Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

কেন? প্রথমাংশ: ছ’তলার রহস্য

IMG_20220703_084157
Dr. Aniruddha Deb

Dr. Aniruddha Deb

Psychiatrist, Writer
My Other Posts
  • July 3, 2022
  • 8:42 am
  • No Comments

~এক~

হাতের বইটা নামিয়ে রেখে মিহির গুপ্ত দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকালেন। পৌনে একটা। ঘরে একটাই রিডিং ল্যাম্পের আলো। নিভিয়ে দিলেন। বাইরে ঝিমঝিমে অন্ধকার। শহর হলে যে আলোটুকু দেখা যেত, এখানে সেটা নেই। আকাশ কালো। চেয়ার ছেড়ে জানলার সামনে এসে দাঁড়ালেন। পনেরো তলার ফ্ল্যাটের বন্ধ জানলার কাচের বাইরে দৃষ্টি আটকানোর কিছু নেই। নিচে অন্ধকারাচ্ছন্ন বাড়ির বাড়ির চৌহদ্দি দেখা যাচ্ছে, পাঁচিলের গা ঘেঁষে পার্কিঙে দাঁড়ানো গাড়িগুলো কেমন খেলনার মতো। অনেক দূরে শহরের আলো। আকাশটা উজ্জ্বল। শহরের উপকণ্ঠে নতুন শহরতলীতে এখনও মানুষের ভীড় হয়নি। কিছু দূরে মেন রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে। মালার মতো সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্পের সারি। এই আবাসনটা সে রাস্তা থেকেও অনেকটাই দূরে। মেন রাস্তা থেকে আবাসন অবধি রাস্তায় আলো এখনও লাগেনি। অন্ধকারে পনেরো তলা থেকে রাস্তাটা দেখাই যায় না।

আকাশে তারা ভর্তি। এত বছরের শহরবাসের পরে ভালোই লাগে মিহিরের। গ্রামের কথা মনে পড়ে। ছোটোবেলায় নদীর ধারে বসে তারা চেনা।

বসার ঘর থেকে নরম একটা টুং শব্দ জানিয়ে দিল রাত এখন একটা। একটা আধখাওয়া চাঁদ পুবের আকাশে উঁকি দিচ্ছে। কাল ছুটি। এখন অখণ্ড ছুটি। রিটায়ার্ড মানুষের ঘুম থেকে ওঠার তাড়া নেই। তবু, আর জেগে করবেনই বা কী? জানলা থেকে সরে বিছানায় গিয়ে শুলেন। শোয়া মাত্রই ঘুম।

~দুই~

ঘুমটা কি টেলিফোনের শব্দেই ভেঙেছিল? নাকি শম্পা ডাকার পরেই? চোখ খুলেই দেখলেন শম্পা দাঁড়িয়ে আছে হ্যান্ডসেট হাতে। এতো রাতে ফোন? তাও ল্যান্ডলাইনে? শম্পা যখন হ্যান্ডসেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “পিসি,” তখন আর বুঝতে অসুবিধা হলা না। পিসি ছাড়া আজকের যুগে ল্যান্ডলাইনে কেউ ওদের ফোন করে না।

পিসি! অজান্তেই চোখ চলে গেল দেওয়ালে ঘড়ির দিকে। শম্পা ঘরের আলো জ্বেলেছে। রাত দুটো দশ মিনিট! এখন!

প্রায় ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলেন মিহির। “পিসি?”

ওপারে পিসির গলা উদ্বেগে ভরা।

“মিহির, তোর পিসেমশাইয়ের শরীররটা ভালো লাগছে না। বলছে বুকে চাপ লাগছে। কী করি… এত রাতে…”

পিসির কথা কেটে মিহির বললেন, “পিসি, তুমি লাইনটা রাখো। আমি ডাঃ সেনকে ফোন করছি। তারপরে জানাচ্ছি।”

ডাঃ সেন ওঁদের অনেক দিনের ডাক্তার। ফোন কেটে টেবিলে রাখা মোবাইলের দিকে তাকালেন মিহির।

শম্পার হাতেও মোবাইল। বলল, “আমি ডাঃ সেনকে ফোন করছি। তুমি প্যান্ট পরে নাও। যেতে হবে।”

কথাটা ঠিক। মিহির ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এই ঘরটা ওঁর শোবার ঘর, ওদিকের মাস্টার বেডরুমটা শম্পার। কবে থেকে এই আলাদা শোবার বন্দোবস্ত? মনে নেই মিহিরের। কেনই বা? শধুই কি মিহিরের দেরি করে শোবার অভ্যেস তৈরি হয়েছিল বলে?

মাঝের ঘরটা অগোছালো। সৌভিক যাবার পর থেকে আর এটা ঘরের আকার পায়নি। এখন প্রধানত মিহিরেরই জিনিস–পত্রে অগোছালো। সন্ধেয় ছেড়ে রাখা জিনসটা তুলে কী ভেবে মিহির পাজামার ওপরেই পরে নিলেন। তারপরে ফতুয়াটা খুলে বিছানার ওপর ফেলে বিকেলের টি–শার্টটাই পরে নিলেন। ফিরে এলেন, তখন শম্পা মোবাইলটা টেবিলে নামিয়ে রাখছে আবার। বলল, “ডাঃ সেন হসপিটালের অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন। আমরা যেন সোজা হাসপাতালেই যাই। পিসির বাড়ি যেতে হবে না।”

“কোন হাসপাতাল?”

শম্পা বলল, “কেন? ডাঃ সেনের হাসপাতাল…” বলেই হাত দিয়ে মুখ ঢাকল। ডাঃ সেন যে হাসপাতালে কাজ করতেন, বছরখানেক আগে একটা ভয়ানক অ্যাক্সিডেন্টের পরে সরকার সে হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে। ওদেরই দু–চারটে আরও শাখা–প্রশাখা শহরের এদিক ওদিকে চালু আছে, তার মধ্যে কোনটায় যাবেন পিসেমশাই?

শম্পা বলল, “আমিও আসছি। রাস্তায় জেনে নেওয়া যাবে কোন হাসপাতাল।”

কিছু বলার আগেই শম্পা চট করে ঘরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। মিহির কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাইরের ঘরে গিয়ে কাঠের দেরাজের দরজা টেনে জুতোটা বের করে নিলেন। কবে থেকে দরজা বন্ধ করে জামা বদলায় শম্পা? মিহির জানেন না।

~তিন~

গাড়িতে বসেই আবার ফোন করল শম্পা। মিষ্টি করে থ্যাঙ্ক ইউ বলে লাইন কেটে বলল, “ওই হাসপাতালেই… আবার চালু হয়েছে… জানতে?”

জানতেন না মিহির। বললেন, “কবে?”

“কয়েক দিন। এখনও লো–কি। মিডিয়াও নাকি জানে না।”

“ভাগ্যিস ডাঃ সেন ছিলেন… ডাক্তার নিজেই অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন, মাঝরাতের পর হাসপাতালে নিজেই আসছেন, এমনটা তো বেশি শুনি না। বাবাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন ডাঃ সেন।”

আবাসনের বাইরে রাস্তাটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। গাড়ির হেডলাইটে একটা আলোর পুকুর তৈরি হয়েছে। তারই মধ্যে সাঁতরে চলেছে গাড়ি। রাস্তার অবস্থাও ভালো নয়। আশেপাশে বড়ো বড়ো মাল্টি–স্টোরিড বাড়ি তৈরির জন্য মস্তো মস্তো ট্রাক আর ভারি মালবাহী গাড়ির ভীড়। বড়ো বড়ো গর্ত। খানিকটা গিয়ে নতুন পিচ ফেলা রাস্তা আছে অন্ধকারের মধ্যেই। সেই পর্যন্ত গিয়ে গাড়ির স্পিড বাড়ালেন মিহির।

শম্পা বলল, “বড়ো রাস্তায় পৌঁছে স্পিড দিলে হতো না? এখানে হঠাৎ সামনে কেউ এসে পড়লে দেখতে পাবে না।”

মিহির হেসে বললেন, “রাস্তার দু’দিকে মানুষ কই, যে কেউ আসবে?”

জোরে চালিয়ে, বড়ো, আলোকিত রাস্তার মোড় অবধি আসতে বেশি দেরি হলো না। বড়ো রাস্তায় উঠে আরও জোরে চালালেন মিহির।

~চার~

ইসিজি, ইকো, ইত্যাদি পরীক্ষায় কিছু তেমন নেই। তবু, বয়সের কথা ভেবে ডাঃ সেন পিসেমশশাইকে ইন্টেনসিভ কেয়ারেই ভর্তি করলেন। ভর্তি পর্ব শেষ করে, রাত সাড়ে তিনটের সময় আই–টি–ইউ থেকে ক্যাশ কাউন্টারে এসে মিহির দেখলেন প্রায় পাঁচ জনের লাইন। কাউন্টারের সামনে ওয়েটিং রুমে পিসির সঙ্গে শম্পা বসে আছে। হাত তুলে ওদের নিশ্চিন্ত করে মিহির এগিয়ে গেলেন বাইরের গেটের দারোয়ানের দিকে।

“টয়লেট কোনদিকে?”

