দ্রুত বদলে যাওয়া চিত্রপট…
রকেটের গতিতে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। গোটা দেশেই। আমাদের রাজ্যে এই গতি দেশের অন্যান্য রাজ্যের থেকে অনেকটাই বেশি। মহারাষ্ট্রের পরে আমরা দ্বিতীয় স্থানে। বাঁধন ছাড়া উৎসব পেরিয়ে, পাঁচ সাত দিনের মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ১৫ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। সরকারি তথ্যে রাজ্যের পজিটিভিটি রেট প্রায় ২৫ শতাংশ। কলকাতার ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। যদিও এই তথ্য হিমশৈলের চূড়া মাত্র। বহু মানুষ টেস্ট করাচ্ছেন না বা করাতে পারছেন না। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতালগুলোর পরীক্ষা কেন্দ্রে উপচে পড়ছে ভিড়। টেস্টের দৈনিক সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও ৫০ থেকে ৬০ হাজারেই আটকে আছে। যদিও প্রয়োজন বহুগুণ। প্রয়োজন কন্টাক্ট ট্রেসিং, মোবাইল টেস্টিং পরিষেবা। কন্টেনমেন্ট এরিয়ার মানুষের বাড়িবাড়ি সার্ভে এবং পরীক্ষা। উৎসবে ব্যস্ত থাকায় রাজ্যের মাথাতে এসব ছিল বলে মনে হয় না। এখনতো আবার ভোট, গঙ্গাসাগর মেলার বিপুল কর্মযজ্ঞ। অবশ্য রাজ্য ভালো আছে বার্তা দিতে টেস্টের সংখ্যা না বাড়ানো পুরোনো কৌশল।
পশ্চিমী দেশগুলোতে বেশ কিছুদিন আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে তৃতীয় তরঙ্গের ভয়াবহ আক্রমণ। ছাপিয়ে যাচ্ছে প্রথম, দ্বিতীয় তরঙ্গের ক্ষয়ক্ষতি। উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে দেশে দেশে। সতর্ক হওয়ার পরিবর্তে, নিয়ন্ত্রণহীন বর্ষশেষের, বর্ষবরণের উৎসব এবং ভোটের অনিয়ন্ত্রিত,উশৃঙ্খল জমায়েত, হুল্লোড় দেখে আতঙ্কিত চিকিৎসক সমাজ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বিপদ প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে যেতে পারে। কিন্তু অতিমারীর শুরু থেকেই রাজ্যের চলার পথ ভিন্ন। প্রথম এবং দ্বিতীয় তরঙ্গে, মৃত্যুর সংখ্যায় কোমর্বিডিটি তত্ত্ব, সংক্রমণের তথ্যে কারচুপি এবং জাগলারি পেরিয়ে, জানা নেই তৃতীয় তরঙ্গেও একই দুরভিসন্ধি কাজ করবে কিনা। একই পথে রাজ্য প্রশাসন আর চলবে না, এইটুকু বৈজ্ঞানিক শুভবুদ্ধি কাজ করবে, বঙ্গবাসীর সামান্য সেইটুকু আশা। কলকাতার মহানাগরিককে বলতে শোনা গেছে “সবারই একটু ঠান্ডা কাশি হচ্ছে, টেস্ট করলে কারো কারো করোনা ধরা পড়ছে, তবে এটা ফ্লু না করোনার প্রকোপ এখনই বলা সম্ভব নয়”।
এবারের মিছিলে বাদ নেই কেউ। বিনোদন জগৎ। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী। জন প্রতিনিধি। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। পুলিশ। পৌরকর্মী। সবচেয়ে চিন্তার ব্যাপার সামনের সারির সৈনিকদের সংক্রমণের হার। একের পর এক হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, জুনিয়র ডাক্তারদের বড় অংশ ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হয়ে গেছেন। পরিস্থিতি যা, চিকিৎসা পরিষেবা সামনের দিনে বজায় রাখা যাবে কিনা যাবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কয়েকটি হাসপাতাল এখনই পরিষেবা কমিয়ে দিয়েছে। বেশ কয়েকটি হাসপাতালের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রাইভেট/কর্পোরেট হাসপাতালগুলোর অবস্থাও একই রকম। আশ্চর্যের বিষয় সৈনিকদের পরিকল্পিত ভাবে কাজে লাগানোর কোন রূপরেখা নেই। সমস্ত সৈনিককে একসাথে যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো রিজার্ভ বেঞ্চ নেই। দীর্ঘ লড়াইয়ে ক্লান্ত, অবসন্ন, অসুস্থ সৈনিকরা কতদিন লড়াই চালাতে পারবে সেই প্রশ্নই সামনে আসছে।
