প্রথমেই আমাদের দেশ তথা সারা পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষকে ধন্যবাদ জানাবো এই দেখে – তাঁরা মানব সভ্যতার এই চরম দুর্দিনে বিজ্ঞানের উপর ভরসা রেখেছেন!! ভরসা রেখেছেন – বিজ্ঞান ঠিক কোন না কোন উপায় বের করবেই! ঠিক জিতিয়ে দেবে মানুষকে – এমন এক শত্রুর বিরুদ্ধে, যাকে খালি চোখে দেখা যায় না!! যাকে ধরে হঠাৎ লকআপে ঢোকানো যায় না, যাকে বোমা গুলি বন্দুক অ্যাটম বোম শক্তিশালী সৈন্যদল দিয়ে আটকানো যায় না!! যার বিরুদ্ধে ভয়ে থরথর কেঁপে পালিয়ে গিয়েছে তথাকথিত সব সৃষ্টিকর্তা অব্দি, বন্ধ হয়ে গিয়েছে মন্দির মসজিদ গির্জা প্যাগোডা ইত্যাদি, ব্যর্থ হয়েছে কোরান গীতা বাইবেল ত্রিপিটক জেন্দাবেস্তা সহ সব সঞ্জীবনী, পালিয়ে গিয়েছে তথাকথিত বাবা থাবা তান্ত্রিক জ্যোতিষী সহ অন্য সব প্যাথেটিক প্যাথির স্বঘোষিত সবজান্তা চিকিৎসক (?), চূড়ান্ত ফ্লপ করেছে গো করোনা গো, তেলাওয়াত, ক্যারল, জলপড়া, তেলপড়া, তাবিজ, কবচ, মাদুলি, লতা পাতা, শেকড়, পুরিয়া, চিনির দানা, অ্যালবাম স্পার্মা, করোনিল, পাঁপড়, মূত্রাদি, তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করার মতো একমাত্র পড়ে রয়েছে আধুনিক চিকিৎসকরা!!দাঁড়িয়ে আছে এই গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যে-কিছু মানুষ মরবে – এই সত্যিকে মেনে নিয়ে বাকিদের বাঁচাতে হবে!!
তবু আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কিছু শয়তান চেষ্টা করে যাচ্ছে – অন্ধকারে সব ডুবে যাক, শ্মশান হয়ে যাক পৃথিবী, তবু শয়তানের স্বার্থ রক্ষা হোক!! কোথাও কোথাও শয়তান সফল হচ্ছে এই জন্য যে, মানুষ অন্ধকার থেকে সহজে আলোতে আসতে চায় না!
এর কারণ, বিজ্ঞানসম্মত! এর কারণ, মানুষ সেই আদিম কাল থেকে একটা বড় গুণ অর্জন করেছে – সেটা হলো ভয়! ভয় আর ভয়! ভয় থেকে আসা জড়তা তাকে বারবার বেঁধে ফেলেছে! তাকে সামনে এগোতে দেয় না!!তাকে বারবার পেছনে টেনে নিয়ে গেছে, যেতে চায় এই বুঝিয়ে যে – তুমি অন্ধকারে ভালো ছিল! আলোতে চোখ ঝলসে যেতে পারে!
এই অতিমারীতে পৃথিবীব্যাপী বহু মানুষ মরেছেন।আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে – সত্যিই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো সফল হয়নি। সত্যিই! বিজ্ঞান এই সত্যকে মেনে নিচ্ছে! তবুবি জ্ঞান থেমে যায়নি ! নানা উপায় একের পর এক চেষ্টা করে যাচ্ছে! বহুসংখ্যক মানুষকে বাঁচাতে পারছে। তবু ও থেমে নেই! এই চলার নাম বিজ্ঞান! এই এগিয়ে যাওয়ার নাম বিজ্ঞান। ব্যর্থতা থেকে প্রতি মুহূর্তে শিখে চলার নাম বিজ্ঞান!