দারোয়ান হাত তুলল একটা অন্ধকার অলিন্দের দিকে। “ওই দিকে, স্যার। রাতে এই ফ্লোরের টয়লেট বন্ধ থাকে। ওখানে গিয়ে দেখবেন ডানদিকে সিঁড়ি। নেমে গিয়ে আবার ডানদিকে করিডোরের শেষে টয়লেট। আলো জ্বলছে, দেখতে পাবেন।”

মিহির প্রায় দৌড়ে আধো–অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নামলেন। পেট ফেটে যাচ্ছে। ডানদিকে মোড় ঘুরেই থমকে দাঁড়ালেন। গাঢ় অন্ধকার। দূরে, প্রায় দুশো মিটার দূরে আবছা নিয়ন আলো। মিহির এক সময় স্কুলে কলেজে একশো, দুশো মিটার দৌড়েছেন। দূরত্বের আন্দাজ আছে। আলো নেই কেন? এ কী রকম অব্যবস্থা!

ভাবার সময় নেই। হাতের কাছে টয়লেট আছে শুনে যতটুকু সংযম ছিল, সে–ও মিলিয়ে গেছে প্রায়। প্রায় দৌড়েই অন্ধকার জায়গাটা পেরিয়ে গেলেন। বুঝলেন, খুব অন্ধকার না, আউটডোরের ওয়েটিং রুম জাতীয় কিছু। বাঁ দিকে সারি সারি বসার জায়গা, তার ওপারে কাচের জানলার বাইরে অস্পষ্ট রাস্তার আলো।

অন্ধকার জায়গাটা পেরিয়ে প্রথম দরজাটায় লেখা ‘লেডিজ’। সেই দরজার বাঁ দিকে ‘জেন্টস’ লেখা দরজাটার ঠেলে খোলার সময় লক্ষ্য করলেন, লেডিজের দরজার হুড়কোয় একটা তালা আঁটা। মনে হলো, রাতে বোধহয় হাসপাতালে কোনও মহিলা কর্মচারি এই অংশে কাজ করেন না, তাই…। আচ্ছা, বাইরে থেকে যারা আসবে, যেমন শম্পা, বা পিসি, ওঁরা যদি কেউ যেতে চান? কে নিয়ে আসবে চাবি?

বাজে চিন্তার সময় নেই। টয়লেটের ডানদিকের দেওয়ালে সারি সারি মেল ইউরিনাল। প্রথমটার সামনে দাঁড়িয়ে প্যান্টের জিপ খুলে হাত দিয়ে আবার থমকালেন মিহির। পাজামা। অর্থাৎ, প্যান্ট খুলতে হবে।

বেল্ট, জিনসের বোতাম, সাবধানে একটু নামিয়ে… মাটিতে থ্যাপ করে না পড়ে… পাজামার দড়ি… গিঁট পড়িস না বাপ…

হুড়হুড় শব্দে কে ফ্লাশ টানল।

চমকে মুখ তুললেন মিহির। সামনে থেকে শব্দটা এসেছে। সামনে দেওয়াল। এই দেওয়ালেরই ওপারে লেডিজ টয়লেট। তার দরজায় বাইরে থেকে তালা দেওয়া। মিহির দেখেই ঢুকেছেন। এরই মধ্যে কেউ তালা খুলে ওখানে ঢুকে…

ভাবার সময় নেই… পাজামার দড়ির গিঁট খুলেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিহির চোখ বন্ধ করলেন। প্রস্রাবের ধারা পেটের ভেতরের চাপ কমিয়ে তীব্রবেগে বেরিয়ে যাচ্ছে, মনে হলো, শব্দটা হয়ত পেছনে কোনও কমোড ফ্লাশ করার ফলেই এসেছে, সামনের দেওয়ালের ওপার থেকে নয়। পেচ্ছাব করতে করতেই মাথা ঘুরিয়ে দেখলেন। নাঃ, পেছনের সবকটা দরজাই খোলা। আর এর মধ্যে কেউ এত নিঃশব্দে বেরিয়ে গিয়ে থাকতেই পারেন না। শব্দটা দেওয়ালের ওপার থেকেই শুনেছেন।

পাজামার দড়ি বেঁধে, প্যান্ট পরে, বেল্ট লাগিয়ে বেরোতে সময় লাগল। বাইরে বেরিয়ে আবার তাকালেন লেডিজ টয়লেটের দিলে। দরজা বন্ধ, হুড়কো লাগানো। তালা বন্ধ, যেমন ছিল। কিন্তু আবার বন্ধ দরজার ওপার থেকে ফ্লাশ টানার শব্দ হলো, আবার হুড়হুড় করে জল বেরোল। হঠাৎ একটা অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠল মিহিরের। দ্রুতপায়ে এগোলেন ওপর তলার ক্যাশ কাউন্টারের দিকে। চার পাঁচ পা যাবার পরেই বাথরুমের সামনের মৃদু নিয়ন আলোর এলাকা ছেড়ে চলে এলেন অন্ধকার আউটডোরে। বাঁ দিকে দেওয়াল, ডান দিকে বসার জায়গা। মিহিরের জুতোর খট খট শব্দ দেওয়াল থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে…

মিহিরের ঘাড়ের লোমগুলো হঠাৎ খাড়া হয়ে উঠল। মিহিরের পায়ে কেডস জাতীয় স্নিকার। কনভার্স। রবারে–মার্বেলে বড়োজোর কিচকিচ শব্দ হয়। খটখট নয়।

মিহিরের পেছনে কেউ আসছে।

মিহিরের সর্বাঙ্গ ছেয়ে ভয়ের একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল। এসির ঠাণ্ডা হাওয়া সত্ত্বেও ঘামে ভিজে গেল কপাল, গাল, পিঠ। পিছনে না তাকিয়ে মিহির দৌড়লেন। হাতের এক হ্যাঁচকায় টান মেরে শরীরটা টেনে তুললেন সিঁড়ি দিয়ে। তিনটে করে সিঁড়ি টপকে উঠলেন ওপর তলায়। ওয়েটিং রুমে শম্পা, পিসি। গেটে দারোয়ান। কেউই এ দিকে তাকিয়ে নেই। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে ওয়েটিং রুমে ঢুকে পেছনে তাকিয়ে দেখতে সাহস পেলেন। কেউ নেই। হাঁটার গতি কমিয়ে এনে স্বাভাবিক ছন্দে সিঁড়ি বেয়ে এসে দাঁড়ালেন ক্যাশ কাউন্টারের লাইনে। বুকের হাপরটা কমেছে। গতি কমিয়ে এনে স্বাভাবিক ছন্দে এসে দাঁড়ালেন ক্যাশ কাউন্টারের লাইনে। বুকের হাপরটা কমেছে। হাতুড়িটাও। ষাটের ওপর বয়েস হলেও নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করেন মিহির। তার পরে বাড়ি এসে ওয়াকারে জগিং করেন। যত্নের শরীর।

এখন তিনজন ওঁর সামনে। সবে ক’দিন হলো হাসপাতাল খুলেছে, কোনও পাবলিসিটি নেই, তাতেই রাত প্রায় চারটের সময় এত ভীড় কেন? জিনসের পিছনের পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ টেনে বের করলেন মিহির। কোন ক্রেডিট কার্ডটা দেবেন? কোনটাতে যথেষ্ট টাকা আছে?

চমকে আবার তাকালেন। পাশে একটা লোক কখন এসে দাঁড়াল? অবাক হয়ে দেখলেন, চোখের সামনে লোকটার কোমর! মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলেন আবলুশ কাঠের মতো কালো একটা লোক এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে ওঁর দিকেই চেয়ে রয়েছে। মিহিরের হাইট ছ’ফুট দু’ইঞ্চি। লোকটা মিহিরের চেয়েও আরও এতটা লম্বা! অস্বস্তিতে মন ভরে গেল। চট করে চোখ তুলে দেখলেন, ওঁর আগে লাইনের তিনজন, গেটের দারোয়ান, আর পিসি, সবাই অন্য দিকে তাকিয়ে। শুধু শম্পা এদিকে তাকিয়ে রয়েছে। শম্পার দৃষ্টি অবশ্য মিহিরের দিকে না। মিহিরের কাঁধের ওপর দিয়ে। আবার কালো লোকটার দিকে তাকালেন মিহির। লোকটা এখন শম্পার দিকে তাকিয়ে। মিহিরের চোখের সামনেই লোকটা হেঁটে ওয়েটিং রুম পেরিয়ে দারোয়ানের পাশ দিয়ে বাইরের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

কী মনে হলো, মিহির দ্রুতপায়ে পেছনে গেলেন।

“আপনার পেমেন্ট হয়ে গেছে, স্যার?” দারোয়ানের গলা নম্র, কিন্তু তাতে কি কোনও অভিযোগের সুর?

মিহির বললেন, “না, এখনও দু’জন আমার আগে আছেন। আচ্ছা, ওই যে লোকটা বেরিয়ে গেল, কে বলুন তো?”

দারোয়ান অবাক সুরে বলল, “কে লোক? কে বেরিয়ে গেল?”