আর এই রকম একটা পরিস্থিতিতেও ভোট, ধর্মীয় মেলা নিয়ে রাজ্যবাসীকে আদালতে যেতে হয়েছে। রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল আদালতকে জানিয়েছেন যারা মেলায় আসবে তাদের টিকা নেওয়া থাকবে। যেন টিকা নেওয়া থাকলে কোভিড হচ্ছে না। তিনি জানিয়েছেন, সবাই যাতে কোভিড প্রটোকল মেনে চলে সেটা দেখবে সরকার। অবশ্য সাম্প্রতিক ভোট ও উৎসবে প্রটোকল মেনে চলার ছবি আদালতকে দেননি। এডভোকেট জেনারেল আরও বলেছেন এই করোনার মারণ ক্ষমতা কম, তাই অসুবিধা হবে না। যেন কম মরলে ক্ষতি নেই। তবু বুঝতে হবে, যে তড়িৎগতিতে মানুষ সংক্রামিত হচ্ছেন, তার এক শতাংশও যদি জটিল আকার ধারণ করে, তবে সমাজ দিশেহারা হয়ে পড়বে। মনে রাখতে হবে, এখনো রোজই বেশ কিছু সহনাগরিক আমাদের ছেড়ে বিদায় নিচ্ছে। সবচেয়ে বড় (!!) যে বিষয়টি আমরা জানতে পারলাম হলফনামায়, সেটা হলো “নোনা জ্বলে করোনা ছড়ায় না”। লক্ষ লক্ষ মানুষ, শহর দাপিয়ে, বাস, ট্রেন বোঝাই করে মেলায় সামিল হলে, তাদের টিকা নেওয়া আছে কিনা কে দেখবে? তারা কোভিড বিধি মানছে কিনা দেখার জন্যে যথেষ্ট পুলিশ মজুদ আছে তো? থাকলেও তাদেরকে বিপদে ফেলে দেওয়া কেন? পাড়ায় পাড়ায় হুল্লোড়, জলসা, মিটিং,মিছিলে যাঁরা বিধি মানাতে পারেন না, তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করবেন কয়েক লক্ষের জমায়েত। আসলে সরকারের কাছে মানুষের প্রাণের চেয়েও অন্য কিছু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে হয়।
তৃতীয় তরঙ্গের ভয়াবহতা নতুন নয়। বিজ্ঞানের শিক্ষা অতিমারীর তৃতীয় তরঙ্গই সবচেয়ে ভয়াবহ আকার নেয়। একশো বছর আগের স্প্যানিশ ফ্লুর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে ছিল তৃতীয় তরঙ্গে। কিন্তু জনসমর্থনের প্রাবল্যে সরকার বোধহয় ভেবেছিল ওসব তৃতীয় তরঙ্গ ফুৎকারে উড়ে যাবে।
নিয়ন্ত্রণের সরকারি আদেশনামায় বিভ্রান্ত আমজনতা।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার সাম্প্রতিক যে সমস্ত বিধি নিষেধ জারি করেছে তার সঙ্গে বিজ্ঞানের খুব একটা যোগাযোগ আছে বলে মনে হয়না। রেস্তোরাঁ, পানশালায় যাওয়া যাবে কিন্তু খোলা মাঠ, উন্মুক্ত সতেজ পার্ক বন্ধ থাকবে। অধিক রাতের মানুষের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ দেখে মনে হয়, করোনা রাতেই হানা দেয় বেশি। বাতানুকুল,বদ্ধ ঘর কোভিড সংক্রমণের আদর্শ জায়গা বলেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। তাই প্রশ্ন উঠবেই খোলা মাঠ, উন্মুক্ত পার্ক বন্ধ থাকবে আর পানশালা খোলা থাকবে? সরকারের জানে কোন রেস্তোরাঁয় কত মানুষ বসতে পারে? থাকলেও ৫০ শতাংশের হিসেব রাখবে কে? ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দিলে ভিড় যে আরও বাড়বে, জীবন জীবিকা বাঁচাতে মানুষ বাধ্য হবে বাদুড় ঝোলা হতে, এটা সরকারকে কে বোঝাবে? প্রশাসনের ভাবনায় যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই বোঝা যায় যখন চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আদেশনামা পাল্টে যায়। একই ঘটনা আমরা দেখতে পাই সরকারের চিকিৎসা প্রটোকলে। যেখানে স্থান দেওয়া হয়েছিল মলনুপিরভীর আর এন্টিবডি ককটেলকে।
এই দুটি ওষুধকে জরুরি ছাড়পত্র দেওয়া হলেও, মুড়ি মুড়কির মত ব্যবহার করা যায় না । মলনুপিরাভীরের যেমন গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে তেমনি বিশেষ করে যাঁরা টিকা নেয়নি তাঁদের কিয়দংশের মধ্যেই ব্যবহার করা গেলেও ফলাফল অনেকটাই অজানা । অন্যদিকে ককটেল থেরাপির খরচ প্রায় ৬০ হাজার টাকা। কতজন মানুষ পারবে? সরকারি হাসপাতালে এই ওষুধ পাওয়া যাবে তো? নাকি ওষুধ ব্যবসায়ী এবং কালোবাজারির নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রবল প্রতিবাদে সরকার বাধ্য হয়েছে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে। তবে কোনো ভাবনা চিন্তার পরিসর না রেখে আবারোও পূর্ণ কোপ পড়েছে স্কুল কলেজে। একটা প্রজন্মের পড়াশুনা, মনের বিকাশ সরকারের কোনো ভাবনায় আছে বলে মনে হয়না।
