Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

প্রায় গোয়েন্দা গল্প

272680472_4532782910164882_392997772549462746_n
Dr. Aindril Bhowmik

Dr. Aindril Bhowmik

Medicine specialist
My Other Posts
  • January 28, 2022
  • 9:07 am
  • No Comments
ডাক্তারি পাশ করার পর যে রোম্যান্টিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা বুদ্বুদ হয়ে মিলিয়ে গেছে। যত দিন যাচ্ছে, ক্রমশ এই পেশার অন্ধকার দিক গুলিই বেশি চোখে পড়ছে। একদিকে সভ্যতার যক্ষ্মা বুকে মানুষের হাহাকার, অন্যদিকে সাজানো গোছানো উচ্চবিত্ত জীবন- সারাক্ষণ বিবেকের দড়ি টানাটানি।
প্রতিদিন পা ফসকানোর প্রলোভন আর দিনগত পাপক্ষয়।
এই পাপক্ষয় করছিলাম ২০২১ সালের জানুয়ারির এক শীতের দুপুরে। করোনা নিয়ে সেসময় লোকজনের ভয় ডর প্রায় নেই বললেই চলে। তারা তখন আসন্ন বিধানসভা ভোটের উত্তেজনায় গা সেঁকছে। সর্বগ্রাসী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে মাস চারেক বাকি।
শীতের দুপুরে রোগীর সংখ্যা কম। টুক টুক করে রোগী দেখছিলাম। হঠাত ছন্দ কাটল। একজন বয়স্ক মহিলা ঘস ঘস করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে খুপরিতে ঢুকলেন। সাথে সাথে একটা বিশ্রী গন্ধে গা গুলিয়ে উঠল। দরিদ্র মানুষ অনেকেই আসেন দেখাতে। কিন্তু তাঁদের পোষাক আশাক এতটা ময়লা হয় না। গায়েও এরকম মারাত্মক দুর্গন্ধ থাকে না। মহিলার মাথার চুলে জটা। সারা গায়ে দাদে ভর্তি। তেল চিটচিটে ময়লা মলিন শাড়ি। মহিলা মাথা চুলকেই চলেছেন। চুলকেই চলেছেন।
বেশ বিরক্তি লাগল। কিন্তু বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। বললাম, ‘বলুন কী হয়েছে?’
‘ডাক্তার, বাবা আমার… চুলকানিটা ঠিক করে দাও। চুলকাতে চুলকাতে মাথার ছাল চামড়া উঠে যাচ্ছে। এই দেখো…’
রেগে মেগে বললাম, ‘এই বীভৎস অবস্থা করলেন কী করে? একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, পরিষ্কার কাপড় পরলে তো এমন হয় না।’
বয়স্ক মহিলা হঠাৎ গেয়ে উঠলেন,                                                                     “এই মলিন বস্ত্র ছাড়তে হবে, হবে গো এইবার-
আমার এই মলিন অহঙ্কার ।।
দিনের কাজে ধুলা লাগি অনেক দাগে হল দাগি,
এমনি তপ্ত হয়ে আছে সহ্য করা ভার
আমার এই মলিন অহঙ্কার ।।”
ডাক্তার আর অসুর ক্রমশ সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে। কদিন আগেই বিখ্যাত এক নাট্য ব্যক্তিত্বের মৃত্যু হয়েছে। তিনি মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া তাঁর ইচ্ছাপত্রে ডাক্তারদের ঘুরিয়ে অসুর বলে গেছেন। সুর বোধহীন এই ঐন্দ্রিলাসুরের কানেও গানটা বেশ মিষ্টি লাগল।
বললাম, ‘অপূর্ব গাইলেন, চোখ বন্ধ করে শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল…’
মহিলা বেশ আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলেন, ‘কী মনে হচ্ছিল বাবা?’
বললাম, ‘যদিও আমি গানের কিছু বুঝিনা তবু আমার অনুভূতিটুকুর কথা বলতে পারি। মনে হচ্ছিল যেন সুচিত্রা মিত্র খালি গলায় গান করেছেন।‘
