একজন মানুষকে তখনই সুস্থ বলা যাবে যখন তিনি শারীরিক ও মানসিক দুইদিক দিয়েই সুস্থ হবেন। শারীরিক অসুস্থতা সম্বন্ধে আমরা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হলেও মানসিক অসুস্থতাগুলির ব্যাপারে আমাদের তেমন কোনো ধারণা নেই। আবার আমরা নিজেদের বাইপাস সার্জারীর কথা বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করলেও মানসিক অসুস্থতা সম্বন্ধে পরিবার -পরিজনের বাইরে অন্যান্য লোকজনের সাথে আলোচনার ব্যাপারে কুণ্ঠাবোধ করি। আমরা সামান্য সর্দি হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও অনেক সময় দীর্ঘদিনের মানসিক সমস্যার জন্য মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেবার বিষয়ে অবহেলা করি। মানসিক রোগ সম্বন্ধে বেশ কিছু ভুল ধারণা আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে। এই ভুল ধারণাগুলির অবসান হলে হয়ত মানসিক রোগ সম্বন্ধে আমাদের মানসিকতা বদলাতে পারে।
১। ভুল ধারণা-মানসিক রোগের কারণ হল পূর্বজন্মের পাপ, ভূতপ্রেতের প্রভাব, ইত্যাদি।
বাস্তব–মানসিক রোগের কারণ মস্তিষ্কের মধ্যে বিভিন্ন কেমিক্যালের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া। এটা আগের জন্মের পাপের ফল নয়।ভূতপ্রেতের প্রভাবেও এটা হয় না।
২। ভুল ধারণা-মানসিক ভাবে দুর্বল লোকদেরই মানসিক রোগ হয়।
বাস্তব– মানসিক রোগ দুর্বল মানসিকতার কারণে হয় না।যে কোন ব্যক্তিরই এই রোগ হতে পারে।
৩। ভুল ধারণা-সমস্ত মানসিক রোগই একই রকমের। সমস্ত মানসিক রোগই খারাপ ধরনের।
বাস্তব– মানসিক রোগগুলিকে সাধারণ ভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-সাইকোসিস ও নিউরোসিস। সাইকোসিসের ক্ষেত্রে (যেমন -সিজোফ্রেনিয়া,বাইপোলার ডিসঅর্ডার ইত্যাদি) রোগী নিজে বুঝতে পারে না যে সে অসুস্থ এবং তার বাস্তবজ্ঞান নষ্ট হয়ে যায়।নিউরোসিসের ক্ষেত্রে (যেমন-উদ্বিগ্নতার সমস্যা, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি) কিন্তু রোগী তার নিজের সমস্যা বুঝতে পারে এবং তার বাস্তবজ্ঞান বজায় থাকে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সাইকোসিস গোত্রের রোগ হলে সাধারণত দীর্ঘদিন চিকিৎসার প্রয়োজন এবং রোগীর সামাজিক জীবন যাপন অনেক বেশি প্রভাবিত হয়। অন্যদিকে নিউরোসিস গোত্রের রোগীরা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পান।
৪। ভুল ধারণা– মানসিক রোগীকে দেওয়া ঔষধ গুলি খালি ঘুমের ঔষধ।
বাস্তব-রোগীকে ঔষধ দেওয়া হয় মস্তিষ্কের কেমিক্যাল ব্যালান্স ঠিক করার জন্য। অনেক ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে ঘুম হয়।কিন্তু সেগুলি ঘুমের ঔষধ নয়।এখন অনেক নতুন ঔষধ আবিষ্কার হয়েছে যেগুলি খেলে ঘুম পায় না । সেগুলি দিনের বেলা খাওয়া যায় এবং সেইসব ঔষধ খেয়ে সমস্ত কাজই করা যায়।
৫। ভুল ধারণা-ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব বেশী।
বাস্তব-সমস্ত ঔষধেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। এই ঔষধগুলির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অন্য রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধগুলির তুলনায় বেশী কিছু নয়। বর্তমানে ব্যবহৃত ঔষধগুলির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আরো কম।
