ইরানের ২৩০জন চক্ষু চিকিৎসক এক যৌথ বিবৃতিতে দেশের Ophthalmology Association-এর president-এর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন সরকারকে পরিষ্কারভাবে অবহিত করতে, সাম্প্রতিক দমন পীড়নের মাত্রা/ধরণ কী বীভৎস ফলাফল তৈরি করছে।
সারা দেশব্যাপী বিক্ষোভ ঠেকাতে ইরানের পুলিশ ও মিলিটারী (আর্মি ও revolutionary guard-এর যৌথ বাহিনী) সরাসরি মুখের উপর আঘাত করছে pellet /rubber bullet দ্বারা। তেহেরানের তিনটি প্রধান হাসপাতালে চোখের মারাত্নক ‘ইনজুরি’ নিয়ে এসেছে পাঁচ শ-এর বেশী মানুষ। ইরানের ‘কুর্দিস্তান প্রদেশ’-এ ইদানীং কালেই এসেছে আশি জনের বেশী..। আবার ,একটা ভালো সংখ্যার মানুষ হাসপাতালে আসতেই পারে নি শুধু মাত্র গ্রেফতারি এড়াতে, কারণ পুলিশ হাসপাতাল থেকেই গ্রেফতার করেছে অনেককে। বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছে বহু তরুণ তরুণী..।
২০১৬ সালে, Indian Journal of Ophthalmology তে প্রখ্যাত ভিট্রিয়ো-রেটিনাল সার্জেন ডা: এস. নটরাজন একটি review-তে দেখিয়েছিলেন, কাশ্মীরে বিক্ষোভ ঠেকাতে non lethal weapon হিসাবে যথেচ্ছ pellet gun ব্যবহারের ফলশ্রতিতে (বিশেষত সরাসরি মুখের উপর), চোখে গুরুতরভাবে আহত ৭৭৭ জনের অন্তত শতকরা আশি ভাগ ভালো মতো দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। ডা: নটরাজন, ডা: সৈয়দ আসগর হোসেন ও ডা: কেনসুক মারওয়া শ্রীনগরে SMHS হাসপাতালে বস্তুতঃ ক্যাম্প করে গুরুতর চোখের আঘাতগ্রস্ত বহু মানুষের অপারেশন করেন। অপথ্যালমোলজির জার্নালের সম্পাদকীয়তেও বিক্ষোভ দমনের এই পন্থার সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
কী মনে হয়, যারা এই জঘন্য কাজ করাচ্ছে তারা জানতো না বা জানে না non lethal পদ্ধতির নামে কত মারাত্মক গভীর ক্ষত তারা তৈরি করছে শারীরিক ও সামাজিক ভাবে??
আসলে, এটাও একটা অতি পরিকল্পিত পদক্ষেপ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অত্যাচারী শাসকদের সব সময়ে পছন্দ দুটি জিনিস..১)সামগ্রিক সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি, ও ২) প্রতিবাদীদের চিহ্নিত করণ। ইচ্ছাকৃতভাবে চোখ নষ্ট করে উপরোক্ত দুটি সুবিধাই একসঙ্গে পাওয়া সম্ভব!!! একদিকে অন্ধত্ব, অন্যদিকে সারা জীবনের জন্য identified হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধবাদী হিসাবে। প্রাচীন কালেও অনেক সময় অপরাধীদের অঙ্গে স্থায়ী চিহ্ন দেগে দেওয়া হতো নিষ্ঠুর পদ্ধতিতে রাজনির্দেশে। কাল বা সময় বদলেছে, কিন্তু purpose বা মূল উদ্দেশ্য প্রায় একই রয়ে গেছে।
তবে, ইরানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর বিশেষ কোনও প্রতিক্রিয়া আমাদের দেশে প্রায় অনুপস্থিত। আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে যারা চিরকাল উৎসাহী তারা এখন বহু ঘটনাতেই নিশ্চুপ, কারণ ঠিক নিশ্চিত নন কোন পক্ষে কথা বলা উচিত। আমরা আসলে বাস্তবতা অনুধাবনের থেকে পক্ষ অবলম্বন করতেই চিরকাল বেশী উৎসাহী/সক্রিয় কিনা!! দুমাসের কিছু আগে ইরানী তরুণী মাহিসা আমিনির মৃত্যুর পরে সারা ইরান জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। মাহিসার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হিজাব ‘সঠিকভাবে’ পরেনি। বিক্ষোভকারীরা প্রকাশ্যে হিজাব পোড়াতে থাকে। আমাদের দেশে প্রগতিবাদীদের সমস্যা এইখানেই..। এই আন্দোলন সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বললে, কর্ণাটক সরকারের ‘হিজাববিরোধী’ নির্দেশনামা সম্বন্ধে বক্তব্য বা অবস্থান কী হবে?? এক্ষেত্রে তো পরস্পরবিরোধী অবস্থানের অভিযোগ উঠবে! কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে, দুই প্রায় বিপরীতধর্মী আন্দোলনের মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল রয়েছে; আর তা হলো দুটি ক্ষেত্রেই মানুষ বিশেষতঃ মেয়েরা প্রতিবাদ করছে তার উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে..। এক জায়গায় মেয়েদের জোর করে ‘হিজাব’ পরানো হচ্ছে, আর এক জায়গায় জোর করে খোলা হচ্ছে, যে পরবে তার কোনও option নেই.. রাষ্ট্র ঠিক করবে সে কী করবে, আর সেটাই বাধ্যতামূলক !!!
প্রশ্নটা এখানেই,আরও অনেক বিষয়ের মতো কোনও একজন নারী ‘হিজাব’ পরবে কিংবা পরবে না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার নিজস্ব কোনও এক্তিয়ার আছে না নেই!! না পুরোটাই ঠিক করবে রাষ্ট্র অথবা ধর্ম? ?
…..এই প্রশ্নটা মানুষের কাছে পরিষ্কার করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রাখলে কী বাস্তবিক বা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সত্যিই খুব অসুবিধা হবে???
……………………….
………………………..
চেনা অচেনা সমস্ত চক্ষু চিকিৎসকদের কাছে একান্ত অনুরোধ, আপনাদের state ও all India সংগঠনের মাধ্যমে International Agency for the Prevention of Blindness(IAPB) এবং WHO এর কাছে আবেদন করুন, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অন্ধত্বকরণের এই প্রচেষ্টা সারা পৃথিবীতে নিষিদ্ধকরণ করা হোক এবং অবিলম্বে ……………………………..