গত ১২ দিন যাবৎ যে অনশন আন্দোলন চলছিল মেডিক্যাল কলেজে, তা কেন চলছিল? কারণ গত ৩০শে নভেম্বর কলেজ কাউন্সিলের উপস্থিতিতে এবং কলেজের ছাত্রছাত্রী ও কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে ঠিক করা হয়, ২২শে ডিসেম্বর মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রছাত্রী সংসদ নির্বাচন হবে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক চাপে পড়ে ৫ই ডিসেম্বর সেই নির্বাচন বাতিল করে দেয়, কোনো কারণ ছাড়াই। এর পরবর্তীতে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রতিশ্রুত ন্যায্য নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামে, যা পরিণত হয় অনশনে। এর পরে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী কলেজে আসেন, আলোচনার নামে প্রহসন চলে দফায় দফায়, কিন্তু শেষমেষ ২২শে ডিসেম্বর ছাত্রছাত্রী সংসদ নির্বাচন বাতিলের সপক্ষে কোনো যুক্তি দিয়ে উঠতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ বা শাসকদলের দূতেরা কেউই। এরপরে, স্বাস্থ্য অধিকর্তা বা কর্তৃপক্ষ কেউই আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাননি, এবং পরবর্তীতে কীভাবে সমাধানসূত্র বের করা যায় তা নিয়েও উদাসীন থেকে যান।
অনশন চলতে থাকে। ২২শে ডিসেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচনের দিন স্থির করে যে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে, তা কিন্তু বাতিল করা হয়নি কখনোই, এবং বাতিল করার পক্ষে কোনো ন্যায্য যুক্তিযুক্ত কারণও পেশ করতে পারেনি তারা। শেষ পর্যন্ত, মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ও এমএসভিপি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পালিয়ে যান এবং বলেন, তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনে থেকেই কাজ করবেন, কারণ মেডিক্যাল কলেজে থেকে কাজ করতে তাঁদের ‘মানসিক চাপ’ হচ্ছে। যদিও আমাদের মনে হয়, এই চাপ কোনোভাবেই মানসিক নয়, এই চাপ রাজনৈতিক।
এমতাবস্থায়, মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা বুঝতে পারে, কলেজের গণতান্ত্রিক পরিসর রক্ষার প্রশ্নে মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষ নৈতিকভাবে ও নীতিগত দিক দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেয়, এবং জেনারেল বডি মিটিং এর মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক করে, তারা নিজেদের কলেজের ছাত্রছাত্রী সংসদের নির্বাচন নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে করবে। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা,কলেজে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য,ছাত্রছাত্রী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে যে অনশন আন্দোলন শুরু করেছিল,আজ তার পরিসমাপ্তি ঘটে, জেনারেল বডি মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে,কারণ যে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নে এই অনশন আন্দোলন,মেডিক্যাল কলেজের সেই গণতান্ত্রিক পরিসর রক্ষার দায় তারা নিজে কাঁধে তুলে নিয়েছে।
এই জেনারেল বডি মিটিং এর মাধ্যমে ঠিক করা হয় —
১) অপদার্থ কলেজ কর্তৃপক্ষ নয়, ছাত্রছাত্রীরা মেডিক্যাল কলেজের সংসদ নির্বাচন নিজেরাই করাতে সক্ষম।
২) ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা সংগঠিত এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকার জন্য সমাজের বেশ কিছু নিরপেক্ষ বিশিষ্টজনেদের কাছে প্রস্তাব রেখেছে, এবং তাঁদের মধ্যে চারজন এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা যেহেতু এই নির্বাচন সংগঠিত হবে, এবং ছাত্রছাত্রীরাই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, তাই এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদল কলেজের কর্তৃপক্ষের সামনে ছাত্রছাত্রীদের যাবতীয় দাবিদাওয়া তুলে ধরবে।
৩) কীভাবে এই সংসদ নির্বাচন পরিচালিত হবে, তার খসড়া নিয়মপত্র (Standard Operating Procedure) প্রকাশ করবেন এই নিরপেক্ষ বিশিষ্টজনেদের কমিটি। ৪) নির্বাচনের নমিনেশন ফাইল করা, স্ক্রুটিনি করা, উইথড্র করা এবং ভোটার লিস্ট প্রকাশ ও তার সংশোধন করার নিয়মাবলী থাকবে এই খসড়া নিয়মপত্রে, এবং পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন এই বিশিষ্টজনেদের কমিটি। স্বচ্ছতার জন্য পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটি মিডিয়ার নজরদারিতে করা হবে।
এই বিশিষ্টজনেদের কমিটিতে রয়েছেন —
১) ড. বিনায়ক সেন, প্রখ্যাত চিকিৎসক ও সমাজকর্মী
২) বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, সমাজকর্মী
৩) অম্বিকেশ মহাপাত্র, অধ্যাপক
৪) সুজাত ভদ্র, মানবাধিকার কর্মী