শাস্তি ছিল নাক কেটে নেওয়া। সুশ্রুত গলার সাইড থেকে খানিকটা টিসু লেগে থাকা চামড়া কেটে নিয়ে নাকে প্রতিস্থাপিত করতেন। শ্বাস নেওয়ার জন্য দুটো ধাতব নলকেও নাকে বসিয়ে দিতেন। এই সুশ্রুতবাবুই পৃথিবীতে প্রথম ছানি অপারেশান শুরু করেন। যদিও তিনি কৃত্রিম লেন্স ব্যবহারের পদ্ধতি জানতেন না। কাউচিং পদ্ধতিতে তিনি ছানিটুকু সরিয়ে দিতেন, এর ফলে একদম অন্ধ ব্যক্তিরাও দু তিন ফুট দেখতে পেতেন। যে সময় সুশ্রুত এই কাজগুলো করেছিলেন প্রাশ্চাত্যে তখন চোখের গঠনতন্ত্রটুকুও অজানা ছিল। বৈদিক যুগে চিকিৎসকদের যথেষ্ট সম্মান ছিল। ওনারাই ছিলেন সমাজের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।
এরপর বিবাদ শুরু হল,ধর্মীয় অনুশাসন বনাম বিজ্ঞান… শুরু হল অন্ধকারাছন্ন যুগ,ঝাড়ফুঁক জড়িবুটি,তাবিজ কবজের সর্বরোগহর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার যুগ…চড়া দামে বিক্রি হতে লাগল চরণামৃত…
তাও চিকিৎসাবিজ্ঞান এগোতে থাকে।কত ত্যাগ কত সাধনা আর শ্রম দিয়ে তিলতিল করে গড়ে উঠেছে আজকের এই Evidence based মেডিক্যাল সায়েন্স।
ডাঃ আন্দ্রে ভেসালিয়াস তার বইতে মানবদেহের গঠনতন্ত্রের একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিলেন। লিউয়েন হুকের মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের সাথে সাথে উন্মুক্ত হল রহস্যময় জীবাণুর জগত। ফ্লেমিং সাহেবের পেনিসিলিন আবিষ্কার সভ্যতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেল। ভারতও পিছিয়ে নেই উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেন। জেনেটিক্সের গবেষণা করে ভারতীয় বিজ্ঞানী হরগোবিন্দ খুরানা নোবেল পেলেন।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান চলমান, প্রতি মুহূর্তে শুধরে নিচ্ছে নিজেকে, এখানে সফলতা আছে,বিফলতাও আছে।কখনো সেলিব্রেশান কখনো বা আবার হতাশার নির্ঘুম রাত…
তবুও এই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে প্লেগ পালিয়েছে, কলেরা তলিয়ে গেছে কালের গহ্বরে, গুটি বসন্ত এখন গল্প…
ভুলে গেলে চলবে না। একবিংশ শতাব্দিতে এসে এখনও আমরা প্রতিটি মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারিনি। গড়ে তুলতে পারিনি সঠিক পরিকাঠামো, বেড কম, ডাক্তার রোগীর রেসিও এখনও লজ্জাজনক। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ তলানিতে… এই অসহায়তার সুযোগ নিচ্ছে কামদেবের মতো কিছু ব্যবসায়ী। পেট নাচিয়ে যোগ শেখাচ্ছিলেন; ওই পর্যন্ত ঠিক ছিল, তারপর শুরু করলেন ভেজাল ঘিয়ের ব্যবসা। তারপর যৌন প্রোডাক্ট থেকে ক্ষতঞ্জলি জিনস্। আর এই করোনা পিরিয়ডে সুযোগ বুঝে মার্কেটে ছেড়ে দিলেন করোনিল নামক প্লেসিবো। মানুষ যখন সচেতন হয়ে ভ্যাক্সিন এবং মর্ডান মেডিসিনের ওপর আস্থা রাখল, মার খেতে লাগলো কোটি টাকার করোনিল ব্যবসা, বাবা গেলেন ক্ষেপে, প্রলাপ বকতে শুরু করলেন…
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এই ইয়াস-আবহে আলেকজান্ডার ও সেলুকাস এসব নিয়েই আলোচনা করছিলেন।
― স্যার! আমার গ্রামের বাড়ির কাছে গেঁদা কিস্কু নামে একজন লোক ছিলেন, তিনি কাঁঠাল পাতায় তেল ফেলে ভাগ্য বিচার করতেন। রোজ রোজ আজগুবি স্বপ্ন দেখতেন, আর স্বপ্নপ্রদত্ত ওষুধ জনে জনে বিলি করতেন।আত্মপ্রচারের জন্য মাথাতে জটাও রেখেছিলেন। ওনার বাড়িতে রোগীর লাইন লেগে থাকতো। একদিন পুলিশ এসে লোকটাকে বেধড়ক ঠেঙিয়ে অ্যারেস্ট করলো।তাহলে স্যার মহামারী আইন প্রয়োগ করে প্রতারণায় দায়ে কামদেবকে অ্যারেস্ট করা হচ্ছে কেন?
আমিও ভাবছি সুবর্ণরেখার জল রঙিন বোতলে পুরে তাতে কিঞ্চিৎ সোমরস আর একটু তেঁতুলের নির্যাস মিশিয়ে বাজারে ছেড়ে দিয়ে বড়লোক হয়ে যাবো।
ওসব বাদ দাও। টিভি দ্যাখো, অদ্ভুত একটা ঝড় আসছে, কখনও পিছোচ্ছে, কখনো বা এগোচ্ছে…
সিগারেট ধরাও সেলুকাস, এ ঝড় বড়ো বিচিত্র। বলে উঠলেন আলেকজান্ডার।
২৬.৫.২০২১