৬। ভুল ধারণা-শুধু কাউন্সেলিং করেই মানসিক রোগ সরানো সম্ভব।
বাস্তব– স্কিৎসোফ্রেনিয়া,বাইপোলার ডিসঅর্ডার ও অন্যান্য সাইকোসিসের চিকিৎসায় ঔষধের বা ই সি টি -র কোন বিকল্প নেই।এই রোগে মাথার কেমিক্যাল ব্যালান্স ঠিক করার জন্য ঔষধ অবশ্যই প্রয়োজন। চিকিৎসার পরের দিকে রোগীকে রোগটির বিষয়ে বোঝাতে, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার মোকাবিলা করতে কাউন্সেলিং কিছুটা কাজে লাগতে পারে।
অন্যদিকে নিউরোসিস গোত্রের রোগগুলির ক্ষেত্রে সমস্যা অল্পমাত্রায় থাকলে কাউন্সেলিং দ্বারা সাহায্য করা সম্ভব।কিন্তু রোগের তীব্রতা বাড়লে নিউরোসিস গোত্রের রোগ গুলির ক্ষেত্রেও ঔষধের প্রয়োজন পড়ে।
৭। ভুল ধারণা-ই সি টি (ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপি)খুব যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতি।
বাস্তব– বর্তমানে আনাস্থেসিয়া দিয়ে(অজ্ঞান করে) ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপি দেওয়া হয়।এতে রোগী কোনরকম ব্যথা অনুভব করে না।বিভিন্ন সিনেমায় রোগীকে হাত পা বেঁধে জোর করে শক দেওয়ার যে ঘটনা দেখানো হয় তা বর্তমানে আনাস্থেসিয়ার ব্যবহারের কারণে আর করা হয় না।ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপি দিলে ব্যক্তির উচ্চতর মানসিক দক্ষতার কোনরকম ক্ষতি হয় না।
৮। ভুল ধারণা– বিবাহ দিলে মানসিক রোগ ভাল হয়ে যায়।
বাস্তব-বিবাহ অনেক সময় রোগীর মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়।তাই রোগের উপসর্গ বরং বেড়ে যেতে পারে।
৯। ভুল ধারণা-প্রেগনেন্সির সময় বা স্তন্যপান করানোর সময় মানসিক রোগের ঔষধ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
বাস্তব-এই ব্যাপারে সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।বর্তমানে ব্যবহৃত অনেক ঔষধ এমন আছে যেগুলী বাচ্চার ওপর অনেক কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া করে।তাই সেসব ক্ষেত্রে ঔষধ চালানোয় কোন সমস্যা নেই।
Good reading ..Aritra
Very nice
Thanks for this information
সুন্দর লিখেছো।
সুন্দর লেখা।
I hv this problem what to do
সমস্ত মানসিক সমস্যা সমান নয়।সমস্যার প্রকারভেদ ও তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারিত হয়।আপনি কোন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আমি obsessive compulsive disorder এর পেশেন্ট।আমার রোগ সম্পর্কএ ওয়াকিবহাল বেশকিছুটা।তাই বুঝতে পারি যখন এই তীব্রতা বাড়ে।আমি স্কুলে পড়াই।কাজের মধ্যে থাকার চেষ্টা করি,গান শুনি লেখালিখি করার চেষ্টা করি।কিছুদিন আগে দুটি মেডিসিন খেতাম কিন্ত হঠাত করে নিজেই বন্ধ করার এক্টা কুফল বুঝতে পারছি।এক্টা রিপিটেটিভ থট আসছে,প্রচন্ড ভয় এবং মাঝেমধ্যে ডিপ্রেশন ও আসছে।প্রায় একমাস ধরে জেরবার হচ্ছি,নিজে কাটানোর চেষ্টা করছি,কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে।এক্টু স্বাভাবিক ভাবে ভাবতে চাই,যদি সাহায্য করেন,উপকার হয়।
Sir apni ki Bankurate chember karen.please address ta balben.