Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

মেডিসিন ও বিজ্ঞানের সাধনা – বাংলায় জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন

WhatsApp Image 2022-03-25 at 5.54.57 PM
Dr. Jayanta Bhattacharya

Dr. Jayanta Bhattacharya

General physician
My Other Posts
  • March 27, 2022
  • 7:01 am
  • 8 Comments

আজ থেকে প্রায় ১৮০ বছর আগে সেসময়ের মেডিক্যাল কলেজের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান যিনি একাধারে ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের এমডি, বহু ভাষাবিদ, গবেষক এবং ভারতের IMS (Indian Medical Service)-এ স্থান পাওয়া প্রথম ভারতীয় সূর্যকুমার গুডিভ চক্রবর্তী ১৮৬৪ সালে ব্রিটিশ তথা ইউরোপীয় চিকিৎসকদের ভারতে বসবাস ও চিকিৎসা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন – “granting all the praise and honour due to hard-working and intelligent professors, the European medical officers were at best birds of passage, and could not, therefore, permanently improve the position and prospects of the profession out of the service.” (“Address in Medicine: The Present State of the Medical Profession in Bengal (delivered on February 3rd, 1864),” British Medical Journal 2 (July-December 1864): 88) ফলে এসমস্ত “পরিযায়ী পাখিদের” বিকল্প হচ্ছে ইউরোপীয় জ্ঞানকে নিজেদের মতো করে আত্মীকরণ করে নেওয়া। একে আমরা যদি জাতীয়তাবাদী চিন্তার ভ্রূণরূপ ধরি তাহলে মনে হয় গুরুতর কোন প্রমাদ হবেনা।

পরাধীন ভারতে স্বাধীনভাবে গবেষণার চিন্তায় উজ্জীবিত বিজ্ঞানী উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী আবিষ্কার করেছিলেন সেসময়ের লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ-নেওয়া মারণান্তক অসুখ কালাজ্বরের সবচেয়ে ফলদায়ী চিকিৎসা – ইউরিয়া স্টিবামিন ওষুধ।

ব্রহ্মচারী ১৯৩৬ সালে ভারতের বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতির ভাষণে বলেছিলেন – “As a matter of the most vital concern in nation-building, the problem of nutrition demands very careful consideration by statesmen and scientists alike, more so due to the fact, as has been recently observed, that a great part of the world’s population is not consuming the necessary food stuff. An eminent Swiss authority predicts the decay of civilization unless there is a fundamental revision of the people’s diet.”

আমরা “নেশন-বিল্ডিং” শব্দটিকে খেয়াল করব। দেশ এবং জাতির গঠনে, ব্রহ্মচারীর ধারণানুযায়ী, রাষ্ট্রনেতা, বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের জনকল্যাণী শক্তিকে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা – এসবের একটি যোগসূত্রে বিশ্বাস করেছিলেন।

১৯৩৬ সালে যখন এ কথা ব্রহ্মচারী বলছেন সেসময় জাতীয়তাবাদী ভাবনার জোয়ারের কাল। এসময়ে, খুব অল্পকথায় বললে, ভারত স্বাধীনতা আসবে কোন পথে এনিয়ে যেমন বিতর্ক চলছে, তেমনি চলছে স্বাধীন বা প্রাক-স্বাধীন ভারতে শিক্ষা এবং বিজ্ঞানচর্চার ধরন কেমন হবে এ নিয়েও বিভিন্ন মত ও পথের দ্বন্দ্ব। বিজ্ঞানচর্চার সাথে ভারতীয় উদ্যোগে স্বাধীন প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তি-নির্ভর ব্যবসায়িক উদ্যোগ কোন পথে বিকশিত হবে – বিবিধমুখী এরকম বিভিন্ন দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষ চেহারা দেখার আগে আমরা একবার দেখে নেব ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই “জাতীয় শিক্ষা” নিয়ে কত পরীক্ষানিরীক্ষা চলেছে। এবং তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব কিভাবে পড়েছে পরবর্তী সময়ের চিন্তাজগতের ওপরে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করব, যে বছর আইনস্টাইনের স্পেশাল থিওরি অফ রেলাটিভিটি প্রকাশিত হয় সেবছরটি (১৯০৫) ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসেও সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব আনলেন। শুরু হল বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য তুমুল আন্দোলন। একথা আমাদের সবার জানা। এসময়ে আরেক যুগন্ধর বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোসের বয়স ১১। পরবর্তীকালে তাঁর কৈশোর বর‍্যসের বন্ধু নীরেন্দ্রনাথ রায় জানাচ্ছেন – “তরুণ সত্যেনের জীবন যখন গঠিত হচ্ছে সেই সময় তাঁর উপরে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বদেশী আন্দোলন।” (শান্তিময় চ্যাটার্জি, এণাক্ষী চ্যাটার্জি – সত্যেন্দ্রনাথ বোস, ১৯৫৮, পৃঃ ২২)

আমরা অল্প সময়ের জন্য পুরনো ইতিহাসে ফিরে যাই।

 

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের পূর্ণ বিকাশের আগে এক সলতে পাকানোর বেশ লম্বা ইতিহাস আছে। স্মরণ করুন, ১৮৫৭-র সিপাহীদের মহাবিদ্রোহের স্মৃতি তখনো শিক্ষিত সমাজের একাংশের মাঝে ফিকে হয়ে যায়নি। সিপাহী বিদ্রোহ নিয়ে যদিও এভাবে বলা সঠিক নয়। এই বিদ্রোহকালে বাঙালি সমাজের নিরন্ন, খেটে খাওয়া বেশিরভাগ মানুষই ছিলেন বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন। “কিন্তু ইংরেজের অনুগ্রহপুষ্ট বাংলার জমিদার, ধনী ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী এবং শিক্ষিত সমাজের একটা অংশ ব্যস্ত হয়ে উঠলেন সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে। এইকালের বাঙালি পত্রিকা-সম্পাদকরা হয় ছিলেন ধনী জমিদার অথবা কোনও-না-কোনভাবে ইংরেজের ওপর নির্ভরশীল।” সংবাদ প্রভাকর-এর সম্পাদক ইংরেজরা দিল্লি পুনরুদ্ধার করলে সহর্ষে তিনি লেখেন –

“ভারতের প্রিয় পুত্র হিন্দু সমুদয়

মুক্ত মুখে বল সবে ব্রিটিশের জয়।” (স্বপন বসু, ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী – ১৮৫৭-র বিদ্রোহঃ সমকালীন বাংলা ও বাঙালি, ২০০৭, পৃঃ ৫১)

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং অর্থদাতা উত্তরপাড়ার বিখ্যাত বিদ্যোৎসাহী বিজয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় উত্তরপাড়া পাক্ষিক পত্রিকা-য় লিখলেন – “আমাদিগের বঙ্গদেশস্থ সমস্ত বাঙ্গালিগণ নিতান্ত প্রভুভক্ত, ইহারা সর্বদা কেবল পরমেশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতেছে, যে, শ্রীশ্রীমতী রাজ্যেশ্বরীর মঙ্গল হউক।” তিনি একটি কবিতাও লিখেছিলেন –

“গোঁয়ার শূয়ার সব নাহি কিছু দয়া।

বিনা দোষে প্রাণ নাশে নাহি হয় মায়া।।

বিনা দোষে নারী বধে বড়ই অজ্ঞান।

রোষ বশে মেরে ফেলে দুধের সন্তান।।

ধর্ম্ম ধর্ম্ম কর‍্যে মিছে ধর্ম্ম করে নাশ।

ধর্ম্ম মর্ম না বুঝিতে হল সর্বনাশ।…

‘যথাধর্ম্মস্তথা জয়’ সর্ব্বলোকে কয়।

ব্রিটিশের জয় বল ব্রিটিশের জয়।” (পূর্বোক্ত, পৃঃ ৫২)

 

কিন্তু এর বিপরীত চিত্র এবং ব্যাখ্যাও শিক্ষিত সমাজের মধ্য থেকে তৈরি হচ্ছিল। বিদ্রোহ শুরু হবার অল্পদিনের মধ্যে হরিশচন্দ্র মুখার্জির হিন্দু পেট্রিয়ট ‘দি কান্ট্রি অ্যান্ড দ্য গবর্ণমেন্ট’ নামে একটি লেখায় বলা হয় – “এটি আর সৈন্যবাহিনীর বিদ্রোহমাত্র নয়, পরিণত হয়েছে এক গণ অভ্যুত্থানে। বাংলার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক এই অভ্যুত্থানের একটি বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ার মতো। শুরু থেকেই বিদ্রোহীরা দেশবাসীর সহানুভূতিপুষ্ট। দেশবাসী তাঁদের একটি মহৎ জাতীয় উদ্দ্যেশ্যে নিবেদিতপ্রাণ শহিদ বলে মনে করেন।” (পূর্বোক্ত, পৃঃ ৫৬)

যাহোক, এরকম ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও, মোটের ওপরে আলোচনা সহজ করার জন্য বলা যায় যে তখন সামাজিক স্মৃতিতে রয়েছে ১৮৬০-এর নীল বিদ্রোহের রেশ, রয়েছে হিন্দুমেলার (১৮৬৭-১৮৮৮০) কাজকর্মের খতিয়ান। পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান লীগ (১৮৭৫) এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের (১৮৭৬) কর্মধারা এবং ১৮৮৩ সালে ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কনফারেন্সের কর্মকাণ্ড (১৮৮৩), এবং, সর্বোপরি, ১৮৮৫ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম নেওয়া ১৯০৫-এর সর্বব্যাপী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তথা আত্মসচেতন জাতীয় চৈতন্যের জন্ম দিয়েছে।

