আমরা সবাই জানি ডাক্তার তপ্পন বৈদ্য একজন আলাভোলা একলা মানুষ। মদ্যপান ওনার অবকাশ যাপন। প্রায় সন্ধ্যায় তিনটি রুটি কুক্কুট আন্ডা আর একটি স্বদেশী সুরার বোতল বগলে নিয়ে ঘরে ফেরেন। এখন অর্থাভাবে বিদেশী জিনিস বর্জন করেছেন। ইতস্ততঃ টুক করে গলায় ঢালেন আর সুরায় সুর মিশিয়ে গলা ছেড়ে গান করেন।
আজ মেঘলা। আজ পূর্ণিমা। ডাক্তারের আজ মনটা ভালো নেই। পাতা থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টির শব্দ আর কার্নিশ দিয়ে পড়া জলের শব্দ তিনি তফাৎ করতে পারেন। বারান্দার দরজা খুলে তিনি বৃষ্টির নিজস্ব আলোয় বৃষ্টি দেখতে দেখতে ভাবলেন- কত বড় একান্নবর্তী পরিবার ছিল তাঁদের। কত ভাই কত বোন-দাদা-দিদি জমজমাট। আজ কেউ কারুর খোঁজ রাখেনা। ডাক্তার শুধুমাত্র গান করেন না, কবিতাও করেন। দু পাত্র চড়িয়ে নিয়ে মনের খেয়ালে লিখতে লাগলেন
মেঘলা আকাশ, ঝাপসা চাঁদ
একলা ঘরে মধ্য রাত …… এমন সময় মুঠোফোনে ঘন্টা বেজে উঠলো “তোমাকে চাই”। ডাক্তার ফোন তুলে গলা চিনতে পারলেন এক হারিয়ে যাওয়া সময়ের দাদা। ভালো মন্দ তুই তোকারি খোঁজ খবর সবই হোলো। ডাক্তার চেম্বার করছেন কিনা সবই জানা হোলো। পরম আহ্লাদে বৈদ্যবাবু বাকী সুরা শেষ করে ডুব দিলেন ঘুমসাগরে। ডিম রুটি তাদের মতোন একলা পড়ে রইলো।
মহা আনন্দে ডাক্তার পরের সকালে সেজেগুজে চেম্বারে চললেন। চা শেষ করার আগেই সেই দাদা এসে হাজির। সুতরাং আরেক দফা চা। সৌজন্যে সিগারেট।
দাদা বললেন “বাঃ বেশ চকচকে দেখাচ্ছে তোকে, ভালোই আছিস- ডাক্তার মানুষ” তারপর একদমে বললেন” শোন না, আমার ছেলেটা পড়াশোনার চাপে চারমাস ইস্কুলে যায়নি- একটা সার্টিফিকেট লিখে দে তো”
হতবাক ডাক্তার চেম্বার সেরেই আজ বোতলীভূত হলেন। ধাক্কাটা কঠিন হয়ে গেছে। কবিতাটা শেষ করতে হবে।