চিকিৎসাব্যবস্থায় এমন কিছু বিষয় নিয়ে সব সময়েই তর্ক বিতর্ক লেগে থাকে, সে অর্থে তার হয়তো কোনো ঠিকঠাক উত্তর হয় না। সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা এরকমই। নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসব নাকি সিজারিয়ান সেকশন বা পেট কেটে সন্তানের জন্ম দেওয়া, কোনটা ভালো।
প্রথমে বলা দরকার এতে ভালো বা মন্দের কিছুই নেই। সন্তানের জন্ম দেওয়া একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কাজেই সন্তান স্বাভাবিকভাবে মায়ের শরীর থেকে বেরিয়ে আসবে এটাই কাম্য। আর এই পদ্ধতি সবচেয়ে নিরাপদও। আবার যদি কোনো মহিলার স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান প্রসবে কোনো সমস্যা থাকে বা পারিপার্শ্বিক অন্য কিছু অসুবিধা থাকে তাহলে অপারেশন করে সন্তান বের করে আনা হয়।
তবে একথাও ঠিক, স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান হওয়ার বেশ কিছু সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও দেখা দিতে পারে। সুবিধা হল, এতে খুব কম সময় হাসপাতালে ভরতি থাকতে হয়, মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে, সদ্যজাতের হাঁপানি, ফুড অ্যালার্জি বা দুধ থেকে সমস্যা দেখা দেওয়ার আশংকা কম থাকে এবং পরবর্তী সন্তানের জন্ম দেওয়াও অনেক নিরাপদ হয়।
তার মানে কোনো সমস্যাই হবে না এতটা ভেবে নেওয়াও ঠিক নয়। এক্ষেত্রেও বেশ কিছু অসুবিধা হতে পারে, অনেক সময়েই যা আগে থেকে আন্দাজই করা যায় না। যেমন, শিশুর অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে, শরীরে আঘাত লাগতে পারে, অথবা মায়ের ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স বা প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার সমস্যাও হতে পারে।
অন্যদিকে আজকাল যে পেট কেটে বা চলতি কথায় সিজার করে বাচ্চা বের করা হয় তার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন,
• অন্যদের কাছে তাঁর সন্তান হওয়ার সময় কষ্টের কথা শুনে অনেক মহিলা ঘাবড়ে যান। তারা ওই কষ্ট সহ্য করতে চান না বলে সিজার করতেই আগ্রহী হন।
• আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, সিজার করলে শরীরে বিশেষত পেলভিক ফ্লোরে সমস্যা কম হয়।
• অনেক সময় সন্তানের জন্ম দেওয়াটা নিজের পছন্দের ওপর নির্ভর করে। হতে পারে কদিন পরে স্বামী বাইরে চলে যাবেন, তাই আগেভাবে সন্তান প্রসব করানো দরকার। সে সময় প্রসব যন্ত্রণা ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন।
• আগের স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা দেখা দেওয়ার জন্যও অনেকে সিজার করা পছন্দ করেন। তবে এও ঠিক আগে সমস্যা হয়েছিল বলে পরেও হবে এমন ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
আবার স্বাভাবিক উপায়ে সন্তানের জন্ম দেওয়ার ভয়, ইংরাজিতে যাকে বলে টকোফোবিয়া বা ভ্যাজাইনাল পরীক্ষার ভয়েও অনেকে সিজার করা নিরাপদ মনে করেন।
সিজারিয়ান সেকশনেও কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। এক্ষেত্রে সুবিধা হল, মাকে দীর্ঘক্ষণ প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় না, আগে থেকে সময় ঠিক করে করা হয় বলে মানসিক প্রস্তুতি থাকে, পেলভিক ফ্লোরে আঘাত বা সন্তানের আঘাত লাগার সম্ভাবনা কম থাকে, মায়ের শরীরে এসটিডি ও অন্যান্য সংক্রমণ থাকলে তা শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার চান্সও কমে যায়।
যদিও কিছু সমস্যা এক্ষেত্রেও হতে পারে। খুব কম হলেও সংক্রমণের আশংকা থাকে, মূত্রথলিতে আঘাত লাগা, রক্তপাত, পায়ে ব্লাড ক্লট হওয়া, ওষুধে অ্যালার্জি বা অ্যানাস্থেশিয়ার জন্য সমস্যা হতে পারে। আর এমার্জেন্সি সিজারের ঝুঁকি, পরিকল্পনামাফিক সিজারের থেকে বেশি।
কাজেই আজকের দিনে কোনোটাকেই পুরোপুরি নিরাপদ ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্যক্তি বিশেষে পদ্ধতি আলাদা হবে। আবার কোনো পদ্ধতিই সাংঘাতিক বিপজ্জনক নয়। অনেক মা যেমন স্বাভাবিকভাবে সন্তানের জন্ম দিয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে সুস্থ শিশু নিয়ে আনন্দে আছেন, তেমনি সিজার করে বাচ্চা হওয়ার পরেও বহু মা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাদের শিশুও সুস্থ থাকে। একথা ঠিক, স্বাভাবিক পদ্ধতি অনেক বেশি নিরাপদ। যদিও আজকের দিনে সিজারের সংখ্যা বাড়ার কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই বেশি বয়সে সন্তান আসে আবার একটার বেশি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকে না, তাই কোনো ঝুকি নিতে চান না হবু মা, তার পরিবারের লোকজন ও ডাক্তারবাবুরাও। এই কারণেও আজকের দিনে প্রসবকালীন মা ও শিশুর মৃত্যুহার অনেক কমানো গেছে।
সবচেয়ে বড় কথা হল, সন্তান ও মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখা। আর সিজার করার বিষয়ে কোনো সংশয় বা প্রশ্ন থাকলে সব সময়ে তা খোলাখুলি ডাক্তারবাবুর সংঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া ভালো।
আমার সন্তান হবার সময় আট মাস অবধি নর্মাল হবে ধরে চলেছি। এখন কলকাতার বিশিষ্ট ডাক্তার দম্পতি স্বামী ,স্ত্রী মিলে তাই বলেছিলেন।।
লাস্ট USG পর, হটাৎ করে বললেন 7 দিন পরেই OT করতে হবে, আর 5দিন পর admit করে দাও।
এই ইনজেকশন তা রোজ করে নিয়ে এসো।
আমরাও তাই করলাম। সুস্থ বাচ্চা হলো।
শুধু কান মোড়ানো, হাত পায়ের পাতা মোড়ানো ছিল 5/7 দিন তারপর আস্তে আস্তে খুলে গেল।
যদিও লাস্ট USG রিপোর্ট একেবারে normal ছিল, আর OT পরেই আমার বা Doctor বাবু কোনো tour ও ছিল না।।
এই আচমকা তাড়াহুড়ো টা আজও আমি বুঝিনি।
আমাকে শুধু বলা হয়েছিল যে ওকে তাড়াতাড়ি সিজার করা টা দরকার হয়ে পড়েছে।
পরবর্তী কালে এই নিয়ে কথা উঠলে স্রী কে মজা করে বলি Sir এর LIC প্রিমিয়াম দেবার date চলে যাচ্ছিল তাই নর্মাল না করে সিজার করেছে ?.
যদিও পরবর্তী কালে আমি ওনার কাছে একাধিক বন্ধু দের পাঠিয়েছি তারা সবাই আজ সুস্থ সন্তানের পিতা।।
সব লেখাই ভালো লাগছে।