সুন্দরীকে বললেই সুড়সুড় করে’ বাথরুমে গিয়ে শাওয়ারের তলায় গিয়ে দাঁড়ায়- তখন তার ন্যাজ চলে যায় পেটের তলায়। তখন সে বাস্তবিকই একটি ভেজা বেড়াল। চানের পরে গা মোছার জন্য হাউহাউ করে’ কাঁদে।তাকে চান করিয়ে, খেয়ে, খাইয়ে হাতুড়ে একটা গোটা বোতল গলায় ঢেলে, তাকে পাশে শুইয়ে, কবিতা লিখতে বসে।
পাখি হয় পরিযায়ী, শ্রমিকেরা অভিবাসী
পয়সা থাকিলে পরে বড়লোক অনাবাসী।
পাঁটারা পাঁটাই হয়, হয় না কখনও খাসি।
এই পর্যন্ত লিখতেই সুন্দরী কুকুরছানা (এখন ধাড়ি হলেও কুকুরেরই ছানা তো বটে) এসে মোবাইলে থাবা মারে, চেটে দ্যায়, সুতরাং তাকে ঘুম পাড়িয়ে আবার লিখতে বসা। ফোন খুলে’ই দেখা যায় একটা বার্তা এসেছে।একজন শ্রীমতি ভয়ঙ্করী (যিনি হাতুড়ের রান্না করা মাংস খেতে চেয়েছেন) তাঁর রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।আপাততঃ তাঁর জন্ডিস প্রায় সেরে গেছে। কিছুদিন আগে তিনি এসেছিলেন।
ওনার মা আবার সুপিরিয়র ভেনা কেভাল সিন্ড্রোমের জন্য মহান এক হাসপাতাল থেকে দীর্ঘ বছর ধরে’ স্টেরয়েড খাচ্ছিলেন। সুপিরিয়র ভেনা কেভাল সিন্ড্রোম আর সেই মহান হাসপাতালের নামটা দেখার পরেই হাতুড়ের বুক ধড়ফড় করতে থাকে, গলা শুকিয়ে যায়। ওঁদের সামনেই হরিসেনের হ্যান্ডবুক খুলে চশমা লাগিয়ে পড়তে থাকেন।তারপর পড়া শেষ হলে কিছু ওষুধপত্র লিখে ওঁদের বাড়ি পাঠিয়ে একটা ছোটো বোতল মেরে দিয়ে একটু সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এবারে এই শ্রীমতির প্রবল জ্বর, বিবমিষা (বমন করিবার ইচ্ছা), মাথা ব্যথা। হাতুড়ে ঠুকেঠাকে সেরকম কিছু না পেয়ে ডেঙ্গু, মেঙ্গুর টেস্ট সমেত একটা লিভার ফাংশন টেস্ট দ্যান। রিপোর্ট দেখে’ ওনার চক্ষু চড়কগাছ (ভবিষ্যতে চড়ক এবং চড়কগাছ নিয়ে দুক্কথা লেখার বাসনা রৈলো)। বুড়ো তো পেশা প্রায় ত্যাগ করেছে-ওষুধপত্রের নামও সব ভুলে গেছে। ওষুধ কোম্পানির ছেলেগুলোও আর আসে না। উনি ভেবে চিন্তে-বিশ্রাম, চিনির জল, একটা গলা জ্বালার ওষুধ এবং প্রয়োজনে বমির ওষুধ লিখে হাঁফ ছাড়লেন। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী শ্রীমতি ঘনঘন লিভার ফাংশন টেস্ট করে’ পাঠাতে লাগলেন। এসজিওটি, এসজিপিটি এবং জন্ডিস বেড়ে বেড়ে চলেছে। বিলিরুবিন পনেরো ছাড়িয়ে গেলো, এসজিওটি, এসজিপিটি প্রায় তিন হাজার। বুড়ো একটা করে’ বোতল পান করে আর বলে “তাইতো রে, তাইতো রে”।
কেন জানি না শ্রীমতি ভয়ঙ্করীর হাতুড়ের ওপর থেকে বিশ্বাস টলে না। তো আজকে রিপোর্ট এসেছে বিলিরুবিন পাঁচ আর এসজিওটি, এসজিপিটি পাঁচশোর নিচে (হাতুড়ে পাঁচশোর নিচে হ’লে বিশেষ গুরুত্ব দ্যায় না)।বুড়ো হাতুড়ে বড্ড খুশি। পটাং করে আর এক বোতল গলায় ঢেলে দ্যায়। তাইলে দ্যাখা জন্ডিসে যাচ্ছে বাজার্চলতি ওষুধপত্রের কোনও দাম নেই।
এবং
কয়েকদিন আগে একটি ধাড়ি সুন্দরী এলো- চোখ দুটো তার গোল গোল। এক ভদ্রলোক-জলদেন্দ্র নাথ সিংহ, মেয়েটার বাবা। ওনার দুই মেয়ে, গোলচক্ষু এবং চিতাবাঘিনী। চিতাবাঘিনী ছিলো অন্য ধর্মের, এক বন্ধুকন্যা। মেয়েটার মা বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় ইনিই তাকে মানুষ করেন। মেয়েটা চমৎকার আছে,তবে জলদেন্দ্রবাবু যে একজন মানুষ সেটা ভালোভাবে প্রমাণ হয়েছে।
এই ছোটো মেয়েটার বিয়ের আগে আগে জলবসন্ত হয়।সাজতে পারবে না বলে তার ভারী দুঃখ। তখন এই হাতুড়ে ওকে বলেন “তোকে দিব্বি বুটিদার চিতাবাঘিনীর মতো লাগছে, চিতাবাঘিনী কি বিয়েতে মুখে রং মাখে নাকি?”
