এক ভিআইপি-র আগমনের “আনন্দে” হাসপাতালের চত্বর জুড়ে কাল সাফাই অভিযান চলবে। ওখানে একটা পাকা ছাউনি আছে। তার মধ্যে সিমেন্টের বেঞ্চ। সাধু ভাষায়, পেশেন্ট পার্টি নাইট সেল্টার।
ওই রাত্রি নিবাসের দেয়ালে কিছু আঁচড় আঁকিবুকি। দু তিনটে নাম লেখা। অমুক ছেলে + তমুক মেয়ে। অপটু হাতে আঁকা লাভ সাইন। কে বা কারা, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকা প্রিয়জনের অপেক্ষায় ওই ছাউনির তলায় অপেক্ষা করতে করতে লিখে ফেলেছে ওই নামগুলো জানি না। হাসপাতালের গেটের কাছে অপেক্ষারত মানুষের মনেও ভাব-ভালোবাসার কথা ভেসে ওঠে।
সেই রাত্রি নিবাস পরিষ্কার করা হবে। সকাল থেকেই সাবানজল ফিনাইল ঝাঁটা -আয়োজনের কোনও কমতি থাকবে না। সাফাইকর্মীদের জলের মোটা পাইপের তোড়ে ধুয়ে মুছে সব সাফ। কোনো ভবঘুরে ওই সিমেন্টের বেঞ্চের তলায় তেল চিটচিটে ছিন্ন মাদুর দিয়ে জড়িয়ে তার রাতের শোবার বিছানা রেখে গেছে। ওটাই ওর আস্তানা। ওই রাত্রি নিবাসের একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা। ঘেন্নায় ওই বিছানাটা হাত দিয়ে ধরে কেউ সরিয়ে দেবে না। জলের ধারায় সেটাও হয়তো ভিজে যাবে, সেই ভবঘুরে লোকটি হয়তো রাতে ওই ভেজা বিছানাতেই ঘুমোবে।
ওই ভেজা বিছানায় শুয়ে লোকটির যদি কাল খুব জ্বর আসে? সে তো তখন জীবন মৃত্যু, রোগ দুঃখ শোকের কারখানা এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগেই আসবে। তার পর কি হবে? দপ্তর এদিকে নির্দেশ দিয়েছে রুগী ভর্তি করে তার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের নম্বর নথিতে তুলতেই হবে। ওর ওই তেলচিটে বিছানার মধ্যে কি স্বাস্থ্যসাথী বা আধার কার্ড খুঁজে পাওয়া যাবে? যদি না পাওয়া যায় তাহলে কি ও কোনো চিকিৎসা পাবে না? যদি কোনোরকম কার্ড ছাড়াই চিকিৎসা শুরু হয় তাহলে সরকারি আদেশ না মানার অপরাধে আমার ডাক্তার বন্ধুর শাস্তি হবে? চাকরি চলে যাবে?
তার চেয়ে বরং কাল সকালে কেউ একটু ডাকবেন। কষ্ট করে না হয় বিছানাটা সরিয়ে দিয়ে আসবো ভিজে যাওয়ার আগে। ডাক্তার বন্ধুর চাকরিটা বাঁচাতে হবে তো।
“এক মুখ দাড়ি গোঁফ
অনেক কালের কালো ছোপ ছোপ
জট পড়া চুলে তার উকুনের পরিপাটি সংসার
চালচুলো নেই তার, নেই তার চেনা বা অচেনা
আদমশুমারি হলে তার মাথা কেউ গুনবে না
তার ভোট চাইবে না গণতান্ত্রিক কোনো প্রার্থী”