মিহিরও অবাক। বললেন, “আরে, এই যে এইমাত্র, আপনার সামনে দিয়ে গেল যে…”

দারোয়ান দরজাটা খুলে বাইরে উঁকি দিয়ে বলল, “কই, কেউ তো যায়নি!”

মিহিরও দরজা দিয়ে বাইরে দেখলেন। চাঁদের আলো আর রাস্তার আলোয় চারিদিক ধোয়া। কোনও মানুষের চিহ্নমাত্র নেই। যত লম্বা–ই হোক, এত তাড়াতাড়ি কেউ অতখানি রাস্তা পেরিয়ে হাসপাতালের গেট পার করতে পারবে না।

বোকার মতো, “ইয়ে… মানে…” বলে একগাল হেসে মিহির আবার লাইনে দাঁড়ালেন। এখন ওঁর আগে মাত্র একজন।

পিসিকে নামিয়ে বাড়ি ফেরার পথে শম্পা হঠাৎ বলল, “আচ্ছা, তুমি হঠাৎ ওই লোকটার পেছনে ধাওয়া করলে কেন?”

থ্যাঙ্ক গুডনেস! শম্পাও দেখেছে।

মিহির বললেন, “আরে, লোকটাকে তুমি দেখেছ? কী রকম অদ্ভুতভাবে আমাকে দেখছিল! আশ্চর্য জানো, দারোয়ান কিন্তু লোকটাকে দেখেইনি।”

শম্পা লোকটাকে বেরিয়ে যেতে দেখেনি। ফলে সে যে দারোয়ানের নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়েছিল, সেটা ও জানে না। বলল, “আমিও তো দেখিনি। খেয়াল করেনি হয়ত। তাতে কী?”

মিহির কথা বাড়ালেন না। নিচের তলায় টয়লেটে কী হয়েছে, তা–ও বললেন না।

~পাঁচ~

হাসপাতাল খোলার কথা কাগজে বড়ো করে না বেরোলেও, কাজকর্ম চলছে, চিকিৎসাও ভালোই হলো। পিসেমশাই বাড়ি ফিরলেন — আবার সকালে বাজার, বিকেলে পার্কে বেড়ানো, সন্ধেবেলা বুড়োদের আড্ডায় দাবাখেলা — সবই স্বাভাবিক। মিহিরও নিজের নবলব্ধ রিটায়ার্মেন্টে অভ্যস্ত হচ্ছেন।

পরের ফোনটাও এল রাতেই। মিহির তখনও ঘুমোননি। রিটায়ার্মেন্টে রাতজাগা নিশাচরের মতো জেগে থাকেন আজকাল। মাঝেমাঝেই পনেরোতলার গগনচুম্বী বাড়ির জানলা থেকে আকাশের তারাগুলো ফিরে চেনার চেষ্টা করেন ছোটোবেলার মতো।

পিসি–ই। আগের বারের চেয়ে এবারে অনেক বেশি সংযত। এই ছ’মাসে মিহিরের পাড়া ছেড়ে যাওয়ায় অভ্যস্ত হয়েছেন। তা ছাড়া এবারের সমস্যাও কম। অত কষ্ট হচ্ছে না। পিসিই ডাঃ সেনকে ফোন করেছেন, ডাঃ সেন আবার বলেছেন, নিয়ে যান হসপিটালে। রিস্ক নিয়ে কাজ নেই। ফলে পিসি যাচ্ছেন। মিহির কি এত রাতে আসতে পারবে?

মিহির পারবেন। পারতে হবে। শহর ছেড়ে আসার আগে শম্পা বলেছিল, “এত দূরে গেলে পিসি–পিসেমশাইয়ের কোনও কাজে লাগতে পারব? তোমার–আমার আর কেউ তো বাকি নেই।”

মিহির বলেছিলেন, “বারো কিলোমিটার তো রাস্তা। গ্রহের ফেরে অন্য শহরেই যে চলে যেতে হচ্ছে না, সে–ও ভাগ্য। এই তল্লাটে ফ্ল্যাট কেনার অবস্থা কি তোমার আমার আছে?”

ঘরের দরজা বন্ধ। ভেতরে অন্ধকার দরজার নিচ দিয়ে চিলতে আলো থাকলে বুঝতেন শম্পা জেগে আছে। অবশ্য এই সময়ে জেগে থাকে না কোনও দিনই। তবু আলতো করে টোকা দিয়ে অস্ফূটে ডাকলেন, “শম্পা, শম্পা?”

সাড়া মিলল না। দরজার হাতল ঘুরিয়ে দেখবেন, ভেতর থেকে বন্ধ কি না? নাঃ, কারণ নেই কোনও, তবু, বন্ধ পেলে যদি মন খারাপ হয়? মাঝের ঘরে টেবিল থেকে একটা কাগজ নিয়ে খসখস করে কোথায় যাচ্ছেন লিখে খাবার টেবিলে একটা গেলাস চাপা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

রোজের মতোই কমপ্লেক্সের বাইরে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। গেটের নিয়ন লাইটের আলো মিলিয়ে গেল বেরোনোমাত্রই। হেডলাইটটা হাই–বিমে দিয়ে গাড়ির স্পিড বাড়াতেই মনে পড়ল আগের বারে শম্পা সাবধান করেছিল, এত স্পিডে অন্ধকারে গাড়ি না চালাতে। দূরে সত্যিই কি অন্ধকার রাস্তার মাঝখানে কেউ? একটু স্পিড কমালেন। আবার ভুরু কুঁচকে দেখার চেষ্টা করলেন। গাড়ি এখনও এগোচ্ছে ভালো গতিবেগে। যত কাছে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে রাস্তায় কেউ বা কিছু রয়েছে।

একটা মানুষ! এত রাতে এই রাস্তায় মানুষ হাঁটছে? মিহির স্পিড কমালেন আরও একটু। বেশ লম্বা লোক একটা — মিহিরের অস্বস্তি হলো। আবার স্পিড বাড়ালেন। এবার লোকটা আরও কাছে। ওঁর দিকেই আসছে। ঠিক গাড়ির মাঝ বরাবর। তালগাছের মতো ঢ্যাঙা, আবলুশ কাঠের মতো গায়ের রং…

এবার মিহির পরিষ্কার দেখতে পেলেন, সেই আফ্রিকান কালো লোকটাই। লম্বা লম্বা পায়ে এগিয়ে আসছে গাড়ির দিকে। দৃষ্টি নিবদ্ধ তাঁরই দিকে।

মুহূর্তের মতিচ্ছন্নতায় মিহির গাড়ির গতি বাড়ালেন, আরও… আরও… তীব্রবেগে ধেয়ে আসছে যেন লোকটা…

শেষ লহমায় স্টিয়ারিং কাটিয়ে লোকটাকে ধাক্কা না মেরে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলেন মিহির। চোখ সরাননি রাস্তা থেকে, তবু যেন দেখতে পেলেন, গাড়ির কয়েক ইঞ্চির মধ্যেই লোকটার জামাটা হাওয়ার টানে উড়ল, লোকটা এখনও তাকিয়ে আছে ওঁরই দিকে…

অন্ধকার রাস্তায় রেয়ার ভিউ মিররে দেখতে পেলেন না কাউকে।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বড়ো রাস্তার উজ্জ্বল আলোর রোশনাই। মিহির বড়ো রাস্তায় ওঠার আগে গাড়ি থামালেন। থরথর করে হাত কাঁপছে। এইভাবে গাড়ি চালান’ যাবে না। প্রথমে পেছনে–দেখা আয়নায়, তারপরে পেছন ফিরে যতদূর দেখা যায়, তাকিয়ে দেখলেন, কেউ নেই।

সামনের বড়ো রাস্তা ধরে আস্তে আস্তে একটা জিপ এসে দাঁড়াল মিহিরের বেরোনোর রাস্তা বন্ধ করে। পুলিশ। একটা টর্চের আলো জ্বলে উঠল। মিহির নিজের আলো নেভালেন। টর্চের ওপার থেকে একটা গলা ভেসে এল।

“কে ওখানে? গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসুন।”

মিহির আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এগিয়ে গেলেন। বোধহয় মিহিরের চেহারা দেখেই পুলিশের জিপের দরজা খুলে নামলেন একজন অফিসার। টর্চের আলো নামল মাটির দিকে।

“কে আপনি? কী করছেন।”

মিহির নিজের নাম বলে পেছনের আকাশের গায়ে নিজের বাড়ির দিকে দেখিয়ে বললেন, “ওখানে থাকি। এক আত্মীয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতাল যাচ্ছি।”

“ওখানে দাঁড়িয়েছিলেন কেন?”