চিকিৎসা পরিকাঠামো প্রস্তুত আছে তো..
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন কয়েকদিন বাদে, রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণ ৪০হাজার ছুঁয়ে ফেলবে। কোনো কোনো চিকিৎসক বলছেন এক লাখ হলেও আশ্চর্য হবেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন এই তরঙ্গে কম হলেও হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না এবং দ্রুত উপচে পড়বে সব হাসপাতাল। আমাদের রাজ্যের সংক্রমিত মানুষের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশেরও যদি ভর্তির প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের রাজ্যের যা ব্যবস্থা আছে তাতে সামলানো যাবে কিনা এই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। উৎসব, ভোট নিয়ে ব্যস্ত প্রশাসন করোনার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল বলেই মনে হয়। নাহলে মাস খানেক আগে প্রাইভেট হাসপাতালের অধিগৃহিত কোভিড বেড ছেড়ে দেওয়া হয়? বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালের কোভিড চিকিৎসা বন্ধ করে বলা হয় শুধু নন কোভিড চিকিৎসা হবে। এমনকি রাজ্যের “স্টেট অফ দা আর্ট ” কোভিড হাসপাতালকে নন কোভিড চিকিৎসার জন্যে খুলে দেওয়ার দু দিন পরেই তাকে আবার কোভিড হাসপাতাল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। খাতায় কলমে ১৯৫ টি কোভিড হাসপাতাল থাকলেও কার্যত বহু হাসপাতালেই কোভিড বেড এই মুহূর্তে চালু অবস্থায় নেই। সরকারি ঘোষণা হলেই চালু হয়ে যাবে সেটাও বাস্তব নয়। বিশেষ করে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড। কিছু সময় প্রতিটি হাসপাতালকে দিতেই হবে। অন্যদিকে বিরাট অংশের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হয়ে গেছেন। ফলে ঘোষণা করলেই কোভিড বেড চালু হয়ে যাবে এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে দ্বিতীয় তরঙ্গে অক্সিজেনের হাহাকার আমরা দেখেছি। একটা নল থেকে অনেকের শ্বাস নেওয়ার হৃদয় বিদারক ঘটনাও ঘটেছে। সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখতে না চাওয়া মানুষ জানতে চায় পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুদ আছে কিনা। সর্বোচ্চ প্রশাসনের সাম্প্রতিক প্রেস মিটে তেমন আশ্বাস কিছু পাওয়া যায়নি। তাই পুরোনো স্মৃতি ফিরে আসার আতঙ্ক বাড়ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার কাঁধে করে, দিনরাতের ফারাক মুছে, সহ নাগরিকের পাশে দাঁড়াতে, ছোট ছেলেমেয়ে গুলোকে আবার হয়তো দৌড়তে হবে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। নানা সংগঠন তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী, আবার টেলিমেডিসিন পরিষেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও,তাদের ক্ষমতা কতটুকু? অনেক সীমাবদ্ধতাও আছে। সরকারি টেলিমেডিসিন পরিষেবা পুরোপুরি চালু হয়নি। এই বিপুল সংখ্যক রুগী কিভাবে চিকিৎসা পাবে? কন্ট্রোলরুমগুলো সক্রিয় না হলে, বেড পেতে, ভর্তি হতে মানুষের একবার দিশেহারা হওয়ার সময় আসছে না তো? কোভিড এম্বুলেন্স এর অভাবে, প্রাইভেট এম্বুলেন্স লুটেপুটে নিয়েছিল গত বছর। সরকারি ঘোষণায়, রোগটা দ্রুত ছড়ায় জানা গেছে, কিন্তু জানা যায়নি পর্যাপ্ত ডেডিকেটেড কোভিড এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা আছে কিনা। ফলে গভীর হচ্ছে আতঙ্ক।
কিছু কাজের কথা….