বয়স্ক মহিলা আন্তরিক খুশি হলেন। আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘তোমার গান শোনার কান বেশ ভালো বাবা। আমি শান্তিনিকেতনে ছিলাম পাঁচ বছর। ওনার পায়ের কাছে বসে কত গান শুনেছি, শিখেছি। তুমি তো ডাক্তার বাবা, তুমি কেন রোগীর বাহ্যিক আবরণ দেখবে। তুমি রোগীর একেবারে অন্তর পর্যন্ত দেখবে।’
প্রতিবাদ করা যেতো। তাহলেতো কাউকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা যাবে না। কাউকে নখ কাটতে বলা যাবে না। কিছু বললাম না। মহিলা মাথায় হাত রাখায় আমি মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। এতক্ষণ ঐ হাত দিয়ে তিনি মনের সুখে মাথা চুলকাচ্ছিলেন। জটার নীচে মাথার তালুতে জায়গায় জায়গায় ঘা স্পষ্ট চোখে পড়ছে। বাজি রেখে বলতে পারি ঐ চুলের মধ্যে কয়েক হাজার উকুন রয়েছে।
বললাম, ‘আপনি মাথার ঘা, চুলকানি নিয়ে আমাকে দেখাতে এসেছেন কেন? এগুলো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হয়। আপনি সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ অথবা এন আর এসে গিয়ে চামড়ার ডাক্তার দেখান। ’
মহিলা ক্ষুব্ধ গলায় বললেন, ‘এই ঘা নিয়ে কোথায় ছুটোছুটি করব। সামান্য একটা ঘা সারাতে পারো না, কিসের ডাক্তার হয়েছো? আর তাছাড়া সরকারি হাসপাতালে যাবই বা কেন? আমার কি সামর্থ্য নেই। আমার মেয়ে জার্মানিতে থাকে, ছেলে অস্ট্রেলিয়ায়। দেখালে বেস্ট ডাক্টরই দেখাব।‘
বুঝলাম এনার সাথে বেশি কথা বলে লাভ নেই। বুঝিয়ে শুনিয়ে বিদায় জানানোই ভাল। একটা সাদা কাগজে দুটো ট্যাবলেট আর লাগানোর একটা ক্রিম লিখে বললাম, ‘যদি এতে না কমে তাহলে চামড়ার ডাক্তার দেখাবেন। আমাকে ভিজিট দিতে হবে না, ওকেই দেবেন। কাছাকাছি যদি দেখাতে হয় ডা. ইন্দ্রজিৎ দাসকে দেখান। দক্ষ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ।‘
কাগজের উল্টোদিকে ইন্দ্রজিতের চেম্বারের নাম, ঠিকানা লিখে দিলাম। ও মধ্যমগ্রাম স্কুলের পঞ্চম শ্রেণী থেকে মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস এর শেষ পর্যন্ত আমার সহপাঠী। চর্ম্ররোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে আনন্দে দিন কাটায়। কোনো এমারজেন্সি নেই। ও এই বয়স্ক মহিলাকে নিয়ে একটু ভুগুক।
মহিলা যাওয়ার সময় বলে গেলেন, ‘তোমায় আরেকদিন গান শোনাতে আসব। এই ঘাটা কমে যাক। না হলে চুলকানির ঠেলায় নিশ্চিন্তে গানও করা যাচ্ছে না।‘
দুদিন পরে সকাল ছটায় চায়ের জল বসিয়ে দাঁত মাজছি। সাড়ে ছটার মধ্যে গৌরের চেম্বারে ঢুকতে হবে। এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল। ফোন ধরতেই এক মহিলা কণ্ঠ বললেন, “হ্যালো, আপনি কি ডক্টর ভৌমিক বলছেন?’
-হ্যাঁ, বলুন।
-আমি জার্মানি থেকে বলছি। গতকাল আমার মা আপনাকে দেখাতে গিয়েছিলেন। ওনার সম্পর্কে কিছু জানার আছে।
-দেখুন, এভাবে তো বলা সম্ভব নয়। রোজ অসংখ্য রোগী দেখি। প্রত্যেকের সম্পর্কে আলাদা করে মনে রেখে দেওয়া অসম্ভব।
