মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে জানতে হবে আমাদের মন কি ভাবে কাজ করে। একটা উদাহরণ দিলে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে।
বিশাখা আর তনয়া দু’জনেই এক অফিসে চাকরি করে। অফিসে বছরে একবার কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন হয়। সেই মূল্যায়নে দেখা গেল দু’জনের অবস্থান অন্য কর্মীদের তুলনায় অনেকটা নীচে। ওদের দু’জনেরই সিনিয়র তনুকা। খবরটা পাওয়া মাত্র দু’জনেরই মন যথেষ্ট খারাপ হয়ে গেল। দেখা যাক তার পরে কি হল?
কেস নং ১
বিশাখা সেদিন বাড়ি ফিরে এক কাপ চা নিয়ে একান্তে বসে ভাবতে লাগল তার তরফ থেকে কাজে কি খামতি রয়ে গেছে যার জন্য তাকে সি গ্রেড দেওয়া হল। খারাপ লাগাটা আছে কিন্তু বিশাখা লড়ছে নিজের মনের সাথে থুড়ি চিন্তার সাথে। কত নেতিবাচক( negative) চিন্তা আসছে। যেমন মনে হচ্ছে তনুকা কি পক্ষপাতিত্ব করে তাকে কম গ্রেড দিয়েছে? আসলে কি তার আরও বেশি পাওয়ার কথা ছিল
এই চিন্তার বাস্তব ভিত্তি কি?
তাহলে তনয়া কেন কম পেল? সত্যিই কি বিশাখা কোম্পানির রেভিনিউ জেনেরেট করার ক্ষেত্রে সে ভাবে কাজ করেছে? নাহ, কাল তনুকার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করা দরকার। কি ভাবে নিজের কাজের উন্নতি করা যায় সে ব্যাপারে বসের সাথে সরাসরি আলোচনায় যাওয়া দরকার। পরের বছর এই এক খারাপ লাগা সে চায় না। এ বছরটা না হয় শেখার সুযোগ হিসাবেই ধরে নিচ্ছে সে। আর এমন তো নয় যে সব সময়ে তাকে একশো ভাগ সফল হতেই হবে।
এদিকে তনয়া অফিস থেকে ফিরে নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে গুম হয়ে বসে রইল। সে মানতে পারছে না, কিছুতেই মানতে পারছে না এই মূল্যায়ন। আসলে ওর দ্বারা কিছুই ঠিক করে হয় না। বসে বসে ভাবতে থাকে জীবনে কতবার সে হেরে গেছে। অকৃতকার্য হয়েছে। সেই না পারার বোঝা যেন ভার হয়ে চেপে বসে মনে। রাতে ভাল ঘুম হয় না।
পরেরদিন অফিসে আসার পর তনুকা লক্ষ্য করল যদিও দুজনেরই মূল্যাংক অনেক নীচে তবু বিশাখা আর তনয়ার দু’জনের ব্যবহার (আচরণ, behavior) কিন্তু এক নয়। বিশাখা খুব স্বাভাবিক আচরণ করছে কিন্তু তনয়া যেন কেমন আনমনা ওকে একটু এড়িয়ে চলছে। এমনকি বিশাখার সঙ্গেও ভাল করে কথা বলছে না।
এবার আপনারাই বলুন। বিশাখা আর তনয়ার দুজনের প্রতিক্রিয়া একই পরিস্থিতিতে আলাদা আলাদা হল কেন? এমন তো হামেশাই হয় আমাদের ক্ষেত্রে তাই না। কিন্তু কেন? একই পরিস্থিতিতে আমাদের আচরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে কেন? তফাৎ কোথায় হয়?
চলবে…