সেই ব্লক পাবলিক হেলথ নার্স বা BPHN দিদির রাগী বলে সুনাম ছিল, ব্লকের এএন এম দিদিরা তো বটেই, আমিও মনে মনে একটু ভয় খেতাম। সেই BPHN দিদির সাথে শেষ দেখা একটা এন্টিন্যাটাল-পোস্টন্যাটাল কেয়ারের ট্রেনিং এর সময়।
দু’দিন ধরে থিওরি প্র্যাকটিকাল মিলিয়ে সুন্দর ট্রেনিং হয়েছিল। দিদির ব্যক্তিত্বের জোরে একেবারে পিন ড্রপ সাইলেন্সে লেখাপড়া। শেষ দিন বিকেল বেলায় ট্রেনিং শেষে সার্টিফিকেট বিতরণ দিয়ে শেষ। মেয়েরা একজন করে সার্টিফিকেট নিচ্ছে আর নমস্কার করে বিদায় নিচ্ছে। ট্রেনিং হলের বাইরে তাদের কলকাকলি শুনতে পাচ্ছি। এতক্ষণ মুখ বুঁজে শোনার পরে একটু কথা বলতে পেরে কি আনন্দ তাদের।
কাজ শেষ ব্যাগ পত্র গুছিয়ে ওঠবার উপক্রম করছি। BPHN দিদির সাথে টুক টাক কথা চলছে। হলের জানালা দিয়ে বাইরের মাঠটা দেখা যাচ্ছে এক ঝাঁক গোলাপী শাড়ি হলুদ শাড়ি সালোয়ার কামিজ। ওই দিকে তাকিয়ে দিদির মুখের কঠোর রেখাগুলো কেমন যেন আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। দিদির কালো চুলে রুপোলি ঝিলিক। দিদির ব্যক্তি জীবন কিছুটা জানতাম। সংসার চালানোর চাপে বিয়ে করার সময় পান নি, ছোট ভাই বোনদের মানুষ করতেই জীবন কেটে গেছে। দিদিকে বললাম, চলুন ওঠা যাক, ট্রেনিং তো খুবই ভালো হল সবাই বেশ মন দিয়ে শুনেছে। এখন দেখা যাক কতটা কাজে লাগে। দিদি খুব মৃদু গলায় বললেন, স্যার, বকাঝকা করি বটে কিন্তু আমার মেয়েরা আসলে খুবই ভালো, আপনি দেখবেন ওরা নিশ্চয়ই ট্রেনিংটা কাজে লাগবে। মাতৃ স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা ভালই করবো।
আজ এত দিন বাদে মাতৃ দিবসের বিকেল বেলায় সেই BPHN দিদির কথা মনে পড়ে গেল। অবিবাহিত দিদির গলায় সেই বাৎসল্য রসের সুর, “আমার মেয়েরা”। পেটে ধরেননি তো কি। মাতৃত্বের স্বাদ উনি পেয়ে গেছিলেন। মা না হতে পেরেও মা হয়ে ওঠা সেই দিদিকে আজ আমার প্রণাম।