১০ই জুলাই, ১৯২৫ সাল। টেনেসির ডেইটন শহরে কাঠগড়ায় এক শিক্ষক, টেনেসি হাইস্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক জন স্কোপস। অভিযোগ? ক্লাসে পড়াতে গিয়ে তিনি ভেঙেছেন “বাটলার আইন”। অভিব্যক্তিবাদ পড়িয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের, যার ভিত্তি হল চার্লস ডারউইন-এর লেখা একটি বই “অরিজিন অফ স্পিসিস”। স্কোপস মহা অপরাধ করেছেন, তিনি ছোট ছোট কচি মনে বিষ ঢেলেছেন। তারা বুঝতে শিখেছে যে ঈশ্বর মানুষ তৈরি করেনি, মানুষ এসেছে বাঁদরের সমগোত্রীয় প্রাণী থেকে। একদল হো হো করে হেসেছে। তারা মামলাটার নামই দিয়েছে “স্কোপস মাঙ্কি ট্রায়াল”। অনেকে হাসেনি। তারা বুঝতে পেরেছে যে তাদের ধর্মের নামে ভুঙ চুং আওড়ানোর দিন শেষ হতে বসেছে। তাদের একজন হলেন মস্ত পন্ডিত উইলিয়াম জেনিংস ব্রায়ান, তিন তিন বারের প্রেসিডেন্ট নমিনি আর গোটা দেশ জুড়ে সবচেয়ে নামকরা এন্টি-এভলিউশন এক্টিভিস্ট।
এভলিউশন থিওরির সপক্ষের লোকরাও ছাড়বার পাত্র না। হতে পারে সাজা মাত্র ১০০ ডলার। কিন্তু হেরে গেলে চলবে না। স্কোপস-এর হয়ে দাঁড়ানোর জন্য প্রথমে যাওয়া হল এইচ জি ওয়েলস-এর কাছে। প্রত্যাখ্যান। তারপরে যাওয়া হল ক্ল্যারেন্স ডারো-এর কাছে। অবসরের মুখে দাঁড়িয়ে আমেরিকার সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্স কাউনসেল ডারো রাজি হলেন না।
এক সাংবাদিক গিয়ে ডারোর কানে এই কথা তুলে দিল যে বাদী পক্ষের হয়ে নামতে চলেছেন ব্রায়ান। অমনি রাজি হয়ে গেলেন ডারো। দাঁড়ালেন। দিলেন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে একখানা দুর্দান্ত ওপেনিং স্টেটমেন্ট। মামলা এগোতে থাকলো। সারা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ছে সেই মামলার খবর।
শেষের দিকে এসে ডারো দিলেন দারুন এক চমক। ক্রস এক্সজামিন করার জন্য এক্সপার্ট উইটনেস হিসাবে ডেকে বসলেন ব্রায়ানকে। সওয়াল জবাব শোনার জন্য কোর্টরুমে এত ভিড় হল যে আদালত বসলো কোর্টের সামনের লনে। সৃষ্টি তত্ব নিয়ে একের পর এক প্রশ্নবাণ। বিজ্ঞানের ব না জানা ব্রায়ান ল্যাজে গোবরে।
অনেক দিন কেটে গেছে। টেনেসির সেই কোর্টরুমের চত্বরের ঝালমুড়ি বিক্রিওয়ালা থেকে শুরু করে সাক্ষী বাদী বিবাদী সবাই বাড়ি ফিরে গেছে। অনেকেই মারা গেছেন। ১০০ ডলার ফাইনের সাজা শুনিয়েছিলেন আদালত। (পরে সুপ্রিম কোর্টে অবশ্য রায় উল্টে যায়)।
অরিজিন অফ স্পিসিস বইটা 24 নভেম্বর 1859 সালে প্রকাশিত হয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা ভগবান বলে কিছু নেই বল্লে এখনো অনেক লোক তেড়ে মারতে আসে যুক্তিবাদীদের। তাই চালর্স ডারউইন এখনো বিপদজনক একটা লোকের নাম। আমেরিকার অনেক জায়গায় এখনো বিবর্তনবাদ পড়ানোটা বিপদজনক কোনো বিজ্ঞান শিক্ষকের পক্ষে।
কিন্তু সুধী পাঠক, মনে রাখবেন যে পাছার স্রেফ ছোট্ট একটু হাড়, নাম ককসিস, একাই ধসিয়ে দিতে পারে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব। লুপ্তপ্রায় অঙ্গটি মনে করিয়ে দেয় আমার কোনও না কোনো পূর্বপুরুষের লেজ ছিল। ভগবান মানুষ বানায় নি বরং মানুষই ভগবান বানিয়েছে। ক’টা স্কোপস-এর মুখ বন্ধ করা যাবে হে মহান ব্রায়ান। আমাদের হয়ে লড়তে আসবেন ক্ল্যারেন্স সুয়ার্ড ডারো। সত্যের জয় অনিবার্য।