ও কেন আমার মনের মতো নয়…..
দু’জন মানুষ তারা স্বামী স্ত্রী হতে পারেন কিংবা শাশুড়ী বৌমা হতে পারেন কিংবা প্রেমিক প্রেমিকা হতে পারেন যখন সম্পর্কের খাতিরে অনেকটা কাছাকাছি এসে পড়ছেন তখন অনেক ক্ষেত্রেই এক জনের মনে অপর জনের সম্পর্কে অনেক অভিযোগ উঠে আসছে। অভিযোগ গুলোর ভিত্তি হয়তো থাকে বা হয়তো থাকে না।
স্বামী স্ত্রী-র প্রসঙ্গে আসা যাক। একজন নারী প্রায় কুড়ি বছর কি চল্লিশ বছর সংসার করার পরে স্বামীর সঙ্গ না দিতে পারা নিয়ে অনেক অভিযোগ মনে মনে পোষণ করেন। দু:খ পান, রেগে যান। প্রশ্ন করেন, “আমার চাওয়া কি ভুল?”
কিন্তু এই প্রশ্নের স্বরূপ যদি বদলে দিয়ে একটু তলিয়ে ভাবা যায় যে “তার আমার সঙ্গ ভাল লাগে না” এই ভাবনার বাস্তব ভিত্তি কী? বা “কেন ভাল লাগছে না এই বিষয়টা নিয়ে কি আমি ভাবনা চিন্তা করেছি?”, তা হলে হয়তো সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান মেলে। মানে এটাই বলতে চাইছি যদি ভাবা হয় “আমি বঞ্চিত, আমি উপেক্ষিত” তা হলে মনে নেতিবাচক আবেগ বেড়ে চলে, ফলে আলোচনা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সম্পর্কে অবনতি হয়। সমস্যার সমাধান হয় না।
তবে কি করণীয়?
“কি পাই নি তারি হিসাব মেলাতে মন মোর নহে রাজী”, গুরুদেব বলে গেছেন। কি পাই নি সেই হিসাব না করে যদি কি পেয়েছি তার হিসাব কষা যায় তবে অনেক ক্ষেত্রে মন কিছুটা শান্ত হয়। আমাদের জীবন পাওয়া না পাওয়া, সুখ দু:খ, ভালো মন্দ মিশিয়ে এক বিচিত্র রঙ্গমঞ্চ। সাধারণভাবে আমরা সবাই দোষে গুণে মানুষ। যদি একটা মানুষকে গ্রহণ করতে হয় তবে তার দোষ গুণ সহ তাকে ভালবাসতে হয়। এই ভাবে ভাবলে হয়তো প্রতিদিনের বাঁচা সহজ হয়।
আমাদের বিশ্বাসের অযৌক্তিকতা তিন ভাবে কাজ করে :
* আমায় সব বিষয়ে ১০০% নিঁখুত হতেই হবে।
যেমন কোনও কাজে ব্যর্থ হলে মেনে না নিতে পারা। প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষায় ব্যর্থতা, সম্পর্কে ব্যর্থতাতে ভেঙে পড়া।
“আমার দ্বারা জীবনে কিছুই হবে না” জাতীয় ভাবনা।
* আমার আশেপাশের মানুষগুলো নিঁখুত হবে, তারা আমার মনের মতো কথা বলবে, মনের মতো আচরণ করবে, আমার মনের কথা বুঝে চলবে।
“আমার বর আমায় বুঝতেই চায় না।” “আমার সঙ্গে এমন করে কথা বলল কেন?” ” আমায় দেখে ডেকে কথা বলল না” জাতীয় ভাবনা।
* আমাদের জীবনের পরিস্থিতি আমার মনের মতো হবে।
“আমার জীবনেই কেন এমন হল? ”
এই ভাবনাগুলোকে নিয়ে একটু কাটা ছেঁড়া করলে দেখা যাবে, এই তিন ধরণের বিশ্বাসের ক্ষেত্রেই বলা চলে জীবন এই বিশ্বাস অনুযায়ী চললে আমরা সব থেকে সুখী হব। কিন্তু যদি না চলে তবেও কুছ পরোয়া নেই।
রবি ঠাকুর আছেন তো।
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
কেউ বা তোমায় ভালোবাসে
কেউ বা বাসতে পারে না যে,
কেউ বিকিয়ে আছে, কেউ বা
সিকি পয়সা ধারে না যে,
কতকটা যে স্বভাব তাদের
কতকটা বা তোমারো ভাই,
কতকটা এ ভবের গতিক—
সবার তরে নহে সবাই।
তোমায় কতক ফাঁকি দেবে
তুমিও কতক দেবে ফাঁকি,
তোমার ভোগে কতক পড়বে
পরের ভোগে থাকবে বাকি,
মান্ধাতারই আমল থেকে
চলে আসছে এমনি রকম—
তোমারি কি এমন ভাগ্য
বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
চলবে…