-ডাক্তারবাবু, একটু মনে করে দেখুন। আমার মায়ের মানসিক সমস্যা আছে। নিজের প্রতি কোনো যত্ন নেন না। স্নান করেন না, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন না।
-আচ্ছা, আপনার মা কি শান্তিনিকেতনে পড়াশুনো করেছেন। উনি কি সুচিত্রা মিত্রের কাছে গান শিখেছেন?
-হ্যাঁ, এই তো আপনি মনে করতে পেরেছেন।
-এরকম পেশেন্ট খুব বেশি আসেন না বলেই মনে আছে। ওনার গানের গলাও অসাধারণ। আমাকে একটা গোটা গান গেয়ে শুনিয়েছেন।
-অথচ আমরা বারবার অনুরোধ করলেও কিছুতেই গান না।
-বলুন আপনি কী জানতে চান? তবে উনি কিন্তু কাল নয়, গত পরশু আমার কাছে এসেছিলেন।
-গত পরশু? তাই হবে তাহলে। সমস্যা হচ্ছে উনি আপনার চেম্বার থেকে আর বাড়ি ফেরেন নি।
-সেকি?
-আরো সমস্যা হচ্ছে মা আর বাবা ওখানে একাই থাকেন। আমাদের আত্মীয় স্বজনও খুব বেশি নেই। বাবারও বয়স হয়েছে। শরীর ভালো নয়। উনি কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। বারবার ফোন করছেন। আচ্ছা, আপনি কি কোনো ইনফরমেশন দিতে পারেন? মানে উনি কোথায় যেতে পারেন?
-আমি… মানে আমি কী করে আলোকপাত করব? সেইদিনই ওনাকে প্রথম দেখেছি। ওনার চর্ম রোগ ছিল, সে জন্য এক চামড়ার ডাক্তারের কাছে যেতে বলে ছিলাম।
-দেখুন, আমরা ভীষণ টেনশনে আছি। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভাইও দেশে থাকে না, অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। কী যে করব? বাবা ফোনে কান্নাকাটি করছেন। কিন্তু এসময় হঠাত করে দেশে ফেরা প্রায় অসম্ভব। মহিলা ফোনের ওপারে কাঁদতে শুরু করলেন।
এদিকে সকাল সাড়ে ছটা বেজে গেছে। রোগীরা এই শীতের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। সময় মতো চেম্বারে না গেলে ঝামেলা শুরু হবে। বললাম, ‘আমি কোনো খবর পেলেই জানাবো। তবে মনে হয় এভাবে খোঁজ না করে আপনাদের পুলিশে খবর দেওয়া উচিৎ।‘
‘হ্যাঁ, ইতি মধ্যেই হাই কমিশন মারফৎ খবর দেওয়া হয়েছে। ঠিক আছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সারাদিন রোগী দেখতে দেখতে বয়স্ক মহিলার কথা ভুলেই গেছিলাম। রাতে অস্ট্রেলিয়া থেকে মহিলার ছেলের ফোন পেলাম।
ভাইটি মোটেও তাঁর দিদির মতো ভদ্র নন। তিনি সরাসরি বললেন, ‘আপনার চেম্বার থেকে একটা জলজ্যান্ত মানুষ হারিয়ে গেলেন, আর আপনি বলতে পারছেন না, তিনি কোথায় গেলেন?’
আমি বললাম, ‘কী আশ্চর্য, আমি কী করে জানব উনি কোথায় গেছেন। আমার কাছে রোজ কতো রোগী দেখাতে আসেন। তাঁরা দেখিয়ে কোথায় যাচ্ছেন সেটা কি আমার পক্ষে জানা সম্ভব?’
ভদ্রলোক সন্তুষ্ট হলেন না। বললেন, ‘আপনি ডাক্তার, আপনার তো দেখেই বোঝা উচিৎ ছিল উনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন। সেক্ষেত্রে আপনার একটা আলাদা দায়িত্ব থাকে। আপনার উচিৎ ছিল মাকে ওখানে আটকে রেখে বাড়িতে একটা খবর দেওয়া।‘
আমি হেসে বললাম, ‘বাড়ির লোকজন মানসিক সমস্যা আছে জেনেও একা ছেড়ে দিতে পারে, সেটাতে কোনো সমস্যা নেই। আর তাঁর কিছু হলেই যত দোষ ডাক্তারের?’