অথচ আপনাকে শয়তান প্রথমেই বোঝাতে চাইবে – এতো মানুষ মরলো, আধুনিক চিকিৎসা তো কিছুই করতে পারলো না! অতএব তুমি এদিকে এসো, আমি ম্যাজিক করে দেখাবো!
এবার যাদের সামান্যতম বোধবুদ্ধি আছে, যারা মানুষ হিসেবে মিনিমাম যুক্তিতর্কে বিশ্বাস রাখে, তারা যদি কেউ এই প্রশ্ন করে যে – তুমি তো বাবা ম্যাজিক দেখাতে জানো, সেই ম্যাজিকের চমকটা এতোদিনে দেখাতে পারলে না কেন? তুমি তো বাবা একশো শতাংশ রোগ নিরাময়ের গ্যারান্টি দিতে পারো, তাহলে মানুষ তোমার কথায় বিশ্বাস করে না কেন – তাহলেই এঁরা আশ্রয় নেবে কুযুক্তির!!
এই কুযুক্তির নানা প্রকারভেদ আছে। বিশদে পরে লিখবো।
আপনার সামান্য বুদ্ধি থাকলেই দেখতে পাবেন – শয়তান ঠিক কোন না কোন ছুঁতো খুঁজছে!! হয় চেঁচিয়ে কারো দোষ ধরছে, নয়তো অন্ধকারে ঢিল মারছে, নয়তো স্বঘোষিত নানা রকম কাজকর্মকে বিজ্ঞানের নিয়ম বলে চালাচ্ছে, ফন্দিফিকির করছে, নকল জিনিসকে প্রমাণ ছাড়া আপনাকে মিষ্টি কথা বলে গছিয়ে দিচ্ছে!
কেউ কেউ দেশপ্রেম দেখাবে, কেউ কেউ আদিম সংস্কৃতির দোহাই দেবে, কেউ কেউ অন্যকে অধার্মিক বলবে, অন্য ধর্মের ভয় দেখাবে!
কেউ কেউ আপনি যে চরম বিপদে আছেন – সেটা প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে, দরকার হলে আপনাকে বিপদে ফেলে সেটা প্রমাণ অব্দি করে দেবে!! আশেপাশে তাকান, হাতে গরম প্রমাণ পেয়ে যাবেন!! কিন্তু কোনকালেই আপনার উপকার করতে পারবে না, পারেনি!!
এই একই উপায়ে নানারকম প্যাথির স্বঘোষিত সবজান্তা চিকিৎসক এদেশে কেন, পৃথিবীর বহু দেশে বহু মানুষের সর্বনাশ করেছে, করে চলেছে! অথচ, তাদেরকে প্রশ্ন করা যাবে না! করলেই তাঁরা ন্যাকাকান্না শুরু করবে উপরিউক্ত কোন না কোন ছুঁতো দেখিয়ে!!
বিজ্ঞানের প্রথম কথা প্রশ্ন করো, উত্তর খোঁজো, উত্তরকে যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণ করো, ফলাফলকে ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগিয়ে দেখাও! তারপর দাবি করো – এটা ঠিক!
এঁরা কি করবে? আপনার আবেগ নিয়ে খেলবে । ভয় দেখাবে। ভয় দেখিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করবে।
তারপর যখন পারবে না, তখন পালাবে! পালিয়ে রেহাই না পেলে অন্য ছুতোয় ক্ষমতার কাছে যাবে। আর ক্ষমতা – যার এক পিঠে চিরকাল অন্ধকার, সে ঠিক শয়তানকে লুকিয়ে ফেলবে আপনার চোখের সামনে থেকে!!
ঠিক এই ধাঁচেই চলছে একটি নাটক! যেখানে একজন দেশের আইনকানুনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে টিভি চ্যানেলে তথা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞানকে তুলোধোনা করে চলেছেন নিজের ব্যবসার স্বার্থে!!