১৯০৫-এর আগে রঙ্গলাল, মধুসূদন, দীনবন্ধু, বঙ্কিম, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র এবং সমসাময়িক কালে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য, কবিতা, নাটক সৃষ্টি হচ্ছে। জাতীয়তাবাদী নাটক লিখছেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন্দ্রনাথ দাস, এবং গিরীশচন্দ্রের মতো মানুষেরা।

জাতীয়তাবাদ ঘেঁষা গান লিখছেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মনমোহন বসু, গোবিন্দচন্দ্র রায় এবং, সর্বোপরি, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। অবশ্য এখানে উল্লেখ করা দরকার যে যিনি সঙ্গীত লিখেছেন তিনি নাটকও লিখেছেন, আবার বিপরীত প্রক্রিয়াও চলেছে।

এসময়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা জাতীয়তাবাদী চেতনাপুষ্ট সংবাদপত্রের উন্মেষ। ১৮৫৩ সাল থেকে হরিশ্চন্দ্র মুখার্জির হিন্দু পেট্রিয়ট এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছিল, ১৮৬৮ সাল থেকে মতিলাল ঘোষের সম্পাদিত অমৃতবাজার পত্রিকা এই ধারায় যুক্ত হয়। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি সম্পাদিত বেঙ্গলি সংবাদপত্র ১৮৭৯ সাল থেকে এই ধারাকে পুষ্ট করছিল। এরসাথে আরও অন্তত দুটি বিশেষ পত্রিকার কথা এখানে উল্লেখ করতে হবে যেগুলো জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের স্বপক্ষে শিক্ষিত সমাজের মাঝে জোরদার জনমত তৈরির কাজ চালিয়ে গেছে। প্রথমটি হল সতীশচন্দ্র মুখার্জির ডন (১৮৯৭) পত্রিকা এবং দ্বিতীয়টি রামানন্দ চ্যাটার্জির প্রবাসী (১৯০১) পত্রিকা।

এ সময়কালের সামাজিক ঘটনাগুলো স্মরণ করি। বাংলার “আত্মিক” শক্তির উদ্বোধন হল – কেশবচন্দ্র, রামকৃষ্ণ, বিজয়কৃষ্ণ। ১৮৯৩ সালে বিবেকানন্দের শিকাগো সম্মেলনের বক্তৃতা এক ভিন্নধর্মী আকাঙ্খার জন্ম দিল। এনিয়ে অনেক বিতর্কের অবকাশ থাকলেও এটা একটি ঐতিহাসিক সত্য। এ প্রসঙ্গে সুমিত সরকারের রামকৃষ্ণ নিয়ে পর্যবেক্ষণ আমাদের ভাবতে সাহায্য করবে – “Ramkrishna’s conversation often has surprisingly deep ‘textual’ foundations, even where it seems to be most context-determined, or a product of homespun wisdom alone. Thus bhakti to him, as in much Kaliyuga literature, was the counterpoint to the new nineteenth-century world of chakri which reduced the quantum of free time and left little room for contemplation or ritual.” (Writing Social History, 1997, পৃঃ ৩১৫-৩১৬)

আরেকটি পুস্তকের প্রকাশ এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল – দীনেশচন্দ্র সেনের বঙ্গভাষা ও সাহিত্য (ইংরেজপ্রভাবের পূর্ব্ব পর্যন্ত) (১৮৯৬ সালে প্রথম সংস্করণ) প্রকাশিত হওয়া। তিনি বাঙ্গালির নিজস্ব ভাষার অন্দরমহলের রত্নরাজির সম্ভার বাংলাভাষী পাঠকের সামনে খুলে দিলেন। ভাষাগতভাবে বাংলা যে এত সমৃদ্ধ এই বোধ হয়তো কিছু পরিমাণে নতুন আত্মপরিচিতির জন্ম দিতে সাহায্য করে থাকবে। এই পুস্তকের একটি নজর দেবার মতো বিষয় হল সাম্প্রদায়িকতা বোধহীন বক্তব্যের স্পষ্ট প্রকাশ। দীনেশচন্দ্র লিখছেন – “হিন্দুগণ যেরূপ পীরের সিন্নি দিতেন, মুসলমানগণও সেইরূপ দেবমন্দিরে ভোগ দিতেন উত্তর পশ্চিমে হিন্দুগণ এখনও মহরম উৎসব করিয়া থাকেন। অর্দ্ধ শতাব্দী হইল, ত্রিপুরার মৃজাহুসেনআলি নামক জনৈক মুসলমান জমিদার নিজ বাড়ীতে কালীপুজা করিতেন এবং ঢাকার গরিব হুসেন চৌধুরী সাহেব বিস্তর টাকা ব্যয় করিয়া শীতলা দেবীর অনুষ্ঠান করিতেন, আমরা এরূপ শুনিয়াছি।” (দ্বিতীয় সংস্করণ, “কাব্যশাখা”, পৃঃ ৫৪০)

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আন্দোলোন ছিলনা। এর অভিঘাত ছিল অনেক সুদূরপ্রসারী – “It marked the beginning of open and organized revolt of a self-conscious subject nation against an alien ruling power.” (Haridas Mukherjee and Uma Mukherjee, The Origins of National Education Movement (1905-1910), 1957, পৃঃ ৩) আরও বলছেন – “The movement for National Education as manifest in 1905 was essentially an expression of Bengal’s militant nationalism which had been slowly but surely growing in our land since the middle of the nineteenth century.” (পূর্বোক্ত, পৃঃ ৩) শুধু এটুকুই নয়। যারা সেসময় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরচ্ছে তাদের ব্যবহারিক জীবনে অর্থ ও অন্ন সংস্থান করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে এসেছিল – “The fundamental weakness of our Indian educational system is that the average Indian student cannot bring his education into any direct relation with the world in which, outside the class or lecture room, he continues to live. For that world is still the old Indian world of his forefathers, and it is as far removed as the poles asunder from the Western world which claims his education.” (Valentine Chirol, Indian Unrest, 1910, পৃঃ ২১৬)

পরে বিশদে ব্যাখ্যা করে বললেন – “The rapid rise m the cost of living has affected no class more injuriously than the old clerkly castes from which the teaching staff and the scholars of our schools and colleges are mainly recruited. Their material position now often compares unfavourably with that of the skilled workman and even of the daily labourer, whose higher wages have generally kept pace with the appreciation of the necessaries of life. This is a cause of great bitterness even amongst those who at the end of their protracted course of studies get some small billet for their pains … Whilst the skilled artisan, and even the unskilled labourer, can often command from 12 annas to 1 rupee (Is. to Is. 4d.) a day, the youth who has sweated himself and his family through the whole course of higher education frequently looks in vain for employment at Rs.30 (£2) and even at Rs.20 a month. In Calcutta not a few have been taken on by philanthropic Hindus to do mechanical labour in jute mills at Rs.15 a month simply to keep them from starvation.” (পূর্বোক্ত, পৃঃ ২২৪-২২৫)

এখানে উল্লেখ করা দরকার যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ সিলেবাসে ১৯০৬ সালের আগে বাংলার কোন “compulsory paper” ছিলনা। (সুমিত সরকার, The Swadeshi Movement in Bengal 1903-1908, পৃঃ ১৫১)

ইংরেজ দার্শনিক স্পেন্সার পর্যন্ত ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিয়ে মতামত দিয়েছিলেন – “the amazing of an Examiner who proposes to test the fitness of youths for commencing their higher education, by seeing how much they know of the technical terms, cant phrases, slang, and even extinct slang, talked by the people of another nation. Instead of unfitness of the boys, which is pointed to us, we may see rather the unfitness of those concerned in educating them.” (Origins of the National Education Movement, পৃঃ ৮)

১৯০২ সালে ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটিজ কমিশন তৈরি হল। এই কমিশনের একমাত্র হিন্দু সদস্য ছিলেন ডঃ গুরুদাস ব্যানার্জি। কমিশনের মিটিংয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে (বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে) অতিরিক্ত রাষ্ট্রিক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে তাঁর “Note of Dissent” জানান। তিনি আপত্তি তোলেন যে সরকারি হস্তক্ষেপ এত অতিরিক্ত হচ্ছে যে সমাজের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মতামতকে আদৌ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছেনা। মজার কথা, বর্তমানে প্রায় সমধর্মী ছবি (হয়তো বা বিপরীতও) দেখছি আমরা ভারতবর্ষে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের জগত থেকে রাষ্ট্র ক্রমাগত হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। রাষ্ট্র বেশি বেশি করে বেসরকারিকরণের দিকে ঝুঁকছে। বিপরীতে সামাজিক দাবী হচ্ছে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। এবং গণতান্ত্রিক চেতনার উন্মুক্ত পরিসর করে তুলতে হবে।

যাহোক, ১৯০৪ সালে “ইউনিভার্সিটিজ অ্যাক্ট” চালু হল “which tightened official control over senate and transferred to the government the power of granting affiliations, was considered by all sections of nationalist opinion to be a major threat to the ‘independence of universities’ and ultimately to the whole future of higher education.” (The Swadeshi Movement in Bengal, পৃঃ ১৫৮)

অবশ্য এর আগে ১৯০১ সালে স্বাধীনভাবে শিক্ষার চেতনা প্রবাহিত করার লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছেন। শুধু তাই নয়, অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও, স্বাধীনভাবে জাতীয় শিক্ষার আদর্শে স্কুল তৈরি হচ্ছে। একটা সময়ে ফরিদপুর জেলার মাদারিপুর মহকুমায় যতসংখ্যক হাই স্কুল ছিল তার সংখ্যা সমগ্র যুক্ত প্রদেশের (পরবর্তীতে উত্তরপ্রদেশ) গ্রামাঞ্চলের স্কুলের চেয়ে বেশি। (পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৪৯) মনে রাখা দরকার, সুমিত সরকারের গবেষণা দেখিয়েছে যে এসমস্ত স্কুলগুলোতে ‘Aryan knowledge’-কে প্রাধান্য দিতে হবে এরকম একটি বোধ অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করেছে।

