তুমি কাল গোলাপ পাওনি বলে মনখারাপ?? ভাবছো বুঝি সব বন্ধুদের ভ্যালেন্টাইন্স-ডে তে কোনো না কোনো প্ল্যান আছে, তোমার তেমন কেউ নেই? মনে হচ্ছে পিছিয়ে পড়ছো?? এই সমাজ কি তোমায় মেনে নেবে?? ইত্যাদি ইত্যাদি!!
এই সপ্তাহ-টা এমনই… সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের চোখের সামনে কিছু টার্গেট তুলে ধরেছে আর সেই target achieve না করতে পারলেই আমাদের একটা মনখারাপ আর একটা হতাশা পেয়ে বসছে…. বড়োদের কথা বলছি না, বলছি কৈশোরের কথা…. কৈশোর এমন একটা সময় যখন আমাদের ব্যক্তিত্ব একটু একটু করে তৈরি হয়… আমরা খুঁজে ফিরি নিজেদের “identity”… আর সেই identity তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় পরিবারের বাইরের রোল মডেল (role model ), peer group মানে বন্ধু-বান্ধব, যাদের সাথে আমরা একাত্ব বোধ করি, এবং relationship – অর্থাৎ এই যে বাবা মা। এরা অধিকাংশ সময় বাচ্চাদের বন্ধুত্ব আর প্রেম নিয়ে চিন্তিত আতঙ্কিত থাকেন, আদতে এসবই স্বাভাবিক ডেভেলপমেন্টের অংশ…..! এই বয়েসে “peer pressure” জিনিসটা থাকবে, আগেও ছিলো, এখন আরো বেশি করে আছে তার কারণ হলো সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিজ্ঞাপন…..
এই একটা সপ্তাহ জুড়ে প্রেমের যে বিপণন হবে, সেই বিপণনের potential customer এই বাচ্চারা, অবশ্যই বড়োরাও আছেন… কিন্তু যে মানুষ বুঝেছেন যে জীবন মানেই গোলাপের পাঁপড়ি নয়, এতে কাঁটা-ও আছে, আর সেই কাঁটা একসাথে উপড়ে ফেলে পথ চলার গুরুত্ব গোলাপের চেয়ে বেশি, সে মানুষের জীবনে গোলাপ আর চকলেট না এলেও হীনমন্যতা আসে না। কিন্তু ছোটদের হীনমন্যতা আসে….. বিশেষ এক company যখন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এমন একটা স্বপ্নের “date”-কে সাধারণ standard করে তোলে যেখানে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য কিশোর-কিশোরীর date-এর জন্য টাকা পাঠিয়ে বলেন, “আচ্ছে জাগা লে যাও” – তখন প্রেম একটা খরচসাপেক্ষ উদযাপন হয়ে ওঠে…. যারা পেরে ওঠে না সেই খরচ সামলাতে তারা হতাশায় ভোগে, কেউ কেউ সেই রাগ উগরে দেয় বাড়ির লোকের প্রতি….. প্রেম বিজ্ঞাপনের কৌশলে তখন হয়ে যায় জৌলুসযাপনের প্রতিযোগিতা….. হারিয়ে যায় গঙ্গার ঘাটে হেঁটে দশ টাকার ফুচকা খেয়ে বা রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে একসাথে থাকার নীরব মুহূর্ত, হারিয়ে যায় জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে একে অপরের জন্য অপেক্ষার দিনযাপন, হারিয়ে যায় জৌলুসহীন প্রতিশ্রুতি…..
আজকের কিশোর-কিশোরীদের জীবনে তেমন করে সাহিত্য পড়ার ঝোঁক নেই, আমরা তাদের হাতে তুলে দেই নি, অনিমেষ-মাধবীলতার প্রেমের উপন্যাস… তারা শুধু জৌলুস দেখে, উদযাপন দেখে, বিজ্ঞাপন আড়াল করে দেয় প্রতীক্ষা, প্রতিশ্রুতি আর নীরবে পাশে থাকার স্নিগ্ধ গল্পগুলো…..!
প্রেমের সপ্তাহ……
আমার যে ছোটো বোন-টি গোলাপ পাওনি, আর যে ভাইটা ভাবছো পকেটে অনেক টাকা না থাকলে প্রেমিকাকে মুখ দেখানো যায় না – বিশ্বাস করো এই উদযাপন ছাড়াও প্রেম হয়…. হয়তো আজ থেকে আরো দশ বছর পরে তুমিও খুঁজে পাবে এমন কাউকে, যার সাথে শুধু জীবন কাটানোটুকুই উদযাপন…. সেই সময়, আর সেই সঠিক মানুষটার জন্য অপেক্ষা করো…. এই এতো আলো, এতো জৌলুস, সবটাই ভালোবাসা নয়…. ভালোবাসার আলো আরো অনেক স্নিগ্ধ হয়, তাতে চোখ ঝলসায় না…..