সবাই জানে, বোঝে, কিন্তু এখন ক্ষমতার সাহায্য নিয়ে মুখ বন্ধ করানো জাস্ট চুটকির ব্যাপার!
প্রথমে বললো – WHO আমাদের ওষুধকে স্বীকৃতি দিয়েছে! পরদিন দেখা গেল – পুরো ধাপ্পা! বললো, আমরা গবেষণা করেছি! পৃথিবীর কেউ মানলো না!! এমনকি সরকার ও না! বললো – ইমিউনিটি বুস্টার!! বললো – আমরা মৃদু উপসর্গ থাকা রোগীর চিকিৎসা করেছি। দেখা গেল, তার সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসাও চলেছে! তারপর টাকা পয়সা দিয়ে টিভি চ্যানেল আর মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিল।
সামান্য বুদ্ধি থাকা মানুষ সে ওষুধ ছুঁয়ে দেখলো না!দেশের মানুষ দৌড়ালো শয়তানের অন্ধকার কাটিয়ে বিজ্ঞানের আলোর দিকে! অনেকে মরলো, তবু দৌড়ালো!শয়তান অসহায়! শেষ উপায়?
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকে দোষ দাও! সাথে জোর গলায় আইনকানুনকে পা দিয়ে মাড়িয়ে বিজ্ঞাপন দাও ওষুধের! ম্যাজিক্যাল রেমিডি অ্যাক্টকে পাছায় ঢুকিয়ে দাও!! তাতেও কাজ না হলে আধুনিক চিকিৎসা র খুঁত ধরার চেষ্টা করো! যেই চেপে ধরা হলো – অমনি বক্তব্য পাল্টে রাতারাতি মিথ্যা বললো! তারপর বললো – আমি অমুক অমুক অসুখের মহৌষধি আবিষ্কার করেছি (যদিও কোন দেশ তথা বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ সেটা মানলো না!), অতএব আমাকে ছেড়ে দিন সব রোগীর চিকিৎসার ভার!যেই বলা হলো – তাহলে চাঁদু তোমার নিজের লোকজন কেন আধুনিক চিকিৎসা করাতে যান? কেন কোভিড এ মারা যান? তখন অমনি ন্যাকামি সহ ডিগবাজি – আসুন, দেশের মানুষের জন্য কিছু করি একসাথে!!
ভেবে দেখুন, প্রতিটি পদক্ষেপ কোন না কোনভাবে আপনাকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়ার অদম্য প্রচেষ্টা!
এবার প্রশ্নঃ আপনি আধুনিক চিকিৎসা কেন বেছে নেন?
নানা কারণের একটি কারণ, আপনি চান আপনার ডাক্তার যেন অন্ততঃ একটা সহজ গুণের অধিকারী হন! (বাকিগুলো পরে লিখবো)
সেটা কি জানেন? সেটা হলো – কনফিডেন্স!! হ্যাঁ, এই একটা গুণ আধুনিক চিকিৎসক ছাড়া কারো কাছে পাবেন না।
কিসের কনফিডেন্স? কনফিডেন্স চান – নানান অসুখের কারণ খোঁজার পদ্ধতিতে, সেটাকে প্রমাণসহ ব্যাখ্যা করার পদ্ধতিতে, অসুখকে সারানোর নানা উপায়ে, তার খারাপ দিকগুলো বোঝার পদ্ধতিতে, খারাপ জিনিস গুলোকে এড়িয়ে চলার পদ্ধতিতে!
আরো বড় কথা – আপনি কনফিডেন্স চান -আপাতদৃষ্টিতে কোনরকম ভুল হলেও ভুল স্বীকার করে সেটাকে নতুন করে ভাবার পদ্ধতিতে, রেকটিফাই করার পদ্ধতিতে!!
হ্যাঁ, একমাত্র চিরকাল পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানই আপনাকে এতোটা কনফিডেন্স জোগাবে!! আধুনিক চিকিৎসা জোগাবে!! সফল হবে কি হবে না, সেটা নির্ভর করবে নানা বিষয়ের উপর! সময় পেলে লিখবো!
