ছোট বড় মেজ সেজ সব ধরনের কবিদের জন্য আলাদা একটা জায়গা আছে মনের মধ্যে। সেই কবিদের মধ্যে আমার প্রিয়তম কবি একটা মোটকা সোটকা মানুষ, আন্ডাররেটেড কবি, একেবারেই বুদ্ধিজীবীদের মতো দেখতে নয়, লম্বা উস্কখুস্ক চুল রাখেন নি। সরকারি আমলা ছিলেন আমার মতো। মদ খেয়ে মাঝরাতে কোনো কেলেঙ্কারি বাঁধান নি, মহিলা বন্ধু নিয়ে চাইবাসার জঙ্গলে ভেগে যান নি, আমার মতই বিবাহিত স্ত্রীর সাথে রোমান্স করে গেছেন সারাটা জীবন টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত বাঙালির মতো। তারাপদ-এর কবিতার প্রেমিকা প্রসাধনবিহীন আটপৌরে, শাড়ির আঁচলে হলুদের দাগ লাগা মিনতির প্রতিচ্ছবি। তবুও লোকটা আমার প্রিয়তম কবি রয়ে গেলেন চিরকাল।
সেই তারাপদ যিনি জীবনে কোনদিন রাজানুগ্রহ পাওয়ার লোভে কোনো নেতা মন্ত্রীর চেয়ার মুছে দেন নি। আজ তাঁর জন্মদিন। তাই আজ একবার এত দুঃখের মধ্যেও হাসতে আমাকে হবেই। সেই তারাপদ যিনি আমায় শিখিয়েছিলেন অন্যকে নিয়ে নয়, নিজেকে নিয়েই আগে হাসার অভ্যেসটা তৈরি হোক। তাই আজ আমি আমার মতো করে হাসবো, করুণ ভাবে, খুব ফিকে একটা হাসি দেবো। তবুও হাসিটা কেড়ে নিতে পারবেন না কেউ।
আমাদের জীবনে সবই তো চলে গেছে, তবু কেবল বাঙালির সেই বিখ্যাত ধারালো রসবোধটা অন্তত অক্ষুন্ন থাক। তাই আমার শার্টের বাঁ দিকের বুক পকেটের খুব কাছাকাছি লেখা একটা নাম। আমার মতো পাতি পাঠকের কাছে সারাজীবনের জন্য উনিই “মহিমাময়”। নামটা কেড়ে নিতে পারবেন না কেউ।
“স্মাইল প্লিজ, আপনারা প্রত্যেকেই একটু হাসুন,
দয়া করে তাড়াতাড়ি, তা না হলে রোদ পড়ে গেলে
আপনারা যে রকম চাইছেন তেমন হবে না,
তেমন উঠবে না ছবি। আপনার ঘড়িটা ডানদিকে
আর একটু, একটু সোজা করে প্লিজ, আপনি কি বলছেন
ঘাড়-টাড় সোজা করে দাঁড়ানো হ্যাবিট নেই, তবে,
কি বলছেন অনেকদিন, অনেকদিন হাসার অভ্যাস,
হাসার-ও অভ্যাস নেই? এদিকে যে রোদ পড়ে এলো
এ রকম ঘাড়গোঁজা বিমর্ষ মুখের একদল
মানুষের গ্রুপফটো, ফটো অনেকদিন থেকে যায়,
ব্রমাইড জ্বলে যেতে প্রায় বিশ-পঁচিশ বছর।
বিশ-পঁচিশ বছর পরে যদি কোনো পুরোনো দেয়ালে
কিংবা কোনো অ্যালবামে এরকম ফটো কেউ দেখে,
কি বলবেন, বলবেন, ক্যামেরাম্যানের ত্রুটি ছিলো,
ঘাড় ঠিকই সোজা ছিলো, সব শালা ক্যামেরাম্যানের
সেই এক বোকার শাটারে এই রকম ঘটেছে।”
কবি তারাপদ রায়ের জন্মদিনে লেখা।