(সম্পাদকের অনুমতি ব্যতিরেকে, পাঠিকাদের প্রাণ খোলা গালাগালি খাবার ঝুঁকি নিয়েই কল্পিত গবেষণাটি নিবেদিত )
_________________________________________
মেয়েদের সুন্দরী দেখাতে গেলে সাজতে হয় এতো প্রায় একটা সংস্কারই। সালঙ্কারা কন্যার কথা কাব্যে সাহিত্যে বহুল আলোচিত।
গয়নাগাটি (নারীপুরুষ নির্বিশেষে) যা কিছু দেখি সবই কিন্তু সভ্যতার আদিকালের দাসপ্রথার স্মৃতিবহনকারী। যুদ্ধে জয় করা বা ক্রীত দাসদাসীদের স্বভাবতই বেঁধে রাখা হত বেড়ি শেকল প্রয়োজনে নাকে দড়ি পড়িয়ে। এর মধ্যে কোনও দাস বা দাসী অধিকতর প্রিয় বা কালক্রমে ভালবাসার জন হয়ে পড়লে তাকে লোহার বেড়ি বা শেকলের বদলে গড়িয়ে দেওয়া হত সোনার রূপোর বেড়িশেকল। দাসপ্রথা চলে গেল কিন্তু সেই অপমানের বন্ধনের স্মৃতি রয়ে গেল সোনার কাঁকন সাতনরি হার আর হিরের নাকছাবি হয়ে। না কি সেই পুরোনো দাসত্বই চলছে আজও! যাঁরা সাজেন আর যাঁরা সাজ যোগান তাঁরা কি এতসব ভাবেন?
অলঙ্কার বাদ দিয়ে মেয়েদের অন্য রূপসজ্জার সাথে তো রীতিমত কান্নার ইতিহাস জড়িয়ে। সভ্যতা যখন পুরুষতান্ত্রিক হল, মেয়েরা আবদ্ধ হল ঘরে, তখন তাদের ঘরকন্নার হাড়ভাঙা খাটুনির সাথে অবশ্য করনীয় দায়িত্ব ছিল বছর বছর গর্ভবতী হয়ে গোষ্ঠীকে জনসমৃদ্ধ করা। তাই তখন প্রচলিত ছিল শতপুত্রের জননী হবার আশীর্বচন। পুরুষদের ক্ষুন্নিবৃত্তির পর মেয়েগুলি আহার্যও পেতনা ঠিকঠাক। অবধারিত ভাবে দেখা দিত রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া।
সেই অ্যানিমিক মেয়ে না পারত ঘরের কাজ, না পারত সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে। এক কথায় সে তখন গোষ্ঠীর বোঝা। তাই তাকে অবহেলায় ত্যাগ করা বা বনবাসে বিসর্জন দেওয়াই ছিল সঙ্গত।
ডাক্তারবাবুরা অ্যানিমিয়া ক্লিনিক্যালি দেখেন শরীরের কোথায় কোথায়? জিভে,চোখের পাতায়, হাতের নখে,হাত পায়ের তালুতে, গালের চামড়ায়। সেখানে রক্তাভা দেখে তাঁরা বোঝেন শরীরে রক্ত আছে কেমন। সেই আদি কালেও এই সব দেখেই আন্দাজ করা হত মেয়ে বিসর্জনের যোগ্য হল কি না।
মেয়ে তখন নিজেই বাঁচার জন্য শরীরের এই সমস্ত জায়গাগুলিকে লালরঙ করে ফেলল। হাতপায়ের নখে লাগালো নেলপালিশ, পায়ের তালুতে আলতা, হাতে মেহেন্দি, ঠোঁটে লিপস্টিক, জিভে আর ঠোঁটে পানের লাল রঙ, চোখে কাজল আর সুর্মা যার মূল কাজ হবে কেমিক্যাল ইরিটেশনে, অ্যানিমিয়ায় ম্লান কনজাইটাইভাকে রক্তিম করা।
এখন আমরা যতই অন্য অন্য রঙের লিপস্টিক বা নেলপালিশ দেখিনা কেন এগুলো কিন্তু আদিতে ছিল, আদিতেই বা বলছি কেন, এই সেদিনও ছিল টকটকে লাল। সেই লাল … কোনও সন্দেহ নেই … অ্যানিমিয়া ঢাকার সেই আদিম কান্নাভরা প্রয়াসেরই সংস্কার।
দারুন।