ভদ্রলোক সরাসরি হুমকিতে চলে গেলেন, ‘আপনি জানেন না আমার হাত কতো লম্বা। বহু উপর মহলের লোকজনের সাথে আমার চেনা জানা আছে। আপনার আনএথিক্যাল ডাক্তারি ব্যাবসার আমি বারোটা বাজিয়ে দেব।‘
সারাদিন রোগী দেখে ঝগড়া করার মতো উৎসাহ অবশিষ্ট ছিল না। বললাম, ‘তাই করুন তাহলে।‘ বলে ফোন কেটে দিলাম।
পরেরদিন বাড়ির চেম্বারে স্থানীয় থানার এক পুলিশ অফিসার এসে হাজির। এই অফিসারের সুগার আছে, আমাকেই দেখান। তিনি বললেন, ‘আজ কিন্তু রোগী হিসাবে আসিনি। তদন্তে এসেছি।’ তারপর একটি ছবি বার করে আমাকে দেখিয়ে জিগ্যেস করলেন, ‘দেখুনতো ডাক্তারবাবু, এই ভদ্রমহিলা আপনার এখানে এসেছিলেন কিনা? এর পরিবারের দাবি উনি আপনাকে দেখাতে এসে নিখোঁজ হয়ে গেছেন।‘
আমি বললাম, ‘ছবিটা সম্ভবত বছর দশেক আগেকার। যিনি এসেছিলেন তাঁর সাথে ওই ছবির প্রায় কিছুই মিল নেই।‘ তারপর অফিসারকে সব খুলে বললাম। ওনার ছেলের হুমকি ফোনের কথাও।
অফিসার শুনেটুনে বললেন, ‘এদেরই বলে কুলাঙ্গার ছেলে। বিদেশ থেকে ফোন করে আপনাকে গালাগালি করে বাবা মায়ের প্রতি দরদ দেখাচ্ছে। অথচ বাবা মা যে কী অবস্থায় রয়েছে সে খবরও নেয় না। এক্ষুণি ওনাদের ঘর থেকে ঘুরে এলাম। একটা বুড়ো মানুষ অসহায় ভাবে বসে আছেন। শুনলাম, একজন ১২ ঘন্টার আয়া আছে দুজনের জন্য। সেও নাকি চারদিন আসছে না। ভদ্রলোক কী খাচ্ছেন, কী ভাবে থাকছেন কে জানে। আর সারা ঘরে কী বিশ্রী গন্ধ। অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসার অবস্থা। ভদ্রলোককে আমার মানসিক ভাবে সম্পূর্ন সুস্থ্য বলেও মনে হল না। যাকগে মন খারাপ করবেন না ডাক্তারবাবু। আপনারা আর কী গালাগালি খান। আমাদের জায়গায় থাকলে একদিনেই দুচ্ছাই বলে চাকরি ছেড়ে দিতেন।’
পরেরদিন বাড়ির চেম্বারের সময় বয়স্ক ভদ্রমহিলার স্বামী এসে হাজির। তাঁর এক হাঁটুতে ব্যাথা। লাঠি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটেন। ভদ্রলোক এসে বললেন, আপনার সাথে দুচারটে কথা আছে। যদি পাঁচটা মিনিট সময় দেন।
বাইরে রোগীরা অপেক্ষা করতে করতে ধৈর্য্য হারাচ্ছে। ভাবলাম এতো ভালো ঝামেলায় ফেঁসে গেলাম। রোজ রোজ একই জিনিস নিয়ে চর্বিত চর্বণ চলছে। তাছাড়া ওনার ছেলে যা ব্যবহার করেছে, তাতে ওনাদের কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তেতো মুখ করে বয়স্ক ভদ্রলোককে বললাম, ‘বলুন।’
এনার গায়ের গন্ধও সুবিধার নয়। ইনিও যে নিজের প্রতি কোনো যত্ন নেননা, তা তাঁর ময়লা জমা দীর্ঘ নখ, এবড়ো খেবড়ো দাড়ি, আর নোঙরা জামাকাপড় দেখেই বোঝা যায়।
ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি যে কী মানসিক অবস্থার মধ্যে আছি, সম্ভবত আমাকে দেখেই বুঝতে পারছেন। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। আপনাকে সম্ভবত আমার ছেলে মেয়েরা ফোন করবে। ওদের একটু আমার অবস্থার কথা বলবেন। যদি সম্ভব হয় ওদের একবার দেশে আসতে বলবেন।‘
বললাম, ‘শুনতে চাইলে অবশ্যই শুনব। কিন্তু আপনার ছেলে তো শোনাতেই ব্যস্ত। আমাকে বলেছে আমার ডাক্তারি বন্ধ করার ব্যবস্থা করবে।’
বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি ছেলের হয়ে ক্ষমা চাইছি। আসলে ও ছোটো বেলা থেকেই মাথা গরম প্রকৃতির। নিজের ছেলে হলেও বলতে লজ্জা নেই, নিজেরটা ছাড়া ও আর কোনো কথা ভাবে না। তবুওতো নিজের ছেলে ডাক্তারবাবু। ওই ছেলেকে দেখার জন্যও মনটা খারাপ হয়। সেই ২০১৮ সালে ছেলে মেয়েকে শেষবার দেখেছি। শরীরের যা অবস্থা, আর মহামারি নিয়ে যা শুরু হয়েছে, জানিনা এ জন্মে ছেলে মেয়েদের সাথে আর দেখা হবে কিনা।’
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তিনি বললেন, ‘আমি গেলাম ডাক্তারবাবু। আপনি রাগ করবেন না। আসলে হঠাৎ করে এই বিপদ আসায় কারোরই মাথার ঠিক নেই।’
তারপর তিন দিন কেটে গেছে। নিরুদ্দেশ মহিলার মেয়ে রোজ সকালে ফোন করেন। কান্না কাটি করেন। ছেলে আর ফোন করেননি। সম্ভবত তিনি আমার ডাক্তারি ব্যবসা বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যস্ত।
তিনদিন বাদে দুপুরের চেম্বারে পুলিশ অফিসার এসে হাজির। উৎফুল্ল গলায় বললেন, ‘পাওয়া গেছে ডাক্তারবাবু। একে বারে সুস্থ এবং অক্ষত অবস্থায় ওই মহিলাকে খুঁজে পাওয়া গেছে।‘
‘কোথায় ছিলেন এতোদিন? কোনো আত্মীয়ের বাড়ি?’
‘আচ্ছা ডাক্তারবাবু, আপনি ব্লুনতো ওনাকে কোথায় পাওয়া গেছে?’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘আমি কী করে বলব?’
‘একটু চিন্তা ভাবনা করলেই বলতে পারবেন। আচ্ছা, আমি তিনটে সূত্র দিচ্ছি। প্রথম সুত্র, আপনাকে দেখিয়ে উনি আর বাড়ি ফেরেননি। অথচ সবাই জেনে গেল আপনার এখানেই ওনাকে শেষ দেখা গেছে।‘
বললাম, ‘হয়তো উনি বাড়িতে বলেই বেড়িয়েছিলেন আমাকে দেখাতে আসছেন।’
দ্বিতীয় সূত্র, আপনি ওনাকে প্রেশক্রিপশন দেননি। উনিও বাড়ি ফেরেননি। অথচ সবাই আপনার ফোন নাম্বার পেয়ে গেল।’
বললাম, ‘আমার ফোন নাম্বার জনগণের সম্পত্তি। আজকাল এতো আজেবাজে ফোন আসে, চেম্বারের সময় ফোন বন্ধ করে রাখি।
তৃতীয় সূত্র, ‘ওনাদের বাড়ির কাজের লোককে যেদিন উনি হারিয়ে গেলেন, ঠিক সেদিন থেকেই সাত দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ওই বয়স্ক মহিলাই ছুটি দিয়ে গেছেন। অথচ ওই কাজের লোক ছাড়া ওনাদের সংসার প্রায় অচল।‘
বললাম, ‘আর সাসপেন্সে রাখবেন না। বলে ফেলুন।‘
পুলিশ অফিসার বললেন, ‘উনি বাড়িতেই লুকিয়ে ছিলেন। আর ওই বয়স্ক ভদ্রলোক সব জানতেন। বস্তুত পুরো পরিকল্পনাটাই ওনার। আমার সন্দেহ হওয়ায় চেপে ধরেছিলাম। পুলিশি জেরার সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেন নি।‘
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কিন্তু কেন?’
পুলিশ অফিসার বললেন, ‘সেটা আপনি আমার থেকে ভালো বলবেন। মানুষের মন পুলিশের থেকে ডাক্তারবাবুর ভালো বোঝা উচিৎ।‘
অফিসারের সামনে স্বীকার করতে লজ্জা পেলাম, মানুষের মন বোঝা আমার মতো মধ্য মেধার ডাক্তারের পক্ষে অসম্ভব। আমাদের ডাক্তারি মানে থোড় বড়ি খাড়া।
PrevPreviousটুবানদের গল্প
Nextযৌবনের উপবনNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