হাতের মোবাইল দেখিয়ে মিহির মিথ্যে বললেন, “ফোন এসেছিল।”

মোবাইলে ফোন আসলে মাঝরাত্তিরে ফাঁকা রাস্তায় মানুষ গাড়ি দাঁড় করিয়ে কথা বলে, এমন ব্যাপারটা অফিসার বিশ্বাস করলেন বলে মনে হলো না। আপাদমস্তক আবার দেখে নিয়ে বললেন, “হুঁ। চলে যান।”

মিহির গাড়ির দিকে ফিরলেন। গাড়িতে উঠে দেখলেন পুলিশের গাড়িটা আস্তা আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে রাস্তার বাঁ দিক ধরেই। মিহিরকে ওদের পেছনে যেতে হবে। গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে আবার এগিয়ে বাঁ দিকে ঘুরে মেন রাস্তায় উঠলেন। পুলিশের গাড়ির লাল আলো এখন কিছু দূরে দণ্ডায়মান। বোধহয় মিহির ওদের ওভারটেক করলে আবার পিছু নেবে। দেখবে সত্যিই হাসপাতালের রাস্তায় যান কি না। মনে হলো, একবার কি পিসিকে ফোন করা উচিত? হাসপাতাল কি পৌঁছেছে ওরা?

পুলিশের গাড়িটা পেরিয়ে বাঁ হাত বাড়িয়ে পাশের সিট থেকে মোবাইল ফোনটা হাতে নিতে গিয়েই দেখলেন… কালো লম্বা লোকটা সিটেই বসে আছে, দৃষ্টি তাঁর দিকেই…

মিহিরের গাড়িটা কেতরে গিয়ে ফুটপাথে ধাক্কা খেয়ে একটা চাকা উঠে গিয়ে থামার পরে পুলিশের জিপটা এসে পাশে দাঁড়াল। মিহির তখন স্টিয়ারিং–এ মাথা রেখে অজ্ঞান। দরজা খুলে পুলিশ অফিসার মিহিরের বাঁ হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে দেখলেন, ‘কলিং ডাঃ সেন…’ ফোন কানে দিয়ে অপেক্ষা করলেন ডাক্তারবাবু ধরা অবধি। তার পরে দু’কথায় বুঝিয়ে দিলেন ব্যাপারটা। ফোন সুইচ অফ করতে দেখলেন ফোনের লক করা স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে একটা লেখা — ইন এমার্জেন্সি, কল শম্পা… তার পরে একটা মোবাইল নম্বর।

অফিসার নিজের মোবাইল বের করে শম্পার নম্বর ডায়াল করলেন।

~ছয়~

আই–টি–ইউ–র পরে রিকভারিতে পিসে–ভাইপো পাশাপাশি বেডে না হলেও কাছাকাছি।

সেদিন ডাঃ সেন বেডের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমার সব ইনভেস্টিগেশন নর্মাল — আমি কোনও সমস্যা দেখছি না। আজ তুমি প্রাইভেট রুমে যাচ্ছ। শম্পা আর পিসির অনুরোধে টু–বেডেড রুম — যাতে পিসে–ভাইপো একসঙ্গে থাকতে পারে, কিন্তু পিসেমশাই আজ বেরোবেন না। বয়স হচ্ছে, সিচুয়েশনটা আর একটু কনট্রোলে আসুক। তুমি আজ যাবে — ইন ফ্যাক্ট, কাল হয়ত ছেড়েও দেব। পিসেমশাই এ ঘর থেকে বেরোবার আগেই।”

পিসেমশাইয়ের শরীরটা আবার কাল রাতে গোলমাল করেছে। মিহির দেখেছেন নার্স আর মেডিক্যাল অফিসাররা ছোটাছুটি করেছে। দু’একবার জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করে কোনও উত্তর পাননি। সকালে ডাঃ সেন এসে বরাভয় দিলেন, সেরকম কিছু না, শুধু আর একটা দিন এখানেই অবজারভেশনে রাখবেন।

ভিজিটিং আওয়ারের শেষে, শম্পা চলে যাবার পরে এলেন একজন ডাক্তার। বললেন, “গুড মর্নিং। আমি ডাঃ চন্দ্র। সাইকিয়াট্রিস্ট। ডাঃ সেন রেফার করেছেন।”

মিহির অবাক হয়ে বললেন, “সাইকিয়াট্রিস্ট? আমাকে? কেন? আমি কী… আমাকে তো বলেননি…”

ভদ্রলোক বললেন, “আপনার এখানে ভর্তি হওয়ার আগের সার্কমস্টানসেস নিয়ে একটা আলোচনা করার জন্য।”

আগের সার্কমস্টানস? কী ছিল আগের সার্কমস্টানস?

হঠাৎ পুরো ঘটনাটা মনে পড়ল মিহিরের। একটা লোক রাত্তিরে গাড়িতে পাশের সিটে… তার জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট? কী ছিল সেটা? ওই কী বলে — হ্যালুসিনেশন না কী যেন?

ভয়ে ভয়ে, আস্তে আস্তে, ঘটনাটা বললেন মিহির। ডাঃ চন্দ্র মন দিয়ে সবটা শুনলেন। মিহির একটু নিশ্চিন্ত হলেন — ডাক্তারবাবু হাসলেন না। দু–একটা নোট লিখলেন কাগজে। তারপরে বললেন, “এরকম আগে কখনও হয়েছে?”

হয়েছে। মিহির বললেন, “আমি কয়েক মাস আগে এই হাসপাতালে এই লোকটিকেই দেখেছি — ভুল দেখেছি, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে।”

“এই হাসপাতালে? ভুল দেখেছেন কী করে বুঝলেন?” ডাক্তারের কপালে ভ্রূকুটি।

বললেন আগের দিনের ঘটনা। ডাক্তার আবার সবটাই শুনলেন। কোনও কথা বললেন না। আর কিছু লিখলেনও না। জানতে চাইলেন, “এই ব্যাপারটা আপনাকে কতটা অস্বস্তিতে ফেলেছিল এই ক’মাস?”

মিহির বললেন, “কোনও অস্বস্তিতেই ফেলেনি, জানেন? ধরে নিয়েছিলাম ভুল দেখেছি। তার আগে কোনও কারণে ওই অন্ধকার করিডোরে হিলওয়ালা জুতোর শব্দ, টয়লেটে অদ্ভুত আওয়াজ — যা শুনে মনে হয়েছিল কেউ ফ্লাশ টেনেছে — এসবের ফলে ভয় পেয়েছিলাম, সেটাও কারণ হতে পারে।”

“আর এই রিসেন্ট ঘটনাটা?”

ডাক্তারের প্রশ্নে মিহির অস্বস্তিতে পড়লেন। দু’একবার কিছু বলি বলি করেও কিছু বললেন না।

ডাক্তার আবার বললেন, “আপনি খুব লজিক্যাল লোক। আপনার সঙ্গে কথা বলেই বোঝা যায়। পরশু ভর্তি হয়েছেন, এবং কেস নোটস–এ দেখছি, জ্ঞান ফিরেছিল অ্যাম্বুলেন্সেই। তার পর থেকে দু’দিন কিছু ভাবেননি ব্যাপারটা নিয়ে?”

ঘাড় হেলালেন মিহির। “ভেবেছি। অনেক ভেবে একটাই কথা মনে হয়েছে — অত গভীর রাত্তিরেই আমি গাড়ি চালিয়ে আগের দিন এসেছিলাম এখানে। এখানে একটা লম্বা আফ্রিকান লোক দেখেছিলাম। ব্যাপারটার মধ্যে একটা রহস্য ছিল। হয়ত এমন হয়েছে যে ওই স্মৃতিটাই আমাকে ভুলভাল কিছু একটা দেখিয়েছে টেনশনের মধ্যে…?”

ডাক্তার মাথা নাড়লেন ওপর নিচে। বললেন, “দেখলেন? একেবারেই স্বাভাবিক এক্সপ্ল্যানেশন। কিন্তু অজ্ঞান হলেন কেন?”

অজ্ঞান? একটু থতিয়ে গেলেন মিহির। কেন? মাথায় চোট লেগেছিল?

ডাক্তারবাবু মাথা নাড়লেন। “লাগেনি। আপনার মাথায় কোনও চোটের চিহ্ন ছিল না। মাথায় এতই লাগল যে আপনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন, অথচ আপনার মাথায় কোনও ঠোকাঠুকির চিহ্ন, লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, কাটা — কিছুই নেই, এমন হয় না। জ্ঞান হয়ে কোথাও ব্যথা ছিল?”

না। ছিল না। বাকরহিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন ডাক্তারের দিকে।

ডাক্তারবাবু বললেন, “ইনভেস্টিগেশনেও কোনও ইনজুরির চিহ্ন নেই। তবে? ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন? আপনাকে দেখে সে রকম মনে হয় না। প্রচণ্ড ভয় পেলে এমনটা হয়, মিঃ গুপ্ত। আর ডাঃ সেনেরও ধারণা আপনি এ সবের ঊর্ধ্বে!”

মিহির উত্তর দিলেন না। উত্তর দেবার কিছু ছিলও না।

ডাঃ চন্দ্র বলে চললেন, “আপনাকে কোনও ওষুধ রেকমেন্ড করছি না। তবে আবার কথা বলতে আসব।”

মিহির কিছু বলার আগে ডাক্তারবাবু বেরিয়ে গেলেন।

দুপুরটা কাটল রিকভারি ওয়ার্ড থেকে প্রাইভেট রুমে বদলি হতে। বিকেলের দিকে মিহির ঘরে একা। ভিজিটিং আওয়ার শুরু হতে আরও কিছু সময় বাকি আছে। পিসি যাবে পিসেমশাইকে দেখতে। শম্পা আসবে এখানে। তা–ই ঠিক হয়েছে। এমন সময় খোলা দরজায় নক্‌ করে ঢুকলেন ডাঃ চন্দ্র, সাইকিয়াট্রিস্ট।

বললেন, “এতক্ষণে সময় পেলাম। আউটডোরে পেশেন্ট ছিল অনেক। আপনি ফ্রি?”