বাকিরা আপনাকে ম্যাজিক দেখানোর দাবি করবে!!
এবং ম্যাজিক যে সবদিনই আপনার ইন্দ্রিয়কে বশ করার ছল, এটা সবাই জানেন!!
বেশিরভাগ মানুষকে ধন্যবাদ, আপনারা এইসব ভণ্ড বকধার্মিকদের কথায় কান দেন না। যাঁরা এখনো এঁদের কথা শোনেন, তাদের বলবো – শয়তান আর ক্ষমতা আপনাকে টানবে অন্ধকারে। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অন্ততঃ অপবিজ্ঞান অবিজ্ঞান কুসংস্কার এর হাত থেকে সরে থাকুন।
বিজ্ঞান আপনাকে গ্যারান্টি দেবে না, কিন্তু পিঠে হাত রাখবে ভরসার। আপনাকে সম্ভাব্য সকল পথ দেখাবে।আপনাকে কোন পথ বেছে নেয়ার জন্য ধৈর্য্য জোগাবে। আর বেছে নেয়ার পদ্ধতিতে জোগাবে যুক্তিতর্ক প্রমাণ ব্যবহারিক প্রয়োগের ফলাফল।
আবারও মনে রাখুন – অসময়ে সবাই পালিয়েছে!
বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে ছিল, আছে, থাকবে।
এবার নিজের খাসি গলায় কাটবেন না পাছায় কাটবেন, সেটুকু আপনিই ঠিক করুন।
***
কিছু কথা আছে, বারবার বলতে হয় , বলে যেতে হয়, বলে যেতে হবে! হয়তো গলা আপনার ব্যাথা হয়ে যাবে, শব্দ বের হবে না, তবু হাত পা নাড়িয়ে হলেও বলে যেতে হবে!! না পারলে কাগজ কলমের সাহায্য বলে যেতে হবে!
সেও না পারলে স্টিফেন হকিংয়ের এর মতো সেন্সরি স্টিমুলাস দিয়ে বলে যেতে হবে।
দৈববাণীর যুগ কলিযুগ নয়! কোন অবতার এর যুগও নয়! এখানে আপনিই সর্বশক্তিমান, আপনিই ঠিক করবেন আপনার ভবিষ্যৎ!এ খন যুদ্ধ আপনার, অস্ত্র আপনার বুদ্ধি, লড়বেন আপনি, জিতবেন বা হারবেন আপনি!
যুদ্ধে সব সময় জেতার জন্য নামা হয় না, কখনো কখনো শেষ সম্বল সাহসটুকু নিয়ে দাঁড়াতে হয় এই বলতে যে, শত্রু যতই শক্তিশালী হোক, বিপক্ষ শূন্য নয়!
বিজ্ঞানকে চিরকাল লড়ে জিততে হয়েছে সমস্ত অপবিজ্ঞান অবিজ্ঞান কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে।
প্রথম আগুন জ্বালানোর দিন থেকে, চাকা বানানোর দিন থেকে, গ্যালিলিওর সময় থেকে, কোপারনিকাস এর সময় থেকে, ডারউইনের সময় থেকে এখনো অব্দি বিজ্ঞানকে শুধু লড়ে যেতে হচ্ছে!
আর বাকিরা? লড়ার নামে কিছু ভুয়ো কাজকর্ম করে, করেছে! সময় খারাপ দেখলে পালিয়েছে। সুসময় এলেই ফের দৌড়ে এসে দাবি করেছে – আম্মো বিশাল লড়াই করেছি!!
আশার কথা, সেই লড়াই এ এখনো অব্দি প্রতিবারই বিজ্ঞান জিতেছে! জিতবেও! আর কেউ নয়। কারো সেই ক্ষমতা নেই!!
এবার, কোন দিকে যাবেন, আপনি নিজে বেছে নিন!
(চলবে)
দারুন লেখা।