এরপরে, ১৯০৬ সালের ১৪ আগস্ট, টাউন হলের ঐতিহাসিক মিটিংয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ “জাতীয় শিক্ষানীতি” নিয়ে সুদীর্ঘ প্রবন্ধ পাঠ করলেন। সবার মাঝে রোমাঞ্চের সৃষ্টি হয়েছিল। এই মিটিংয়ের সভাপতি ডঃ রাসবিহারী ঘোষ ঘোষণা করলেন – ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ৫ লক্ষ টাকা, সুবোধচন্দ্র মল্লিক ১ লক্ষ টাকা এবং ময়মেনসিংয়ের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য বাহাদুর ন্যাশনাল কাউন্সিলের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা মূল্যের জমি দান করছেন। (Origins of the National Education Movement, পৃঃ ৮২)

রবীন্দ্রনাথের সুদীর্ঘ প্রবন্ধটির অংশবিশেষ উদ্ধৃত করছি –

“জাতীয়বিদ্যালয় তো বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হইয়া গেল, এখন এই বিদ্যালয়ের উপযোগিতা যে কী সে কি যুক্তি দিয়া বুঝাইবার আর কোনো প্রয়োজন আছে। …

আমাদের দেশের একটা মুশকিল এই হইয়াছে, শিক্ষা বল, স্বাস্থ্য বল, সম্পদ বল, আমাদের উপরে যে কিছু নির্ভর করিতেছে, এ কথা আমরা একরকম ভুলিয়াছিলাম। অতএব এ-সকল বিষয়ে আমাদের বোঝা নাবোঝা দুই-ই প্রায় সমান ছিল। আমরা জানি, দেশের সমস্ত মঙ্গলসাধনের দায়িত্ব গবর্মেণ্টের; অতএব আমাদের অভাব কী আছে না আছে তাহা বোঝার দরুন কোনো কাজ অগ্রসর হইবার কোনো সম্ভাবনা নাই। এমনতরো দায়িত্ববিহীন আলোচনায় পৌরুষের ক্ষতি করে। ইহাতে পরের উপর নির্ভর আরো বাড়াইয়া তোলে।

স্বদেশ যে আমাদেরই কর্মক্ষেত্র এবং আমরাই যে তাহার সর্বপ্রধান কর্মী, এমনকি, অন্যে অনুগ্রহপূর্বক যতই আমাদের কর্মভার লাঘব করিবে, আমাদের স্বচেষ্টার কঠোরতাকে যতই খর্ব করিবে, ততই আমাদিগকে বঞ্চিত করিয়া কাপুরুষ করিয়া তুলিবে—এ কথা যখন নিঃসংশয়ে বুঝিব তখনই আর-আর কথা বুঝিবার সময় হইবে। …

বিধাতার প্রসাদে আজ কেমন করিয়া সেই পরিচয় পাইয়াছি.। আজ আমরা স্পষ্ট দেখিতে পাইলাম, ইচ্ছাই ঈশ্বরের ঐশ্বর্য, সমস্ত সৃষ্টির গোড়াকার কথাটা ইচ্ছা। যুক্তি নহে, তর্ক নহে, সুবিধা-অসুবিধার হিসাব নহে, আজ বাঙালির মনে কোথা হইতে একটা ইচ্ছার বেগ উপস্থিত হইল এবং পরক্ষণেই সমস্ত বাধা বিপত্তি, সমস্ত দ্বিধাসংশয় বিদীর্ণ করিয়া অখণ্ড পুণ্য ফলের ন্যায় আমাদের জাতীয়বিদ্যাব্যবস্থা আকার গ্রহণ করিয়া দেখা দিল। বাঙালির হৃদয়ের মধ্যে ইচ্ছার যজ্ঞহুতাশন জ্বলিয়া উঠিয়াছিল এবং সেই অগ্নিশিখা হইতে চরু হাতে করিয়া আজ দিব্যপুরুষ উঠিয়াছেন—আমাদের বহুদিনের শূন্য আলোচনার বন্ধ্যত্ব এইবার বুঝি ঘুচিবে।…

অনেকদিন পরে আজ বাঙালি যথার্থভাবে একটা-কিছু পাইল। এই পাওয়ার মধ্যে কেবল যে একটা উপস্থিত লাভ আছে, তাহা নহে, ইহা আমাদের একটা শক্তি। আমাদের যে পাইবার ক্ষমতা আছে, সে ক্ষমতাটা যে কী এবং কোথায়, আমরা তাহাই বুঝিলাম। এই পাওয়ার আরম্ভ হইতে আমাদের পাইবার পথ প্রশস্ত হইল। আমরা বিদ্যালয়কে পাইলাম যে তাহা নহে, আমরা নিজের সত্যকে পাইলাম, নিজের শক্তিকে পাইলাম।

আমি আপনাদের কাছে আজ সেই আনন্দের জয়ধ্বনি তুলিতে চাই। আজ বাংলা দেশে যাহার আবির্ভাব হইল তাহাকে কিভাবে গ্রহণ করিতে হইবে তাহা যেন আমরা না ভুলি। আমরা পাঁচজনে যুক্তি করিয়া কাঠখড় দিয়া কোনোমতে কোনো একটা সুবিধার খেলনা গড়িয়া তুলি নাই। আমাদের বঙ্গমাতার সূতিকাগৃহে আজ সজীব মঙ্গল জন্মগ্রহণ করিয়াছে; সমস্ত দেশের প্রাঙ্গণে আজ যেন আনন্দশঙ্খ বাজিয়া উঠে, আজ যেন উপঢৌকন প্রস্তুত থাকে, আজ আমরা যেন কৃপণতা না করি।

তাই আজ আমি ছাত্রদিগকে অনুরোধ করিতেছি, এই বিদ্যালয়ের প্রাণকে অনুভব করো—সমস্ত বাঙালিজাতির প্রাণের সঙ্গে এই বিদ্যালয়ের যে প্রাণের যোগ হইয়াছে তাহা নিজের অন্তঃকরণের মধ্যে উপলব্ধি করো—ইহাকে কোনোদিন একটা ইস্কুলমাত্র বলিয়া ভ্রম করিয়ো না। তোমাদের উপরে এই একটি মহৎ দায়িত্ব রহিল। স্বদেশের একটি পরমধনের রক্ষণভার আজ তোমাদের উপরে যতটা পরিমাণে ন্যস্ত হইল, তোমাদিগকে একান্ত ভক্তির সহিত, নম্রতার সহিত তাহা বুঝিয়া লইতে হইবে। ইহাতে তপস্যার প্রয়োজন হইবে। ইতিপূর্বে অন্য কোনো বিদ্যালয় তোমাদের কাছে এত কঠোরতা দাবি করিতে পারে নাই। এই বিদ্যালয় হইতে কোনো সহজ সুবিধা আশা করিয়া ইহাকে ছোটো হইতে দিয়ো না। বিপুল চেষ্টার দ্বারা ইহাকে তোমাদের মস্তকের ঊর্ধ্বে তুলিয়াধরো; ইহার ক্লেশসাধ্য আদর্শকে মহত্তম করিয়া রাখো; ইহাকে কেহ যেন লজ্জা না দেয়, উপহাস করিতে না পারে, সকলেই যেন স্বীকার করে যে, আমরা শৈথিল্যকে প্রশ্রয় দিবার জন্য, জড়ত্বকে সম্মানিত করিবার জন্য বড়ো নাম দিয়া একটা কৌশল অবলম্বন করি নাই। তোমাদিগকে পূর্বাপেক্ষা যে দুরূহতর প্রয়াস, যে কঠিনতর সংযম আশ্রয় করিতে হইবে, তাহা ব্রতস্বরূপ ধর্মস্বরূপ গ্রহণ করিয়ো। কারণ, এ বিদ্যালয় তোমাদিগকে বাহিরের কোনো শাসনের দ্বারা,কোনো প্রলোভনের দ্বারা আবদ্ধ করিতে পারিবে না—ইহার বিধানকে অগ্রাহ্য করিলে তোমরা কোনো পদ বা পদবীর ভরসা হইতে ভ্রষ্ট হইবে না—কেবল তোমাদের স্বদেশকে তোমাদের ধর্মকে শিরোধার্য করিয়া, স্বজাতির গৌরব এবং নিজের চরিত্রের সম্মানকে নিয়ত স্মরণ রাখিয়া, তোমাদিগকে এই বিদ্যালয়ের সমস্ত কঠিন ব্যবস্থা স্বেচ্ছাপূর্বক অনুদ্ধত আত্মোৎসর্গের সহিত নতশিরে বহন করিতে হইবে।”

জাতীয় শিক্ষার জন্য এই আন্দোলনের সাথে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হয়েছেন সিস্টার নিবেদিতা, অরবিন্দ ঘোষ, নীলরতন সরকার, তারকনাথ পালিতের মতো মানুষেরা। এমনকি আশুতোষ মুখার্জিও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। যদিও “Asutosh Mukherjee had no sympathy at all with the National Council as a potential rival to his university – he even privately urged Minto to take action against the politically-unreliable national schools – but in his own way he was realising a part of the constructive programme of the national education movement.” (The Swadeshi Movement in Bengal, পৃঃ ১৭০)

বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে অরবিন্দ ১৯০৭ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ইতিহাস ও পলিটিক্যাল সায়ান্সের শিক্ষক হিসেবে ডিসেম্বর, ১৯০৭ থেকে মে, ১৯০৮ পর্যন্ত শিক্ষাদান করেছেন। কিন্তু এরপরে ধীরে ধীরে নামী ব্যক্তিরা সরে যেতে শুরু করেন। ডিসেম্বর ১৯০৮-এ সতীশচন্দ্র মুখার্জির মতো অত্যুৎসাহী সংগঠকেরা সরে যান। ১৯০৭-এর আগস্ট মাসেই সন্ধ্যা পত্রিকা তিক্তস্বরে লেখে – “The truth is that Satish Babu and secretly many others of the National College as well are quite stiff with fear.” (পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৭১) এরকম লেখার পেছনের ঘটনাটি হচ্ছে, ন্যাশনাল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সুশীলকুমার সেনকে যখন কিংসফোর্ডের আদেশে চরম বেত্রাঘাত করা হয় তারপরে সুশীলকুমারকে কলেজের তরফ থেকে সম্মান জানানোর কোন সাহস দেখানো হয়নি।

সম্পাদক হিসেবে আশুতোষ চৌধুরী এবং হীরেন্দ্রনাথ মুখার্জি ১৭ ডিসেম্বর, ১৯০৮-এ সার্কুলার জারি করে জানান যে মফস্সলের স্কুল সহ কোন স্কুলের ছাত্ররাই আর ইংরেজ বিরোধী পিকেটিং বা বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করতে পারবেনা। ১৯০৯-এর আগস্ট নাগাদ ন্যাশনাল কাউন্সিলের ক্রিয়াকলাপে মিন্টো নিতান্ত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন – “It is very satisfactory that the National Council of Education has been doing much to keep the students of national schools under control…” (পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৭২)

১ জুন, ১৯০৬-এ যেদিন ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন-কে সরকারিভাবে রেজিস্টার করা হয় সেদিনই আরেকটি প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন তৈরি হয় তারকনাথ পালিত এবং অন্যান্যদের নেতৃত্বে – সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন (S.P.T.E)। S.P.T.E-র তত্ত্বাবধানে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট ২৫ জুলাই, ১৯০৬ থেকে কাজকর্ম শুরু করে – ৯২, আপার সার্কুলার রোডে মাসিক ৩০০ টাকায় ভাড়া করা একটি ঘরে। এটিই এখন ইউনিভার্সিটি সায়ান্স কলেজ (চালু কথায় রাজাবাজার সায়ান্স কলেজ)।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট-এর প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেছিলেন প্রথমে প্রমথনাথ বোস (১৯০৬-১৯০৮) এবং পরে শরৎকুমার দত্ত (১৯০৯-১৯১০)। প্রমথনাথ বোস (পি এন বোস) ভারতের একজন অগ্রগণ্য ভূতাত্ত্বিক এবং জীবাশ্মবিদ ছিলেন। শরৎকুমার দত্ত হলেন প্রথম ভারতীয় যিনি বার্লিনের Technological University of Charlottenburg থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় সর্বোচ্চ অনার্স নিয়ে পাস করেছিলেন। ১৯০৯ সালে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট-এর ছাত্রসংখ্যা ছিল ১২৪। (Origins of the National Education Movement, পৃঃ ৪৯-৫০)

এদিকে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ এবং স্কুল বৌবাজার স্ট্রিটে ১৫ আগস্ট, ১৯০৬ থেকে এর যাত্রা শুরু করেছিল। প্রথম প্রিন্সিপাল ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ, সতীশচন্দ্র মুখার্জি প্রথম সুপারিন্টেনডেন্ট। ভারতীয় ইতিহাস এবং সংস্কৃতির নামী গবেষক হিসেবে যারা সেসময়েই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তাঁর মধ্যে কয়েকজন (যেমন রবীন্দ্রনারায়ণ ঘোষ, বিনয়কুমার সরকার, রাধাকুমুদ মুখার্জি) এখানে শিক্ষকতা করেছিলেন। অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন মোক্ষদাচরণ সমাধ্যায়, সখারাম গণেশ দেউস্কর এবং পালি ভাষার শিক্ষক ধর্মানন্দ কোশাম্বি (প্রখ্যাত অঙ্কবিদ, ঐতিহাসিক এবং মার্ক্সবাদী পণ্ডিত ডি ডি কোশাম্বির পিতা)। সুমিত সরকার মন্তব্য করছেন – “The all-India outlook of the leaders of national education is noteworthy; the study of Hindi and Marathi was encouraged (as well as of Pali, Persian and Sanskrit and also French and German)…” (The Swadeshi Movement in Bengal, পৃঃ ১৬৮)

এরপরে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে ভাঁটা পড়ে। সংগঠকদের মতদ্বৈধ, বিভিন্ন বিরোধী মতকে সমাধান করার অজানা রাস্তা এবং, সর্বোপরি, ছাত্রসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পেতে শুরু করে। এর প্রধান কারণ ছিল এই প্রচেষ্টা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে পাস করে বেরনোর পরে কর্মসংস্থানের কি হবে এ উত্তর অজানা ছিল।

কিন্তু “all that survived of the wreck of national education movement in Calcutta was the College of Engineering and Technology, the real institutional nucleus perhaps of the modern Jadavpur University.” ((The Swadeshi Movement in Bengal, পৃঃ ১৬৭)

এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। সায়েন্টিফিক এবং টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের প্রসঙ্গ খুব জোরদারভাবে এলেও মেডিক্যাল শিক্ষার অঞ্চলটি, কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ছাড়া, প্রধানত ইংরেজ সরকার তথা রাষ্ট্রের হাতেই তোলা থাকল। যদিও সেসময়ে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জায়গায় প্রাইভেট মেডিক্যাল স্কুলের আদলে কিছুকিছু ক্ষেত্রে ডিসেকশন এবং রোগ নির্ণয় ও ওষুধ প্রয়োগের শিক্ষা দেওয়া হত। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস “আরোগ্য-নিকেতন”-এ এ চিত্র খানিকটা ধরা আছে।

তাহলে কি জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন বা সামগ্রিকভাবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ঢেউ মেডিক্যাল কলেজগুলোর ছাত্রদের স্পর্শ করেনি। প্রসঙ্গত বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ৩টি মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা শহরে ছিল – (১) মেডিক্যাল কলেজ, ক্যালকাটা বা শুধুই মেডিক্যাল কলেজ, (৩) ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুল (বর্তমান নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ), এবং (৩) কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ (বর্তমানে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ)। ঢাকাতে সেসময়ে তৈরি হয়েছিল মিটফোর্ড হাসপাতাল, যেখানে মেডিক্যাল ক্লাস নেওয়া হত।

শ্রীলতা চ্যাটার্জির গবেষণা জানাচ্ছে ১৯২১ সাল নাগাদ – “Gandhi himself, at a meeting at Mirzapore Park, appealed to the students to leave their studies. The Calcutta Medical College students who had been immune to propaganda by the leaders were overwhelmed by his appeal.” (Congress Politics in Bengal (1919-1939), 2002, পৃঃ ৭১-৭২)

এর আগে ঘটে যাওয়া জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন এবং, বিশেষ করে, গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল মেডিক্যাল শিক্ষার ওপরেও। ১৯০৭ সালে (জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের কাল) ডঃ শরৎকুমার মল্লিক ১৯১, বৌবাজার স্ট্রিটে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অফ ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর কাজকর্ম শুরু হয়। ১৯১০ সালে এর সাথে একটি “ফ্রি হাসপাতাল” যুক্ত হয়। মহারাজা মণীন্দ্র নন্দীর দান করা একখণ্ড জমিতে (৩০১/৩, আপার সার্কুলার রোড) এই হাসপাতাল সরে যায়। ১৯১৯ সালে ডঃ শরৎকুমার মল্লিকের উদ্যোগে নতুন করে আবার এ কলেজ ও হাসপাতাল চালু হয়। এসময়ে এর দায়িত্বভার গ্রহণ করে “ক্যালকাটা মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশন” নামে এক ট্রাস্টি বোর্ড। নতুন ইন্সটিটিউশন State Medical Faculty of Bengal for LMF Course-এর সাথে “affiliated” ছিল। ১৯২৪-২৫ সালে ছাত্রদের প্রথম ব্যাচ Licentiate Examination of the Faculty-র জন্য পরীক্ষায় বসে।

শ্রীলতা জানাচ্ছেন – “Someswar Prasad Chaudhuri recalled how as a young medical student he was greatly moved by Deshabandhu’s speech in a meeting at Hedua and, disregarding all the attractions of further studies in Europe, responded to his call. He joined the newly opened National Medical College.” (পৃঃ ৭২)

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের আগে বিজ্ঞানে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ

যেসমস্ত স্বাধীন চিন্তকদের ওপরে জাতীয়তাবাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে তাঁদের মধ্যে মহেন্দ্রলাল সরকার অগ্রগণ্য। আমরা প্রায় সবাই জানি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এমডি হচ্ছেন মহেন্দ্রলাল। প্রথম এমডি ছিলেন চন্দ্রকুমার দে। মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৮৬০ সালে মেডিসিন, সার্জারি এবং মিডওয়াইফারি সর্বোচ্চ অনার্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েট হন। ১৮৬৩ সালে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরে Bengal Branch of British Medical Association-এ যোগ দেন। ১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন ক্যালকাটা জার্নাল অফ মেডিসিন।

তাঁর জার্নাল সম্বন্ধে সেসময়ের বিখ্যাত জার্নাল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেট-এ (জুলাই ১, ১৮৬৮) বিজ্ঞপ্তি হিসেবে বলা হল – “We have received the fifth number of this journal, and are very sorry to learn that the Editor is still single-handed. We beg to assure Br. Sircar that when we made use of the term Sub-Assistant Surgeon, we did not allude to him, as we were well aware of his being an independent practitioner. We regret very much to think that the title of Sub-Assistant Surgeon should convey “an everlasting reproach,” as Dr. Sircar says it does. We do not despair of living to see it associated with all that is dignified, honorable, and lucrative.”