ফ্রি তো বটেই। হাত দিয়ে ঘরের এক দেওয়ালে লাগানো সোফার দিকে দেখালেন মিহির। ডাঃ চন্দ্র বললেন, “আপনাকে একটা কথা বলতে এলাম। আমার মনে হয় আপনার জানা উচিত, এবং আমার রিকোয়েস্ট — আপনি এ কথা অন্য কারওর সঙ্গে আলোচনা করলেও আমার নাম বলবেন না, কারণ তাহলে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে।”

ডাঃ চন্দ্র পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে বসে হাত নেড়ে বোঝালেন যে মিহিরেরও বসা উচিত। মিহির জানলা থেকে সরে এসে বিছানায় বসলেন। ডাঃ চন্দ্র বললেন, “আপনি জানেন, কিছুদিন আগে একটা দুর্ঘটনার ফলে আমাদের হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছিল?”

মাথা নাড়লেন মিহির। জানেন।

ডাঃ চন্দ্র জানতে চাইলেন, “সে ঘটনাটা কী, জানেন কি?”

না। তা জানেন না মিহির। বললেন, “একটা আন–এক্সপেক্টেড ডেথ হয়েছিল কারও, তাই না? কিন্তু তা বাদে আর কিছু জানি না।”

ডাঃ চন্দ্র বললেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যু, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।” তারপর একটু থেমে আবার বললেন, “এবং সেই জন্যই হাসপাতাল বন্ধ হয়েছিল। সেটা সিক্রেট। আমাদের না, সরকারি। মিডিয়াকেও জানান’ হয়নি। আপনিও কাউকে বলবেন না। লোকটা আফ্রিকান। ওদের দেশের হাই কমিশনের রেফার করা পেশেন্ট ছিল। বিরাট হাই–ফাই ব্যাপার। ভর্তি ছিল ছ’তলার স্যুইটে। ওদের নিজেদের লোকজন ছিল তখন ঘরে। কী করে সিল করা জানলা খুলে ছ’তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে মরে গিয়েছিল, সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এখনও ধাঁধা। ওই জন্যই এত দিন হাসপাতাল বন্ধ রাখতে হয়েছিল। কারণ সে দেশের হাই কমিশন এমন হট্টগোল করেছিল আমাদের নেগলিজেন্স হয়েছে বলে, যে সরকার চান্স না নিয়ে হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়। অনেকের খুব সন্দেহ ওর নিজের লোকেরাই কোনওভাবে জানলা খুলে ওকে ফেলে দেয়। ও এতই দুর্বল ছিল, যে সিল করা জানলা খুলে লাফ দিতে পারবে এমনটা হাসপাতালের কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। পুলিশ তদন্ত করেছিল, কিন্তু ওর সঙ্গে যারা ছিল তারা সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতাল ছেড়ে বেরিয়ে যায় — এবং কেউ কিছু করার আগেই নিজেদের দেশে ফিরে যায়। কে জানে ওদের দেশের কোনও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল কি না।”

মিহির বললেন, “আপনি বলছেন, এই লোকটাকেই আমি দেখেছি?”

ডাঃ চন্দ্র ঘাড় হেলালেন। “এই ঘটনার পরে হাসপাতাল বন্ধ ছিল এক বছরের ওপর। খুলেছে ধরুন মাস আষ্টেক হলো। তার পর থেকে একজন লম্বা কালো আফ্রিকান লোককে আমাদের হাসপাতালে দেখা গেছে বেশ কয়েক বার। দেখেছেন কোনও কোনও ক্লাস ফোর স্টাফ — ওয়ার্ড বয়, আয়া, বা কোনও নার্স। সারা হাসপাতালেই দেখা যায় তাকে। কখনও আউটডোরে, কখনও ওটি–র ফ্লোরে… সবসময়েই রাতে, সে সব জায়গায়, যেখানে কেউ বিশেষ নেই। তবে সে করে না কিছু। কটমট করে তাকিয়ে চলে যায়। এই প্রথম কেউ তাকে হাসপাতালের বাইরে দেখল। এবং এই প্রথম তার আবির্ভাবের সঙ্গে কারও কোনও ক্ষতি হলো।”

দরজার কাছ থেকে শম্পা বলল, “আমিও কিন্তু লোকটাকে প্রথম দিন দেখেছি।”

ডাঃ চন্দ্র ঘুরে তাকালেন। শম্পাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিলেন। তার পরে ভুরু কুঁচকে বললেন, “কোথায় দেখেছেন?”

“ওই যে, মিহির যখন পিসেমশায়ের পেমেন্টের জন্য ক্যাশ কাউন্টারে লাইন দিয়েছিল, তখন। মিহিরের পাশে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে ওকে দেখচিল। কটমট করে না, এমনিই। তার পরে চলে গেল। আমি মনে করেছি এত বড়ো হাসপাতালে আফ্রিকান কেউ আসতেই পারে। আর কিছু ভাবিনি। তাই মিহির যখন ওকে তাড়া করে বাইরে দেখতে গেছিল, তখন অবাক হয়ে গেছিলাম।”

মিহির বললেন, “ভালো কথা, আমি কিন্তু আউটডোরের টয়লেটে ওকে দেখিনি। কাউকেই দেখিনি। বন্ধ লেডিজ টয়লেটে ফ্লাশ টানার শব্দ পেয়েছিলাম, আর মনে হয়েছিল কেউ তাড়া করেছে। মানছি, আমি তখন কোনও কারণ ছাড়াই এত ভয় পেয়েছিলাম, যে ছুটে পালিয়েছিলাম।”

ডাঃ চন্দ্র বললেন, “ডাঃ সেন বলেছেন, সেটাই আশ্চর্য। আপনি নাকি ভয় টয় পান না।”

মিহির ম্লান হাসলেন। শম্পা বললেন, “লোকটা কে, ওই আফ্রিকান?”

ডাঃ চন্দ্র আবার ঘটনাটা বললেন। তারপর একটু থেমে আবার বললেন, “জানেন, আমাকে এবং ডাঃ সেনকে বলা হয়েছে এ সব কথা আপনারা যেন জানতে না পারেন। কিন্তু আমি একটাই কারণে বলে গেলাম। তা হলো এই, যে আপনি কী কারণে এই বিদেহীর আত্মাকে দেখেছেন আমি জানি না, কিন্তু যারা দেখেছে, তাদের মধ্যে আপনিই প্রথম যিনি হাসপাতালের কর্মী নন – শধু তা–ই না, আপনিই প্রথম যিনি কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই মনে হলো এটা আপনাদের জানা দরকার।”

ডাঃ চন্দ্র উঠে দাঁড়ালেন। শম্পা নার্ভাস গলায় বলল, “আপনি কী বলতে চাইছেন?”

ডাঃ চন্দ্র কাঁধ ঝাঁকিয়ে যে ভঙ্গীটা করলেন, ইংরেজিতে তাকে বলে শ্রাগ। তারপরে বললেন, “আমি কিছু বলতে চাইছি না। আমি এই আফ্রিকানের চিকিৎসায় জড়িত ছিলাম না, তাকে চোখেও দেখিনি। জীবিত অবস্থাতেও না, মারা যাবার পরেও না। আমি রাত হাসপাতালে আসি না। কিন্তু আপনি রাতে হাসপাতালে থাকবেন। আজ রাতে এই ঘরে। লোকটা যখন ছিল, তখন এই কাচটা মেঝে থেকে ছাদ অবধি পাল্লা দেওয়া জানলা ছিল। সিল করা ছিল — যেটা খুলে লোকটা পড়েছিল। এখন একটা গ্লাস পেন — কোনও জানলা নয়। আপনি একাই থাকবেন। এর আগে এই লোকটাকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। আমি বলি কী, মিসেস গুপ্ত, আপনি রাতে থাকতে পারবেন? তাহলে খুব ভালো হয়। অ্যাটেন্ডেন্ট রাখার চেয়ে ভালো।”

মিহির একটু রূঢ়ভাবেই বললেন, “আপনি ভূত বিশ্বাস করেন?”

ডাঃ চন্দ্র বললেন, “আমি কী বিশ্বাস করি বা করি না সেটা তো আলোচ্য বিষয় না। বিষয় হলো এই, যে আপনি একাধিকবার এই অ্যাপারিশনটি দেখেছেন। শেষবার আপনি সেটা দেখে অজ্ঞান হয়ে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। ওই একবার বাদে তাকে কেবল এই হাসপাতালেই দেখা যায়। রাতে। সুতরাং আমার সাজেশন আজ রাতে আপনি একা থাকবেন না। সঙ্গে কেউ থাকবে। কেমন?”

