সে এক দিন| মারীর আভাস পাইনি তখনো| বাচ্চাগুলো তখন নাচতে নাচতে কিংবা রাস্তা ধরে এক আধলা খোয়া পাথর নিয়ে ল্যাং মারামারি করতে করতে স্কুলে আসত| আমার Deifferently abled বাচ্চাগুলোর কাছে স্কুলটা তখনো “place Of Fun”| তাই তো হওয়ারও কথা তাই না? কম্পিউটার স্ক্রিনে কীভাবে মন দেবে একটি “বিশেষ প্রতিভাসম্পন্ন” বাচ্চা —যার sensory deprivation-এর কারণে সর্বদাই মনোযোগ ও স্মৃতির ঘাটতি চলতে থাকে! চলতে থাকে একটি মরে যাওয়া নদীর মত| জল নেই একটুও অথচ কাঠামো নদীর —এমনও অপুষ্ট বাছাকে পড়িয়ে যাচ্ছি কতকাল| মারী এদের কতটা ক্ষতি করল আজকাল চিন্তায় আনতে কষ্ট হয়| উত্তর জানি না আমি নিজেও| তাই হয়ত এক অক্ষম শিক্ষিকা বার তার ছেলেপুলের পুরোনো স্ফূর্তির গল্পই তুলে আনে|
তাদের গড়া সর্ষেদানার মত কয়েকটা মুহূর্ত! ময়ূরার গোটা দিনটাকে যে কী মাধুর্যে ভরাত!
সেদিন সকাল থেকেই বাচ্চাদের মায়েরা স্কুল কিচেনে বানাচ্ছেন নানারকম সব টিফিন| সবাই মিলে খাব আমরা| স্কুলটাইমেও মায়েদের সাথে পেয়ে ভারী খুশি বাচ্চারা| পড়াশুনো তো বন্ধ| ফলে একবার করে খাতায় ড্রইং করছে আর দৌড়ে দৌড়ে কিচেনে গিয়ে মায়েদের দেখে আসছে| সবচেয়ে পেটুকগুলো আবার অনেকক্ষণ ধরে ক্লাসে নেই| বুঝলাম, ব্যাটারা নির্ঘাত মায়ের কোলেই আজ আসন পেতেছে| ক্লাসরুমে আজ আর ফেরার মনই নেই তাদের| পড়তে জোরও করছিলাম না কাউকেই|
এর মধ্যে দেখি, দুটো ছবি আঁকিয়ে মেয়ে মন দিয়ে কী যেন আঁকছে| কাছে গিয়ে দেখি, একজন আঁকছে আপেল আরেকজন ভোরের ডিমসূর্য| ডিমসূর্য মানে ডিমের কুসুমের মত সূর্য| নিজেরাই ফন্দি করে সন্ধি করেছে ডিম ও সূর্যে — তাদের দুই প্রিয়তে| আসলে পড়ানোর সময় এমনভাবেই রঙ চেনাই এই সব বাচ্চাদের| বস্তুর রঙ চিনতে গিয়ে বস্তুর মোহে পরে এইসব বিশেষ প্রতিভাবান| সূর্য –তা সে ভোর বা বিকেল –যারই হোক না –এরা বলবে ডিমসূর্য| বলবেই বলবে| আজও ওমন বলতে বলতেই আঁকছিল| ডিমসূর্য —ডিমসূর্য|
হঠাৎ শুনি — ডিমসূর্য বলতে বলতে কখন যেন সে বলতে শুরু করেছে –সূয্যি মা| দেখি কী— সূর্যের মাঝে নিখুঁত হিসেবে সে বসিয়েছে দুটো টানা দীঘল চোখ| বিড়বিড় করে বলেও উঠল একবার —“সূয্যি মায়ের চোখ”| আই বাপ! তার দেখাদেখি পাশেরটা আঁকা আপেলে ফের এঁকেছে দুটো চোখ| এ চোখ সবুজ| এ বুঝি তার আপেল মায়ের পাতার চোখ|
আচ্ছা? হতেও তো পারে এ আমাদের বৃক্ষমায়ের শত নয়ন — যা দেখে গোটা ভুবনকে| অচঞ্চল| নহে কম্পিত| বড়ো তীক্ষ্ণ|
আলোকদায়িনী ও ফলদায়িনী| কত মা! কত মা!
লাল ফলে সবুজ পাতার চোখ — এ মহৎ কল্পনা অনলাইন দিয়ে উঠতে পারবে তো!