চলে গেলেন বিশিষ্ট ক্যান্সার চিকিৎসক ডা স্থবির দাশগুপ্ত। দক্ষিণ কলকাতার এক ছোট নার্সিংহোমে উচ্চ রক্তচাপ, সিওপিডি এবং শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে কিছুদিন ভর্তি ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাঁকে ১লা সেপ্টেম্বর স্থানান্তরিত করা হয় দক্ষিণ কলকাতারই একটি বড় হাসপাতালে। দুবার কার্ডিয়াক এরেস্ট হওয়ার পর ৩রা সেপ্টেম্বর তাঁকে ভেন্টিলেটরে দিতে হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ বিকাল ৫-৪৫-এ চলে গেলেন তিনি।
স্থবিরদার সঙ্গে ফোনে কয়েকবার কথা হয়েছে ডা নৃপেন ভৌমিকের নেতৃত্বে চিকিৎসা কোষ লিখবার সময়। মুখোমুখি পরিচয় ২০০৭-এর ১০ই নভেম্বর নন্দীগ্রামের সূর্যোদয়ের পরের দিন কলকাতায় মহা মিছিলে। সভাস্থলের পিছনে বসে অনেক কথা হয়েছিল।
তাঁর জন্ম ১৯৪৯-এর ১৮ই জানুয়ারি। স্কুলের পড়া চিত্তরঞ্জনের দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে। স্কুল পাস করে ১৯৬৫-তে আরজি কর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেই কলেজ থেকে পাশ করে বেরোন ১৯৭৭- এ।
নকশালবাড়ি আন্দোলনের সময় তিনি সিপিআই এম এল পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। গ্রামে সংগঠন করতে যান, আত্মগোপন করে কাজ করেন বেশ কয়েক বছর। সেই সময়কার স্মৃতি ধরা আছে ‘স্বপ্নের সত্তর মায়া রহিয়া গেল’ বইটিতে।
এমবিবিএস পাশ করার পর ক্যান্সার চিকিৎসায় তাঁর প্রশিক্ষণ রয়েল সোসাইটি অফ লন্ডনে ফেলো হিসেবে।
দীর্ঘ সময় ধরে স্বাধীন ক্যানসার চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে গেছেন। চিকিৎসা যেখানে রোগের চেয়ে কষ্টদায়ক সেখানে ক্যান্সারের ওষুধ না দিয়ে কষ্ট কমানোর চেষ্টা করতেন মানবিক এই চিকিৎসক।
চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক হিসেবে অনন্য ছিলেন স্থবির দাশগুপ্ত। চিকিৎসার ব্যবসায়ীকরণের বিরুদ্ধে চিরদিন সোচ্চার ছিল তাঁর কণ্ঠস্বর। ক্যানসার নিয়ে তাঁর গ্রন্থ ,’জীবনযাপন ও ক্যানসার’, ‘ক্যানসার পুরনো ভয় নতুন ভাবনা’, ‘Environment and the Phenomenon of Cancer’ ,’ক্যানসারের অন্য পরিচয়’। স্বাস্থ্য বিষয়ক তাঁর আরেকটি বই ‘স্বাস্থ্য নিয়ে বাদবিসংবাদ’।
দেহ দখলের জৈবিক ও সামাজিক পটভূমি নিয়ে তাঁর লেখা ‘দখল সম্ভবা’।
‘সত্তর দশক মায়া রহিয়া গেল’ ছাড়া তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত আরেকটি স্মৃতিচারণ ‘শীতলপাটি বিছিয়ে যারা’।
এছাড়া বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রগুলিতে স্বাস্থ্য বিষয়ক উত্তর সম্পাদকীয় লেখায় পরিচিত এবং জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
২০১৮ সালে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিল নির্বাচনে আমি যখন জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরসের প্রার্থী তখন আমাদের হয়ে তাঁর পরিচিত চিকিৎসকদের মধ্যে প্রচার করেছেন তিনি। কোভিড কালে টিকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মতান্তর হয়েছে স্থবিরদার সঙ্গে, কিন্তু মনান্তর হয়নি।
স্থবিরদার চলে যাওয়া জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা বড় ক্ষতি।