হতভম্ব দম্পতিকে ফেলে রেখে ডাঃ চন্দ্র বেরিয়ে গেলেন।

~সাত~

সন্ধে হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। সন্ধেবেলাই ডিনার দিয়ে গেছেন হাসপাতালের কর্মচারিরা। তারপরেই নার্স এসে হাতের চার্ট মিলিয়ে দেখে বলেছেন, “আপনার কোনও ওষুধ নেই রাতে…”। কথাটা শেষ হয়েও যেন শেষ হয়নি। যেন মিহিরের কাছেই নার্স কৈফিয়ত চাইছেন, কেন নেই? ওষুধ যদি না–ই খেলেন, হাসপাতালে কেন তিনি?

এ–ই শেষ কাউকে দেখেছেন মিহির। হাসপাতালের কর্মব্যসতা এই প্রাইভেট ওয়ার্ডের নিভৃত উইং–এর বন্ধ ঘরের দরজার আড়াল থেকে বোঝা যায় না। টিভি চালিয়ে বসে থাকলে আরও বিরক্তি বাড়ে। মিহির ঘরের দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখেছেন, জনমানুষহীন করিডোরের দু’দিকে সারি সারি বন্ধ দরজা। এমনিতে মিহির আড্ডাবাজ, গোপ্পে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় কাটানোর মতো মানুষ নন। কিন্তু আজ এই ঘরে, যেখানে না আছে একটা কাগজ, না আছে একটা বই, সেখানে কেমন অসহায় হয়ে আর একটা মানুষের মুখ দেখার আশায় বসে রয়েছেন। মনে হলো, শম্পা আর উনি যে ঠিক করেছিলেন, পিসিকে বাড়িতে একা রেখে শম্পা হাসপাতালে থাকতে পারবে না — সেটা যেমন ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, উলটো দিকে শম্পার পরামর্শে অ্যাটেন্ডেন্ট রাখলেই হত। কালকেই সম্ভবত ডাঃ সেন ছেড়ে দেবেন, এক রাত্তিরের জন্য একটা সুস্থ মানুষের অ্যাটেন্ডেন্ট দরকার নেই, বলে কিপটেমো–টা না করলেই হত।

নাঃ, এসব ভেবে কাজ নেই। তার চেয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করা ভালো। মিহির শুলেন। দেওয়াল থেকে দুটো তারের মাথায় দুটো বেডসুইচ ঝুলছে — একটায় আলো জ্বলে নেভে, আর একটায় নার্সিং স্টেশনে বেল বাজে। এটা জ্বালাতে গিয়ে যাতে ওটা না বাজান, তাই সাবধানে একটাকে বালিশের ডানদিকে, আর একটাকে বাঁদিকে রেখে আলো নেভালেন। ঘরটা সম্পূর্ণ অন্ধকার হলো না। দরজার পাশে দেওয়ালে গাঁথা একটা ফোকর থেকে মৃদু নাইটল্যাম্প, আর জানলার বাইরে থেকে ব্লাইন্ডের ভেতর দিয়ে আসা স্ট্রিট ল্যাম্পের দ্বৈত প্রচেষ্টায় বেশ খানিকটা রোশনাই রয়েই গেল। তাতে অবশ্য মিহিরের অসুবিধে নেই। এতদিন তো ইন্টেনসিভ কেয়ারের উজ্জ্বল আলো আর চাপাস্বর–হলেও–লাগাতার হইচই সত্ত্বেও দিব্যি ঘুমিয়েছেন। সুতরাং আজ ভালোই ঘুম হবে। মিহির হাই তুললেন… তারপরে আর জানেন না।

ঘুম ভাঙল অনেক রাতে। হঠাৎ বুঝতে পারলেন না, কোথায় আছেন। আবছা আলোয় পায়ের কাছে দেওয়ালে মস্তো টিভিটা। ওটা দেখেই খেয়াল হলো। হাসপাতাল। কটা বাজে? আজকাল তো ঘড়ি–টড়ির বালাই নেই। মোবাইলে, টিভিতে সর্বত্র সময় দেখা যায়।

মোবাইলটা কোথায়? ঘুম চোখে বালিশের পাশে হাতড়ে পেলেন না। হাতে ঠেকল বেল বাজানোর সুইচটা। অন্য দিকে আলোর সুইচ রয়েছে। ওটা জ্বালাতেই হবে। নইলে ফোনটা কোথায় রেখেছেন দেখতে পাবেন না। আর বাথরুমেও যেতে হবে। বাথরুমের বেগ আসতেই মিহির বুঝলেন তিনটে বেজে গেছে। মিহিরের ঘুম ভাঙে এই সময়েই।

মাথাটা ঘুরিয়ে বালিশের অন্য দিক থেকে আলোর সুইচটা তুলতে গিয়েই থমকে গেলেন। বিছানার ডানদিকে, প্রায় ছাদসমান লম্বা — কে দাঁড়িয়ে আছে? জানলার সামনেই, কিন্তু শরীরটা জানলার দিকে ফেরানো হলেও মুখটা ঘোরানো মিহিরের দিকেই। দৃষ্টিও ওঁর চোখের দিকেই। তাতে রাগ নেই, উষ্মা নেই, বরং আছে একটা নির্লিপ্তি — কিন্তু সে নির্লিপ্তিই মিহিরের রক্ত জল করে দিল। শিরদাঁড়া দিয়ে বলে গেল ঠাণ্ডা একটা স্রোত। নিজের অজান্তেই কেঁপে উঠলেন সামান্য।

চট করে হাত বাড়িয়ে কলিং বেলের সুইচটা তুলে নিয়ে টিপতে গিয়ে আবার থমকে গেলেন। কোথায় গেল? এই তো দাঁড়িয়ে ছিল সামনেই। কেউ নেই তো! বেল বাজানোর সুইচটা নামিয়ে রেখে আলো জ্বালালেন। ঘর খালি। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। আবার আলো–আঁধারিতে ভুল দেখেছেন। মিহির উঠে গিয়ে বাথরুম করে এসে আবার শুলেন।

ঘরটা বেশি আলো লাগছে কেন? আর গরমও? এ–সি কমিয়ে দিয়েছে কি রাতে? গায়ে হালকা ঢাকা সরিয়ে দিলেন। তা–ও গরম। কেন রে বাবা! সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশন থাকার কারণে ঘরে কোনও ফ্যানট্যান নেই। আর ঘরের টেম্পারেচার কমানো বাড়ানো যায় না।

এপাশ থেকে ওপাশ ফিরতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল হলো — পাশের জানলার সামনের ব্লাইন্ড কি সরানো? আগে আলো আসছিল ব্লাইন্ডের পুরু হলদে আবরণ ভেদ করে। এখন যেন ঘরটা বেশি আলোকিত — এই জন্যই?

আবার বিছানা ছেড়ে উঠলেন — এবার অন্য দিকে। ঠিক। শোবার সময় যে জানলার সামনেটা পুরোটাই ব্লাইন্ড দিয়ে ঢাকা ছিল, এখন তার অনেকটাই খোলা। অর্ধেক ব্লাইন্ড গুটিয়ে রাখা ছাদের কাছে।

আর…, সেই সঙ্গে, সামনের জানলায় কাচ নেই? এই জন্যই গরম লাগছে? না কি কাচটা এতই পরিষ্কার যে ভুল করে মনে হচ্ছে যেন কিছু নেই? হতভম্ব মিহির হাত বাড়িয়ে কাচটা ছুঁতে গিয়ে এক পা এগোলেন জানলার দিকে — আর তক্ষুনি বুঝলেন ভুল করেছেন। কাচ লাগানোর জন্য জানলার কাছে একটা চৌকাঠ মতো বানানো আছে, তাতেই একটা চ্যানেল কেটে তাতে কাচটা লাগানো থাকার কথা। এগোতে গিয়ে সেই চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে সামনের দিকে হুমড়ি খেয়ে গিয়ে জানলার ওপর পড়লেন… না, ওপরে না। কারণ জানলায় তো কাচ–ই নেই…

ছ’তলার ওপর থেকে নিচের পার্কিং–এর জায়গাটায় পড়তে পড়তে শেষ যে চিন্তাটা মাথায় এল, তা হল — এইভাবেই কি সেই আফ্রিকানটিও…?

~আট~

দিনের শেষ রোগী দেখে ডাঃ সেন স্টেথোস্কোপ গুটিয়ে ব্রিফকেসে ভরে প্রেসক্রিপশন প্যাডটা ড্রয়ারে ঢোকাতে যাবেন, এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। রিসেপশনিস্ট উঁকি দিয়ে বলল, “স্যার, একজন ডাঃ চন্দ্র এসেছেন…”

“চন্দ্র?” ভুরু কুঁচকে ডাঃ সেন একমুহূর্ত ভাবলেন, তারপরে বললেন, “ও, অশোক। সাইকিয়াট্রিস্ট। চেনো না? ডাকো, ডাকো…” বলে নিজেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজায় গিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললেন, “অশোক, এসো…”

ডাঃ চন্দ্র এসে ঢুকলেন, দরজা বন্ধ করে ডাঃ সেন ফিরে গেলেন নিজের চেয়ারে। বললেন, “বসো। চা খাবে? কফি? ক্যান্টিনের কিন্তু।”

কফি–তে আপত্তি নেই, শুনে ডাঃ সেন ফোন তুলে রিসেপশনিস্টকে বললেন দু’কাপ কফি বলে দিতে ক্যান্টিনে। তারপরে বললেন, “বলো।”

ডাঃ চন্দ্র বললেন, “বলব কী, দাদা? এবারও আপনি কিছু বলবেন না? মৌন হয়েই থাকবেন?”

