সন্তানসম্ভবা অবস্থায় ক্লান্ত লাগা, গা গোলানো, বমিভাব বা বমি হওয়া খুব স্বাভাবিক উপসর্গ। এই সমস্যাকে মর্নিং সিকনেস বলা হলেও দিনের যে কোনও সময় তা হতে পারে। সাধারণত এই উপসর্গ ভ্রূণের পক্ষে তেমন ক্ষতিকর নয়। তবে তা মায়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম ও জীবনযাপনে সমস্যা তৈরি করতে পারে। কখনও কখনও মর্নিং সিকনেস প্রেগন্যান্সিতে জটিলতা ডেকে আনতে পারে। যদিও তা খুব বিরল।
প্রশ্নঃঃ মর্নিং সিকনেস কখন শুরু হয়?
উত্তরঃ সাধারণত প্রেগন্যান্সির ৯ সপ্তাহ আগে এই সমস্যা শুরু হয়। অনেকেরই ১৪ সপ্তাহের মধ্যে এইসব উপসর্গ চলে যায় বা কমে যায়। যদিও কারও কারও ক্ষেত্রে কয়েক আরো কয়েক সপ্তাহ বা মাস এমনকী পুরো প্রসবকালীন অবস্থা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
প্রশ্নঃ হাইপারেমেসিস গ্রাভিডেরাম বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ প্রেগন্যান্সির সময় বমির পরিমাণ খুব বেড়ে গিয়ে জটিলতা ডেকে আনলে সেই অবস্থাকে হাইপারেমেসিস গ্রাভিডেরাম বলে। ৩% প্রেগন্যান্ট মহিলার এমন সমস্যা হতে পারে। প্রেগন্যান্সির আগে যা শরীরের ওজন ছিল তার ৫% ওজন কমে গেলে বা শরীরে ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলে হাইপারেমেসিস নির্ণয় করা হয়। এমন ক্ষেত্রে হবু মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ডিহাইড্রেশনের চিকিৎসা করতে হয়।
প্রশ্নঃ ঝুঁকির আশঙ্কা কাদের বেশি থাকে?
উত্তরঃ গর্ভে একাধিক ভ্রূণ থাকলে, আগের প্রেগন্যান্সিতে বমিভাব ও বমি হলে, সন্তানসম্ভবা মহিলার পরিবারে তার মা বা বোনের এ ধরনের সমস্যা থাকা অথবা মাইগ্রেন ও মোশন সিকনেস থাকলে তাঁদের এই সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
প্রশ্নঃ সন্তানসম্ভবা অবস্থায় বমির জন্য আর কী কী শারীরিক অবস্থা দায়ী হতে পারে?
উত্তরঃ সন্তানসম্ভবা অবস্থায় বমি হওয়া মানেই মর্নিং সিকনেস নয়। পেটে কোনও আলসার, থাইরয়েডের অসুখ, গল ব্লাডারের সমস্যা এমনকী কোনও খাবারের জন্যও বমির সমস্যা হতে পারে। এই কারণগুলো পরীক্ষা করে বাদ দেওয়া উচিত।
প্রশ্নঃ বমির জন্য গর্ভস্থ ভ্রূণের কোনও ক্ষতি হতে পারে কি?
উত্তরঃ সাধারণত বমির কারণে মা ও শিশুর কোনও সমস্যা হয় না । তবে খুব জটিল আকার ধারণ করলে মায়ের শরীরে ফ্লুইড এর ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে ও শিশু ওজন কম হতে পারে।
প্রশ্নঃ জীবনযাত্রায় কী পরিবর্তন আনলে বমির থেকে স্বস্তি মিলতে পারে?
উত্তরঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছাড়ার আগেই শুকনো টোস্ট বা বিস্কুট খাওয়া, সকালে একদন খালি পেটে না থাকা, কিছুক্ষণ অন্তর জল খাওয়া, যে গন্ধ সহ্য হয় না তা এড়িয়ে চলা, দিনের তিনবার মূল খাবার খাওয়া ছাড়া অল্প সময় অন্তর কিছু খাওয়া, আপেল, কলা, চা, আদা চা খান। মুখে একটু আদা কুচি রাখতে পারেন।
প্রশ্নঃ চিকিৎসা কী?
উত্তরঃ জীবনযাপন ও খাবারে পরিবর্তন আনা ও খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে ভিটামিন বি১৬ ও ডক্সিলামাইন খাওয়া(দিনে ১-৩ বার)। এতে কাজ না হলে প্রেগন্যান্সির সময় যে বমির ওষুধ নিরাপদ, ডাক্তারবাবু তা দিতে পারেন।
প্রশ্নঃ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে কী করা হয়?
উত্তরঃ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এরপর লিভার ফাংশন টেস্ট, ইউরিন টেস্ট, সিরাম ইলেক্ট্রোলাইট ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখা হয়। ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড ও বমির ওষুধ দেওয়া হয়। বাকি চিকিৎসা হবু মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে।
প্রেগন্যান্সির সময় বমি নিয়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন,
প্রেগন্যান্সির সময় বেশি বমি হলে ছেলে হয়।
পেটে ছেলে বা মেয়ে যেই থাকুক তার সঙ্গে বমির কোনও সম্পর্ক নেই।
বমি হলে ওষুধ না খেয়ে তা সহ্য করা উচিত।
প্রেগন্যান্সির সময় যে ওষুধ খাওয়া নিরাপদ আপনার ডাক্তারবাবু সেই ওষুধই দেবেন। ওষুধ না খেয়ে বেশি বমি করলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
বমি হলেও নিজেকে অসুস্থ বলে না মনে করলে কিছু করার দরকার নেই।
এটা মানসিক ব্যাপার নয়, শরীরে বিভিন্ন হরমোন এবং কেমিক্যাল চেঞ্জ-এর জন্য জন্য হয়, তাই একথাও ঠিক নয়।