এই পোস্টটা শেষ অবধি পড়লে না চমকে উপায় নেই।
যদিও শুরুতেই কিছু Medical terminology নিয়ে কচকচি আছে বিষয়টা বোঝার সুবিধার্থে।
….
সেদিনই সকালে ফোনে কথা হচ্ছিল একজনের সঙ্গে। মুডটা ততটা ভালো ছিলনা, সেটা সেই বন্ধু বুঝে ফেলে। বললাম, খুব বাজে একটা স্বপ্ন দুটো ইনস্টলমেন্টে দেখে একটু ঘেঁটে গেছি।
স্বপ্ন আবার কেউ ইনস্টলমেন্টে দেখে নাকি?
আমি তো দেখলাম। দেখলাম, আমার মাথাটা ফুটো হয়ে গেছে। সেই গর্তে আমার একটা আঙুল ঢুকে যাচ্ছে! প্রথম দফায় ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি ঘুম ভেঙে যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে ফুটোটা খুঁজতে থাকি। নেই দেখে আশ্বস্ত হই। ঘড়িতে তখন তিনটে বাজে। বাথরুম থেকে ঘুরে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়ি, তখন আবার ঐ একই দুঃস্বপ্নের বাকিটাও দেখি। ভয় পেয়ে আবার ধড়ফড় করে উঠে পড়ি। তখন মসজিদে ভোরের আজান দিচ্ছে। সেই থেকে জেগে বসে আছি। আর ঘুমোইনি।
……
নিজেরই একটা পুরোনো লেখা পড়ছিলাম। ‘Craniotomy done successfully.’
News paper-এ এই বয়ানটা দেখে চমকে উঠেছিলাম।
Cranium মানে মাথার খুলি, সবাই জানে।
এখন, যে অপারেশনের নামের পাশে ..otomy লেখা আছে, তার মানে বোঝায় ওপেন করা। যেমন Laparotomy. Laparos ল্যাটিন শব্দ, মানে পেট। ল্যাপারোটমি মানে তাহলে পেট খুলে ফেলে দেখা।
বলে রাখি, যে অপারেশনের নামের শেষে ..ectomy লেখা আছে, তার মানে সেটা কেটে বাদ দেওয়া। যেমন, Appendectomy, Hysterectomy ইত্যাদি। জরায়ুকে ল্যাটিন ভাষায় Hysteros বলে। ল্যাটিন হল ইংরেজি ভাষার সংস্কৃত মাইবাপ। কে না জানে!
যাকগে, Craniotomy নিয়ে বলছিলাম। তার মানে Cranium অর্থাৎ মাথার খুলিটা খুলে ফেলা বা ওপেন করা। এই বছর পঞ্চাশ আগেও, ডেলিভারি রোগীর পেটের বাচ্চা, খুব বড় মাথা, আটকে গেছে দীর্ঘক্ষণ, বাচ্চাটা মরেও গেছে, মা সংকটাপন্ন, তখন সিজার টিজারও খুব রিস্কি ছিল, সেই সব মূহুর্তে ঐ আটকে যাওয়া বাচ্চার মাথাটাকে ফুটো করে চূর্ণ করে সাঁড়াশি দিয়ে চেপে সংকুচিত করে দেওয়া হতো, প্রোসিডিওরটার পোশাকি নাম ছিল Craniotomy.
সেই অপারেশন এই শতাব্দীতে?
তাহলে জেলে যেতে হবে যে ডাক্তারকে।
পরে ডিটেলে পড়ে দেখলাম, আঘাত পেয়ে একজনের মাথার হাড় ঢুকে গেছে খুলির ভেতরে। সেই টুকরো হাড়টাকে Craniotomy করে বার করেছে ডাক্তাররা। সেই ঘটনাটা সংবাদপত্রের শিরোনামে ঠাঁই পেয়েছে।
…
এবারে মূল গল্পে আসছি।
দ্বিতীয় দফায় ঘুমিয়ে আমি আবার এটাই দেখতে থাকি। আমি তখন ঐ গর্তে আঙুল ঢুকিয়ে টের পাই মাথার হাড়ের একটা টুকরো একদম ভেতরে সেঁধিয়ে আছে। সেটাকে তখন তুলে ফেলবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেই টানাটানিতে ঘিলুটাও বেরিয়ে আসছে। ঠিক তখনই আবার ঘুম ভেঙে যায়, আর দেখি আমার হাতে ধরা আছে বালিশের পাশে রাখা ওর চুলের প্লাস্টিক ক্লিপটা।
এর ঠিক দুদিন পরেই চেম্বারে বসে আছি, এক মধ্যবয়সী মহিলা ঢুকলেন তাঁর মেয়ের রিপোর্ট হাতে নিয়ে। মেয়ের দীর্ঘদিন ইনফার্টিলিটি ছিল। চিকিৎসার পরে কনসিভ করেছে।
রিপোর্টটায় চোখ বুলোতে বুলোতে চমকে উঠি। ঠিক যেন স্বপ্নটাই সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
ব্রেনকে ল্যাটিন ভাষায় বলে Encephalon। ঐ জন্য ব্রেনের ইনফেকশনের নাম Encephalitis. স্ক্যান রিপোর্টে লিখেছে, পার্ট অব স্কাল তৈরি হয়নি। একটা ফুটো আছে। সেই ফুটো দিয়ে বেবির ব্রেনটা বেরিয়ে এসেছে। তার পোশাকি নাম Encephalocele. তার সাথে ব্লাড রিপোর্টে Down Syndrome positive.
একটা নিরীহ শিশু। অনেক শখে অনেক ধৈর্যে তার এই পৃথিবীতে আসার কথা ছিল!
…..
Post dedicated to Roopankar Sarkar .