মহান নভেম্বর বিপ্লব নিয়ে লেখা জন রিড এর সেই বিখ্যাত বই “দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন” আবার নতুন করে পড়তে গিয়ে একটা জিনিষ চোখে পড়লো। মধ্যবিত্ত, বড় দোকানদার, ছোট দোকানদার, কেরানি – এরা প্রায় সবাই কিন্তু ওই ঝড়ো দিন গুলোতে বিভ্রান্ত ছিল এবং মোটেই বিপ্লবের পক্ষে দাঁড়ায় নি। দাঁড়িয়েছিল মজুর, কৃষক, নাবিক, সৈনিকরা। মধ্যবিত্তের এ হেন আচরণ আজ এই লেখার বিষয় নয়। বিষয় অন্য।
৭ তারিখের পরে ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনার উল্লেখ করবো। ঘটনা এক, পেট্রোগ্রাড শহরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জটা পৌরসভার দখলে ছিল যারা চূড়ান্তভাবে বিপ্লববিরোধী ছিল। বলসেভিকরা এক্সচেঞ্জ দখলের পরে অধিকাংশ তরুণী টেলিফোন অপারেটর এক্সচেঞ্জ ছেড়ে চলে যায়। তাদের জায়গা নেয় নাবিক, শ্রমিক ছাত্রদের কর্মীবাহিনী যারা ওই বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অজ্ঞ। সামান্য যে ক’জন তরুণী অপারেটর ছেড়ে চলে যায় নি, তারা ওই বাহিনীকে দিন রাত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলে।
ঘটনা দুই, ব্যাংক ছেড়ে চলে যায় কর্তৃপক্ষ, এবং তাদের পিছুপিছু কেরানির দলও। একই ভাবে তাদের জায়গা নেয় নাবিক শ্রমিক ছাত্রদের দল। রিড অনবদ্য বর্ণনা দিয়েছেন কিভাবে ভারী ভারী লেজারের পাতায় সরে যাচ্ছে বলসেভিক বাহিনীর সেই নাবিকের মোটা মোটা অনভ্যস্ত আঙ্গুল, লেজার এন্ট্রির পাঠোদ্ধার করতে গিয়ে বিস্ময় বিমূঢ় মাথার চুল খামচে ধরছে।
মানুষের নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার আবেগদীপ্ত বিবরণ রয়েছে ওই বইটির ছত্রে ছত্রে। বিপ্লব মানে কেবল অস্ত্রের ঝনঝনানি নয়, অরোরার কামানের আওয়াজ নয়, কর্নীলভ, ডেনিকিন কলচাকদের প্রতিবিপ্লবী বাহিনীর সাথে রেড আর্মি গুলি বিনিময় নয়, বিপ্লবীদের আরো কত কি করতে হয়, বিপ্লবীদের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ চালাতে হয়, ব্যাঙ্ক এর লেজার এন্ট্রি করতে হয়, দুধের রুটির সরবরাহ লাইন ঠিক রাখতে হয়, এমন কি ক্যান্টিনও চালাতে হয়। রাইফেল কাঁধে ঝুলিয়ে রেখে হাতা খুন্তি তুলে নিয়ে অভুক্ত মানুষদের থালাবাটিতে পরম মমতায় পরিবেশন করতে হয় গরম গরম স্যুপ।
বিপ্লব কেবল সংঘর্ষে নয় নির্মাণেও বেঁচে থাকে। নভেম্বর মাসে ভালোবাসা ভাসে।