চেম্বারে বসে আছি। মাথা তোলার সময় পাচ্ছি না। আগামীকাল দোল। চেম্বার বন্ধ থাকবে। তাই আগাম ভীড়। তাছাড়া দু-দুটো অপারেশন আছে আজ। সিসিটিভিতে দেখছি বাইরে অনেক রোগী অপেক্ষা করে আছে। চিন্তা বাড়ছে। সময়মত অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছতে পারব তো?
হঠাৎ বাইরে হইচই। কয়েকটা কথা শুনতে পেলাম। ‘আঃ আঃ, ভীষণ লেগেছে। ভীষণ ব্যথা। আঃ। একটু যেতে দিন। ‘
পরনে ট্র্যাকপ্যান্ট আর পোলো শার্ট। বছর আঠাশের যুবক। আগের রোগীকে প্রায় ঠেলে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চেম্বারে ঢুকে পড়ল- একটু সামনে ঝুঁকে এবং বাঁ হাঁটুতে হাত রেখে।
‘বাঁ হাঁটুতে ব্যথা?’
‘পায়ে।’
জিমচর্চিত চেহারা। খেলতে গিয়ে চোট লেগে থাকতে পারে। স্পোর্টস ইনজুরি।
জিজ্ঞেস করলাম, ‘কবে লেগেছে?’
‘এই তো এইখানে।’
এইসব রোগীদের নিয়ে খুব সমস্যা। প্রশ্ন করি এক। উত্তর দেয় আর এক। একটু বিরক্ত হয়ে আবার বললাম, ‘ঠিক কবে থেকে ব্যথা?’
‘মনে নেই। সাড়ে তিন বছর হবে। এখন সাতদিন হল খুব বেড়েছে।’
‘হাঁটুতে?’
‘না না, এইখানে।’
চোখের পলক ফেলার আগে রোগী খোঁড়ানো ভুলে প্রায় লাফিয়ে এসে আমার ডান হাঁটুর নীচে চেপে ধরে দেখাতে লাগল।
‘এই-এইখানে। বুঝতে পারছেন? ভীষণ ব্যথা।’
‘করেন কি, করেন কি?’ বলে আমি দু-পা পেছোলাম।
আমারও কলেজে খেলতে গিয়ে ডান পায়ে সামান্য লেগেছিল। সে অনেক দিনের কথা। তা এ ব্যাটা জানল কি করে?
‘দেখাচ্ছিলাম, আমার পায়ের ঠিক কোথায় ব্যথা।’
‘তার জন্যে আমার পা টিপে ধরতে হবে?’
রোগী একটু থতমত খেয়ে বলল, ‘ভুল হয়ে গেছে।’
‘হাঁটুতে না হয়ে ব্যথাটা যদি বুকে বা কুঁচকিতে অথবা দাঁতে হত তাহলেও কি আপনি …..?’
উত্তর এল না।
এরপর আরো অবাক হয়ে দেখলাম, ছেলেটি চেম্বারের মেঝেতে চার হাত পায়ে হামাগুড়ি দিচ্ছে। ‘এরকম ভাবে থাকলে আমার কোমরেও ব্যথা হয়।’
আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘এরকম করছেন কেন? আপনি কথায় বুঝিয়ে বলতে পারেন না? আপনার গলায় ব্যথা হলে বোঝানোর জন্যে ডাক্তারের গলা টিপে ধরে দেখাবেন?’
‘না মানে, আগেও দু-জন ডাক্তার দেখিয়েছি। তারা ঠিক ব্যথার জায়গাটায় টিপতে পারে নি। তাই রোগটা ধরা পড়ে নি।’
‘অ্যাই সেরেছে! তাই বলে এভাবে?’
রোগী একগাল হেসে বলল, ‘আমি অভিনয় করি তো, তাই।’
‘ও বুঝেছি। তা কিসে অভিনয় করেন? নাটক না যাত্রা?
‘না না। টিভি সিরিয়াল করি। মাঝে মধ্যে।’
‘একটা পরামর্শ দেব? যাত্রায় অভিনয় করুন।’
‘যাত্রা?’
‘হ্যাঁ। যাত্রা।’
শুভ দোলযাত্রা।