নাইরোবি ফ্লাই, উত্তরবঙ্গ জুড়ে আতঙ্কের নতুন নাম। এদের ইংরাজি নাম রোভ বীটল্ (rove beetle)। কামড়ায় না, হুলও ফোটায় না। কিন্তু এই অ্যাসিড পোকা গায়ে বসলেই আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। ঠিক কী এটি? কী কী করবেন আর কী করবেন না এ ক্ষেত্রে?
কী এই নাইরোবি ফ্লাই?
Paederus eximius-এই পোকার প্রাদুর্ভাব প্রথম দেখা গিয়েছিল পূর্ব আফ্রিকার দেশ নাইরোবিতে। তবে শুধু আফ্রিকা নয় তুরস্কতেও এই পোকার সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। ভারত তো রয়েছেই। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নাইজেরিয়া, ব্রাজিল, ফ্রান্সের মতো বেশ কিছু দেশেও। Paederus eximius-এই পোকাটি এতই ছোট যে খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুম থেকেই উঠেই টের পাওয়া যায় চোখের পাশ বা মুখের কোনও অংশ লাল হয়ে ফুলে গিয়েছে। শরীরের যে কোনও অংশ এই পোকার দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। এই অ্যাসিড পোকা থেকে তৈরি সমস্যাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হচ্ছে Paederus dermatitis।
কী সমস্যা হচ্ছে?
চিকিৎসকরা বলছেন আকারে যেহেতু খুব ছোট এই পোকা সে ক্ষেত্রে চোখে দেখা যায় না। ফলে পোকা ত্বকের সংস্পর্শে আসে। নাইরোবি ফ্লাই কামড়ায় না বা হুল ফোটায় না।
অসাবধানতাবশত পোকার গায়ে ঘষা লাগলে বা চাপ দিলে তার শরীর থেকে যে রাসায়নিক বের হয়, তা মানুষের ত্বকের সংস্পর্শে এসে পুড়িয়ে নষ্ট করে দেয়। সাধারণত ঘুমের মধ্যেই এই ভুল করে থাকেন অনেকেই।
- কামড়ানো বা হুল ফোটানোর কোনও দাগ শরীরে থাকে না
- লাল হয়ে ফুলে ওঠে আক্রান্ত স্থান
- আক্রান্ত স্থানে দেখা দেয় ফোস্কা
- সংক্রমণের মূল জায়গা থেকে নীচের দিকে সংক্রমণের লম্বা দাগ পড়ে
- এই পোকার দাপটে শুধু যন্ত্রণাই নয় অন্ধত্ব হতে পারে বলেও আশঙ্কা চিকিৎসকদের একাংশের
- বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সমস্যা ভয়ঙ্কর হতে পারে
- এক সঙ্গে অনেকে আক্রান্ত হন
কখন প্রাদুর্ভাব, ঝুঁকি কোথায়?
বর্ষায় এই ধরনের পোকার উপদ্রব বাড়ে। সাধারণত বর্ষার সময়ে ঝোপঝাড়, আগাছার জঙ্গল-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নাইরোবি ফ্লাই লোকালয়ে চলে আসে। সূর্যের আলোর চলে যাওয়ার পর কৃত্রিম আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয় এই পোকা। কাজেই সূর্যাস্তের পরেই এই পোকার দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
প্রতিরোধ করবেন কীভাবে?
- রাতে মশারি টাঙানো জরুরি
- সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন
- যে কোনও পোকার সংস্পর্শে তা এলে ফুঁ দিয়ে অথবা আলতো করে হালকা জিনিস দিয়ে তা সরিয়ে দিতে হবে।
- সূর্যাস্তের পর ঘরের জানলা দরজা বন্ধ করে দিন
- ঘর, বিছানা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন
- আলমারিতে ন্যাপথলিন বল ব্যবহার করুন
- ঘর, বাথরুম, বাগানে বেগন স্প্রে ব্যবহার করুন
- জানলায় নেট লাগান
- ঢাকা জামাকাপড় পরুন
- বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন
- ত্বকে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এই সমস্যা নতুন নয়। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। ১৯৯৭ সালে এই নিয়ে একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেছি। সঠিক চিকিৎসায় সহজেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। কাজেই ত্বকে এই ধরনের প্রদাহজনিত সমস্যা হলেই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।