ডাঃ সেন বললেন, “কী বলব, অশোক? আগের বারে কিছু না বলতেই আমাকে হাসপাতাল ছাড়তে হলো। কিন্তু এখন তো আমি আর নেই। তাই তুমি–ই বলবে, তাই না?”

“আগের বারেও তো আমিই বলেছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল তো আপনাকে ছেড়ে দিল না। এবার আপনি যদি মুখ খোলেন, হাসপাতাল তো কিছু করতে পারবে না আপনার… আমি মিডিয়াকে জানিয়েছি। আমি শুধু রিকোয়েস্ট করছি — আপনাকে যদি কেউ কনট্যাক্ট করে, খবরের কাগজ, ই–পেপার, টিভি — আপনি বলবেন।”

ডাঃ সেন হাসলেন। “কী বলব? ভূতের উপদ্রব ওই হাসপাতালে?”

মাথা নাড়লেন ডাঃ চন্দ্র। “ভূত বলবেন কেন? যা বিশ্বাস করেন না, তা বলতে যাবেন কেন? আমিও কি ভূতের কথা বলেছি? আগেরবার আমি বলেছিলাম, এই হাসপাতালে একটা রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছিল, যেটার কিনারা কেউ করতে পারেনি। তার পর থেকে প্রায়ই নানা লোকে একটা দৃশ্য দেখে ভয় পাচ্ছে। মিহির গুপ্ত সেই দৃশ্যই দেখেছিলেন — একবার হাসপাতালে, আর একবার হাসপাতালের বাইরে। দ্বিতীয়বার তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, সে ভয়েই হোক, আর যে কারণেই হোক — কপাল করে গাড়িটা বিরাট অ্যাক্সিডেন্ট করেনি। সেই ভদ্রলোককে, ওই ফ্লোরে, ওই ঘরেই ঠাঁই দেবার কোনও দরকার ছিল কি? মিডিয়াও তো এইটুকুই বলেছিল। আমার নামেও না, আপনার নামেও না — খবরটা প্রকাশ হয়েছিল রহস্য হিসেবেই। হাসপাতাল আপনাকে বলল, রিজাইন করো, আপনিও কোনও কথা না বলে ছেড়ে দিলেন।”

হাসলেন ডাঃ সেন। “আমাকে বোর্ড অফ গভর্নরসের মিটিঙে ডেকে কী ভাষায় রিজাইন করতে বলা হয়েছিল, তুমি তো তা জানো না… কিন্তু এবারে কী হলো? টিভিতে যা দেখলাম, এবার তো পেশেন্ট না, আর ছ’তলা থেকে লাফিয়েও মৃত্যু না।”

ডাঃ চন্দ্র মাথা নাড়লেন। “না, দাদা। এবারে ওয়ার্ড বয়। এবারে পেশেন্ট হবার সম্ভাবনা প্রায় ছিল না। মিহির গুপ্তর ডেথের পরে হসপিটাল অথরিটি অন্তত এটা করেছিল, যে ঘরটাকে আর পেশেন্টের জন্য রাখেনি। জানলাও বন্ধ করে দিয়েছিল — দেওয়াল তুলে। ঘরটা হয়ে গেছিল স্টোর রুম। থাকত আন্ডার লক–অ্যান্ড–কি। যে ওয়ার্ড বয় মারা গেছে, তার ডিউটি ছ’তলায় ছিল না। তিনতলার জেনারেল ওয়ার্ডে ছিল। রাত আড়াইটে অবধি ওকে ওয়ার্ডে দেখা গেছে। আড়াইটের পর ওর খোঁজ পড়ে ভোরবেলা প্রায় পাঁচটা নাগাদ, কোনও পেশেন্টকে বেডপ্যান দেবার দরকার হওয়াতে। সিকিউরিটি বলে ও আড়াইটের পরে হঠাৎ কাউকে কিছু না বলেই ওয়ার্ড ছেড়ে চলে যায়। এর পরে ধরে নেওয়া হয় ও ডিউটি ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে — ডেডবডি পাওয়া অবধি। দুপুরে কেউ ওই স্টোররুমে ঢুকে পায়। তারপরে খতিয়ে দেখা শুরু হয়। সিসিটিভিতে দেখা গেছে লিফটে ছ’তলা গেছে, চাবি দিয়ে দরজা খুলেছে, ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে এবং তারপরে আর বেরোয়নি। ঘরের ভেতরে সিসিটিভি নেই, তাই ওখানে কী হয়েছে, কেউ জানে না।”

ডাঃ সেন হাসলেন। “আর তুমি ওমনি গিয়ে মিডিয়াকে বলে দিলে?”

“দেব না কেন?” অশোক চন্দ্রর গলায় এবারে রাগ। “ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করছে হাসপাতাল। কোনও রকম কোনও ইনভেস্টিগেশন হতে দেবে না। আগের বারেও তো কেউ জানতে চায়নি, যে আফ্রিকান না হয় সিল করা জানলা খুলে পড়েছে, মিহির গুপ্ত তো জানলা খোলেননি? গোটা কাচটাই খুলে নিচে পড়ে গিয়েছিল। সিসিটিভিতে দেখা গেছে কাচ পড়ছে পেশেন্টের অন্তত বারো মিনিট আগে। কী করে খুলল? পেশেন্টই বা পড়ল কী করে? আপনিও তো একবারও এই কথাগুলো বলেননি?”

ডাঃ সেন বললেন, “মিহির গুপ্ত আমার পেশেন্ট ছিল বটে, কিন্তু ও একাই তো আমার পেশেন্ট না। ওর ওয়াইফ, ওর পিসি, পিসেমশাই — সবাইকে আরও বেশি ডিস্ট্রেসড করার ইচ্ছে আমার ছিল না।”

ডাঃ চন্দ্র মাথা নাড়লেন। সেটা ‘আচ্ছা ঠিক আছে’ গোছের হলেও পরিষ্কার বোঝাই গেল, যে উনি ডাঃ সেনের বক্তব্যে খুশি নন। বললেন, “আচ্ছা, এই ডেথটার কথাও কেউ বলছে না কেন? লোকটার তো ছ’তলায় যাবারই কথা নয়। গেল কেন? ওই ঘরেই বা কেন? চাবিও তো ওর কাছে থাকার কথা নয়। পেল কোথায়? এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তরই কেউ খুঁজল না। পুলিশকে বলা হলো — ওকে নার্স পাঠিয়েছিল মোইলি শিট আনতে। আর আমাদের পুলিশকে তো জানেনই — কেউ জিজ্ঞেসই করল না, তিনতলার ওয়ার্ডের মোইলি শিট কি সবসময়ই ছ’তলা থেকে আসে?”

ডাঃ সেন ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ টেবিলটাই পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপরে বললেন, “পোস্ট মর্টেম কী বলছে?”

“কিছুই না। কোনও ফাউল প্লে–র চিহ্ন নেই। হার্ট অ্যাটাক — মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন।”

“তাতে তো রহস্যজনক কিছু নেই।”

“আমি তো মৃত্যুর কারণ রহস্যজনক বলছি না। আমি বলছি ওই ঘরটার সঙ্গে যোগাযোগ। আমি বলছি মৃত্যুর আগের ঘটনাগুলো রহস্যজনক। তিনটি মৃত্যুর একটাতেও মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ নেই। আগের দু’জন ছ’তলা থেকে পড়ে মরে গেছেন। তাতেও রহস্য নেই। ষাট ফুট নিচে পড়ে না মরলেই আশ্চর্য হতাম। কিন্তু সন্দেহ তো তার আগে। ছ’তলার সিল করা জানলা খুলে একজন আর একজন পুরো কাচ খুলে কী করে বাইরে পড়লেন? সেটা কেউ জানতে চাইল’ না কেন? কেন কেউ জানতে চাইছে না ওই ওয়ার্ড বয় ওই ফ্লোরের ওই ঘরে কী করছিল — ওর তো ওখানে যাবারই কথা নয়!”

“তুমি কেন সরাসরি অথরিটিকে চ্যালেঞ্জ করছ না?”

“কারণ আমি হাসপাতালে থাকতে চাই, দাদা। চাকরির জন্য না, হাসপাতালটা ভালো বলেও না। ছেড়ে দিলে এই রহস্যের সমাধান হবে না। সেইজন্যই আপনার কাছে আসা।”

“বেশ,” রাজি হলেন ডাঃ সেন। “তুমি এগোও। আমাকে কেউ ফোন করলে আমি আমার মতো করে একই কথা বলব।”

ডাঃ চন্দ্র উঠলেন না। একটু কিন্তু কিন্তু করে বললেন, “আমি আরও একটা কাজ করেছি, আপনার অনুমতি না নিয়েই।”

এবার ডাঃ সেনের ভুরুতে উষ্মার কুঞ্চন। “কী আবার?”