মেয়েটার দিব্য বিয়ে হয়েছে।
তা যাই হোক গোলচক্ষু এসে বললো “কাকু, আমার বাবার পোস্ট কোভিড পালমোনারি ফাইব্রোসিস হয়েছে, এক্কেবারে শয্যশায়ী, সারাক্ষণ অক্সিজেন চলছে, ভীষণ শ্বাসকষ্ট, এ্যাখুন কী করবো?”
হাতুড়ে আবার পরম অবিশ্বাসী। কিসুই বিশ্বাস করে না-কিছুটা নাক উঁচু (আক্ষরিকভাবেই) এবং আত্মম্ভরী। সে সব রিপোর্ট দেখতে চাইলো।
লক্ষ লক্ষ টাকার রিপোর্ট। সিটি চেস্ট স্বাভাবিক, গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন পাঁচ দশমিক ছয়। শুগারের ওষুধ চলছে তিনখান। হাসপাতালে গেলেই নাকি ওনার শুগার বেড়ে যায় (সম্ভবতঃ ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডের অবদান অথবা সুপ্রারেনাল বা এ্যান্ড্রোজেনিক ডায়াবেটিস)। এক্সরেতে ডান দিকের এপেক্সে একটা ফাইব্রটিক (?ক্যালসিফিকেশন) ছায়া। ব্রঙ্কোস্কোপি স্বাভাবিক।ইসিজিতে পেসমেকার স্পাইক রয়েছে, এটা হাতুড়ের জ্ঞাত তথ্য, কিন্তু একোকার্ডিগ্রাফিতে হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে’ চৌত্রিশ শতাংশ। এক গাদা ইনহেলার, চব্বিশ ঘন্টা অক্সিজেন, নেবুলাইজার, এক গাদা গাদা ওষুধ, প্রস্টেটের ওজন কুড়িগ্রাম (সবই পুরোনো রিপোর্ট) অথচ দুই খান ওষুধ চলছে (পিএসএ করা নেই)। কিন্তু পালমোনারি ফাইব্রোসিসের প্রমাণ কোথায়?
হাতুড়ে পেয়ালায় চুমুক দিয়ে কিয়ৎ কিয়ৎ ভাবলো। তারপর গোলচক্ষুর বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরলেন। বাড়িতে গিয়ে পোচুর গল্পাড্ডা হলো। বসিয়ে অক্সিজেন মাপা হলো সাতানব্বুই। হাতুড়ে হার্ট ফেলিওরের দুটো ওষুধ, কোলেস্টেরল আর ব্লাড থিনার দিয়ে অক্সিজেন ইত্যাদি বন্ধ করে’ বাড়িতে এসে’ পরম তৃপ্তিতে এক বোতল ঢকঢক করে’ পান করলেন।
আজ একটা বার্তা এলো। ইঞ্জিরি তাই সংক্ষেপিত সেন্সর করা বঙ্গানুবাদ দিচ্ছি। “কাকু, বাবা ভালো আছে। চারমাস সম্পূর্ণ শয্যশায়ী এবং অক্সিজেনের ওপর থাকার পরে এখন দেওয়াল ধরে’ ধরে’ একটু হাঁটছে। চেয়ারে গিয়ে বসছে। স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া করে’ জীবনের ছন্দে ফিরছে। আমাদের চিন্তা কমেছে। সবাই খুশি আছি।বাবাও।”
হাতুড়েও বেজায় খুশ্।
অসাধারন।
ধন্যবাদ ভাই