এটা একটা পুরনো ছবি। সেদিনও ছিল পালস পোলিও দিবস। নিজের সন্তানকে দু ফোঁটা পোলিও খাইয়ে সুস্থ রাখার তাগিদে একবুক বন্যার জলে নেমে এসেছেন বাবা-মা। ছবিতে এটা দেখা যাচ্ছে। আর তাঁদের সেই ডাকে সাড়া দিয়ে একবুক বন্যার জলে নেমে এসেছেন ক্যানিং এক নম্বর ব্লকের ছাঁটুইপাড়া সাবসেন্টারের তিন স্বাস্থ্যকর্মী তিথি মন্ডল, প্রথম এএনএম; অনিতা ছাঁটুই, দ্বিতীয় এএনএম, মিনতি মন্ডল, আশাকর্মী। ছবিতে এটা দেখা যাচ্ছে।
একজন মাথায় তুলে সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার বাক্সটা যাতে আছে বহুমূল্য ভ্যাকসিন। জলে ডোবা বিষাক্ত সাপের কামড়ে প্রাণ চলে গেলেও ভ্যাকসিনগুলো যেন বেঁচে থাকে।। ছবিতে এটা দেখা যাচ্ছে। ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে না সেটা হল এই যে ওই বুকে কিন্তু জমা আছে সামান্য বেতনের ক্ষোভ, পদোন্নতির সুযোগ না থাকার জ্বালা, একেবারে নিচু স্তরের কর্মী হওয়ার জন্য সামাজিক অবজ্ঞা আর উপেক্ষার যন্ত্রনা।
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। মাঠ ঘাট জলে ভেসে যায়। সেই এক বুক জলে দাঁড়িয়ে নিজের কাজ সারতে হয়। জলে ভিজে বুকের জ্বালা জুড়িয়ে আবার মাঠ ঘাট পথ পেরিয়ে যেতে হবে পাশের গ্রামে। পথ ফুরোয় না। বৃষ্টি থামে না। তবুও যেতে হয়। যেতেই হয় নইলে সে গাঁয়ের বাবা মা’র আদরের ধন সোনামনি জীবনের দুটো ফোঁটা থেকে বঞ্চিত হবে যে।
পোস্ট গ্র্যাড করার সময় ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজি পেপারে আব্রাহাম মাসলো ডি ভ্রিস-দের নানান থিওরি পড়তে হয়েছিল মোটিভেশন নিয়ে। সেইগুলি থিওরিই। নিজের জীবনে নিজেকে মোটিভেট করতে হলে এই ছবিটার দিকে তাকাই বারবার। আজ আবার পালস পোলিও দিবস। নীল, কমলা, গোলাপী, হলুদ, বেগুনি রঙের দিদিমনিদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আপনারা আছেন বলেই আমরা আছি।
১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