“আমি মিসেস গুপ্তকেও ফোন করেছিলাম।”

“মিসেস গুপ্ত? কে মিসেস গুপ্ত?” ডাঃ সেনের গলায় বিস্ময়।

“ওই মিঃ মিহির গুপ্তর স্ত্রীকে…”

চমকে সোজা হয়ে বসলেন ডাঃ সেন। “শম্পা? শম্পাকে ফোন করেছিলে? কেন? এখনও দু’মাস হয়নি বিধবা হয়েছেন — ওকে কী বলে তুমি…”

“সেইজন্যই ফোন করেছি। ওনারও কিছু বলা উচিত। আমি পারলে আফ্রিকান ওই ডেপুটি হাই কমিশনেও ফোন করতাম। কিন্তু সেটা তো আমার পক্ষে সম্ভব না… আমি মিসেস গুপ্তকে বলেছি আর কিছু না — এই প্রশ্নগুলোই করতে, যে হাসপাতালের সব জানলা সিল থাকার কথা — কিন্তু তা সত্ত্বেও মিঃ গুপ্ত কী করে জানলা খুলে পড়ে গেলেন, সে প্রশ্নের উত্তর কেন পাওয়া গেল না? বা, সবাই জানত, যে মিঃ গুপ্ত গাড়িতে একজন লম্বা আফ্রিকানের মতো কাউকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, তা সত্ত্বেও ওনাকে কিছু না জানিয়েই, ওই ঘরেই কেন ওনাকে বেড দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ওই আফ্রিকানেরই মৃত্যু হয়েছিল?”

এবার ডাঃ সেন সজোরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্রায় ছুঁড়ে প্রেসক্রিপশন প্যাডটা বাক্সে রেখে দড়াম করে বাক্স বন্ধ করে বললেন, “ভালোই বুদ্ধি করেছ। অর্থাৎ, এর পরে আমার আর কোনও স্টেটমেন্ট না দিয়ে পালানোর উপায় থাকবে না। মিডিয়া নিশ্চয়ই আমাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনিও তো ওই সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছিলেন? কেন দিয়েছিলেন? শম্পা গুপ্তও নিশ্চয়ই একই কথা ভাবছে আজ। থ্যাঙ্ক ইউ, অশোক। তোমার চিন্তা নেই। আমিও বাধ্য হয়ে মিডিয়াকে একই কথা বলব। এখন তুমি এসো।”

ডাঃ সেনের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে ডাঃ চন্দ্র মনে মনে বললেন, “বুড়োর ব্রেন এখনও খুব শার্প, মানতেই হবে।”

~নয়~

কয়েক মাস পরে ডাঃ অশোক চন্দ্র শ্রীমতী শম্পা গুপ্তকে ফোন করে জানালেন, প্ল্যান কাজে লাগল না। অথবা বলা চলে, যে ভাবে উনি ভেবেছিলেন, তা হলো না। মাঝের থেকে যেটা হলো — অশোক চন্দ্র, শম্পা গুপ্ত আর ডাঃ সেনের বক্তব্যে, দু’বছরের মধ্যে হাসপাতালে তিনটি অদ্ভুত অপঘাত মৃত্যুর খবর চারিদিকে এমনই চাউর হয়ে গেল, যে দেখা গেল মিডিয়ার গাড়ি সারাক্ষণ হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে। তার সঙ্গে নানা জনে বার বার বলতে লাগল, যে তারাও নাকি রাতের বেলা অন্ধকারে হাসপাতালের নানা জায়গায় একজন লম্বা আফ্রিকানকে দেখতে পেয়েছে — যে শুধুই তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল, আর কিছুই করেনি।

মিডিয়া এমন হইচই ফেলে দিল, যে দেখতে দেখতে হাসপাতালে রোগী কমতে শুরু করল, কিছুদিনের মধ্যে ভর্তি প্রায় শূন্য। খালি ওয়ার্ড আর ব্যালেনস শিটে লাল দাগ দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল বন্ধই করে দিলেন।

ডাঃ চন্দ্র ফোন করে ডাঃ সেনকে বললেন, “দাদা, গোয়েন্দাগিরির ইতি হলো।”

বারো বছর কেটে গেছে। ডাঃ সেনের প্লেন ল্যান্ড করার পর ফোন চালু করে ডাঃ সেন প্রথমে বাড়িতে ফোন করে কাজের মেয়েকে বললেন, “আমরা এসে গেছি। বাড়ি গিয়ে ভাত খাব।” তারপরে ড্রাইভারকে ফোন করে জানলেন কত দূরে আছে। তারপরে মিস্‌ড্‌ কলের তালিকায় চেনা নাম দেখে ফোন করলেন ডাঃ অশোক চন্দ্রকে।

“কী দাদা? অনেকদিন কথা হয়নি। ফোন সুইচ অফ ছিল — বাইরে ছিলেন?”

“মিনেসোটা গেছিলাম আমি আর তোমার বৌদি। মেয়ের কাছে। তোমার খবর কী? হঠাৎ ফোন কেন? নিশ্চয়ই এমনি এমনি না?”

“না, একেবারে এমনি না। বলছিলাম, বাড়ি কিনবেন? ফ্ল্যাট?”

হতবাক ভাব কাটার পরে ডাঃ সেন বললেন, “ফ্ল্যাট? কিনব? তুমি কি ডাক্তারি ছেড়ে প্রোমোটারি ধরলে নাকি?”

লাইনের ওদিকে হা হা করে হেসে অশোক চন্দ্র বললেন, “না, দাদা। কাল ওদিক দিয়ে যাবার সময় দেখলাম, ৩৩ নম্বর স্টেশন রোডের পুরোনো হাসপাতালের বাড়িটা নীল করোগেটেড শিট দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। গায়ে বিজ্ঞাপন — এখানে বাইশ, না পঁচিশতলা রেসিডেনশিয়াল কমপ্লেক্স হবে। ফ্ল্যাট। ভাবলাম আপনাকে জিজ্ঞেস করি ছ’তলার সাউথ ইস্টের ফ্ল্যাটটা আপনার নামে বুক করে নেব কি? আপনি তো ভূত–ফুত মানেন না।”

এবারে হা হা করে হাসার পালা ডাঃ সেনের। বললেন, “না ভাই, আমি এই বয়সে আর বাড়ি–ফাড়ি করতে পারব না। তাছাড়া আমি ইউ–এস–এতে ইমিগ্রেশন অ্যাপ্লাই করেছি। জামাই তো আমেরিকান। মেয়েও ওখানেই সেটল্ড। তাই আর… এক কাজ করো… আমি বলি কী, তুমিই কিনে নাও ছ’তলার ফ্ল্যাটটা। ভূতে বিশ্বাস করো চাই না–করো, তোমার গোয়েন্দাগিরিটা করতে পারবে নিজের দমে — হসপিটাল কর্তৃপক্ষ কী বলবে সে তোয়াক্কা না করে।”

PrevPreviousমেডিক্যাল কলেজের ইতিহাস (২য় পর্ব) – ১৮৬০ পরবর্তী সময়কাল
Nextডক্টরস’ ডে-তে কিছু ভাবনা-চিন্তাNext
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

Medical Empire Builders

February 8, 2023 No Comments

Early days of Western medicine in India was not much conducive to the British settlers and Indians as well. Though, it is historically accepted that

With Malice Towards None

February 7, 2023 No Comments

The thirty fifth annual conference of Physical Medicine and Rehabilitation at Mumbai was important to me. In this conference my contribution to PMR was appreciated.

রোজনামচা হাবিজাবি ২

February 6, 2023 No Comments

শীত কমে যেতেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের সমস্যাগুলো বেশ বাড়ছে। দশটার সময় হেলতে-দুলতে চেম্বারে ঢোকা সম্ভব হচ্ছে না। সাড়ে ন’টার আগেই

নাটকের নাম গৌরহরির মৃত্যু 

February 5, 2023 5 Comments

গৌরহরিবাবুর সন্দেহটা কেমন গেঁড়ে বসলো মরে যাবার পর। ছেলেটা বিশ্ববখাটে, গাঁজা দিয়ে ব্রেকফাস্ট শুরু করে আর মদ গিলে ডিনার সারে। ছোটবেলায় পড়াশোনা করার জন্য চাপ

ডক্টরস’ ডায়ালগ ও প্রণতি প্রকাশনীর ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান সফল করে তুলুন।

February 4, 2023 No Comments

সাম্প্রতিক পোস্ট

Medical Empire Builders

Dr. Jayanta Bhattacharya February 8, 2023

With Malice Towards None

Dr. Asish Kumar Kundu February 7, 2023

রোজনামচা হাবিজাবি ২

Dr. Soumyakanti Panda February 6, 2023

নাটকের নাম গৌরহরির মৃত্যু 

Dr. Anirban Jana February 5, 2023

ডক্টরস’ ডায়ালগ ও প্রণতি প্রকাশনীর ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান সফল করে তুলুন।

Doctors' Dialogue February 4, 2023

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

424539
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]