(মহেন্দ্রলাল সরকার এবং IACS-এর আদি বিল্ডিং)

১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ভারতের প্রথম স্বাধীন বিজ্ঞান সাধনা ও গবেষণার প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়ান্স (IACS)। অতি ঘটনাবহুল এর জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশের ইতিহাস। আমি এ নিয়ে বিশদ আলোচনা থেকে বিরত থাকছি বর্তমান আলোচনার জন্য যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক নয় বলে। কিন্তু প্রাসঙ্গিকভাবে কিছু বিষয় আলোচনায় আসবে।

মহেন্দ্রলালের একটি বিশেষ অবস্থান – বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যৌগপদ্যে গড়ে ওঠা সভ্যতা এবং এরকম সভ্যতার মাঝে বাস করা চিন্তাহীন নিষ্কর্মা মানুষকে নিয়ে তাঁর ধারণা – উদ্ধৃত করছি তাঁর নিজের লেখা থেকে – “There is an immense difference between civilized man and the man happening to live in civilized times; between the man of science and the man whom accident has placed in the era of science … The very fact of being born at this stage of the world’s history is indeed in itself a privilege, but with such privilege, to remain as ignorant as the man of the stone period, is not a matter of unspeakable shame, but an awful irresponsibility. To whom much has been given, of him much shall be required.” (J. Lourdusamy, Science and National Consciousness in Bengal: 1870-1930, 2004, পৃঃ ৬২)

এখানে আমরা মহেন্দ্রলালের করা বিভাজনটি খেয়াল করি। তিনি “সিভিলাইজড ম্যান” এবং “সিভিলাইজড টাইম”-এ জন্মানো মানুষের মাঝে প্রভেদ করছেন। প্রকৃত অর্থে তিনি বোঝাতে চাইছেন বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতির সাথে যুক্ত মানুষ এবং ঘটনাচক্রে এরকম সময়ে জন্মেছে বলে “সিভিলাইজড” মানুষ – এ দুটিকে এক নিঃশ্বাসে বলা যাবেনা। তাঁর কথায় বলা যায়, যদি এরকম সময়ে জন্মেও কেউ স্বাধীনভাবে মৌলিক চিন্তাভাবনা না করে তাহলে তাকে প্রস্তর যুগের মানুষ বলা যায়। শুধু তাই নয়, এ কাজ না করা একধরনের অকথিত ঘৃণার জন্ম দেয়, এ কাজ একটি ভয়াবহ দায়িত্বজ্ঞানহীনতা – “The very fact of being born at this stage of the world’s history is indeed in itself a privilege, but with such privilege, to remain as ignorant as the man of the stone period, is not a matter of unspeakable shame, but an awful irresponsibility”। হয়তো কথাগুলো কঠোর। কিন্তু রূঢ় সত্যি, আজ একুশ শতকের ভারতবর্ষে এবং পৃথিবীতে।

১৯০৩ সালে প্রকাশিত ত্রৈলক্যনাথ মুখোপাধ্যায় এবং অমৃতলাল সরকার সংকলিত ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা – ইহার সংখেপবৃত্তান্ত ও অভাব পুস্তকের ভূমিকায় সংকলকরা জানান – “আমাদের দেশে যাহাতে বিজ্ঞান শাস্ত্রের আলোচনা হয়, সেই সম্বন্ধে ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে অর্থাৎ তেত্রিশ বৎসর পূর্বে, চিকিৎসা বিষয়ে একখানি মাসিক পত্রে (ক্যালকাটা জার্নাল অফ মেডিসিন), ডাক্তার মহেন্দ্র লাল সরকার একখানি প্রবন্ধ লিখিয়াছিলেন। ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভার ইহাই প্রথম সূচনা।”

উত্তরপাড়া হিতকরী সভার “লিটারারি ব্র্যাঞ্চের” মিটিং-এ (১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭২) মহেন্দ্রলাল “On the desirability of a national institution for the cultivation of the sciences” শীর্ষক একটি দীর্ঘ বক্তব্য পাঠ করেন। এটি পরে আলাদা প্রবন্ধ হিসেবে (সাথে আরও অনেকের বক্তব্য ও মিনিটস সমেত) ৪৮ পাতার প্রবন্ধ হিসেবে ছাপা হয় (Indian Journal of History of Science, vol. 29, Supplement, 1994, pp. 1-48)।

এই অভিভাষণের প্রায় সূচনাতেই তিনি বলেন – “How is it that we can scarcely name a single individual who may be said to be pursuing with steadiness any branch of science? How is it that the Medical College of Calcutta, which has been in existence for nearly half a century, and within whose walls some of the noblest of the physical sciences are practically and experimentally taught, has not yet turned out a single student who has even thought of cultivating any of these sciences for which such ample foundation has been laid during his term in the College?” (পূর্বোক্ত, পৃঃ S-2)

একটি গভীর প্রশ্ন তুললেন তিনি বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে। মেডিক্যাল কলেজের মতো সেসময়ের সর্বোন্নত প্রতিষ্ঠানে যেখানে মেডিসিনের বাইরেও ল্যাবরেটরিতে ফিজিক্যাল সায়ান্সের চর্চা এবং হাতেকলমে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য সমস্ত সুযোগসুবিধে রয়েছে সেখান থেকে একজনও মৌলিক পথে গবেষণা করার সদিচ্ছা নিয়ে গবেষক বেরোবেনা কেন? তাঁর তীব্র যন্ত্রণার উৎস হচ্ছে স্বাধীন পথে বিজ্ঞানচর্চার আগ্রহ ভারতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছেনা। তাহলে পরাধীন ভারত কিভাবে ইংরেজ আধিপত্যের সঙ্গে পাল্লা দেবে? তিনি স্বাধীন বিজ্ঞানচর্চাকে এই অসম যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

ব্যক্তিগতভাবে গবেষণা করে ঔৎকর্ষ প্রমাণ করা নয়। তিনি চেয়েছিলেন সামগ্রিকভাবে একটি গবেষণার আবহাওয়া, একটি নতুন পথে চিন্তার পরিমণ্ডল তৈরি করতে।

এই অভিভাষণেই মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা ছাত্রদের নিয়ে তাঁর আক্ষেপ স্পষ্টভাষায় প্রকাশ করেন – “the class of graduates of the Medical College of Calcutta and other places … how they remain eternally degraded and disgraced as Sub-Assistant Surgeons, excluded from all independent positions, and with no hope” (পূর্বোক্ত, পৃঃ S-3। যদিও ১৮৭৫ সালে এদের অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন র‍্যাংক দেওয়া হয়)।

তাঁর এ আক্ষেপ পরবর্তী সময়ে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষাক্রম “ল্যাবরেটরি মেডিসিন”-এর যুগে প্রবেশ করার পরে খানিকটা প্রশমিত হয়েছিল। যদিও তিনি চাক্ষুষ করে যেতে পারেননি।

আমি দু’জন কৃতি গবেষকের কথা এক্ষেত্রে উল্লেখ করব। প্রথমজন হলেন এ লেখার শুরুতে যাঁর কথা উল্লেখ করেছি তিনি – উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। দ্বিতীয়জন, শম্ভুনাথ দে।

উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী

ইতিহাসে কুখ্যাত “বর্ধমান ফিভার” বস্তুত দুটি রোগের যুগপৎ আক্রমণে হয়েছিল। ব্রহ্মচারী ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেট-এ প্রকাশিত (সেপ্টেম্বর, ১৯১১) তাঁর গবেষণাপত্র “On the Nature of the Epidemic Fever in Lower Bengal Commonly Known as Burdwan Fever. (1854-75)”-এ দেখিয়েছিলেন – “It is thus evident that there was an epidemic of two diseases during the outbreak of Burdwan fever. The severe cases described by French were mostly cases of malaria (probably malignant tertian fever), while those that constituted the large majority of cases observed by Jackson were cases of Kala-azar.”

১৯২৮ সালে প্রকাশিত তাঁর A Treatise on Kala-azar গ্রন্থে ব্রহ্মচারী জানাচ্ছেন – “কালা-আজার নামটি যদিও বহুল ব্যবহৃত হয়, কিন্তু যথোপযুক্ত নয়। এ নাম দিয়ে বোঝানো হয় যে এক বিশেষ ধরনের জ্বরে ত্বকের রঙ কালো হয়ে যায়। এজন্য অনেকেই মনে করেন একে “কালা-জ্বর” বলা উচিত।” অঞ্চলভেদে কতভাবে এর নামের ভিন্নতা ঘটেছে তার ব্যাখ্যা করেন তিনি। ১৮২৪-২৫-এ যশোরে যখন এ রোগের প্রকোপ দেখা যায় তখন একে “জ্বর-বিকার” বলা হত। এরই অন্যান্য নামগুলো হল – “দমদম জ্বর”, “সাহেবদের রোগ”, “সরকারি অসুখ”, “কালা-দুঃখ”, “কালা-হাজার” “আসাম ফিভার”, ponos (Greece), semieh (Sudan), malattia de menssa (Sicily) ইত্যাদি। এসব থেকে কালাজ্বরের পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়। জলপাইগুড়িতে একে বলা হত “পুষ্করা” আর আসামের মানুষ একে বলতো “সাহেবদের রোগ”।

যাহোক, আসামের সুবিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চা বাগান তৈরি হল, “সাহেবদের রোগ” ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো স্থানীয় অধিবাসী এবং চা বাগানের কুলি তথা শ্রমিকদের মাঝে। গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যেতে লাগলো এই ব্ল্যাক ডেথ বা কৃষ্ণ মৃত্যুর থাবায়। তখন আড়কাঠিদের দিয়ে ছোটনাগপুর অঞ্চলে থেকে দরিদ্র, ভুখা মানুষদের নিয়ে আসা হল চা বাগানের কুলি হিসেবে। চা বাগান তৈরির মধ্য দিয়ে আগেই আসাম এবং গারো পার্বত্য অঞ্চলের টোপোগ্রাফি পরিবর্তিত হয়েছিল। এবার নতুন করে ডেমোগ্রাফির পরিবর্তন শুরু হল। আরেকটা পরিবর্তন হল – আসামের মানুষের মাঝে চা পানের অভ্যেস তৈরি করে দেওয়া হল। পরিবর্তন হল পানাভ্যাসেরও। ৩,৫০,০০০-এর বেশি মানুষ এ রোগে মারা গিয়েছিল। আবার কোন কোন হিসেবে এ সংখ্যা ২৫ লক্ষও হতে পারে। এ রোগে সেসময়ে মৃত্যুহার ছিল ৯০%।

উপনিবেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি এক গভীর সংকটের মুখে পড়লো – মানুষ তথা চা বাগানের কুলিদের মৃত্যু আটকানো না গেলে চা উৎপাদন হবেনা, মুনাফায় ঘাটতি পড়বে। আবার বিজ্ঞানীদের কাছে দুটি প্রশ্ন এলো – (১) এ রোগ কিভাবে হয়? বাহক কে? (২) মৃত্যুকে প্রতিরোধ করা যাবে কিভাবে। মেরি গিবসন তাঁর “The Identification of Kala-azar and the Discovery of Leishmania Donovani” গবেষণাপত্রে জানাচ্ছেন – “In the years following 1858, when the British government formally assumed power over the whole of British India, the government of Bengal became concerned by reports of an epidemic of quinine-resistant fever occurring in the district of Burdwan in Lower Bengal. The mortality was so great that the population, the productivity of the land, and consequently the government revenue were greatly diminished.”

এক অদ্ভুত সমাপতন ঘটলো – সাম্রাজ্যবাদ চায় মুনাফার জন্য কুলিদের বাঁচিয়ে রাখতে, এবং বিজ্ঞান চায় একটি মানুষেরও যেন মৃত্যু না ঘটে। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী সে লক্ষ্যে তাদের সমস্ত শ্রম ঢেলে দেন। উপনিবেশিক শাসকেরা তার সুফলটুকুর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে। এটা বিজ্ঞানের ট্র্যাজেডি। শুধু তাই নয় একটি “মেডিক্যাল-স্টেট-পলিটিক্স কমপ্লেক্স” গড়ে ওঠে। রাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতির যূপকাষ্ঠে চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা বলি প্রদত্ত হন।

এর ভালো উদাহরণ দেখা যাবে ১৮৬৭-পরবর্তী উপনিবেশিক ভারতের কলেরা পলিসির ক্ষেত্রে। সুয়েজ খাল চালু হবার পরে কলেরা রোগী থাকলে জাহাজ শুদ্ধ কোয়ারান্টাইনে থাকা আন্তর্জাতিকভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু এতে ইংরেজের মুনাফায় ঘাটতি পড়ছিল। এজন্য কলেরার সংজ্ঞা বদলে দেওয়া হল, কলেরা ছড়ানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রাহ্য ধারণাকেও আক্রমণ করা হল, অস্বীকার করা হল। এ ব্যাপারে অনবদ্য সুদীর্ঘ আলোচনা করেছেন শেল্ডন ওয়াটস তাঁর “From Rapid Change to Stasis: Official Responses to Cholera in British-Ruled India and Egypt: 1860-1921”। তাঁর পর্যবেক্ষণে – “To maintain general amnesia, they silenced critics at the Royal Army Medical College at Netley who knew what the score was. They kept inconvenient documentary evidence, written before the policy change, under wraps and in some cases may have destroyed it.” আরেকজন উচ্চপদস্থ ইংরেজ চিকিৎসক অ্যান্ড্রু ডানকান তাঁর “A Phase in the History of Cholera in India” (১৯০২ সালে এডিনবার মেডিক্যাল জার্নাল-এ প্রকাশিত) প্রবন্ধে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে এই বিপজ্জনক প্রবণতার বর্ণনা দিয়েছেন। “মেডিক্যাল-স্টেট-পলিটিক্স কমপ্লেক্স”-এর এর চাইতে ভালো উদাহরণ আর কি আছে?

১৮৬৭-৬৮ পরবর্তী সময়ে ভারতে কলেরা গবেষণার ক্ষেত্রে “পলিসি রিভার্সাল” বা নীতির আপাদমস্তক পরিবরর্তনের ফলে শুধু কলেরা সংক্রান্ত গবেষণা নয়, সব শাখার স্বাধীন গবেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনিতেই পুঁজি এবং বাণিজ্যের প্রয়োজন ছাড়া অন্য বিষয়ে গবেষণায় উপনিবেশিক ভারতে উৎসাহ দেওয়া হত এমন নয়। এই সময়ের পরে তা আরও কমে যায়। এমনকি খোদ সাদা চামড়ার সাহেব রোনাল্ড রস তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রে বিস্তর বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। বিজ্ঞানের আমলাতন্ত্র বিভিন্ন পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিল। ফলে ব্রহ্মচারী “রাজভক্ত” কিনা এ প্রশ্ন এরকম এক প্রেক্ষিতে খুব জরুরী ছিলনা। অধিকতর জরুরী ছিল একজন কালা মানুষ শিক্ষাক্ষেত্রে যত যোগ্যতাই অর্জন করুন না কেন তিনি উপনিবেশিক বিজ্ঞানের আমলাতন্ত্রের সাথে কতটা লড়াই করে উঠতে পারছেন এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানের জগতের ঘাঁৎঘোঁৎ ভালো বুঝতেন কিনা। দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি আমরা তার মাঝে খুঁজে দেখতে পারি অন্যভাবে। তাঁর নাম দুবার – ১৯২৯ এবং ১৯৪৬ – নোবেলের তালিকায় নমিনেশন পাওয়া সত্ত্বেও কেন নোবেল পুরষ্কার পেলেননা । আর প্রথম ক্ষেত্রে এটা জেনে রাখা ভালো ইন্ডিয়া রিসার্চ ফান্ড থেকে অনুদান পাওয়ার দরুণ তার আবিষ্কৃত ইউরিয়া স্টিবামিনের বাজারে আসা সহজ হয়েছিল। কিন্তু ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলের (বর্তমানের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ) যে ঘরে এই অসম্ভব গবেষণাকর্মটি করেছেন সেটা আয়তনে জেলের একটা সেলের সাইজের বেশি কিছু ছিলনা। তাঁর নিজের কথায় – “I recall with joy that memorable night in the Calcutta Campbell Hospital at Sealdah, where after a very hard day’s work I found at about 10 o’clock that the results of my experiments were up to my expectations. But I didn’t know then that providence had put into my hands a wondrous thing and that this little thing would save the lives of millions of my fellowmen. I shall never forget that room where Urea Stibamine was discovered. The room where I had to labour for months without a gas point or a water tap and where I had to remain contented with an old kerosene lamp for my work at night. To me it will ever remain a place of pilgrimage where the first light of Urea Stibamine dawned upon my mind.” তাঁর গবেষণাকক্ষে কোন গ্যাসের সংযোগ ছিলনা, ছিলনা বিদ্যুৎ সংযোগ, এমনকি ট্যাপ ওয়াটারের সরবরাহও নয়। একটি পুরনো কেরোসিনের ল্যাম্প জ্বালিয়ে রাত্রিবেলা কাজ করতেন আবিষ্কারের অদম্য আকাঙ্খায়।

ব্রহ্মচারী এলএমএস ডিগ্রি পান ১৮৯৯ সালে। ১৯০০ সালে এমবি ডিগ্রি – মেডিসিন এবং সার্জারি দুটিতেই প্রথম হয়ে গুডিভ এবং ম্যাকলিওডস মেডেল পান। ১৯০২ সালে এমডি পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপরে ১৯০৪ সালে পিএইচডি অর্জন। বিষয় ছিল “Studies on Haemolysis”। তাঁর পিএইচডির থিসিসের সংক্ষিপ্ত এবং উন্নত চেহারার নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় বায়োকেমিক্যাল জার্নাল-এ ১৯০৯ সালে “Some Observations on the Haemolysis of Blood by Hyposmotic and Hyperosmotic Solutions of Sodium Chloride” শিরোনামে। এছাড়াও ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন থেকে Mente মেডেল এবং এশিয়াটিক সোসাইটির উইলিয়াম জোন্স মেডেল লাভ করেন।

পরবর্তীকালে প্রায় সম্পূর্ণ জীবন কেটেছে গবেষণার নির্ভুল লক্ষ্যে। প্রায় ১৫০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার, ল্যান্সেট, ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, বায়োকেমিক্যাল জার্নাল, ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেট-এর মতো জার্নালগুলোতে।

ব্রহ্মচারীর মাথায় আসে আর্সেনিক এবং অ্যান্টিমনি পর্যায় সারণীতে একই গ্রুপে রয়েছে। এবং দুটি মৌলের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ও বায়োলজিক্যাল চরিত্রে অনেক মিল আছে। তিনি এবার অ্যান্টিমনি দিয়ে পরীক্ষা শুরু করলেন। প্রথমে পাউডার তৈরি করে, পরবর্তীতে অ্যান্টিমনির কোলয়ডিয় (colloidal) দ্রবণ তৈরি করে। সফল হলেন। তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হল ল্যান্সেট পত্রিকায় (অক্টোবর ২১, ১৯১৬) “The Preparation of Stable Colloidal Antimony” শিরোনামে। তিনি জানালেন – “The remarkable trypanocidal properties possessed by antimony, its specific action against the Leishmania, and the fact that in the colloids generally the ratio dosis curativa : dosis tolerata is very low, make it desirable to prepare a stable solution of colloidal antimony.” তাঁর শেষ কথা ছিল – “The colloid obtained in this way seems to be a very stable substance, and in this respect differs from the Svedberg’s colloid. The therapeutic use of the colloidal metallic antimony has already been described n the Indian Medical Gazette (May, 1916) Further observations on the use of this drug in the same disease have shown similar beneficial results.” শেষ বাক্যটি খেয়াল করলে বুঝবো যে আজকের যুগের ফেজ ১ ট্রায়ালের ছায়া তাঁর পরীক্ষায় ধরা আছে। এই গবেষণার কাজে সাহায্যের জন্য ১৯১৯ সালে ইন্ডিয়ান রিসার্চ ফান্ড আর্থিক অনুদান পেয়েছিলেন।

