তৃতীয় পর্ব
অজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের লেখা
উপত্যকার প্রথম মানুষ
“জার্মানির নিয়েন্ডার উপত্যকায় ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে মানুষের নিকটতম পূর্বপুরুষ (কথাটা বোধহয় পূর্বমানুষ হবে) প্রজাতির একটা ফসিল পাওয়া যায়….তাই এদের নিয়েন্ডারট্যাল( যদিও বানানটা থ্যাল) বলা হয়”
পটলা বলে” আলুদ্দমে কাই দ্যায় নাই গ্য, বড্ড শুকনো লাগে। ফসিল মান্যে ত রূপমিস্লাম তাই লয়?”
“বাংলু দিয়ে গিলে ফ্যাল। ফসিল মানে পুরোনো মৃত জীবের যে অংশটুকু পাথরে মাটিতে মিশে’ রয়েছে….তার ছাপ….”
“ও-ঐ ওরাংওটাং,শিম্পাঞ্জি ত্থেক্যে এগুলো জন্মায়েছিঁলো….” পটলার অনুসিদ্ধান্ত।
হাতুড়েকা সবাংলু রুটি গলাধঃকরণ করে’বলেন “মানুষের (স্যাপিয়েন্স) উদ্ভব বা বিবর্তন এই ক্রমপরিবর্তের ইতিহাসকে বোঝায়। প্রথমে এই পৃথিবীর বুকে বানর ও বনমানুষ আসে। বুঝলি গোবরপটল?এটা একটা দিক বা দেশ দিয়ে হয়নি, একটা জালের মতো ছড়িয়ে উঠেছে। তারপর জাল গুটিয়ে গুটিয়ে শেষে মানুষ পাওয়া গ্যাছে। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন আবহাওয়ায়, বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাসে, বিভিন্ন বানর, এপ (বনমানুষ) থেকে আলাদা আলাদা ভাবে হয়েছে। একটু একটু করে’…মানে লক্ষ কোটি বছর ধরে মানুষ দু পায়ে হাঁটতে শিখেছে, কথা বলতে শিখেছে, গান গাইতে লিখতে শিখেছে। আফ্রিকার হোমিনিড উপপ্রজাতির প্রতিটি প্রজাতির (নিজেদের মধ্যে জনন প্রক্রিয়া ও দায়ী) থেকে। এটা জানার জন্য নৃবিজ্ঞান, ফসিল সম্বন্ধে জ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব ও জেনেটিক্স জানতে হয়।
মানব বিবর্তনের চিত্র
বানর এবং বনমানুষরা প্রায় সাড়ে ৮ কোটি বছর আগে অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের থেকে আলাদা হয়ে গেছে (ক্রিটাসিয়াস যুগের শেষের দিক থেকে প্যালিওসিন যুগে)। এই সময়েই সবাইকার থেকে সম্পর্ক কেটে দিয়ে আলাদা করে’ এই গোষ্ঠীর প্রাণীরা বিবর্তিত হয়েছে। এদের প্রথম দিকের ফসিলগুলো প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বছর আগেকার। এই সব বনমানুষের দল ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরণের প্রজাতি বা প্রজন্ম সৃষ্টি করে।এরপর বনমানুষের সুপারফ্যামিলি তৈরি হয়। প্রায় ১.৫ থেকে ২ কোটি বছর আগে হোমিনিড (ওরাংওটাং জাতীয়) এবং গিবন জাতীয় প্রাণী তৈরি হয়। আফ্রিকান এবং এশিয়ান হোমিনিডস্ বা ওরাংওটাং তৈরি হয় প্রায় ১.৪ কোটি বছর আগে। গরিলিনি উপজাতি (গোরিলা) থেকে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ বছর আগে এসেছিলো হোমিনিনস অর্থাৎ আদিতর মানুষ- অস্ট্রালোপিথেসিন ও প্যানিনা উপজাতি। ২০ লক্ষ বছরের পুরনো প্রজাতির হোমো মোবিলিস ফসিল আবিষ্কার প্রমাণ করে যে গঠনগত আর শারীরবৃত্তীয়ভাবে আধুনিক মানুষের আবির্ভাব প্রায় অন্ততঃ ৩,০০,০০০ (৩ লক্ষ) বছর আগে আফ্রিকাতে হয়েছিল। কিন্তু এদের মানসিক গঠন আর জীবনযাপন ছিলো জান্তব অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ হয়নি।
পটলা স্খলিত কন্ঠে বলে “হাতুড়েকা মাল খাওয়া বেরেনে এসব ঢুকলোক নাই বট্যেঁ”
“চ্ছেড়ে দে দরকারও নাই”
“সবই তো ব্যুইল্লে হাতুড়েকা- তাহলে ভগমান ছাড়া পের্থম প্রাণটা এল্যো কুথ্যা থেঁক্যে এইটা বল্যো দেখি ক্যানে?
