-হ্যালো শুনছেন…..
-বাবা, আজকাল এও তোর পিছনে ঘোরে!! বান্ধবীরা খিল খিল করে হেসে উঠলে নিজেই বিরক্ত হয়ে মেয়েটি পিছন পানে তাকায়:-কি ব্যাপার, পিছু নিয়েছ কেন?
-কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে আপনি এটিএম থেকে টাকা তুলে বেরোবার সময় বড় ব্যাগ থেকে ছোট পার্স ফেলে দিয়েছিলেন রাস্তায়। আপনার এটিএম কার্ড, আই কার্ড রাস্তায় ছিল। সেটাই ফেরত দিতে…..
-কই, কই ইসস… আমি বুঝতেই পারি নি। দেখি, দেখি।
ছেলেটি পার্সটা ফেরত দিতেই…আর্টস ইংলিশ অনার্স। আপনি?
-ইলেকট্রিক্যাল ফাইনাল ইয়ার।
-একটু চা চলবে?
-চলতে পারে।
-কি রে আজকাল কি সবাইকেই এত সময় দিচ্ছিস নাকি? বন্ধুরা একটু শ্লেষ মিশিয়ে বললেও পাত্তা না দিয়ে মেয়েটি ছেলেটির সাথে কলেজ ক্যান্টিনে ঢোকে।
এ হেন হার্ট থ্রব এরকম চালচুলোহীন একটি বাউন্ডুলে ছেলের সাথে দেখে সবাই একটু অবাক। মেয়েটির মধ্যেও একটু করুণা মিশ্রিত চাহুনি ছেলেটির প্রতি।
“এত বড় উপকার সাথে ইলেকট্রিক্যাল ফাইনাল ইয়ার এটুকু করাই যায়, যদিও কম্পিউটার সাইন্স ও ল্যাপটপ নিয়ে ওর পিছন ঘুরে বেড়ায় একটু সঙ্গ পাবার আশায়। সে যাক।”
-পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে নেবেন। বড্ড কমন।
-মানে?
-আপনার এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড বলছিলাম।
-আপনি কি করে জানলেন?
-আপনার পরে আমি কাউন্টরে ঢুকি টাকা তুলতে। আপনার হাতের ভঙ্গিমা আর আপনার রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া আই কার্ড দেখে একটা আন্দাজ করলাম। আশা করি ঠিক গেস।
-অবাক আর বিরক্ত ভরা মুখ নিয়ে (সেই তথাকথিত ইমপ্রেস করার চেষ্টা…সুন্দরী মেয়ে দেখলেই..মেয়েটি মনে মনে ভাবে) বলুন দেখি?
-২০০০ আপনার জন্ম সাল।
-স্ট্রেঞ্জ!! এভাবে ধরা যায়!!
-অধিকাংশ মানুষই তার জন্ম সাল, অথবা চারটে এক, বা চারটে ৯৯৯৯ এরকম নতুবা ১২৩৪, ৪৩২১, এভাবে পিন সেট করে।
-তিন বারের বেশি এভাবে ট্রাই করলে কার্ড লক হয়ে যাবে, এটাই যা ভরসা।
-০ থেকে ৯ দশ টা সংখ্যা। স্বাভাবিক ভাবে প্রতি ১০০০০-এ পিন রিপিট হবে। তবে এটা ঠিক তিনটে সুযোগে লাগাতে না পারলে কার্ড ব্লক। তবে ভালো হ্যাকার হলে সাথে ল্যাপটপ থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব।
-আপনি কি হ্যাকার? আর এসব উদ্ভট চিন্তাভাবনা কেন মাথায়? লোকজন তো ব্যাংকেই টাকা রাখবে নাকি?
-সে তো রাখবেই। তবে জানেন তো এই সামনের ব্যাংকের ব্র্যাঞ্চ যদি এই মুহুর্তে কোনো বোম্ব ব্লাস্টে উড়ে যায় আপনি ইন্সুরেন্স মারফৎ খালি এক লাখ টাকা পাবেন, সে আপনার অ্যাকাউন্টে যত টাকা থাকুক।
-আপনি তো বেশ ইন্টারেস্টিং মানুষ। কাব্য সাহিত্যে বা গান মিউজিকেও কি এরকম ভাবে চিন্তা ভাবনা করেন?
-বড্ড একঘেয়ে লাগে, তাই অন্য রকম শুনি।
-কি রকম?
-একেবারে র গ্রাম বাংলার গান। বাজারে চলে না যেগুলো।
-সেগুলোই ওখান থেকে নিয়ে এসে নিজেদের মিউজিক লাগিয়ে ব্যান্ড? এটা কিন্তু বাজারে চলছে।
-না, তাও না। শুধু নিজের জন্য।
-গ্রামে বাড়ি আপনার? তাই বোধহয় এত টানে ফোক।
-হ্যাঁ, বাবা, আমি, দিদি ওদের গানের পর পর পিট সিগার, জোয়ান বয়েজ, বব ডিলান, ক্লিফ রিচার্ডস এগুলো শুনি। একটা মিল আছে জানেন।
-এসব গ্রামে কেউ শোনে!!!!
–বাবা গ্রামে থাকেন। শোনেন। অবসর নিয়েছেন। শিক্ষকতা করতেন। এরপর নিশ্চই শক্তি সুনীল থেকে শ্রীজাত জানতে চাইবেন। বিনয় মজুমদার, উৎপল বসু পড়ি।
একটা ছোট কাগজ ব্যাগ থেকে বের করে মেয়েটি ফোন নম্বর লিখে ছেলেটির দিকে দিয়ে ….আমার হোয়াটস অ্যাপ নম্বর। সচরাচর কেউ পায় না অনেক চেষ্টাতেও।
ছেলেটি পাঞ্জাবির পকেটে কাগজটি ঢুকিয়ে উঠে দাঁড়ায়: চলি। আপনি চ্যানেল পারফিউম ইউজ করেন, ফ্রেঞ্চ?
–এটাও!!! ছেলেটি ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে যেতেই মেয়েটির বান্ধবীরা ঘিরে ধরে মেয়েটিকে।
মেয়েটি লক্ষ্য করে ছেলেটি ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে ওই কাগজের চিরকুটটি ছিঁড়ে ফেলে আকাশে উড়িয়ে দিতে থাকে।
রাগে, অপমানে ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেলেও ব্যাগ তুলতেই দ্যাখে ওর জন্য একটা চিরকুট: “সবাই সুন্দরী মেয়ে দেখলেই প্রেম নিবেদন করে না, ভিড়ে হারিয়ে যায় না। ভালো থাকবেন।”
কি এক অমোঘ আকর্ষণ অনুভব করে মেয়েটি ছেলেটির উপর।
সবার সাথে কথা বলতে মন চায় না।
কলেজ জীবনে ছেলেটির দেখাও আর পায় না মেয়েটি।
কোনো সম্পর্কই তৈরি হয় না, কিন্তু মুহূর্তগুলো মনে কি গভীর ভাবে গেঁথে গেছে মেয়েটির মনে আজও।