দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি বিশেষ ৩০
ওমিক্রন মিউটেশন এর ফলে মানবদেহকোষে ঢোকার জন্য নিজের জন্যে দুটো প্রবেশদ্বার তৈরি করে নিতে পেরেছে। ডেল্টা অবধি, স্পাইক প্রোটিন মিউটেশন সত্ত্বেও ওটা একটাই দরজা ছিল। তাই ওমিক্রন খুব বেশি ছড়াতে পারছে। প্রচন্ড ছোঁয়াচে। ডেল্টার দশ গুণ ছোঁয়াচে।
খুব বেশি ছড়াচ্ছে মানেই যে খুব খারাপ হচ্ছে তা নয়। দেখা যাচ্ছে অল্প সর্দি কাশি গা ম্যাজম্যাজ ইত্যাদি হয়ে ব্যাপারটা মিটে যাচ্ছে। অর্থাৎ মনে করা হচ্ছে,ভাইরাস নিজেকে এমনভাবে বদলেছে যাতে ধারকের ক্ষতি কম হয়। এ সম্বন্ধে এখনো সীলমোহর পড়েনি। কিন্তু বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া তথ্য ও গবেষণা ধীরে ধীরে উঠে আসছে এই মতের সমর্থনে। ইংল্যান্ডে যেমন, দৈনিক নতুন কেসের সংখ্যা এখন সেকেন্ড ওয়েভ এর থেকেও বেশি। কিন্তু হাসপাতালের ভর্তির হার অনেক কম। সিভিয়ার নিউমোনিয়া অনেক কম হচ্ছে।
এই যে সিভিয়ারিটি একেবারে হচ্ছে না তা নয়, কম হচ্ছে, তার কারণ, এত কিছুর পরেও কিছু মানুষ থাকবেনই যাঁদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম। ফার্স্ট ওয়েভে যেমন কো-মরবিডিটি যাদের আছে তাদের সিভিয়ার কোভিড বেশি হচ্ছিল, এবারেও সেই একই বিপদ আসছে। তাই সবসময় বয়জ্যেষ্ঠ ও কো-মরবিড দের আশেপাশে সবাইকেই সাবধানে, কোভিড বিধি মেনে চলতেই হবে।
স্ট্যাটিস্টিক্স অনুযায়ী এ দেশের বেশির ভাগ জায়গায় এখন পোস্ট প্যান্ডেমিক স্টেজ চলছে( টোটাল রিকভারি রেটের নিরিখে)। তাই গোটা দেশ জুড়ে, গ্রামে গঞ্জে শহরে সর্বত্র আবার ডেল্টার মত ওয়েভ আসার সম্ভাবনা কম, মহামারী-সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী। কিছু কিছু জায়গায় এন্ডেমিক আউটব্রেক হবেই। আমরা ইতিমধ্যে মুম্বই, দিল্লী আর কলকাতায় কেস বাড়ছে দেখেইছি। এই পর্যবেক্ষণ অবশ্য নিতান্তই সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী। বায়োলজি তাকে ভুল প্রমাণ করতে পারে। উপায় একটাই, সাবধান থাকতে হবে।
প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ওমিক্রনের ওপর কোন ভ্যাক্সিনই বিশেষ কাজ করছে না। এর প্রচন্ড ছোঁয়াচে ভাবকে কমানোর শক্তি ভ্যাক্সিনের নেই। আর এই যে ওমিক্রন এখনো অবধি মাইল্ড অসুখই করছে,সেটা ভ্যাক্সিন আগে থেকে কিছু লোক পেয়েছে বলে, নাকি ওমিক্রনের নিজের গুণে, সেই নিয়েও গবেষণা চলছে। তাহলে ভ্যাক্সিন নিয়ে লাভ?
তাও ভ্যাক্সিন নেওয়া জরুরী, তার কারণ যতটুকু ইমিউনিটি তৈরী হবে, ওতে ওমিক্রন ছাড়াও অন্য মিউট্যান্টগুলিকে প্রশমিত করার উপায় আছে। ডেল্টার সিভিয়ারিটি ভ্যাক্সিন নিলে কম হচ্ছে, এরকম তথ্য বিভিন্ন দেশ থেকে উঠেই আসছে। কিন্তু এর জন্য পৃথিবীর সব দেশে সমান হারে ভ্যাক্সিন দিতে হবে। না হলে আবার নতুন একটা মিউট্যান্ট গজাতেই পারে। ধনী দেশগুলির ভ্যাক্সিনের বিশ্ব জুড়ে সমবন্টন নিয়ে কৃপণতা আরো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
এন্টিবডি ককটেইল ডেল্টার ওপর কাজ করে। সেও অসুখের একেবারে প্রাথমিক মাইল্ড স্টেজে। ওমিক্রনের ওপর এর কোন প্রভাব নেই। এরকম তথ্যও উঠে আসছে যে, ওমিক্রন একটি অদ্ভুত ভ্যারিয়েন্ট এর থেকে ইনফেকশন হলে শরীরে যে ইমিউনিটি হবে তা অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু তার জন্যে অবশ্য বেঁচে থাকতে হবে। যদিও ওমিক্রনে মৃত্যুর হার এখনো অবধি ডেল্টার তুলনায় কিছুই না। এখনও তথ্য সংগ্রহ করা বাকি। এগুলো সবই প্রাথমিক রিপোর্ট।
এত কিছু লিখলাম, নানারকম খবর টবর পড়ে যা মনে হল৷ ভুল থাকতেই পারে।
কিন্তু কোথাও লিখলাম, যে মাস্ক ওমিক্রনকে আটকাতে পারে না৷?
কাজেই মাস্ক নিয়ে গড়িমসি না করে, সঠিক মাস্ক সঠিকভাবে পরতেই হবে। শুধু কাপড়ের মাস্ক পরার ন্যাকামি ছাড়তেই হবে। ওটা ফ্যাশন হতে পারে কিন্তু ঢাল নয়। কাপড়ের মাস্কের তলায় একটা থ্রি লেয়ার সার্জিকাল মাস্ক পরতেই হবে। সবথেকে ভালো হয় N95 পরলে। N95 কেনার আগে সার্টিফিকেশন দেখে নেওয়া উচিত। যেমন- NIOSH / KN95.
মাইল্ড অসুখ হলেও, কেসের সংখ্যা যদি আকাশছোঁয়া হয়, তার প্রভাব সমস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর পড়ে। মিডিয়ার লাজলজ্জাহীন টি আর পি বাড়ানোর গিমিক, প্রশাসকদের অবৈজ্ঞানিক নি-জার্ক রিএকশনের জন্য অর্থনীতি আর জীবনযাত্রার ওপর কুপ্রভাব পড়ে। ছেলেমেয়েরা সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিল। তাদের আবার গৃহবন্দী হতে হবে।
ওমিক্রন নিয়ে ভয় ব্যবসায়ীদের গুজবগুলোকে হোয়াটসঅ্যাপ ফরোয়ার্ড না করে, মাস্ক পরা আর অন্যান্য কোভিড বিধি মেনে চলাই এখন একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য।