এরপরে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হল ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এ ১৯২২ সালে “Chemotherapy of Antominal Compounds in Kala-azar Infection” শিরোনামে। এখানে প্রতিটি যৌগের পরীক্ষালব্ধ ফলাফল নিখুঁতভাবে লিপিবদ্ধ করলেন। দেখালেন ইউরিয়া স্টিবামিন (carbostibamide) সবচেয়ে কার্যকরী, ফলদায়ক এবং কম সময় লাগে চিকিৎসার ক্ষেত্রে। ১৯৮৬ সালে Revista da Sociedade Brasileira de Medicina Tropical জার্নালে ফিলিপ মার্সডেন “The Discovery of Urea Stibamine” (এপ্রিল-জুন, ১৯৮৬) শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লেখেন।

এবার এই ওষুধের ব্যাপক প্রয়োগ শুরু হল আসামে – চা বাগানে, গ্রামে-গঞ্জে, লোকালয়ে এবং অন্যত্র। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ (৪ মে, ১৯২৯) “Preventive Medicine in Assam” শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হল – “In June, 1927, universal or mass treatment of all kalaazar patients with urea stibamine was inistituted consequient on a marked reduction having been effected in the cost of this preparation; previouisly only 10 per cent. of the patients had been so treated, the remainder having received the less effective sodiumin antimony tartrate. The change of treatment resulted at once in a most gratifying increase of cures and a more regular attendance of patients at treatinent centres.” ১৯৩২ সালে সরকারি কালা-জ্বর কমিশনের ডিরেক্টর এইচ ই শর্ট বললেন – “We found Urea Stibamine an eminently safe and reliable drug and in seven years we treated some thousands of cases of Kala-azar and saw thousands more treated in treatment centers. The acute fulminating type characteristic of the peak period of an epidemic responds to treatment extraordinarily promptly and with an almost dramatic cessation of fever, diminution in the size of spleen and return to normal condition of health.” এরসাথে মাথায় রাখতে হবে ইউরিয়া স্টিবামিন ব্যবহারের আগে যেখানে মৃত্যুহার প্রায় ৯০% ছিল, এ ওষুধ ব্যবহারের পরে তা বদলে গিয়ে সুস্থতার হার ৯০% হয়।

যাহোক, নেচার জার্নালে (ডিসেম্বর ১৬, ১৯৩৯) লিওনার্ড রজার্সের (যিনি ফেলো অফ রয়্যাল সোসাইটি ছিলেন) একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হল “The Antimony Treatment of Kala-azar” শিরোনামে। এ প্রতিবেদনে অনেক তথ্যের মাঝে একবার ছুঁয়ে যাওয়া হল যে “The first of these was introduced (and patented) by Dr. U. N. Brahmanchari in Calcutta in 1921, under the name of urea stibamine. This proved less toxic and more effective, and it enabled more than 90 per cent of cases to be cured by intravenous injections within a few days”। আজকের অ্যাকডেমিক পরিভাষায় একে বলা হয় relativization – অর্থাৎ, কোন উপায়ে মূল বিষয়কে লঘু করে দেওয়া। এ প্রতিবেদনেই পরে লিখলেন – “according to Napier, who in 1925 found a course of stibosan to cost £2 5s. and one of urea stibamine £3 – a prohibitive sum for poor villagers in India.” মনে হয় দুরভিসন্ধি থেকে দুটি ভুল বা মিথ্যে তথ্য আন্তর্জাতিক গবেষক মহলে তুলে ধরলেন রজার্স – (১) ইউরিয়া স্টিবামিনকে “পেটেন্টেড” বললেন, যা কখনই ছিলনা, এবং (২) ইউরিয়া স্টিবামিনের প্রতিটি ডোজের খরচ সেসময়ের হিসেবে ৩ পাউন্ড বলে দেখালেন।

এরপরে নেচার-এ (এপ্রিল ৬, ১৯৪০) পত্রিকার তরফে প্রকাশ করা হল একটি ছোট রিপোর্ট “Antomny Treatment of Kala-azar” শিরোনামে। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হল হল “He (Brahmachari) states that, contrary to Sir Leonard Rogers’ statement, urea stibamine was not patented.” আরও বলা হল – “Sir Leonard Rogers stated in his article that a course of treatment with urea stibamine cost £3 in 1925.” কিন্তু বাস্তবে “Sir Upendranath states that urea stibamine is now supplied by the Government at Rs. 1 per gram, and since 1·5 gm. is sufficient for complete cure, the total cost of the drug to-day is now Rs. 1. 8 (about 2s. 3d.).” নেচার-এর উপসংহারে বলা হল – “Yet this cost is still relatively high for a country in· which the great majority of the population live dangerously near the starvation line, and there is still room for a rapidly effective and really cheap remedy for kalaazar.”

আমরা শেষ বাক্যটি খেয়াল করলে বুঝবো সরকারের লক্ষ লক্ষ পাউন্ড মুনাফার জোগানদার শ্রমিকেরা এই রোগে উজাড় হয়ে গেলেও রাষ্ট্রের তরফে পাব্লিক হেলথের কোন প্রোগ্রাম উপনিবেশিক সরকারের তরফে ছিলনা। এরকম প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসার দায় রোগীর নিজের। আজকের ভারতবর্ষে রাষ্ট্রের তরফে চিকিৎসার দায় যে ক্রমাগত রোগীদের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এর মধ্যে কি সেদিনের কোন ছায়া আমরা দেখতে পাচ্ছি?

১৯২৯ সালে নোবেলের জন্য ভারত থেকে নমিনেশন পেয়েছিলেন ব্রহ্মচারী। কিন্তু কে ছিলেন তাঁর প্রস্তাবক? প্রস্তাবক ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রির অধ্যাপক সুধাময় ঘোষ। আন্তর্জাতিক মহলে কে চেনে তাঁকে? ফলে ব্রহ্মচারী নোবেলের জন্য নির্বাচিত হলেননা। কিন্তু নোবেলজয়ী সি ভি রমন আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং যোগাযোগের এই পরিসরটি বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছিলেন। এজন্য ১৯৩০ সালে তিনি যখন নোবেল প্রাইজ পান তাঁর প্রস্তাবক ছিলেন ৬ জন আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানী। এঁদের মধ্যে নিলস বোর, রিচার্ড ফেইফার, ডি ব্রগলির মতো নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীরা ছিলেন। একই বছরে মেঘনাদ সাহা নমিনেশন পেয়েছিলেন। তাঁর প্রস্তাবক ছিলেন ডি এন বোস এবং শিশির মিত্র, যাদের আন্তর্জাতিক মান্যতা প্রায় কিছুই ছিলনা। মেঘনাদ সাহাও নোবেল প্রাইজ পাননি।

ব্রহ্মচারীর গবেষণা ১৯২৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করেছিল। বিজ্ঞানের জগতে এ এক পরম প্রাপ্তি। আমরা যদি এর পাশে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ১৯৯০ সালে নোবেলজয়ী জোসেফ মারের কথা স্মরণ করি তাহলে আরেকটু বোধগম্য হবে বিষয়টি। জোসেফ মারে কোন তাত্ত্বিক কাজ করেননি। ১৯৫৪ সালে পৃথিবীতে প্রথম সফল কিডনি প্রতিস্থাপন করেছিলেন। কয়েক কোটি মানুষের জীবন বেঁচেছে। সমধর্মী কাজ করেও ব্রহ্মচারী নোবেল থেকে বঞ্চিত। ১৯৪৬ সালেও ব্রহ্মচারী নমিনেশন পেয়েছিলেন। কিন্তু নোবেল জয় হয়নি।

অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো ১৯৩৭ সালে তাঁকে নাইটহুড দেওয়া হয়।

 শম্ভুনাথ দে

আলাদা করে যাঁর কথা বলতে হবে তিনি শম্ভুনাথ দে। রবার্ট কখ যেখানে থেমেছিলেন (কলেরার জীবাণুর আবিষ্কার) তার পরবর্তী ধাপে এগিয়েছেন শম্ভুনাথ দে। ১৯৫৩ সালের অক্টোবর সংখ্যায় Journal of Pathology and Bacteriology-তে প্রকাশিত তাঁর পেপার “An experimental study of the mechanism of action of V. cholerae on the intestinal mucous membrane”-এ দেখালেন যে জীবাণুর শরীর থেকে নিঃসৃত এক্সোটক্সিন কলেরা রোগীর ডায়ারিয়ার কারণ। তাঁর এই গবেষণাপত্রে তিনি বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন কিভাবে খরগোশের ওপরে পরীক্ষা করেছিলেন – “Rabbits weighing 1200-1500 g. were not allowed food or water for twenty-four hours. With aseptic precautions and local procaine awsthesia, a midline incision about two inches long was then made just below the middle of the abdomen, which was opened by cutting through the muscles and peritoneum. A segment of small intestine taken midway between its upper and lower ends was isolated with two silk ligatures; blood vessels were carefully avoided.” তাঁর এই পদ্ধতি পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক গবেষণার জগতে একটি গৃহীত পদ্ধতি হয়েছে। তিনি সম্ভবত এক্ষেত্রে পথিকৃৎ্। এই পেপারে তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল – “These results suggest that Vibrio cholerae alters the permeability of intestinal capillaries to proteins.”