এমনি করেই যায় যদি দিন
“শোন্তবে।পৃথিবী তৈরি হয়েছিল মোটামুটি সূর্য থেকে; কেউ বলে সোলার নেবুলা (নেবুলা হলো ধুলো আর গ্যাসের মেঘ) থেকে, কেউ বলে ডিস্ক ইনস্টেবিলিটি থেকে কেউ বলে বিকট বিষ্ফোরণ (বিগ ব্যাং) থেকে। মোদ্দাকথা হলো সূর্য পৃথিবী আর অন্যান্য গ্রহদের বয়স মোটামুটি পাঁচশো চুয়ান্নো কোটি বছর।অর্থাৎ এরা সমবয়সী। তখন বাতাসে অক্সিজেন নেই। পৃথিবীতে জল নেই। তাহলে জল কাদা ধুলো এসব আসবে কোথা থেকে, যে ভগমান মানুষ তৈরি করবে? প্রথমে আসে অন্যান্য প্রাণী; তাদের থেকে মানুষ তৈরি হয়। তখন, পৃথিবী তৈরির সময়, পৃথিবীতে শুধুমাত্র গরম লাভা-টগবগ টগবগ-তখন নানা ছোটখাটো উল্কা এসে দুমদাম পড়ছে। থেইয়া বলে একটা গ্রহাণু থেই থেই করে’ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ হয়ে গ্যালো। তারপর অনেক অনেক জলভরা উল্কা এসে পৃথিবীতে আছাড় খেয়ে পড়লো (সবচেয়ে বড়টার নাম বোধহয় ভেস্টা)। এরপর মেঘ বিদ্যুৎ, ঝড়, জল ইত্যাদি। এদিকে বজ্রপাতের তীব্র বিদ্যুৎপ্রবাহ, ওদিকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি- এরা দুজনেই সমস্ত জিনিসের গঠন, চরিত্র বদলে দিতে পারে। এতে কতগুলো কার্বন, হাইড্রোজেন আর নাইট্রোজেন মিলে প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড (প্রোটিনের সরলতম রূপ) তৈরি হলো। তখনও অক্সিজেন নেই। তাই সেই সব প্রোটিন থেকে তৈরি প্রাণীরা মিথেন গ্যাসে, প্রবল তাপ এবং চাপে বাঁচতে পারতো।অর্থাৎ এ্যামন কতোগুলো প্রাণী তৈরি হলো যারা মিথানোজেন-এরা মিথেন গ্যাসে বাঁচে, ত্যাগও করে মিথেন গ্যাস।আজও তারা পৃথিবীর গভীরে ডার্ক বায়োস্ফীয়ারে বেঁচে আছে…”
“যতোসব আগজুবি অশৈলী ঘোড়াদ্দম কৈতে নেগেছো। শুইনলেও পাপ হয়।”
বলেই মাতাল পটল শুয়ে পড়লো-হয়তো পটল তুলবে বলেই।
হাতুড়েও দেওয়ালে ঠ্যাকনা দিয়ে হাই তুলতে থাকেন। বোতলে একটু খানি সুরা রয়েছে।
ইতি গজঃ। হাতে রৈলো মদের বোতল।