ব্যঙ্গের নাম অগ্নিপথ (২)

July 4, 2022 No Comments

আগের দিন বয়সের কথা বলেছিলাম। এবার একটু অর্থনৈতিক বিষয়ের দিকে চোখ রাখা যাক। যা জানানো হয়েছে তাতে অগ্নিবীরেরা প্রথম বছরে পাবেন ৩০ হাজার টাকা প্রতি

ট্রাইকটিলোম্যানিয়া

July 4, 2022 No Comments

একটি সহজ বিষয় নিয়ে লিখবো। ধরা যাক- হঠাৎ রাস্তায় যেতে যেতে আপনি দেখলেন – একজন লোক প্রতিদিন বসে বসে নিজের চুল টেনে তুলছে! যখন যেখানে

ডা বিধান চন্দ্র রায়ের প্রতি এক জনস্বাস্থ্যকর্মীর শ্রদ্ধার্ঘ্য

July 4, 2022 No Comments

এক পাঠক বন্ধু ডা: বিধান চন্দ্র রায়কে নিয়ে লিখতে অনুরোধ করেছেন। তাই এই লেখা। এই লেখা রাজনীতিবিদ বিধানচন্দ্রকে নিয়ে নয়, এই লেখা প্রশাসক বিধানচন্দ্রকে নিয়ে

ডক্টরস’ ডে-তে কিছু ভাবনা-চিন্তা

July 3, 2022 No Comments

আজ ডক্টর্স ডে। ডাক্তারদের নিয়ে ভালো ভালো কথা বলার দিন। ডাক্তারবাবুদেরও নিজেদের মহান ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভের দিন। দুটিই বাড়াবাড়ি এবং ভ্রান্ত। কেননা, স্রেফ একটি বিশেষ

কেন? প্রথমাংশ: ছ’তলার রহস্য

July 3, 2022 No Comments

~এক~ হাতের বইটা নামিয়ে রেখে মিহির গুপ্ত দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকালেন। পৌনে একটা। ঘরে একটাই রিডিং ল্যাম্পের আলো। নিভিয়ে দিলেন। বাইরে ঝিমঝিমে অন্ধকার। শহর হলে

সাম্প্রতিক পোস্ট

ব্যঙ্গের নাম অগ্নিপথ (২)

Dr. Swastisobhan Choudhury July 4, 2022

ট্রাইকটিলোম্যানিয়া

Smaran Mazumder July 4, 2022

ডা বিধান চন্দ্র রায়ের প্রতি এক জনস্বাস্থ্যকর্মীর শ্রদ্ধার্ঘ্য

Dr. Samudra Sengupta July 4, 2022

ডক্টরস’ ডে-তে কিছু ভাবনা-চিন্তা

Dr. Bishan Basu July 3, 2022

কেন? প্রথমাংশ: ছ’তলার রহস্য

Dr. Aniruddha Deb July 3, 2022

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

399751
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।