এই আতঙ্কের পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। দেশে দেশে দিনরাত এক করে নানা গবেষণা সত্বেও করোনা ভাইরাস সম্মন্ধে আমাদের এখনো অনেক কিছু জানতে বাকি আছে। সাধারণ ভাবে যা ঘটে চলেছে সেটা বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই। শুধু এই তৃতীয় তরঙ্গ নয়, আরও দু একটা তরঙ্গ ভবিষ্যতে আমাদের দেখতে হবে। যে কোনো অতিমারীর এটাই বিজ্ঞান। একশো বছর আগের স্প্যানিশ ফ্লুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। ভাইরাস নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে তার রঙ, রূপ পরিবর্তন করবেই। প্রথম এবং দ্বিতীয় যুদ্ধে যে সমস্ত মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা চলছিল, পরবর্তীতে দেখা যায় সেগুলো বিরাট কোনো কাজে আসছে না। এমনকি যে ওষুধগুলোর জন্যে, কালোবাজারের খপ্পরে পড়ে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়েছে বা পাগলের মত দৌড়ে বেরিয়েছে সেই রেমডেসিভির এবং টোসিলিজুম্যাবও অব্যর্থ ওষুধ বলা যাচ্ছে না। ফলে সতর্ক থাকতে হবে আবার আমরা যেন নানা রকম কম্বো প্যাকের খপ্পরে না পড়ি। গণমাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালে ককটেল থেরাপির বিজ্ঞাপন চলছে। মলনুপিরাভীরের ট্রায়াল হয়েছে মূলত যাদের টিকাকরণ হয়নি তাদের মধ্যে। তাও মাত্র ৩০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গিয়েছে। যাদের টিকাকরণ হয়ে গেছে তাদের এই মেডিসিন না খাওয়াই ভালো। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও যথেষ্ট। ককটেল থেরাপি যেমন সাধারণের আয়ত্বের বাইরে,তেমনই কার্যকারিতা নিয়েও সব প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। বর্তমানে যে সংক্রমণ হচ্ছে তাতে মূলত উপসর্গ অনুযায়ী কিছু সাধারণ মেডিসিন, প্রচুর পরিমাণ জল, স্বাভাবিক খাওয়া, সম্ভব হলে কিছু ফলমূল ও প্রোটিন জাতীয় খাবারই যথেষ্ট। তবে চার পাঁচ দিন পরেও মাথা যন্ত্রণা, জ্বর চলতে থাকলে বা শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দ্বিতীয় তরঙ্গে বহু মানুষকে আমরা হারিয়েছি শুধু মাত্র দেরি করে হাসপাতালে আসার জন্যে। যখন এসেছেন তখন রক্তে বিপজ্জনক ভাবে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে। হাজারো চেষ্টাতেও অনেক ক্ষেত্রেই কিছু করা যায়নি। আতঙ্কিত হয়ে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ করা কাজের কিছু নয়। বরং অনুচিত। কালোবাজারিরা তাতে উৎসাহিত হবে। কৃত্রিম অভাব তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন সংগঠনের পরিচালিত সেফহোমে রাখলে অনেক বেশি মানুষ উপকৃত হবে। এই দুর্দিন পেরিয়ে যেতে সরকারের যুদ্ধকালীন তৎপরতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে দরকার প্রতিটি মানুষের দায়িত্বশীল ভূমিকা ও কড়া আত্ম অনুশাসন। কোভিড বিধি মানার প্রশ্নে উদাসীনতা দেখানোর চেয়ে আত্মঘাতী মূঢ়তা, এই সময়ে আর কিছু হতে পারে না।