স্বরলিপি আজ (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে) হাম-রুবেলার টিকা নিয়েছে। এই টিকা অত্যন্ত কার্যকরী এবং সুরক্ষিত। নির্ভয়ে আপনারাও বাচ্চাদের হাম-রুবেলার টিকা দিন।
কিছু কিছু ঘটনা বা ভিডিও নিয়ে এই টিকা সম্পর্কে অনেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রথমত, সেগুলো আদৌ সত্যি কিনা কেউ জানেন না। দ্বিতীয়ত, যদি সংশ্লিষ্ট ঘটনা সত্যি হয় তাহলেও সেটা টিকার জন্যই হয়েছে এটা জোর দিয়ে বলা মুশকিল। অনেক সময়ই বিভিন্ন দুর্ঘটনাকে টিকার সাথে দাগিয়ে দেওয়া হয়, যার সাথে টিকার কোনও সম্পর্ক থাকে না। তাছাড়া, যদি সবকিছু মেনে নিয়েও সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে টিকার জন্যই হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় তাতেও টিকার নামে খুব বেশি বদনাম ছড়ানো যায় না। আহা, লাফিয়ে উঠবেন না! আপনার বাড়ির পাশের রাস্তাটায় প্রতি বছর একাধিকবার ছোট-বড় দুর্ঘটনা হয়। তবে? রাস্তায় নামবেন না? যে বাসে-ট্রেনে যাতায়াত করেন সেটাও দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। কী করবেন? যাবতীয় বাস-ট্রেন বয়কট? যে খাবার খাচ্ছেন সেটা খেয়েই আজ এই মুহূর্তে আপনার মারাত্মক ফুড-পয়জনিং হতে পারে। খাবার খাবেন না? যে বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন সেটাই দূষিত হয়ে আপনাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। শ্বাস নেবেন না?
এবার মুদ্রার অপর পিঠটা দেখা যাক। হাম-রুবেলার টিকা সারা বিশ্বে প্রচলিত টিকা। কোটি কোটি শিশু এই টিকা পায়। ২০০০-২০১৮ সালের মধ্যে হামের টিকা দিয়ে হামরোগ ৭৯% কমানো গেছে। প্রাণ বেঁচেছে ২৩.২ মিলিয়ন শিশুর। সংখ্যাটা খেয়াল করুন, ২৩.২ মিলিয়ন! রুবেলাও একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। গর্ভস্থ শিশুর জন্য এই রোগ মারাত্মক। নবজাতকের হৃৎযন্ত্রের রোগ, চোখের ছানি, কানে শুনতে না পাওয়া সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হয়। রুবেলা টিকার মাধ্যমে এই রোগ ৯৭% কম করা গেছে। এতখানি যার ভালো, তার আণুবীক্ষণিক কালো’কে (যদি থাকে) ঘটনা নয়, স্রেফ দুর্ঘটনা বলেই ধরুন। যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। প্রিয় পাঠক, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না কিন্তু সেটা সত্যিই ভীষণ, ভীষণ, ভীষণই বিরল। এতটাই বিরল যে সেটা মাথায় না রেখেই বাচ্চাদের টিকা দিন। পৃথিবীতে কোনোকিছুই অবিমিশ্র ‘ভালো’ হয় না। টিকা না দিলে বরং ভয় অনেক বেশি।
তাহলে কি কোনও টিকা দিয়ে কারও ক্ষতি হয়নি? ‘হয়নি’ বললে সত্যের অপলাপ হয়। আবারও বলছি, টিকা না দিলেই ক্ষতি অনেক বেশি। যে সামান্য কিছু ক্ষেত্রে টিকা দিয়ে সমস্যা হয় সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েই বিজ্ঞান এগোয়। চিকিৎসা-বিজ্ঞানের যাবতীয় অগ্রগতি কোনও একদিন ভোরের স্বপ্নের মতো এসে পৌঁছোয় নি। মানুষ ভুল করেছে, শিখেছে, আরও ভালো করার চেষ্টা করেছে। এটাই বিজ্ঞান। দুর্ঘটনা নিশ্চয়ই দুঃখজনক। কিন্তু, ওই যে বললাম… সেটা নেহাতই দুর্ঘটনা।
শেষে এটুকুই বলার, চমকে ওঠার মতো খবর পেলেই চোখ বুজে বিশ্বাস করবেন না। খবর বিকোয়। তাই যে কোনও মূল্যে সাংঘাতিক কিছু খবর বানাতে পারলে খবর-বিক্রেতাদের পোয়াবারো। এমনও হ’তে পারে (সম্ভাবনার কথা বললাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিকার সম্পর্কে ভুল ধারণা ছড়ানো হয়) সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা আদৌ হয়নি কিংবা হ’লেও সেটা টিকার জন্য হয়নি।
মোদ্দা কথা, হাম-রুবেলার টিকা নির্ভয়ে বাচ্চাকে দিন।