অনেক পরে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এ (ফেব্রুয়ারি, ২০১১) রবার্ট হলের পেপার (“A De in the life of cholera”) দেখিয়েছে – “fundamental misconception in cholera pathogenesis was swept away when S.N. De used ligated loops of rabbit ileum to demonstrate lumenal fluid accumulation in the presence of Vibrio cholerae culture filtrates … The discovery was not so much ahead of its time as desperately awaited, but still De’s new model of pathogenesis had surprisingly little immediate impact. After a lag period of several years it was accepted, and a fresh generation of investigators boosted cholera from scientific obscurity to paradigm status.”
৩০ মে, ১৯৫৯-এ নেচার-এ তাঁর “Enterotoxicity of Bacteria-free Culture-filtrate of Vibrio cholerae” প্রকাশিত হয়। WHO-র বুলেটিনে (Bull World Health Organ 2010; 88: 237–240) ক্ল্যাসিক পেপার (“From endotoxin to exotoxin: De’s rich legacy to cholera”) হিসেবে তাঁর কাজ গৃহীত হয়। এই পেপারের পরিচিতি হিসেবে বলা হয় – “Between 1951 and 1959, Sambhu Nath De made crucial discoveries on the pathogenesis of cholera that changed the course of our understanding of the disease” যদিও নোবেল প্রাইজ তাঁর কাছে অধরাই থাকে।
নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী জোশুয়া লেডারবার্গ শম্ভুনাথের নাম নোবেল কমিটিতে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়। লেডারবার্গ শম্ভুনাথের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে দেখেছিলেন “iconoclastic creativity, experimental skill, and observational mastery” হিসেবে। ২০১৮ সালে এমএসএস মুর্তি তাঁকে নিয়ে বই লিখেছেন – Sambhu Nath Deঃ the Discovery of Cholera Toxin।


১৯৫৯ সালে তাঁর নোবেল প্রাইজ পাওয়ার যোগ্য আবিষ্কারের বহুদিন পরে আন্তর্জাতিক জগতে তিনি অবশেষে স্বীকৃতি পান। ১৯৭৮ সালে নোবেল সিম্পোসিয়ামে বিশেষ লেকচার দেবার জন্য আমন্ত্রিত হন তিনি। পরম যন্ত্রণা নিয়ে সে লেকচারে তিনি বলেছিলেন – “১৯৬০-এর দশকের গোড়া থেকে আমি মৃত অবস্থায় ছিলাম। Nobel Symposium Committee আমাকে আবার কবর থেকে খুঁড়ে তুলেছে এবং আপনাদের সান্নিধ্যে এই দু’দিন কাটানোর ফলে আমি অনুভব করছি যে আমি আবার জীবনে ফিরে আসছি।”

PrevPreviousঅনিদ্রা ও ঘুমের অভ্যাস
Nextবুদ্ধিজীবীNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
8 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Soumya Chakraborty
Soumya Chakraborty
11 months ago

Khub sunder sir.

0
Reply
Soumya Panigrahi
Soumya Panigrahi
11 months ago

very informative and enlitening

0
Reply
রুমেলিকা
রুমেলিকা
11 months ago

তথ্যসমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ লেখা

0
Reply
Sudipta Basu
Sudipta Basu
11 months ago

তথ্যসমৃদ্ধ লেখা , অনেক অজানা তথ্য জানলাম, ধন্যবাদ স্যার

0
Reply
সুকুমার ভট্টাচার্য্য
সুকুমার ভট্টাচার্য্য
11 months ago

বড় যত্ন করে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য কিভাবে ইংরেজী শিক্ষাপদ্ধতি ভারতীয়করণ হোল উনবিংশ শতাব্দীর সর্ববরেণ্য চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও মুক্তমনের অভিজাতদের যৌথ প্রয়াসে। তারই ফলশ্রুতি হিসাবে আমরা পেয়েছি একাধিক উচ্চমানের উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণাকেন্দ্র। এতে উপকৃত হয়েছে পরবর্তী প্রজন্ম। প্রামান্য হিসাবে দুজন অবিস্মরণীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করেছেন। তাঁরা হলেন, ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ও ডঃ শম্ভু নাথ দে। চমৎকার লেখা।

0
Reply
সুকুমার ভট্টাচার্য্য
সুকুমার ভট্টাচার্য্য
11 months ago

ইংরেজী এবং ইংরেজী মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষা চালু করার মূল উদ্যোগ ইংরেজরাই নিয়েছিল মূলতঃ তাদের প্রয়োজনেই। পরবর্তীকালে আলোকপ্রাপ্ত ভারতীয়রা জ্ঞানারোহণের ক্ষেত্রে এর সুফল বুঝতে পারল। ফলতঃ, এই আলোকপ্রাপ্তদের সমাজদরদী অংশের মানুষেরা আধুনিক চিন্তাভাবনায় অভ্যস্ত সমাজবিদ, চিন্তাবিদ এবং অভিজাতরা এই শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতীয়করণ করে আরও মানুষদের কাছে পৌঁছুনোর উদ্যোগ নিলেন। বড় সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন এই প্রেক্ষাপট ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য। এই উদ্যোগের সাফল্যের উদাহরণ হিসাবে লেখক ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী এবং ডঃ শম্ভু নাথ দের মত দুজন নমস্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীর জীবনী উপহার দিয়েছেন। ধন্যবাদ লেখককে।

0
Reply
Dr. Nirmalya Kumar Majumder ; Pondicherry
Dr. Nirmalya Kumar Majumder ; Pondicherry
11 months ago

Dear Jayanta — the tragedy of Prof. S.N De’s — unrecognized work on Cholera endotoxin in India and abroad– was known to me but didn’t surprise me.Such deliberate neglects of great thinkers and scientific workers in their life times — is replete in history of science and
and any field of knowledge. What is astounding that even in ’70s and ’80s of India — when Prof.De had reached the pinnacle of his work — periods which we boast of were days of liberal scientific thinking under the patronage of Great Iconic Socialist/ Secular power that could be — there were ample neglect to real Scientific thinkers and of their epochal contributions. He was not even awarded – Padma awards! Most intriguing scientific conception of ORS as curative factor in combatting Cholera dehydration could not have been conceived without seminal works of Prof De. Prof.Moni.Biswas — the then famous Paediatric Professor — the proverbial initiator, philosopher and guide — to the astounding work on ORS carried out by my dear friend of many a shades – Dr Dilip Mahalonobis — was a close contemporaneous friend of Prof De. Most likely they were of same batch.Prof.Biswas and many others intellectuals of Calcutta of that time — were close to power that be–whose words Delhi used to listen with utmost seriousness. They too failed miserably in patronizing Prof. Dr Sambhunath DE. That’s the Greatest Tragedy we carry on our head. Politics in NOBEL COMMITTEE had been there since its inception. A Padmabivusan or Socialist Nobel Prize — Lenin Prize could have been achieved. YOU HAVE TO CULTIVATE MAMAs — at all time and everywhere.—- n.da

0
Reply
Jayanta Bhattacharya
Jayanta Bhattacharya
Reply to  Dr. Nirmalya Kumar Majumder ; Pondicherry
11 months ago

Regards NirmalyaDa

0
Reply

সম্পর্কিত পোস্ট

দীপ জ্বেলে যাও ২

March 22, 2023 No Comments

আত্মারাম ও তার সঙ্গীরা রওনা দিল দানীটোলার উদ্দেশ্যে। দল্লিরাজহরা থেকে দানীটোলা বাইশ কিলোমিটার হবে। বিশ না বাইশ, ওরা অত গ্রাহ্য করে না। ওরা জানে এই

ভাইরাস সংক্রমণ শুধুই বায়োলজিকাল? – উত্তর ভাসে বাতাসে

March 21, 2023 1 Comment

পশ্চিমবাংলা এই মুহূর্তে অ্যাডেনভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিপর্যস্ত। আইসিএমআর-নাইসেড-এর সম্প্রতি প্রকাশিত যৌথ সমীক্ষা  জানাচ্ছে, ভারতের ৩৮% অ্যাডেনোভাইরাস রোগী পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। এমনকি সুপরিচিত ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান-এ একটি

দল্লী রাজহরার ডায়েরী পর্ব-১৬

March 20, 2023 No Comments

৪/৩/১৯৯০ শৈবাল–আমাকে প্রথমে নির্বাচনের খবর। আমরা একটাও জিততে পারিনি। জনকও হেরেছে। ভেড়িয়া ৭০০০ ভোটে জিতেছে। আমরা গ্রামে ১২ হাজার ভোট পেয়েছি। বি. জে. পি. ২১

গ্রামের বাড়ি

March 19, 2023 No Comments

১৪ দিন দশেক পরে দেবাঙ্কন এসে হাজির। বলল, “তোদের কফি ধ্বংস করতে এলাম। বাপরে বাপ, যা গেল! যাক, চার্জশিট হয়ে গেছে। সাংঘাতিক কনস্পিরেসি। সোমেশ্বর নাথ

মহিলাদের জন্য মহিলা টেকনিশিয়ান!

March 18, 2023 No Comments

খবরের কাগজে কত খবরই তো আসে। বড় একটা অবাক হই না। কিন্তু একখানা খবর পড়ে একেবারে চমকে গেলাম। কলকাতার একটি নামকরা কর্পোরেট হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে

সাম্প্রতিক পোস্ট

দীপ জ্বেলে যাও ২

Rumjhum Bhattacharya March 22, 2023

ভাইরাস সংক্রমণ শুধুই বায়োলজিকাল? – উত্তর ভাসে বাতাসে

Dr. Jayanta Bhattacharya March 21, 2023

দল্লী রাজহরার ডায়েরী পর্ব-১৬

Dr. Asish Kumar Kundu March 20, 2023

গ্রামের বাড়ি

Dr. Aniruddha Deb March 19, 2023

মহিলাদের জন্য মহিলা টেকনিশিয়ান!

Dr. Bishan Basu March 18, 2023

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

428552
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]