দ্বিতীয় ভাগ
(অজ্ঞান,মাতালের বক্তব্যে হয়তো কিছু ভুলচুক থাকতে পারে জ্ঞানবান মানুষ দয়া করে’ ক্ষমা করবেন।)
মানুষের কথা মানুষের মুখে
“আয় তবে গোবলাপটাশ মানুষের গল্প বলি”
“হ হাতুড়েকা তবে টুকুসখানি ছোট্ট কর্যাঁ বলো ক্যানে…ঘুম লাগে তো…”
“শোন প্রথমেই মানুষ আসে নি।প্রথম এসে হাজির হয় কিছু নীলসবুজ প্রাণী, সেখান থেকে এককোষী অ্যামিবা।তারপর আস্তে আস্তে বড়ো জীবজন্তু।”
“বঢ়ো বঢ়ো জন্তু?কত্যোঁ বঢ়ো হে, হুই হাতির চেয়েও?”
“হ্যাঁ।হাতীর চে’ অনেক বড়ো…”
“এরকম ক্যানে হঁয় বট্যেঁ ?”
হাতুড়ে মৃদু হাসেন।শ্রাবণী অমাবস্যার মতো মৃদু সেই হাসি। “এটা জেনেটিক্স”
“সিটো কী বট্যেঁ?”
কারা আমার মা বাবা?
“ধর তোর মা আর বাবা ঠিক ঠিক কে, তুই জানিস?”
পটলা প্রথমে হেঁতিবাচক মাথা নাড়ে তারপর সন্দেহসূচক চোখে চেয়ে থাকে।
“আসলে সেটা জানার যে পরীক্ষা-সেটাই জেনেটিক্স”
পটলার আলুমার্কা বিষ্ফোরিত চোখ দেখে হাতুড়ে বোঝেন কিস্যু বোঝে নি।
“মাধ্যমিকে কোষ বা সেল পড়েছিলি তো?শরীরের সব থেকে ছোট অংশ যেটায় প্রাণের সব লক্ষণ থাকে – সেটাকে কোষ বলে। তা সেই কোষের ভেতরে ক্রোমোজোম থাকে তার ভেতরে অনেক অনেক অনেক জিন থাকে।মেন্ডেল সাহেব প্রথম এর সম্বন্ধে ধারণা দিয়েছিলেন। ওনার মতে জীন হলো বংশগতির ক্ষুদ্রতম ধারক বর্তমানে বলা হয় এটা ডিএনএর একটা বিশেষ সজ্জাবিন্যাস যেটা শরীরের সব কাজকর্ম করে এবং পূর্বপুরুষের পরিচয় নিয়ে চলে। তোর হার্টের ভেতরে জিন আছে। তারা হার্টে এক রকম কাজ করে-আবার ব্রেনে তারা অন্য রকম কাজ করে। অর্থাৎ জীনের মধ্যেই লেখা আছে তোর হার্ট কী কী কাজ করবে, ব্রেন কী কী। এরমধ্যে কোডিং আর নন কোডিং (এরা আপাত অক্ষম জীন) জীন আছে-য্যামন তোর ক্ষেত্রে হয়তো পড়াশোনার জীনটা নন কোডিং হয়ে যাচ্ছে। আবার এই জিনের ভেতরেই তোর পূর্বপুরুষের সব কথা লেখা আছে-এবার যদি তোর সেই লেখা তোর বাবার আর মায়ের শরীরের লেখার সঙ্গে মিলে যায় তাহলে তুই ওঁদের সন্তান।রাতে তোর কটা রুটি?”
“এ্যাঁ? চারটে….”
রুটির সংখ্যা ছয়, জীনের সংখ্যা পঁচিশ হাজার
(প্রতিটা জিন আলাদা আলাদা করে’ সমস্ত চরিত্র প্রকাশ করে।এটাকে জিনোমিক্স বিদ্যা বলে)
হাতুড়ে ফোন তুলে কাকে য্যানো ছ’টা রুটি আর তিন টুকরো আলুদ্দম সঙ্গে পেঁয়াজ লঙ্কা অর্ডার করেন।
পটলা বাংলুর গেলাস মুখে তুলে’ বলে “আর ধরো ক্যানে ওদের সাথে না মিল্যেঁ?
“তাহলে খুব মুশকিল।সব মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে দেখতে হবে”
পটলা আবার কানতে থাকে। “ত্যালে আমার মা বাবাকে আর পাবোক নাই হাতুড়েকা?উহুহু হু….”
হাতুড়ে স্বগতোক্তি করেন “মহা মুশকিল।মাতাল হলেও কাঁদে; মাতাল হওয়ার আগেও কাঁদে”
পটলা চোখ টোখ মুছে দ্বিতীয় বোতল খুলে’ বসে।
“ধর বহুযুগ আগে তুই বা তোরা ভাম ছিলি…”
বিড়ি মুখে বাংলায় জল মেশাতে মেশাতে পটলা চ্যাঁচায় “ধৈরব্বক নাই,তুমি আমাকে বোকা বাঁনাইছো”
একটা প্যাঁচা পেছন ফিরে বসে’ ছিলো।চিৎকার শুনে এ্যাকশো আশী ডিগ্রি মুন্ডু ঘুরিয়ে নিক্টিটেটিং মেমব্রেন খুলে পটলাকে দেখলো। তারপর ক্যাড়ড়ড়ড়ড় ক্যাচু বলে উড়ে’ গ্যালো।
হাতুড়ে হাসলেন। তারপর বললেন “আচ্ছা থাক। তাহলে মানুষের কথাই হোক। কিছু ক্ষ্যাপা বিজ্ঞানিক পৃথিবীর সব জন্তু জানোয়ারের অনেক অনেক জীন পরীক্ষা করে’ দেখেছেন মানুষের সঙ্গে সব থেকে বেশী জেনেটিক মিল আছে প্রাইমেট মানে এপ জাতীয় প্রাণীর। শিম্পাঞ্জির সঙ্গে মিল সবচেয়ে বেশী তারপর গোরিলার সঙ্গে মিল। এরা সবাই এপ।আর মানুষ হলো গ্রেট এপ। ধারণা করা হয় আফ্রিকায় প্রথম এই পরিবর্তন ঘটে। তবে সদ্য তুর্কিতে আশী লক্ষ সত্তর হাজার বছরের পুরোনো একটা শিম্পাঞ্জির খুলি পেয়ে বিজ্ঞানিকরা ভাবছেন হয়তোবা ইওরোপেই প্রথম মানুষের আদি রূপ দ্যাখা যায়। তারপর আফ্রিকা ইত্যাদি জায়গায়।
প্রথমেই কি মানুষ এসেছিলো?
“হাতুড়েকা শিম্পাঞ্জি থেকে সোজা মানুষ এস্সেছিল্যো?”
মানুষের আগেই রুটি এসে হাজির। খবরের কাগজে খাবার রেখে’ হাতুড়ে বলেন “আয়-রুটি আলুদ্দম খেতে খেতে মানুষের গপ্পো করি।”
ক্রমশঃ